#মুরতাদ_হত্যা_দ্বিতীয়_পর্ব
ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব ও তিনদিন অবকাশের বিধান
গত মজলিশে আমরা আলোচনা করে ছিলাম- মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত কি না। সঠিক মত কোনটি। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে- ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব বা ইসলাম পেশ করে তাওবা করতে আহ্বান করা ও তিনদিন অবকাশ দেবার বিধান”।
ইমামের অমুমতি ছাড়া হত্যা কি হারাম?
এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই, অন্যান্য বিধান বাস্তবায়ন করা যেমন মুসলিমদের খলীফা অথবা সুলতানের দায়িত্ব। একই ভাবে মুরতাদদের বিধান বাস্তবায়ন করাও তারই দায়িত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যদি তাদের অনুমতি নেয়া ছাড়াই হত্যা করে তা কি নাজায়েজ বা হারাম হবে?
ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য প্রায় সব কিতাবে এই মাসআলা উল্লেখ করা হয়েছে ---
فإن قتله قاتل قبل عرض الإسلام عليه كره ولا شيء على القاتل ومعنى الكراهية ههنا ترك المستحب وانتفاء الضمان لأن الكفر مبيح للقتل والعرض بعد بلوغ الدعوة غير واجب
মুরতাদের সামনে ইসলাম পেশ করার পূর্বেই যে কোন ব্যক্তি যদি মুরতাদকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় হবে। হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর এখানে মাকরূহ হবার অর্থ হচ্ছে- মুস্তাহাব ছেঁড়ে দেয়া এবং হত্যাকারীর উপর রক্তপণ আবশ্যক না হওয়া। কেননা কুফরেই হত্যার বৈধতা প্রদান করে। আর দাওয়াত পৌঁছার পর পুনরায় ইসলাম পেশ ওয়াজিব নয়। (দেখুনঃ হেদায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরাতাদ্দীন। আল-হিন্দিয়্যা, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরাতাদ্দীন। ই’লাউস সুনান। ফাতহুল কাদীর।আল-বাহরুর রায়েক)
বিশিষ্ট ফকীহ আল্লামা কাজী খান বলেন –
وَرِدَّةُ الرَّجُلِ تُبْطِلُ عِصْمَةَ نَفْسِهِ حَتَّى لَوْ قَتَلَهُ الْقَاتِلُ بِغَيْرِ أَمْرِ الْقَاضِي عَمْدًا أَوْ خَطَأً أَوْ بِغَيْرِ أَمْرِ السُّلْطَانِ أَوَأَتْلَفَ عُضْوًا مِنْ أَعْضَائِهِ لَا شَيْءَ عَلَيْه
কোন ব্যক্তির রিদ্দাহ তার জানের নিরাপত্তার অবসান ঘটায়। এমনকি সুলতান বা কাজীর অনুমতি ছাড়াই কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা ভুল করে তাকে হত্যা করে ফেলে অথবা তার কোন অঙ্গহানি করে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক হবে না। (তাবই-নুল হাকায়েক, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরাতাদ্দীন)
এটাই মুফতা বি-হী মত, এই মতের উপরেই হানাফি মাযহাবের ফাতওয়া।
হাম্বালি মাযহাবের ফকীহ শায়েখ মানসূর বাহুতি রহঃ বলেনঃ-
وإن قتله أي المرتد (غيره) أي غير الامام ونائبه بلا إذنه أساء وعزر لافتياته على الامام أو نائبه ولم يضمن القاتل المرتد لانه محل غير معصوم سواء قتله قبل الاستتابة أو بعدها لانه مهدر الدم في الجملة وردته مبيحة لدمه وهي موجودة قبل الاستتابة كما هي موجودة بعدها إلا أن يلحق المرتد بدار حرب فلكل أحد قتله بلا استتابة وأخذ ما معه من مال لانه صار حربيا
ইমামা অথবা ইমামের নায়েব ছাড়া অন্য কেউ যদি অমুমতি ছাড়াই মুরতাদকে হত্যা করে তা মন্দ কাজ হবে, ইমাম বা তার নায়েবের অবাধ্যতার কারণে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু মুরতাদের হত্যাকারী থেকে রক্তপণ নেয়া হবে না। কেননা মুরতাদের রক্ত সংরক্ষিত নয়। চাই তাকে তাওবার সুযোগ দেবার আগে হত্যা করুক অথবা পরে। কেননা সর্বাবস্থায় তার রক্তের কোন মূল্য নেই। তার রিদ্দা তার রক্তের বৈধতা দিয়েছে। আর এই বৈধতা যেভাবে ইস্তেতাবের (তাওবার সুযোগ) পরে উপস্থিত আগেও উপস্থিত। আর যদি মুরতাদ দারুল হরবে প্রবেশ করে, ইস্তেতাব ছাড়াই যে কারো জন্য অনুমোদিত, তাকে হত্যা করে ফেলা এবং তার কাছে যে মাল আছে সব নিয়ে নেয়া কেননা এখন সে হারবিতে পরিণত হয়েছে।
হত্যার পূর্বে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান ও তিন দিন অবকাশের বিধান
ফিকহে হানাফী অনুস্বারে, মুরতাদকে হত্যার পূর্বে দাওয়াত দেয়া ও ইসলাম গ্রহণের আহ্বান করা মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। কেউ না করলে কোন গোনাহ হবে না। আর এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে যদি কোন সংশয়ের কারণে ইসলাম থেকে সরে যায় তা দূর করা। এর পর যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ভাল কথা আর না করলে তাকে হত্যা করতে হবে।
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ অধিকাংশ কিতাবে মাসআলাটি বর্ণীত হয়েছে ----
وَإِذَا ارْتَدَّ الْمُسْلِمُ عَنْ الْإِسْلَامِ وَالْعِيَاذُ بِاَللَّهِ عُرِضَ عَلَيْهِ الْإِسْلَامُ فَإِنْ كَانَتْ لَهُ شُبْهَةٌ كُشِفَتْ لَهُ لِأَنَّ الْعَرْضَ عَلَى مَا قَالُوا غَيْرُ وَاجِبٍ لِأَنَّ الدَّعْوَةَ قَدْ بَلَغَتْهُ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ
যখন কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যাবে (আল্লাহ্*র পানাহ) তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে, যদি তার কোন সংশয় থাকে দূর করা হবে, আর এই ইসলাম পেশ করতে যে বলা হয়েছে, তা ওয়াজিব নয় কেননা তার কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে। এমনটি হিদায়ার মধ্যেও রয়েছে। (আল-জাউহারাতুন নাইয়্যেরাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার)
একই মাসআলা ফিকহে হানাফীর অন্যান্য কিতাবে দেখুনঃ হিদায়া, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। ফাতহুল কাদীর, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। শরহুল বিকায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরতাদ।
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইয়ূসুফ রহঃ এর মতে মুরতাদকে তাওবার জন্য তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব। আর ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে যদি সে অবকাশ চায় তাহলে অবকাশ দিতে হবে অন্যথায় সাথে সাথেই তাকে হত্যা করতে হবে।
শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ
عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ لِلْإِمَامِ أَنْ يُؤَجِّلَهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ طَلَبَ ذَلِكَ أَوْ لَمْ يَطْلُبْ
ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবূ ইয়ূসুফ রহঃ থেকে বর্ণীত আছে, ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুরতাদকে তিনদিন অবকাশ দেয়া, সে অবকাশ চাক বা না চাক। (আল-মাবসূত, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরতাদ্দীন)
ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন-
وإذا ارتد المسلم عن الإسلام عرض عليه الإسلام، فإن أسلم وإلا قتل مكانه، إلا أن يطلب أن يؤجله، فإن طلب ذلك أجّل ثلاثة أيام
যখন মুসলিম ইসলাম ছেঁড়ে মুরতাদ হবে তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ঠিক আছে অন্যথায় তাকে সেখানেই হত্যা করা হবে তবে যদি সে অবকাশ চায় তাকে তিন দিনের অবকাশ দেয়া হবে। (আস-সিয়ারুল কাবীর)
পূর্বের আলোচনার সারমর্ম
• মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
• সাধারণ মুরতাদকে ইমামের অনুমতি ছাড়া হত্যা করা মাকরূহ।
• যে কেউ হত্যা করে হত্যাকারীর উপর কোন রক্তপণ আসবে না।
• হত্যার পূর্বে ইস্তেতাব (তওবা করতে বলা) মুস্তাহাব।
• তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব।
বিঃ দ্রঃ আমাদের উপরোক্ত সকল আলোচনা হচ্ছে الردة المجردة (আর-রিদ্দাতুল মুজাররাদাহ) বা স্বাভাবিক রিদ্দার ব্যাপারে। আমরা ইনশাআল্লাহ্* সামনে الردة المغلظة (আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ) নিয়ে আলোচনা করব। আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ হচ্ছে, মুরতাদ শুধু মাত্র দ্বীন থেকে বের হবার অপরাধেই অপরাধী থাকেনা বরং সাথে আরও কোন গুরুত্বর অপরাধে লিপ্ত হয়। যেমনঃ আল্লাহ্* তায়ালা অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শানে খারাপ বাক্য উচ্চারণ। দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা। মুসলিমদেরকে হত্যা করা। দারুল হারবের কাফেরদের সাথে মিলিত হওয়া।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
https://www.facebook.com/permalink.p...00012678370993
ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব ও তিনদিন অবকাশের বিধান
গত মজলিশে আমরা আলোচনা করে ছিলাম- মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত কি না। সঠিক মত কোনটি। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে- ইমামের অনুমতি, ইস্তেতাব বা ইসলাম পেশ করে তাওবা করতে আহ্বান করা ও তিনদিন অবকাশ দেবার বিধান”।
ইমামের অমুমতি ছাড়া হত্যা কি হারাম?
এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই, অন্যান্য বিধান বাস্তবায়ন করা যেমন মুসলিমদের খলীফা অথবা সুলতানের দায়িত্ব। একই ভাবে মুরতাদদের বিধান বাস্তবায়ন করাও তারই দায়িত্ব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যদি তাদের অনুমতি নেয়া ছাড়াই হত্যা করে তা কি নাজায়েজ বা হারাম হবে?
ফিকহে হানাফীর নির্ভরযোগ্য প্রায় সব কিতাবে এই মাসআলা উল্লেখ করা হয়েছে ---
فإن قتله قاتل قبل عرض الإسلام عليه كره ولا شيء على القاتل ومعنى الكراهية ههنا ترك المستحب وانتفاء الضمان لأن الكفر مبيح للقتل والعرض بعد بلوغ الدعوة غير واجب
মুরতাদের সামনে ইসলাম পেশ করার পূর্বেই যে কোন ব্যক্তি যদি মুরতাদকে হত্যা করে ফেলে তাহলে তা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় হবে। হত্যাকারীর উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না। আর এখানে মাকরূহ হবার অর্থ হচ্ছে- মুস্তাহাব ছেঁড়ে দেয়া এবং হত্যাকারীর উপর রক্তপণ আবশ্যক না হওয়া। কেননা কুফরেই হত্যার বৈধতা প্রদান করে। আর দাওয়াত পৌঁছার পর পুনরায় ইসলাম পেশ ওয়াজিব নয়। (দেখুনঃ হেদায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরাতাদ্দীন। আল-হিন্দিয়্যা, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরাতাদ্দীন। ই’লাউস সুনান। ফাতহুল কাদীর।আল-বাহরুর রায়েক)
বিশিষ্ট ফকীহ আল্লামা কাজী খান বলেন –
وَرِدَّةُ الرَّجُلِ تُبْطِلُ عِصْمَةَ نَفْسِهِ حَتَّى لَوْ قَتَلَهُ الْقَاتِلُ بِغَيْرِ أَمْرِ الْقَاضِي عَمْدًا أَوْ خَطَأً أَوْ بِغَيْرِ أَمْرِ السُّلْطَانِ أَوَأَتْلَفَ عُضْوًا مِنْ أَعْضَائِهِ لَا شَيْءَ عَلَيْه
কোন ব্যক্তির রিদ্দাহ তার জানের নিরাপত্তার অবসান ঘটায়। এমনকি সুলতান বা কাজীর অনুমতি ছাড়াই কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা ভুল করে তাকে হত্যা করে ফেলে অথবা তার কোন অঙ্গহানি করে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক হবে না। (তাবই-নুল হাকায়েক, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরাতাদ্দীন)
এটাই মুফতা বি-হী মত, এই মতের উপরেই হানাফি মাযহাবের ফাতওয়া।
হাম্বালি মাযহাবের ফকীহ শায়েখ মানসূর বাহুতি রহঃ বলেনঃ-
وإن قتله أي المرتد (غيره) أي غير الامام ونائبه بلا إذنه أساء وعزر لافتياته على الامام أو نائبه ولم يضمن القاتل المرتد لانه محل غير معصوم سواء قتله قبل الاستتابة أو بعدها لانه مهدر الدم في الجملة وردته مبيحة لدمه وهي موجودة قبل الاستتابة كما هي موجودة بعدها إلا أن يلحق المرتد بدار حرب فلكل أحد قتله بلا استتابة وأخذ ما معه من مال لانه صار حربيا
ইমামা অথবা ইমামের নায়েব ছাড়া অন্য কেউ যদি অমুমতি ছাড়াই মুরতাদকে হত্যা করে তা মন্দ কাজ হবে, ইমাম বা তার নায়েবের অবাধ্যতার কারণে তাকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু মুরতাদের হত্যাকারী থেকে রক্তপণ নেয়া হবে না। কেননা মুরতাদের রক্ত সংরক্ষিত নয়। চাই তাকে তাওবার সুযোগ দেবার আগে হত্যা করুক অথবা পরে। কেননা সর্বাবস্থায় তার রক্তের কোন মূল্য নেই। তার রিদ্দা তার রক্তের বৈধতা দিয়েছে। আর এই বৈধতা যেভাবে ইস্তেতাবের (তাওবার সুযোগ) পরে উপস্থিত আগেও উপস্থিত। আর যদি মুরতাদ দারুল হরবে প্রবেশ করে, ইস্তেতাব ছাড়াই যে কারো জন্য অনুমোদিত, তাকে হত্যা করে ফেলা এবং তার কাছে যে মাল আছে সব নিয়ে নেয়া কেননা এখন সে হারবিতে পরিণত হয়েছে।
হত্যার পূর্বে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান ও তিন দিন অবকাশের বিধান
ফিকহে হানাফী অনুস্বারে, মুরতাদকে হত্যার পূর্বে দাওয়াত দেয়া ও ইসলাম গ্রহণের আহ্বান করা মুস্তাহাব। ওয়াজিব নয়। কেউ না করলে কোন গোনাহ হবে না। আর এই দাওয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে যদি কোন সংশয়ের কারণে ইসলাম থেকে সরে যায় তা দূর করা। এর পর যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ভাল কথা আর না করলে তাকে হত্যা করতে হবে।
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ অধিকাংশ কিতাবে মাসআলাটি বর্ণীত হয়েছে ----
وَإِذَا ارْتَدَّ الْمُسْلِمُ عَنْ الْإِسْلَامِ وَالْعِيَاذُ بِاَللَّهِ عُرِضَ عَلَيْهِ الْإِسْلَامُ فَإِنْ كَانَتْ لَهُ شُبْهَةٌ كُشِفَتْ لَهُ لِأَنَّ الْعَرْضَ عَلَى مَا قَالُوا غَيْرُ وَاجِبٍ لِأَنَّ الدَّعْوَةَ قَدْ بَلَغَتْهُ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ
যখন কোন মুসলিম মুরতাদ হয়ে যাবে (আল্লাহ্*র পানাহ) তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে, যদি তার কোন সংশয় থাকে দূর করা হবে, আর এই ইসলাম পেশ করতে যে বলা হয়েছে, তা ওয়াজিব নয় কেননা তার কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে। এমনটি হিদায়ার মধ্যেও রয়েছে। (আল-জাউহারাতুন নাইয়্যেরাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার)
একই মাসআলা ফিকহে হানাফীর অন্যান্য কিতাবে দেখুনঃ হিদায়া, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। ফাতহুল কাদীর, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। শরহুল বিকায়া, অধ্যায়ঃ আহকামুল মুরতাদ।
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইয়ূসুফ রহঃ এর মতে মুরতাদকে তাওবার জন্য তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব। আর ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ এর মতে যদি সে অবকাশ চায় তাহলে অবকাশ দিতে হবে অন্যথায় সাথে সাথেই তাকে হত্যা করতে হবে।
শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ
عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ لِلْإِمَامِ أَنْ يُؤَجِّلَهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ طَلَبَ ذَلِكَ أَوْ لَمْ يَطْلُبْ
ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবূ ইয়ূসুফ রহঃ থেকে বর্ণীত আছে, ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুরতাদকে তিনদিন অবকাশ দেয়া, সে অবকাশ চাক বা না চাক। (আল-মাবসূত, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার, বাবুল মুরতাদ্দীন)
ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ বলেন-
وإذا ارتد المسلم عن الإسلام عرض عليه الإسلام، فإن أسلم وإلا قتل مكانه، إلا أن يطلب أن يؤجله، فإن طلب ذلك أجّل ثلاثة أيام
যখন মুসলিম ইসলাম ছেঁড়ে মুরতাদ হবে তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ঠিক আছে অন্যথায় তাকে সেখানেই হত্যা করা হবে তবে যদি সে অবকাশ চায় তাকে তিন দিনের অবকাশ দেয়া হবে। (আস-সিয়ারুল কাবীর)
পূর্বের আলোচনার সারমর্ম
• মুরতাদ হত্যা হুদূদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
• সাধারণ মুরতাদকে ইমামের অনুমতি ছাড়া হত্যা করা মাকরূহ।
• যে কেউ হত্যা করে হত্যাকারীর উপর কোন রক্তপণ আসবে না।
• হত্যার পূর্বে ইস্তেতাব (তওবা করতে বলা) মুস্তাহাব।
• তিনদিন অবকাশ দেয়া মুস্তাহাব।
বিঃ দ্রঃ আমাদের উপরোক্ত সকল আলোচনা হচ্ছে الردة المجردة (আর-রিদ্দাতুল মুজাররাদাহ) বা স্বাভাবিক রিদ্দার ব্যাপারে। আমরা ইনশাআল্লাহ্* সামনে الردة المغلظة (আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ) নিয়ে আলোচনা করব। আর-রিদ্দাতুল মুগাল্লাজাহ হচ্ছে, মুরতাদ শুধু মাত্র দ্বীন থেকে বের হবার অপরাধেই অপরাধী থাকেনা বরং সাথে আরও কোন গুরুত্বর অপরাধে লিপ্ত হয়। যেমনঃ আল্লাহ্* তায়ালা অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের শানে খারাপ বাক্য উচ্চারণ। দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা। মুসলিমদেরকে হত্যা করা। দারুল হারবের কাফেরদের সাথে মিলিত হওয়া।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
https://www.facebook.com/permalink.p...00012678370993
Comment