#দারুল_ইসলাম_ও_দারুল_কুফর- দ্বিতীয় পর্ব
#জুমহুরের_অভিমত
জুমহুর ফুকাহা রহঃ এর অভিমত হচ্ছে, দারুল কুফর যেভাবে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারুল ইসলাম হয় একই ভাবে দারুল ইসলাম, দারুল কুফরে পরিণত হয় কুফরী আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে। শাফী মাযহাবের কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন, তাদের মত হচ্ছে কোন রাষ্ট্র একবার দারুল ইসলাম হলে আর কখনো দারুল কুফর হবে না। সেটা দারুল ইসলাম হিসাবেই গণ্য হবে। ফিকহে শাফীর অনুসারী অন্য ফকীহ আবার তাদের এই মতের বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন।
জুমহুর আয়িম্মায়ের নিকট, রাষ্ট্র যে আইন দ্বারা পরিচালিত হবে সেটা সেই রাষ্ট্র হিসাবেই গণ্য হবে, ইসলামী আইন দ্বারা হলে দারুল ইসলাম। কুফরী আইন দ্বারা পরিচালিত হলে দারুল কুফর।
#আহনাফ_রহঃ
ইমাম আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর অভিমত-
ইমাম কাসানী রহঃ বলেনঃ
وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ - رَحِمَهُمَا اللَّهُ : إنَّهَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ بِظُهُورِ أَحْكَامِ الْكُفْرِ فِيهَا
আর ইমাম আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মত হচ্ছে, কুফরি বিধান নাফেযের মাধ্যমে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হবে। (বাদাইউস সানায়ে’- কিতাবুস সিয়ার। অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
ফাতাওায়ে আলমগিরীতে সাহেবাইনের এই মতকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছেঃ –
وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ - رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى - بِشَرْطٍ وَاحِدٍ لَا غَيْرَ ، وَهُوَ إظْهَارُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ ، وَهُوَ الْقِيَاسُ
আর আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ বলেন- “শুধুমাত্র একটা শর্তই প্রযোজ্য অন্য কোন শর্তের প্রয়োজন নেই। আর তা হচ্ছে কুফরী আইন কার্যকর করা।” আর এই মতটাই যুক্তিযুক্ত। (ফাতওয়ায়ে শামী, কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়ঃ ফী-মা তাসীরু বিহী দারুল ইসলাম ওয়া দারুল হারব)
ইমাম সারাখসী রহঃ সহেবাইনের মতের ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেনঃ
لان البقعة انما تنسب الينا أو إليهم باعتبار القوة والغلبة فكل موضع ظهر فيه حكم الشرك فالقوة في ذلك الموضع للمشركين فكانت دار حرب وكل موضع كان الظاهر فيه حكم الاسلام فالقوة فيه للمسلمين
কোন অঞ্চল আমাদের সাথে সম্পৃক্ত ধরা হবে নাকি কাফেরদের সাথে সম্পৃক্ত ধরা হবে তা নির্ধারিত হবে শক্তি ও কর্তৃত্বের প্রতি লক্ষ্য করে। কোন রাষ্ট্রে যদি শিরকের বিধান কার্যকর থাকে সেখানে মুশরিকরা শক্তিশালী বলে বিবেচিত হবে। ফলে তা দারুল হারব হবে। কোন রাষ্ট্রে যদি ইসলামী বিধান কার্যকর থাকে সেখানে মুসলিমরা শক্তিশালী বলে বিবেচিত হবে। (আল-মাবসূত, কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়ঃ মুয়ামালাতু জাইশিল কুফফার)
ইমাম সারাখসী রহঃ এর মতের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে আমরা দিন পার করছি। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম কিন্তু বিধান চলছে শিরেক ও কুফরের। যার ফলে আমাদের হৃদয়ের স্পন্ধন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইজ্জত রক্ষার্থে রাজপথে নামলে আমাদের বুকে ধেয়ে আসছে বুলেট। আমাদের উপর বিস্ফোরিত হচ্ছে গ্রেনেড। ইতিহাসকে নিস্তব্ধ করে এমন জঘন্য ও নগ্ন ভাষায় মুহাম্মাদে আরাবীর ইজ্জতে আক্রমণকারীর হত্যাকারীদের শাস্তি হচ্ছে ফাঁসি। আর জঘন্য সেই মুরতাদ হচ্ছে “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ”। তাই বিধান চলে যাদের শক্তি ও কর্তৃত্ব বাস্তবেই তাদের।
#ইমাম_মালিক_রহঃ_এর_মতঃ
ইমাম মালিক রহঃ মক্কা বিজয় হওয়ার পূর্বের হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
وكانت الدار يومئذ دار حرب لأن أحكام الجاهلية كانت ظاهرة يومئذ
তখন ঐ অঞ্চল (মক্কা) দারুল হারব ছিল। কেননা তখন (মক্কায়) জাহিলিয়্যাতের বিধিবিধানই বিজয়ী ছিল। (আল-মুদাউওনাতুল কুবরা, অধ্যায়ঃ ফী আবীদি দারিল হারব ইউসলিমুনা ফী-দারিল হারব)
মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইমাম মালিক রহঃ মক্কাকে দারুল হারব আখ্যায়িত করতেছেন। আর এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করতেছেন ‘মক্কা জাহিলিয়্যাতের বিধানের অধীনে থাকা’। ফিকহে মালেকির অনুসারী অন্যান্য ফুকাহা রহঃ একই মত ব্যক্ত করেছেন।
#ফুকাহায়ে_হানাবেলা_রহঃ
কাজী আবূ ইয়া’লা রহঃ বলেনঃ-
كل دار كانت الغلبة فيها لأحكام الكفر دون أحكام الإسلام فهي دار الكفرة
যে দারের মধ্যেই ইসলামী আইনের চেয়ে কুফরি আইন প্রকট হবে তা দারুল কুফর হিসাবেই বিবেচ্য হবে। (আল-মুতামাদ ফী উসুলিদ দ্বীন-২৭৬)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ বলেনঃ
قال الجمهور: دار الإسلام هي التي نزلها المسلمون وجرت عليها أحكام الإسلام، وما لم تجر عليه أحكام الإسلام لم يكن دار إسلام وإن لاصقها، فهذه الطائف قريبة إلى مكة جدا ولم تصر دار إسلام بفتح مكة وكذلك الساحل
জুমহুরের অভিমত হচ্ছে- দারুল ইসলাম হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র যার অধিবাসীরা মুসলিম এবং তাতে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত। যে রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত নেই তা দারুল ইসলাম নয় যদিও বা তা দারুল ইসলামের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হয় না কেন। তয়েফ মক্কার অতি নিকটের একটি অঞ্চল কিন্তু মক্কা বিজয়ের পরও তা দারুল ইসলামে পরিণত হয়নি। একইভাবে সাহেল। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৬)
শায়েখ মানসূর আল-বুহূতী রহঃ বলেনঃ
وتجب الهجرة على من يعجز عن إظهار دينه بدار الحرب وهى ما يغلب فيها حكم الكفر
দারুল হারবে যে নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করতে অক্ষম তার উপর হিজরত ওয়াজিব। আর দারুল হারব হচ্ছে যেখানে কুফরী বিধান প্রবল। (কাশশাফুল কেনা’, কিতাবুল জিহাদ-প্রথম অধ্যায়)
আল্লামা ইবনে মুফলিহ রহঃ আল-হাম্বালী বলেনঃ-
فكل دار غلب عليها أحكام المسلمين فدار الإسلام، وإن غلب عليها أحكام الكفار فدار الكفر، ولا دار لغيرهما
যে রাষ্ট্রের মধ্যে মুসলিমদের বিধান বাস্তবায়িত তা দারুল ইসলাম আর যে রাষ্ট্রের মধ্যে কুফরী বিধান বাস্তবায়িত তা দারুল কুফর। এই দুইয়ের বাইরে কোন দার (রাষ্ট্র) নেই। (আল-আদাবুশ শরই্য়্যা, অধ্যায়ঃ ফী-তাহকীকি দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
আল্লামা আলাউদ্দীন আল-মারদাবী রহঃ বলেনঃ
ودار الحرب ما يغلب فيها حكم الكفر
দারুল হারব হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র যা কুফরী আইন দ্বারা শাসিত। (আল-ইনসাফ, কিতাবুল জিহাদ-প্রথম অধ্যায়)
#সমকালীন_ইসলামিক_চিন্তাবিদ
সায়্যেদ কুতুব রহঃ বলেনঃ
ينقسم العالم في نظر الإسلام وفي اعتبار المسلم إلى قسمين لا ثالث لهما: الأول دار إسلام، وتشمل كل بلد تطبق فيه أحكام الإسلام، وتحكمه شريعة الإسلام سواء كان أهله كلهم مسلمين، أو كان أهله مسلمين وذميين، أو كان أهله كلهم ذميين ولكن حكامه مسلمون يطبقون فيه أحكام الإسلام، ويحكمون بشريعة الإسلام .. فالمدار كله في اعتبار بلد ما دار إسلام هو تطبيقه لأحكام الإسلام، وحكمه بشريعة الإسلام.
الثاني: دار حرب، وتشمل كل بلد لا تطبق فيه أحكام الإسلام، ولا يحكم بشريعة الإسلام، كائناً أهله ما كانوا، سواء قالوا: إنهم مسلمون، أو أنهم أهل كتاب أو أنهم كفار، فالمدار كله في اعتبار بلد ما دار حرب هو عدم تطبيقه لأحكام الإسلام، وعدم حكمه بشريعة الإسلام،
ইসলামের দৃষ্টিতে ও মুসলিমের বিবেচনায় বিশ্ব দুভাগে বিভক্ত। যার তৃতীয় কোন ভাগ নেই।
প্রথমঃ দারুল ইসলাম। আর তা হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র- যেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়িত। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত। চাই তার সকল জনগণ মুসলিম হোক। বা মুসলিম ও যিম্মি উভয় মিলিত হোক। অথবা সকল জনগণ যিম্মি হোক কিন্তু শাসক হোক মুসলিমরা। যারা সেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করে। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা ফায়সালা করে। দারুল ইসলাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলামী আইন বাস্তবায়িত হওয়া ইসলামী শরীয়ত দ্বারা বিচার ফায়সালা করা।
দ্বিতীয়ঃ দারুল হারব। আর তা হচ্ছে প্রত্যেক এমন ভূখণ্ড যেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়িত নয়। যা ইসলামী শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত হয় না। চাই তার জনগণ যারাই হোক না কেন। চাই তারা বলে- তারা মুসলিম। বা তারা আহলে কিতাব অথবা তারা (অন্য) কাফের। কোন রাষ্ট্রকে দারুল হারব নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলামী আইন বাস্তবায়িত না থাকা। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা বিচার ফায়সালা না করা। (তাফসীর ফী-যিলালিল কুরআন, সূরা মায়েদা-২৭-৪০ আয়াতের তাফসীর দেখুন)
মুহাম্মাদ কুতুব রহঃ বলেনঃ
والذي عليه جمهور العلماء أن الدار تأخذ وصفها من غلبة الأحكام عليها ـ أي بصرف النظر عن عقائد أهلها ـ فالأرض التي تحكمها شريعة الله فهي دار إسلام، ولو كان أغلب سكانها غير مسلمين، كما كانت الهند خلال ثمانية قرون من الحكم الإسلامي، وأغلب سكانها المجوس عباد البقر. كذلك الأرض التي لا تحكمها شريعة الله فهي دار حرب ولو كان أغلب سكانها مسلمين،
জুমহুর উলামার মত হচ্ছে, দার নির্ধারিত হবে তা কোন বিধান দ্বারা শাসিত তার প্রতি লক্ষ্য করে। অর্থাৎ ঐ ভূখণ্ডের মানুষ কোন বিশ্বাসের তা বিবেচ্য হবে না। যে রাষ্ট্র আল্লাহ্* তায়ালার শরীয়ত শাসিত হবে তা দারুল ইসলাম যদিও বা তার অধিকাংশ অধিবাসী অমুসলিম হয়। যেমন অষ্টম শতাব্দীতে ইসলামী শাসনকালে হিন্দুস্তানের অবস্থা ছিল। অধিকাংশ জনগণ ছিল গো-পূজারী মাজুসী। অনুরূপ যে রাষ্ট্র আল্লাহ্* তায়ালার শরীয়ত দ্বারা শাসিত নয় তা দারুল হারব। যদিও তার অধিকাংশ জনগণ মুসলিম হয়। (ওয়া’কেউনাল মুয়াসের (واقعنا العاصر) ,পৃষ্ঠা-৪২৭)
উস্তায আব্দুল কাদের আউদাহ রহঃ এর অভিমতঃ
دار الكفر تشمل كل البلاد غير الإسلامية التي لا تدخل تحت سلطان المسلمين، أولا تظهر فيها أحكام الإسلام، سواء أكانت هذه البلاد تحكمها دولة واحدة، أو تحكمها دول متعددة، ويستوي أن يكون بين سكانها المقيمين إقامة دائمة مسلمون أولا يكون، مادام المسلمون عاجزين عن إظهار أحكام الإسلام
দারুল কুফর হচ্ছে এমন সকল অইসলামিক অঞ্চল সমূহ যা মুসলিমদের অধীনে নেই। অথবা যেথায় ইসলামী বিধান কার্যকর নয়। চাই উক্ত অঞ্চল সমূহ কোন এক রাষ্ট্র দ্বারা শাসিত হোক অথবা একাধিক রাষ্ট্র দ্বারা। চাই সেখানের স্থায়ী অধিবাসী মুসলিম হোক বা অমুসলিম। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমগণ ইসলামী বিধান কার্যকর করা থেকে অপারগ হয়।
(আত-তাশরি’উল জিনায়ী আল-ইসলামী-التشريع الجنائي الإسلامي, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭৫)
উম্মতের নির্ভরযোগ্য মুজাতাহিদ উলামা-ফুকাহা রহঃ এর কিতাব অধ্যয়নের পর, আমরা দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের উপরক্ত পরিচয় পাই। তাই আমরা ইহাই গ্রহন করি ও বিশ্বাস করি। শরয়ী কোন সিদ্ধান্ত নিজ প্রবৃত্তি থেকে আমদানি না করে শরীয়তের মাসদার থেকে আহরণ করি। আমাদের আহরণে যদি কোন ভুল হয়ে যায়, আল্লাহ্* রাব্বুল ইজ্জাতের কাছে ক্ষমা চাই। প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে পানাহ চাই। কোন ভাই! যদি শরয়ী দলীল দ্বারা আমাদের ভুল ধরিয়ে দেন ইনশাআল্লাহ্* আমারা প্রসস্থ হৃদয়ে তা গ্রহণ করব। কারণ আমরা কোন ব্যক্তি-মতের পুজারি না বরং শরীয়তের অনুসারী। আমরা ইনশাআল্লাহ্* হৃদয় থেকে ঐ ভাইয়ের জন্য দুয়া করব।
#ইনশাআল্লাহ্*_চলবে
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
https://www.facebook.com/permalink.p...00012678370993
#জুমহুরের_অভিমত
জুমহুর ফুকাহা রহঃ এর অভিমত হচ্ছে, দারুল কুফর যেভাবে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারুল ইসলাম হয় একই ভাবে দারুল ইসলাম, দারুল কুফরে পরিণত হয় কুফরী আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে। শাফী মাযহাবের কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন, তাদের মত হচ্ছে কোন রাষ্ট্র একবার দারুল ইসলাম হলে আর কখনো দারুল কুফর হবে না। সেটা দারুল ইসলাম হিসাবেই গণ্য হবে। ফিকহে শাফীর অনুসারী অন্য ফকীহ আবার তাদের এই মতের বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন।
জুমহুর আয়িম্মায়ের নিকট, রাষ্ট্র যে আইন দ্বারা পরিচালিত হবে সেটা সেই রাষ্ট্র হিসাবেই গণ্য হবে, ইসলামী আইন দ্বারা হলে দারুল ইসলাম। কুফরী আইন দ্বারা পরিচালিত হলে দারুল কুফর।
#আহনাফ_রহঃ
ইমাম আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর অভিমত-
ইমাম কাসানী রহঃ বলেনঃ
وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ - رَحِمَهُمَا اللَّهُ : إنَّهَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ بِظُهُورِ أَحْكَامِ الْكُفْرِ فِيهَا
আর ইমাম আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ এর মত হচ্ছে, কুফরি বিধান নাফেযের মাধ্যমে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হবে। (বাদাইউস সানায়ে’- কিতাবুস সিয়ার। অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
ফাতাওায়ে আলমগিরীতে সাহেবাইনের এই মতকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছেঃ –
وَقَالَ أَبُو يُوسُفَ وَمُحَمَّدٌ - رَحِمَهُمَا اللَّهُ تَعَالَى - بِشَرْطٍ وَاحِدٍ لَا غَيْرَ ، وَهُوَ إظْهَارُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ ، وَهُوَ الْقِيَاسُ
আর আবূ ইয়ূসুফ ও মুহাম্মাদ রহঃ বলেন- “শুধুমাত্র একটা শর্তই প্রযোজ্য অন্য কোন শর্তের প্রয়োজন নেই। আর তা হচ্ছে কুফরী আইন কার্যকর করা।” আর এই মতটাই যুক্তিযুক্ত। (ফাতওয়ায়ে শামী, কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়ঃ ফী-মা তাসীরু বিহী দারুল ইসলাম ওয়া দারুল হারব)
ইমাম সারাখসী রহঃ সহেবাইনের মতের ব্যাখ্যা এভাবে দিয়েছেনঃ
لان البقعة انما تنسب الينا أو إليهم باعتبار القوة والغلبة فكل موضع ظهر فيه حكم الشرك فالقوة في ذلك الموضع للمشركين فكانت دار حرب وكل موضع كان الظاهر فيه حكم الاسلام فالقوة فيه للمسلمين
কোন অঞ্চল আমাদের সাথে সম্পৃক্ত ধরা হবে নাকি কাফেরদের সাথে সম্পৃক্ত ধরা হবে তা নির্ধারিত হবে শক্তি ও কর্তৃত্বের প্রতি লক্ষ্য করে। কোন রাষ্ট্রে যদি শিরকের বিধান কার্যকর থাকে সেখানে মুশরিকরা শক্তিশালী বলে বিবেচিত হবে। ফলে তা দারুল হারব হবে। কোন রাষ্ট্রে যদি ইসলামী বিধান কার্যকর থাকে সেখানে মুসলিমরা শক্তিশালী বলে বিবেচিত হবে। (আল-মাবসূত, কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়ঃ মুয়ামালাতু জাইশিল কুফফার)
ইমাম সারাখসী রহঃ এর মতের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে আমরা দিন পার করছি। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম কিন্তু বিধান চলছে শিরেক ও কুফরের। যার ফলে আমাদের হৃদয়ের স্পন্ধন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইজ্জত রক্ষার্থে রাজপথে নামলে আমাদের বুকে ধেয়ে আসছে বুলেট। আমাদের উপর বিস্ফোরিত হচ্ছে গ্রেনেড। ইতিহাসকে নিস্তব্ধ করে এমন জঘন্য ও নগ্ন ভাষায় মুহাম্মাদে আরাবীর ইজ্জতে আক্রমণকারীর হত্যাকারীদের শাস্তি হচ্ছে ফাঁসি। আর জঘন্য সেই মুরতাদ হচ্ছে “দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ”। তাই বিধান চলে যাদের শক্তি ও কর্তৃত্ব বাস্তবেই তাদের।
#ইমাম_মালিক_রহঃ_এর_মতঃ
ইমাম মালিক রহঃ মক্কা বিজয় হওয়ার পূর্বের হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
وكانت الدار يومئذ دار حرب لأن أحكام الجاهلية كانت ظاهرة يومئذ
তখন ঐ অঞ্চল (মক্কা) দারুল হারব ছিল। কেননা তখন (মক্কায়) জাহিলিয়্যাতের বিধিবিধানই বিজয়ী ছিল। (আল-মুদাউওনাতুল কুবরা, অধ্যায়ঃ ফী আবীদি দারিল হারব ইউসলিমুনা ফী-দারিল হারব)
মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইমাম মালিক রহঃ মক্কাকে দারুল হারব আখ্যায়িত করতেছেন। আর এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করতেছেন ‘মক্কা জাহিলিয়্যাতের বিধানের অধীনে থাকা’। ফিকহে মালেকির অনুসারী অন্যান্য ফুকাহা রহঃ একই মত ব্যক্ত করেছেন।
#ফুকাহায়ে_হানাবেলা_রহঃ
কাজী আবূ ইয়া’লা রহঃ বলেনঃ-
كل دار كانت الغلبة فيها لأحكام الكفر دون أحكام الإسلام فهي دار الكفرة
যে দারের মধ্যেই ইসলামী আইনের চেয়ে কুফরি আইন প্রকট হবে তা দারুল কুফর হিসাবেই বিবেচ্য হবে। (আল-মুতামাদ ফী উসুলিদ দ্বীন-২৭৬)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ বলেনঃ
قال الجمهور: دار الإسلام هي التي نزلها المسلمون وجرت عليها أحكام الإسلام، وما لم تجر عليه أحكام الإسلام لم يكن دار إسلام وإن لاصقها، فهذه الطائف قريبة إلى مكة جدا ولم تصر دار إسلام بفتح مكة وكذلك الساحل
জুমহুরের অভিমত হচ্ছে- দারুল ইসলাম হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র যার অধিবাসীরা মুসলিম এবং তাতে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত। যে রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান বাস্তবায়িত নেই তা দারুল ইসলাম নয় যদিও বা তা দারুল ইসলামের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হয় না কেন। তয়েফ মক্কার অতি নিকটের একটি অঞ্চল কিন্তু মক্কা বিজয়ের পরও তা দারুল ইসলামে পরিণত হয়নি। একইভাবে সাহেল। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৬৬)
শায়েখ মানসূর আল-বুহূতী রহঃ বলেনঃ
وتجب الهجرة على من يعجز عن إظهار دينه بدار الحرب وهى ما يغلب فيها حكم الكفر
দারুল হারবে যে নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করতে অক্ষম তার উপর হিজরত ওয়াজিব। আর দারুল হারব হচ্ছে যেখানে কুফরী বিধান প্রবল। (কাশশাফুল কেনা’, কিতাবুল জিহাদ-প্রথম অধ্যায়)
আল্লামা ইবনে মুফলিহ রহঃ আল-হাম্বালী বলেনঃ-
فكل دار غلب عليها أحكام المسلمين فدار الإسلام، وإن غلب عليها أحكام الكفار فدار الكفر، ولا دار لغيرهما
যে রাষ্ট্রের মধ্যে মুসলিমদের বিধান বাস্তবায়িত তা দারুল ইসলাম আর যে রাষ্ট্রের মধ্যে কুফরী বিধান বাস্তবায়িত তা দারুল কুফর। এই দুইয়ের বাইরে কোন দার (রাষ্ট্র) নেই। (আল-আদাবুশ শরই্য়্যা, অধ্যায়ঃ ফী-তাহকীকি দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
আল্লামা আলাউদ্দীন আল-মারদাবী রহঃ বলেনঃ
ودار الحرب ما يغلب فيها حكم الكفر
দারুল হারব হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র যা কুফরী আইন দ্বারা শাসিত। (আল-ইনসাফ, কিতাবুল জিহাদ-প্রথম অধ্যায়)
#সমকালীন_ইসলামিক_চিন্তাবিদ
সায়্যেদ কুতুব রহঃ বলেনঃ
ينقسم العالم في نظر الإسلام وفي اعتبار المسلم إلى قسمين لا ثالث لهما: الأول دار إسلام، وتشمل كل بلد تطبق فيه أحكام الإسلام، وتحكمه شريعة الإسلام سواء كان أهله كلهم مسلمين، أو كان أهله مسلمين وذميين، أو كان أهله كلهم ذميين ولكن حكامه مسلمون يطبقون فيه أحكام الإسلام، ويحكمون بشريعة الإسلام .. فالمدار كله في اعتبار بلد ما دار إسلام هو تطبيقه لأحكام الإسلام، وحكمه بشريعة الإسلام.
الثاني: دار حرب، وتشمل كل بلد لا تطبق فيه أحكام الإسلام، ولا يحكم بشريعة الإسلام، كائناً أهله ما كانوا، سواء قالوا: إنهم مسلمون، أو أنهم أهل كتاب أو أنهم كفار، فالمدار كله في اعتبار بلد ما دار حرب هو عدم تطبيقه لأحكام الإسلام، وعدم حكمه بشريعة الإسلام،
ইসলামের দৃষ্টিতে ও মুসলিমের বিবেচনায় বিশ্ব দুভাগে বিভক্ত। যার তৃতীয় কোন ভাগ নেই।
প্রথমঃ দারুল ইসলাম। আর তা হচ্ছে ঐ রাষ্ট্র- যেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়িত। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত। চাই তার সকল জনগণ মুসলিম হোক। বা মুসলিম ও যিম্মি উভয় মিলিত হোক। অথবা সকল জনগণ যিম্মি হোক কিন্তু শাসক হোক মুসলিমরা। যারা সেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করে। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা ফায়সালা করে। দারুল ইসলাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলামী আইন বাস্তবায়িত হওয়া ইসলামী শরীয়ত দ্বারা বিচার ফায়সালা করা।
দ্বিতীয়ঃ দারুল হারব। আর তা হচ্ছে প্রত্যেক এমন ভূখণ্ড যেথায় ইসলামী আইন বাস্তবায়িত নয়। যা ইসলামী শরীয়ত দ্বারা পরিচালিত হয় না। চাই তার জনগণ যারাই হোক না কেন। চাই তারা বলে- তারা মুসলিম। বা তারা আহলে কিতাব অথবা তারা (অন্য) কাফের। কোন রাষ্ট্রকে দারুল হারব নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলামী আইন বাস্তবায়িত না থাকা। ইসলামী শরীয়ত দ্বারা বিচার ফায়সালা না করা। (তাফসীর ফী-যিলালিল কুরআন, সূরা মায়েদা-২৭-৪০ আয়াতের তাফসীর দেখুন)
মুহাম্মাদ কুতুব রহঃ বলেনঃ
والذي عليه جمهور العلماء أن الدار تأخذ وصفها من غلبة الأحكام عليها ـ أي بصرف النظر عن عقائد أهلها ـ فالأرض التي تحكمها شريعة الله فهي دار إسلام، ولو كان أغلب سكانها غير مسلمين، كما كانت الهند خلال ثمانية قرون من الحكم الإسلامي، وأغلب سكانها المجوس عباد البقر. كذلك الأرض التي لا تحكمها شريعة الله فهي دار حرب ولو كان أغلب سكانها مسلمين،
জুমহুর উলামার মত হচ্ছে, দার নির্ধারিত হবে তা কোন বিধান দ্বারা শাসিত তার প্রতি লক্ষ্য করে। অর্থাৎ ঐ ভূখণ্ডের মানুষ কোন বিশ্বাসের তা বিবেচ্য হবে না। যে রাষ্ট্র আল্লাহ্* তায়ালার শরীয়ত শাসিত হবে তা দারুল ইসলাম যদিও বা তার অধিকাংশ অধিবাসী অমুসলিম হয়। যেমন অষ্টম শতাব্দীতে ইসলামী শাসনকালে হিন্দুস্তানের অবস্থা ছিল। অধিকাংশ জনগণ ছিল গো-পূজারী মাজুসী। অনুরূপ যে রাষ্ট্র আল্লাহ্* তায়ালার শরীয়ত দ্বারা শাসিত নয় তা দারুল হারব। যদিও তার অধিকাংশ জনগণ মুসলিম হয়। (ওয়া’কেউনাল মুয়াসের (واقعنا العاصر) ,পৃষ্ঠা-৪২৭)
উস্তায আব্দুল কাদের আউদাহ রহঃ এর অভিমতঃ
دار الكفر تشمل كل البلاد غير الإسلامية التي لا تدخل تحت سلطان المسلمين، أولا تظهر فيها أحكام الإسلام، سواء أكانت هذه البلاد تحكمها دولة واحدة، أو تحكمها دول متعددة، ويستوي أن يكون بين سكانها المقيمين إقامة دائمة مسلمون أولا يكون، مادام المسلمون عاجزين عن إظهار أحكام الإسلام
দারুল কুফর হচ্ছে এমন সকল অইসলামিক অঞ্চল সমূহ যা মুসলিমদের অধীনে নেই। অথবা যেথায় ইসলামী বিধান কার্যকর নয়। চাই উক্ত অঞ্চল সমূহ কোন এক রাষ্ট্র দ্বারা শাসিত হোক অথবা একাধিক রাষ্ট্র দ্বারা। চাই সেখানের স্থায়ী অধিবাসী মুসলিম হোক বা অমুসলিম। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমগণ ইসলামী বিধান কার্যকর করা থেকে অপারগ হয়।
(আত-তাশরি’উল জিনায়ী আল-ইসলামী-التشريع الجنائي الإسلامي, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭৫)
উম্মতের নির্ভরযোগ্য মুজাতাহিদ উলামা-ফুকাহা রহঃ এর কিতাব অধ্যয়নের পর, আমরা দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরের উপরক্ত পরিচয় পাই। তাই আমরা ইহাই গ্রহন করি ও বিশ্বাস করি। শরয়ী কোন সিদ্ধান্ত নিজ প্রবৃত্তি থেকে আমদানি না করে শরীয়তের মাসদার থেকে আহরণ করি। আমাদের আহরণে যদি কোন ভুল হয়ে যায়, আল্লাহ্* রাব্বুল ইজ্জাতের কাছে ক্ষমা চাই। প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে পানাহ চাই। কোন ভাই! যদি শরয়ী দলীল দ্বারা আমাদের ভুল ধরিয়ে দেন ইনশাআল্লাহ্* আমারা প্রসস্থ হৃদয়ে তা গ্রহণ করব। কারণ আমরা কোন ব্যক্তি-মতের পুজারি না বরং শরীয়তের অনুসারী। আমরা ইনশাআল্লাহ্* হৃদয় থেকে ঐ ভাইয়ের জন্য দুয়া করব।
#ইনশাআল্লাহ্*_চলবে
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
https://www.facebook.com/permalink.p...00012678370993
Comment