#প্রশ্ন – দারুল ইসলাম ও দারুল হারব সম্পর্কে জানাবেন কি? কখন দারুল হারব দারুল ইসলামের পরিণত হয়? এ ব্যাপারে ওলাম্যে কেরাম, সালাফ আস সালেহিন ও ওলামায়ে দেওবন্দের ফতোয়ার আলোকে জানাবেন। [প্রশ্ন করেছেন আপামর ফেসবুক জনতা]
(পূর্বে সম্ভবত পোস্ট হয়েছে, তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পোস্ট করা হল).
উত্তর - প্রতিটি রাষ্ট্র হয়ত দারুল ইসলাম হবে নয়ত দারুল কুফর হবে। এ ব্যাপারে জুমহুর উম্মতের ঐকমত বিদ্যমান। কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলামও নয় আবার দারুল কুফরও নয় তা কখনই হতে পারে না।
.
আল্লামা কাসানী রহঃ বলেনঃ-
تَصِيرُ الدَّارُ دَارَ إسْلَامٍ أَوْ دَارَ كُفْرٍ
“দার” হয়ত দারুল ইসলাম হবে নয়ত দারুল কুফর হবে ...... (বাদাইউস সানায়ে’, পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
হ্যাঁ তবে দারুল কুফর আবার মৌলিক ২ ভাগে বিভক্তঃ-
(১) দারুল হারব। (যাদের সাথে মুসলিমদের কোন সন্ধি বা চুক্তি নেই)
(২) দারুল আহাদ। (যাদের সাথে মুসলিমদের সন্ধি বা চুক্তি আছে)
.
ইবনে আব্বাস রাদিঃ বলেনঃ-
"كان المشركون على منزلتين من النبي صلى الله عليه وسلم والمؤمنين، كانوا مشركي أهل حرب يقاتلهم ويقاتلونه، ومشركي أهل عهد لا يقاتلهم ولا يقاتلونه"
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া সাল্লাম ও মুমিনদের কাছে মুশরিদের অবস্থান ছিল দুধরণের। কিছু মুশরিক ছিল যুদ্ধরত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন তারাও তাঁর বিরদ্ধে যুদ্ধ করতো। আর কিছু মুশরিক ছিল চুক্তিবদ্ধ। তিনিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন না তারাও তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত না। (সহীহ বুখারী, কিতাবুত তালাক, অধ্যায়ঃ নিকাহু মান আসলামা মিনাল মুশরিকাত ...,)
.
উপরোক্ত বর্ণীত হাদীস থেকে দারুল কুফর দুভাগে বিভক্ত হওয়া স্পষ্ট রূপে বুঝে আসে।
ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ বলেনঃ-
والكفار إما أهل حرب وإما أهل عهد
কুফফার হয়ত যুদ্ধরত হবে নয়ত চুক্তিবদ্ধ হবে। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ, খণ্ড-২ পৃষ্ঠা-৪৭৫)
.
দারুল কুফর কখন দারুল ইসলাম হয়?
.
দারুল কুফর কখন দারুল ইসলাম হবে এ ব্যাপারে হানাফী ফুকাহাগনের মাঝে কোন দ্বিমত বিদ্যমান নেই। কিন্তু দারুল ইসলাম কখন দারুল কুফর হয় এ ব্যাপারে দ্বিমত বিদ্যমান।
.
আল্লামা কাসানী রহঃ বলেনঃ-
لَا خِلَافَ بَيْنَ أَصْحَابِنَا فِي أَنَّ دَارَ الْكُفْرِ تَصِيرُ دَارَ إسْلَامٍ بِظُهُورِ أَحْكَامِ الْإِسْلَامِ فِيهَا وَاخْتَلَفُوا فِي دَارِ الْإِسْلَامِ ، إنَّهَا بِمَاذَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ ؟
আমাদের ফুকাহাদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, দারুল কুফর শুধুমাত্র ইসলামের আহকাম বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দারুল ইসলামে পরিণত হয়। তবে তাদের দ্বিমত হচ্ছে- দারুল ইসলাম কীভাবে দারুল কুফর হয় সে ক্ষেত্রে। (বাদাইউস সানায়ে’। পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার। অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে একই মত উল্লেখ করা হয়েছেঃ-
اعْلَمْ أَنَّ دَارَ الْحَرْبِ تَصِيرُ دَارُ الْإِسْلَامِ بِشَرْطٍ وَاحِدٍ ، وَهُوَ إظْهَارُ حُكْمِ الْإِسْلَامِ فِيهَا
মনে রাখবে, দারুল হরব শুধুমাত্র একমাত্র শর্তে দারুল ইসলামে পরিণত হবে, আর তা হচ্ছে, সেখানে ইসলামের আইন বাস্তবায়িত থাকা। (ফাতাওয়ায়ে আলামগিরী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২৩)
আলাউদ্দীন হাসকাফী রহঃ আদ-দুররুল মুখতারের মধ্যে বলেছেনঃ-
ودار الحرب تصير دار الإسلام بإجراء أحكام أهل الإسلام فيها
দারুল হারব দারুল ইসলামে পরিণত হয়, সেখানে ইসলামের আইন জারি করার মাধ্যমে। (দেখুনঃ- ফাতাওয়ায়ে শামী, কিতাবুল জিহাদ, বাবুল মুসতামিন )
.
এ ব্যাপারে পুরো উম্মতের ইজমা বিদ্যমান, দারুল কুফর শুধুমাত্র ইসলামী আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দারুল ইসলাম হবে। উপমহাদেশকে উলামায়ে হিন্দ দারুল হারব ফাতওয়া দিয়েছেন। যা সকলেই জানি। কেউ যদি সেই ফাতওয়াকে সঠিক বলে মেনে নেয়। তাহলে তাকে উম্মতের এই ইজমা আবশ্যকীয় ভাবে মানতে হবে- "ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হিসাবে পরিগণিত হবে না। "
.
দারুল ইসলাম যেভাবে দারুল কুফর হয়
.
ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মতঃ
.
দারুল ইসলাম কখন দারুল কুফর বলে গণ্য হবে, এ ব্যাপারে আমাদের ইমামদের মাঝে দ্বিমত আছে। এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ বলেনঃ-
إنَّهَا لَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ إلَّا بِثَلَاثِ شَرَائِطَ ، أَحَدُهَا : ظُهُورُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ فِيهَا وَالثَّانِي : أَنْ تَكُونَ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْكُفْرِ وَالثَّالِثُ : أَنْ لَا يَبْقَى فِيهَا مُسْلِمٌ وَلَا ذِمِّيٌّ آمِنًا بِالْأَمَانِ الْأَوَّلِ
তিনটি শর্তে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হবে।
.
এক, তাতে কুফরী বিধান নাফেয থাকা।
.
দুই, দারুল কুফরের পার্শ্ববর্তী হওয়া। (অর্থাৎ পাশে কোন দারুল ইসলাম না থাকা)
.
তিন, মুসলিম ও জিম্মিরা পূর্বে প্রদান কৃত নিরাপত্তার ন্যায় নিরাপদ না হওয়া। (ইসলামী শাসন থাকা অবস্থায় যেমন নিরাপদ ছিল তেমন নিরাপদ না হওয়া) (বাদাইউস সানায়ে’, পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
ইমাম আবু হানীফা রহঃ দারুল কুফরে পরিণীত হবার যে তিনটি শর্ত বর্ণনা করেছেন তার প্রতিটি শর্ত বর্তমান প্রায় সকল মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পাওয়া যায়। কেননা এসমস্ত রাষ্ট্র কুফফারদের বিধান দ্বারা পরিচালিত। আর ইসলামী খিলাফাত বা শাসন থাকা অবস্থায় মুসলিমরা যে নিরাপত্তার মধ্যে ছিল তার শত ভাগের এক ভাগ নিরাপত্তার মধ্যেও মুসলিমগণ নেই। যা দিবালোকের উজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট। তবে দিনের বেলা কেউ চক্ষু বন্ধ করে থাকলে তা ভিন্ন কথা। আর আমাদের পার্শ্ববর্তী এমন কোন রাষ্ট্রও নেই যা ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত। তাই কেউ যদি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতকেও গ্রহণ করে তথাপি এ ধরণের রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম বা দারুল আমান বলার সুযোগ নেই।
.
.
আমাদের আহনাফ ফুকাহায়ের মত হচ্ছে, মুসলিম মুজাহিদীন যদি কোন দারুল কুফরে আক্রমণ চালায়। কাফেরদের পরাজয় ঘটে। মুজাহিদীন বিজয় লাভ করে। তথাপি ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত তা দারুল ইসলামে পরিণত হবে না। দারুল ইসলাম হবার এক মাত্র শর্ত হচ্ছে, দ্বীন কায়েম করতে হবে। দ্বীন কায়েমের আগে তা দারুল ইসলাম হবে না।
.
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইয়ূসুফ রহঃ এর মতে দারুল কুফরে গনিমত বণ্টন জায়েজ নেই। কিন্তু দেখা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার বিজয়ের পর সেখানেই গণিমত বণ্টন করেছেন। এই মাসআলা আলোচনা করতে গিয়ে শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ-
.
وأما خيبر فإنه افتتح الأرض وجرى فيها حكمه فكانت القسمة فيها بمنزلة القسمة في المدينة وقسم الغنائم فيها قبل أن يخرج منها ففي هذا دليل أن الإمام إذا افتتح بلدة وصيرها دار إسلام بأجراء أحكام الإسلام فيها فإنه يجوز له أن يقسم الغنائم فيها وقد طال مقام رسول الله صلى الله عليه وسلم بخيبر بعد الفتح وأجرى أحكام الإسلام فيها فكانت من دار الإسلام
আর খায়বারের ব্যাপারটি হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার বিজয় করেছেন। সেখানে তাঁর বিধান (ইসলামী বিধান) জারি করেছেন। তাই সেখানে গণিমত বণ্টন মদিনায় বণ্টনের অনুরূপ। খায়বারে গণিমত বণ্টন থেকে প্রমাণিত হয়, যখন ইমাম কোন অঞ্চল বিজয় করবেন এবং ইসলামী শাসন জারি করার মাধ্যমে তাকে দারুল ইসলামে পরিণত করবেন, তখন ইমামের জন্য সেখানে গণিমত বণ্টন করা জায়েজ। খায়বার বিজয়ের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছেন। এবং সেখানে ইসলামী বিধান জারি করেছেন। ফলে তা দারুল ইসলামে পরিণত হয়ে ছিল। (আল-মাবসূত, খণ্ড-১০, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার-গণিমতের বণ্টন)
.
ইয়ামানের নুজাইর অঞ্চল বিজয়ের ব্যাপারে শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ-
إنهم فتحوا ولم تجر احكام الاسلام فيها بعد
وبمجرد الفتح قبل اجراء احكام الاسلام لا تصير دار اسلام
সাহাবায়ে কেরাম নুজাইর বিজয় করেছেন। কিন্তু বিজয়ের পর পরেই (সাহায্যকারী অপর বাহিনী যুক্ত হবার আগে) সেখানে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করেননি। আর শুধুমাত্র বিজয়ের মাধ্যমে, ইসলামী শাসন জারি করার পূর্বে কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হয় না। (আল-মাবসূত, খণ্ড-১০, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার-গণিমতের বণ্টন)
.
নোটঃ উলামায়ে হিন্দ উপমাহাদেশকে দারুল হারব ঘোষণা করে ছিলেন। সুতরাং দারুল হারব তখন পর্যন্ত দারুল ইসলাম হবেনা যতক্ষণ না সেখানে ইসলামী শাসন বাস্তবায়িত হয়। যদি মুসলিমগণ যুদ্ধ করে অথবা অন্য কোন ভাবে কোন অঞ্চল নিজেদের অধীনে নেয় তা দারুল ইসলামে পরিণত হবে না যতক্ষণ না সেখানে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা হয়। এটাই ফিকহে হানাফীর গ্রহণযোগ্য মত।
.
[উস্তাদ আহমাদ নাবিল হাফিযাহুল্লাহর লেখা থেকে সংগ্রহীত]
https://www.facebook.com/PleaseGiveP...305448964157:0
(পূর্বে সম্ভবত পোস্ট হয়েছে, তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পোস্ট করা হল).
উত্তর - প্রতিটি রাষ্ট্র হয়ত দারুল ইসলাম হবে নয়ত দারুল কুফর হবে। এ ব্যাপারে জুমহুর উম্মতের ঐকমত বিদ্যমান। কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলামও নয় আবার দারুল কুফরও নয় তা কখনই হতে পারে না।
.
আল্লামা কাসানী রহঃ বলেনঃ-
تَصِيرُ الدَّارُ دَارَ إسْلَامٍ أَوْ دَارَ كُفْرٍ
“দার” হয়ত দারুল ইসলাম হবে নয়ত দারুল কুফর হবে ...... (বাদাইউস সানায়ে’, পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
হ্যাঁ তবে দারুল কুফর আবার মৌলিক ২ ভাগে বিভক্তঃ-
(১) দারুল হারব। (যাদের সাথে মুসলিমদের কোন সন্ধি বা চুক্তি নেই)
(২) দারুল আহাদ। (যাদের সাথে মুসলিমদের সন্ধি বা চুক্তি আছে)
.
ইবনে আব্বাস রাদিঃ বলেনঃ-
"كان المشركون على منزلتين من النبي صلى الله عليه وسلم والمؤمنين، كانوا مشركي أهل حرب يقاتلهم ويقاتلونه، ومشركي أهل عهد لا يقاتلهم ولا يقاتلونه"
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া সাল্লাম ও মুমিনদের কাছে মুশরিদের অবস্থান ছিল দুধরণের। কিছু মুশরিক ছিল যুদ্ধরত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন তারাও তাঁর বিরদ্ধে যুদ্ধ করতো। আর কিছু মুশরিক ছিল চুক্তিবদ্ধ। তিনিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন না তারাও তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত না। (সহীহ বুখারী, কিতাবুত তালাক, অধ্যায়ঃ নিকাহু মান আসলামা মিনাল মুশরিকাত ...,)
.
উপরোক্ত বর্ণীত হাদীস থেকে দারুল কুফর দুভাগে বিভক্ত হওয়া স্পষ্ট রূপে বুঝে আসে।
ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ বলেনঃ-
والكفار إما أهل حرب وإما أهل عهد
কুফফার হয়ত যুদ্ধরত হবে নয়ত চুক্তিবদ্ধ হবে। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ, খণ্ড-২ পৃষ্ঠা-৪৭৫)
.
দারুল কুফর কখন দারুল ইসলাম হয়?
.
দারুল কুফর কখন দারুল ইসলাম হবে এ ব্যাপারে হানাফী ফুকাহাগনের মাঝে কোন দ্বিমত বিদ্যমান নেই। কিন্তু দারুল ইসলাম কখন দারুল কুফর হয় এ ব্যাপারে দ্বিমত বিদ্যমান।
.
আল্লামা কাসানী রহঃ বলেনঃ-
لَا خِلَافَ بَيْنَ أَصْحَابِنَا فِي أَنَّ دَارَ الْكُفْرِ تَصِيرُ دَارَ إسْلَامٍ بِظُهُورِ أَحْكَامِ الْإِسْلَامِ فِيهَا وَاخْتَلَفُوا فِي دَارِ الْإِسْلَامِ ، إنَّهَا بِمَاذَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ ؟
আমাদের ফুকাহাদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, দারুল কুফর শুধুমাত্র ইসলামের আহকাম বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দারুল ইসলামে পরিণত হয়। তবে তাদের দ্বিমত হচ্ছে- দারুল ইসলাম কীভাবে দারুল কুফর হয় সে ক্ষেত্রে। (বাদাইউস সানায়ে’। পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার। অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে একই মত উল্লেখ করা হয়েছেঃ-
اعْلَمْ أَنَّ دَارَ الْحَرْبِ تَصِيرُ دَارُ الْإِسْلَامِ بِشَرْطٍ وَاحِدٍ ، وَهُوَ إظْهَارُ حُكْمِ الْإِسْلَامِ فِيهَا
মনে রাখবে, দারুল হরব শুধুমাত্র একমাত্র শর্তে দারুল ইসলামে পরিণত হবে, আর তা হচ্ছে, সেখানে ইসলামের আইন বাস্তবায়িত থাকা। (ফাতাওয়ায়ে আলামগিরী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২৩)
আলাউদ্দীন হাসকাফী রহঃ আদ-দুররুল মুখতারের মধ্যে বলেছেনঃ-
ودار الحرب تصير دار الإسلام بإجراء أحكام أهل الإسلام فيها
দারুল হারব দারুল ইসলামে পরিণত হয়, সেখানে ইসলামের আইন জারি করার মাধ্যমে। (দেখুনঃ- ফাতাওয়ায়ে শামী, কিতাবুল জিহাদ, বাবুল মুসতামিন )
.
এ ব্যাপারে পুরো উম্মতের ইজমা বিদ্যমান, দারুল কুফর শুধুমাত্র ইসলামী আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দারুল ইসলাম হবে। উপমহাদেশকে উলামায়ে হিন্দ দারুল হারব ফাতওয়া দিয়েছেন। যা সকলেই জানি। কেউ যদি সেই ফাতওয়াকে সঠিক বলে মেনে নেয়। তাহলে তাকে উম্মতের এই ইজমা আবশ্যকীয় ভাবে মানতে হবে- "ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত উপমহাদেশের কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হিসাবে পরিগণিত হবে না। "
.
দারুল ইসলাম যেভাবে দারুল কুফর হয়
.
ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মতঃ
.
দারুল ইসলাম কখন দারুল কুফর বলে গণ্য হবে, এ ব্যাপারে আমাদের ইমামদের মাঝে দ্বিমত আছে। এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ বলেনঃ-
إنَّهَا لَا تَصِيرُ دَارَ الْكُفْرِ إلَّا بِثَلَاثِ شَرَائِطَ ، أَحَدُهَا : ظُهُورُ أَحْكَامِ الْكُفْرِ فِيهَا وَالثَّانِي : أَنْ تَكُونَ مُتَاخِمَةً لِدَارِ الْكُفْرِ وَالثَّالِثُ : أَنْ لَا يَبْقَى فِيهَا مُسْلِمٌ وَلَا ذِمِّيٌّ آمِنًا بِالْأَمَانِ الْأَوَّلِ
তিনটি শর্তে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হবে।
.
এক, তাতে কুফরী বিধান নাফেয থাকা।
.
দুই, দারুল কুফরের পার্শ্ববর্তী হওয়া। (অর্থাৎ পাশে কোন দারুল ইসলাম না থাকা)
.
তিন, মুসলিম ও জিম্মিরা পূর্বে প্রদান কৃত নিরাপত্তার ন্যায় নিরাপদ না হওয়া। (ইসলামী শাসন থাকা অবস্থায় যেমন নিরাপদ ছিল তেমন নিরাপদ না হওয়া) (বাদাইউস সানায়ে’, পরিচ্ছেদঃ কিতাবুস সিয়ার অধ্যায়ঃ মা’নাদ দারাইন দারিল ইসলাম ওয়া দারিল কুফর)
.
ইমাম আবু হানীফা রহঃ দারুল কুফরে পরিণীত হবার যে তিনটি শর্ত বর্ণনা করেছেন তার প্রতিটি শর্ত বর্তমান প্রায় সকল মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পাওয়া যায়। কেননা এসমস্ত রাষ্ট্র কুফফারদের বিধান দ্বারা পরিচালিত। আর ইসলামী খিলাফাত বা শাসন থাকা অবস্থায় মুসলিমরা যে নিরাপত্তার মধ্যে ছিল তার শত ভাগের এক ভাগ নিরাপত্তার মধ্যেও মুসলিমগণ নেই। যা দিবালোকের উজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট। তবে দিনের বেলা কেউ চক্ষু বন্ধ করে থাকলে তা ভিন্ন কথা। আর আমাদের পার্শ্ববর্তী এমন কোন রাষ্ট্রও নেই যা ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত। তাই কেউ যদি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতকেও গ্রহণ করে তথাপি এ ধরণের রাষ্ট্রকে দারুল ইসলাম বা দারুল আমান বলার সুযোগ নেই।
.
.
আমাদের আহনাফ ফুকাহায়ের মত হচ্ছে, মুসলিম মুজাহিদীন যদি কোন দারুল কুফরে আক্রমণ চালায়। কাফেরদের পরাজয় ঘটে। মুজাহিদীন বিজয় লাভ করে। তথাপি ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত তা দারুল ইসলামে পরিণত হবে না। দারুল ইসলাম হবার এক মাত্র শর্ত হচ্ছে, দ্বীন কায়েম করতে হবে। দ্বীন কায়েমের আগে তা দারুল ইসলাম হবে না।
.
ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইয়ূসুফ রহঃ এর মতে দারুল কুফরে গনিমত বণ্টন জায়েজ নেই। কিন্তু দেখা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার বিজয়ের পর সেখানেই গণিমত বণ্টন করেছেন। এই মাসআলা আলোচনা করতে গিয়ে শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ-
.
وأما خيبر فإنه افتتح الأرض وجرى فيها حكمه فكانت القسمة فيها بمنزلة القسمة في المدينة وقسم الغنائم فيها قبل أن يخرج منها ففي هذا دليل أن الإمام إذا افتتح بلدة وصيرها دار إسلام بأجراء أحكام الإسلام فيها فإنه يجوز له أن يقسم الغنائم فيها وقد طال مقام رسول الله صلى الله عليه وسلم بخيبر بعد الفتح وأجرى أحكام الإسلام فيها فكانت من دار الإسلام
আর খায়বারের ব্যাপারটি হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার বিজয় করেছেন। সেখানে তাঁর বিধান (ইসলামী বিধান) জারি করেছেন। তাই সেখানে গণিমত বণ্টন মদিনায় বণ্টনের অনুরূপ। খায়বারে গণিমত বণ্টন থেকে প্রমাণিত হয়, যখন ইমাম কোন অঞ্চল বিজয় করবেন এবং ইসলামী শাসন জারি করার মাধ্যমে তাকে দারুল ইসলামে পরিণত করবেন, তখন ইমামের জন্য সেখানে গণিমত বণ্টন করা জায়েজ। খায়বার বিজয়ের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছেন। এবং সেখানে ইসলামী বিধান জারি করেছেন। ফলে তা দারুল ইসলামে পরিণত হয়ে ছিল। (আল-মাবসূত, খণ্ড-১০, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার-গণিমতের বণ্টন)
.
ইয়ামানের নুজাইর অঞ্চল বিজয়ের ব্যাপারে শামসুল আয়িম্মাহ ইমাম সারাখসী রহঃ বলেনঃ-
إنهم فتحوا ولم تجر احكام الاسلام فيها بعد
وبمجرد الفتح قبل اجراء احكام الاسلام لا تصير دار اسلام
সাহাবায়ে কেরাম নুজাইর বিজয় করেছেন। কিন্তু বিজয়ের পর পরেই (সাহায্যকারী অপর বাহিনী যুক্ত হবার আগে) সেখানে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করেননি। আর শুধুমাত্র বিজয়ের মাধ্যমে, ইসলামী শাসন জারি করার পূর্বে কোন রাষ্ট্র দারুল ইসলাম হয় না। (আল-মাবসূত, খণ্ড-১০, অধ্যায়ঃ কিতাবুস সিয়ার-গণিমতের বণ্টন)
.
নোটঃ উলামায়ে হিন্দ উপমাহাদেশকে দারুল হারব ঘোষণা করে ছিলেন। সুতরাং দারুল হারব তখন পর্যন্ত দারুল ইসলাম হবেনা যতক্ষণ না সেখানে ইসলামী শাসন বাস্তবায়িত হয়। যদি মুসলিমগণ যুদ্ধ করে অথবা অন্য কোন ভাবে কোন অঞ্চল নিজেদের অধীনে নেয় তা দারুল ইসলামে পরিণত হবে না যতক্ষণ না সেখানে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন করা হয়। এটাই ফিকহে হানাফীর গ্রহণযোগ্য মত।
.
[উস্তাদ আহমাদ নাবিল হাফিযাহুল্লাহর লেখা থেকে সংগ্রহীত]
https://www.facebook.com/PleaseGiveP...305448964157:0
Comment