কুফর দুনা কুফরের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর একটি উক্তির অযুহাত দেখিয়ে তথাকথিত আহলে হাদিস ও সালাফী সম্প্রদায়ের অনেকেই ‘কুফর দুনা কুফর’ এর ব্যাপারটি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। উক্তিটি এ রকম :
তাউস ইবনে আব্বাস থেকে উল্লেখিত আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণনা করে বলেন যে, আয়াতে উল্লেখিত কুফর বলতে তোমরা যা মনে করে থাকো তা নয়। এ বর্ণনাটি হাকিমও উদ্ধৃত করেছেন তার মুসতাদরাক গ্রন্থে সুফইয়ান বিন উইয়ায়নাহ্’র বরাতে এবং বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর ২/৮৫/৮৬)
এই আছারের উপর ভিত্তি করে তাদের অনেকে আল্লাহর অবতীর্ণ আইন-বিধান ব্যতীত শাসন ও বিচার-ফায়সালার শুধুমাত্র পাঁচটি অবস্থা উল্লেখ করেছেনঃ
(১) যে মানব রচিত আইন-বিধানকে আল্লাহর বিধানের চেয়ে উত্তম ও উপযোগী মনে করবে সে প্রকৃত কাফির।
(২) যে ব্যক্তি উভয় প্রকার আইন-বিধানকে সমানভাবে বৈধ মনে করবে সে প্রকৃত কাফির।
(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন-বিধানকে উত্তম বিশ্বাস করতঃ মানব রচিত আইন-বিধান দ্বারা শাসন করা বৈধ মনে করে সেও প্রকৃত কাফির।
(৪) যে ব্যক্তি মানব রচিত আইন-বিধানকেই আল্লাহর আইন-বিধান বলে দাবী করবে সেও প্রকৃত কাফির।
(৫) যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর আইন-বিধান দ্বারা শাসন করাই উত্তম ও কর্তব্য এবং মানব রচিত আইন-বিধান দ্বারা শাসন করা অবৈধ ও বর্জনীয় কিন্তু পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার চাপের মুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। এ ব্যক্তি ছোট ও অপ্রকৃত কাফির। এর মাধ্যমে সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হবে না। (আল উরওয়াতুল উছক্বা, ১৬৭-১৬৮)
অর্থাৎ, তাদের ৫ম প্রকারে তারা পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার চাপের কারণে নিয়মিত তাগুতের তৈরী আইন দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে, তাদের অন্তরে তা হালাল মনে না করার কারণে তারা এই কুফরীকে বড় কুফর বলতে নারাজ। যদিও বাস্তবে এমন শাসক / বিচারক পাওয়া খুবই দুস্কর যারা, সর্বদা তাগুতের আইনে বিচার-শাসন করে ঠিকই একই সাথে তারা নিজেদের অন্তরে সেটাকে কুফর ও হারাম মনে করে!! আর ঐ মুফতী সাহেবগণ অন্তরের বিচার করবেনই কিভাবে? সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
তাদের অবস্থানের দলীল হিসেবে তারা ইবনে আব্বাস (রা.)-এর এই উপরে উল্লেখিত ক্বওলটি সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু একই ব্যাপারে তারা ইবনে আব্বাস (রাঃ) অন্যান্য ক্বওল কিংবা এ ব্যাপারে অন্যান্য সালাফদের ক্বওল একেবারেই খেয়াল রাখেন না অথবা জানলেও সেগুলো সামনে আনেন না।
‘কুফর দুনা কুফর’ এর ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর অপর একটি ক্বওল হচ্ছে :
ইমাম ওয়াকি (র.) আখবারুল কুদা (১/৪১)-এ বলেন : হাসান বিন আবি রাবিয় আমাকে বর্ণনা করেছেন, আমাকে আব্দুর রাজ্জাক মা’য়মার হতে, তিনি ইবনে তাউস হতে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস (রা.)-কে, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা, তারাই কাফির - এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন : এটা যথেষ্ট কুফর।
ইবনে আব্বাস (রা.) পর্যন্ত এই সনদটি সহীহ। এর সকল ব্যক্তিই বুখারী-মুসলিমের রাবীদের অন্তর্ভূক্ত সহীহ রাবী। শুধুমাত্র ওয়াকি এর শায়খ, হাসান বিন আবি রাবিয় ব্যতীত। আর তিনি হলেন ইবনে আল জায়দ আল আবদি।
ইবনে আবি হাতিম (র.) বলেন, আমি আমার পিতার সাথে তার কাছ থেকে শুনেছি তিনি সত্যবাদী।
ইবনে হিব্বান (র.) তাকে সিকাহতে উল্লেখ করেছেন। (তাহজীব আত্ তাহজীব : ১/৫১৫)
হাফিজ ইবনে হাজার (র.) বলেছেন, তিনি সত্যবাদী। (তাক্বরীব ১/৫০৫)
ইবনে আব্বাস (রা.)-এর, ‘এটা যথেষ্ট কুফর’ - কথা থেকে বুঝা যায় এ কাজ বড় কুফরী।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে :
ইমাম আবু ই’য়ালা মাসরুক হতে বর্ণনা করেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর নিকট বসা ছিলাম, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, সুহত (অবৈধ উপার্জন) কি? তিনি বললেন, এটা হচ্ছে ঘুষ। সে বললো, বিচার কাজে? তিনি বললেন, এটা যথেষ্ট কুফরী।
- মুসনাদে আবু ইয়ালা (৫২৬৬), ইমাম বায়হাকী (১০/১৩৯), আখবারুল কুদা লি ইমাম ওয়াকি (১/৫২)।
হাফিজ ইবনে হাজার (র.) মাতালিবুল ’আলিয়া (২/২৫০)-তে বর্ণনা করেন এবং মুসাদ্দাদ-এর প্রতি সম্পর্কিত করেন।
এছাড়াও শাইখ হাবিবুর রাহমান আজামী মাতালিবুল ’আলিয়া-এর টীকায় ইমাম বুসিরি (রঃ) এর মন্তব্য উদ্ধৃত করেন যে – ‘মুসাদ্দাদ, আবু ই’য়ালা ও তাবারানী সহীহ সূত্রে মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন’। এছাড়া ইমাম হাকিম (রঃ) এবং তাঁর থেকে ইমাম বায়হাকী (রঃ) আছারটি রেওয়ায়েত করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে হুকুম-এর তিনটি ভাগ রয়েছে :
ক. আইন প্রণয়ন করা :
আইন-এর মাধ্যমে হালাল-হারাম নির্ধারণ করা যা ইতোমধ্যে ইসলামী শরীয়াতে নির্ধারিত আছে। এটা শুধুমাত্র আল্লাহর অধিকার। যে কেউ এ কাজ করবে, সে নিঃসন্দেহে শিরকে-এ লিপ্ত হবে এবং সে কাফির।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.) বলেন, যে ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে হারামকে (অননুমোদিত) হালাল (অনুমোদিত) করে, কিংবা সর্বসম্মতিমে হালালকে হারাম করে অথবা সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শরীয়াতকে প্রতিস্থাপন করে, সে আলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। (মাজমু আল ফাতাওয়া : ৩/২৬৭)
খ. মানব রচিত আইন দ্বারা শাসন / বিচার করা :
১. সর্বদা আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইনে বিচার করা :
এটা ইসলামী শরীয়াত পরিবর্তনের শামিল। এই ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ শাকির (র.) বলেন :
মানব রচিত আইনের এই ব্যাপারটি সূর্যের আলোর মতো পরিস্কার। এটা পরিস্কার কুফ্রী এবং এর মধ্যে লুকানো কিছু নেই, যারা ইসলামের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, তাদের জন্য এ অনুযায়ী কাজ করা অথবা এর কাছে আত্মসমর্পণ করা অথবা একে স্বীকার করার কোন অজুহাত নেই, সে যে কেউ হোক না কেন। তাই সবাইকেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রত্যেকে নিজের জন্য দায়ী থাকবে। তাই আলিমরা পরিস্কারভাবে সত্যকে জানিয়ে দিবেন এবং কোন কিছু গোপন করবেন না, যা বলতে ইসলাম তাদেরকে নির্দেশ দেয়, তা বলে দিবেন। (উমদাতুত তাফসীর, মুখতাছার তাফসীর ইবনে কাছীর : ৪/১৭৩-১৭৪)
২. শরীয়া আইন অপরিবর্তনীয় রেখে, ব্যক্তি স্বার্থে মাঝে মাঝে আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইনে বিচার করা :
এই ব্যক্তি এখনো মুসলিম, ইবনে আব্বাস (রা.)-এর প্রথম উক্তি এই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। সৌদি আরবের শরীয়া কাউন্সিলের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শাইখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম (র.) বলেন:
“আর কুফর দুনা কুফর বলতে বুঝায়, যখন কোন বিচারক যে কোন ফায়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে বিচার করে এ অবস্থায় যে, সে জানে যে এ কাজের মাধ্যমে সে আল্লাহর অবাধ্য হচ্ছে, আল্লাহর হুকুমটাই এ ক্ষেত্রে সত্য (অধিক কল্যাণকর) এবং এ কাজ তার থেকে একবার কিংবা এরূপ অল্প সংখ্যক বার প্রকাশ পায়। এই ব্যক্তি বড় কুফ্রী করেনি। আর যারাই আইন প্রণয়ন করে, অন্যদেরকে তা মানতে বাধ্য করে, সেটা কুফরী যদিও তারা ভুল হয়ে যাওয়ার দাবী করে, যদিও আল্লাহর আইনকেই অধিক সত্য মনে করে, এটা হচ্ছে এমন কুফরী যাতে মানুষ দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়। (ফাতওয়া ওয়া রাসায়েল: ১২/২৮০)
গ. মানব রচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা :
যদিও তারা আইন-প্রণয়ন কিংবা বিচার-ফায়সালা করছে না, কিন্তু তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরী আইন বাস্তবায়ন এবং প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, আর যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে’। (সুরা নিসা : ৭৬)
عن طاؤس عن عباس فى قوله "وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ " قال ليس بالكفر الذى تذهبون إليه ، رواه الحاكم فى مستدركه من حديث سفيان بن عيينة و قال صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه ( انظر ابن كثير ৮৫-৮৬)
তাউস ইবনে আব্বাস থেকে উল্লেখিত আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণনা করে বলেন যে, আয়াতে উল্লেখিত কুফর বলতে তোমরা যা মনে করে থাকো তা নয়। এ বর্ণনাটি হাকিমও উদ্ধৃত করেছেন তার মুসতাদরাক গ্রন্থে সুফইয়ান বিন উইয়ায়নাহ্’র বরাতে এবং বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর ২/৮৫/৮৬)
এই আছারের উপর ভিত্তি করে তাদের অনেকে আল্লাহর অবতীর্ণ আইন-বিধান ব্যতীত শাসন ও বিচার-ফায়সালার শুধুমাত্র পাঁচটি অবস্থা উল্লেখ করেছেনঃ
(১) যে মানব রচিত আইন-বিধানকে আল্লাহর বিধানের চেয়ে উত্তম ও উপযোগী মনে করবে সে প্রকৃত কাফির।
(২) যে ব্যক্তি উভয় প্রকার আইন-বিধানকে সমানভাবে বৈধ মনে করবে সে প্রকৃত কাফির।
(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন-বিধানকে উত্তম বিশ্বাস করতঃ মানব রচিত আইন-বিধান দ্বারা শাসন করা বৈধ মনে করে সেও প্রকৃত কাফির।
(৪) যে ব্যক্তি মানব রচিত আইন-বিধানকেই আল্লাহর আইন-বিধান বলে দাবী করবে সেও প্রকৃত কাফির।
(৫) যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর আইন-বিধান দ্বারা শাসন করাই উত্তম ও কর্তব্য এবং মানব রচিত আইন-বিধান দ্বারা শাসন করা অবৈধ ও বর্জনীয় কিন্তু পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার চাপের মুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। এ ব্যক্তি ছোট ও অপ্রকৃত কাফির। এর মাধ্যমে সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হবে না। (আল উরওয়াতুল উছক্বা, ১৬৭-১৬৮)
অর্থাৎ, তাদের ৫ম প্রকারে তারা পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার চাপের কারণে নিয়মিত তাগুতের তৈরী আইন দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে, তাদের অন্তরে তা হালাল মনে না করার কারণে তারা এই কুফরীকে বড় কুফর বলতে নারাজ। যদিও বাস্তবে এমন শাসক / বিচারক পাওয়া খুবই দুস্কর যারা, সর্বদা তাগুতের আইনে বিচার-শাসন করে ঠিকই একই সাথে তারা নিজেদের অন্তরে সেটাকে কুফর ও হারাম মনে করে!! আর ঐ মুফতী সাহেবগণ অন্তরের বিচার করবেনই কিভাবে? সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
তাদের অবস্থানের দলীল হিসেবে তারা ইবনে আব্বাস (রা.)-এর এই উপরে উল্লেখিত ক্বওলটি সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু একই ব্যাপারে তারা ইবনে আব্বাস (রাঃ) অন্যান্য ক্বওল কিংবা এ ব্যাপারে অন্যান্য সালাফদের ক্বওল একেবারেই খেয়াল রাখেন না অথবা জানলেও সেগুলো সামনে আনেন না।
‘কুফর দুনা কুফর’ এর ব্যাপারে ইবনে আব্বাস (রা.)-এর অপর একটি ক্বওল হচ্ছে :
أخرج وكيع في أخبار القضاة (১/৪১): حدثنا الحسن بن أبي الربيع الجرجاني قال أخبرنا عبدالرزاق عن معمر عن ابن طاووس عن أبيه قال :" سئل ابن عباس عن قوله { ومن لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون} قال: كفى به كفره ".
وهذا الأثر صحيح الإسناد إلى ابن عباس رضي الله عنهما ؛ رجاله رجال الصحيح ما خلا شيخ وكيع: الحسن بن أبي الربيع الجرجاني وهو ابن الجعد العبدي. قال ابن أبي حاتم: سمعت منه مع أبي وهو صدوق ، وذكره ابن حبان في الثقات [انظر تهذيب التهذيب ১/৫১৫] ، وقال الحافظ في التقريب (১/৫০৫) : "صدوق " .
وهذا الأثر صحيح الإسناد إلى ابن عباس رضي الله عنهما ؛ رجاله رجال الصحيح ما خلا شيخ وكيع: الحسن بن أبي الربيع الجرجاني وهو ابن الجعد العبدي. قال ابن أبي حاتم: سمعت منه مع أبي وهو صدوق ، وذكره ابن حبان في الثقات [انظر تهذيب التهذيب ১/৫১৫] ، وقال الحافظ في التقريب (১/৫০৫) : "صدوق " .
ইমাম ওয়াকি (র.) আখবারুল কুদা (১/৪১)-এ বলেন : হাসান বিন আবি রাবিয় আমাকে বর্ণনা করেছেন, আমাকে আব্দুর রাজ্জাক মা’য়মার হতে, তিনি ইবনে তাউস হতে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস (রা.)-কে, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করেনা, তারাই কাফির - এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন : এটা যথেষ্ট কুফর।
ইবনে আব্বাস (রা.) পর্যন্ত এই সনদটি সহীহ। এর সকল ব্যক্তিই বুখারী-মুসলিমের রাবীদের অন্তর্ভূক্ত সহীহ রাবী। শুধুমাত্র ওয়াকি এর শায়খ, হাসান বিন আবি রাবিয় ব্যতীত। আর তিনি হলেন ইবনে আল জায়দ আল আবদি।
ইবনে আবি হাতিম (র.) বলেন, আমি আমার পিতার সাথে তার কাছ থেকে শুনেছি তিনি সত্যবাদী।
ইবনে হিব্বান (র.) তাকে সিকাহতে উল্লেখ করেছেন। (তাহজীব আত্ তাহজীব : ১/৫১৫)
হাফিজ ইবনে হাজার (র.) বলেছেন, তিনি সত্যবাদী। (তাক্বরীব ১/৫০৫)
ইবনে আব্বাস (রা.)-এর, ‘এটা যথেষ্ট কুফর’ - কথা থেকে বুঝা যায় এ কাজ বড় কুফরী।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে :
وأخرج أبويعلى في مسنده (৫২৬৬) عن مسروق قال: " كنت جالساً عند عبدالله ( يعني ابن مسعود ) فقال له رجل : ما السحت ؟ قال : الرشا. فقال : في الحكم ؟ قال: ذاك الكفر ثم قرأ {ومن لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون} "
-وأخرجه البيهقي (১০/১৩৯) ووكيع في أخبار القضاة(১/৫২) ، وذكره الحافظ ابن حجر في المطالب العالية (২/২৫০) ونسبه لمسدد ، ونقل الشيخ حبيب الرحمن الأعظمي في تعليقه على المطالب العالية قول البوصيري : " رواه مسدد وأبويعلى والطبراني موقوفاً بإسناد صحيح والحاكم وعنه البيهقي ..." .
-وأخرجه البيهقي (১০/১৩৯) ووكيع في أخبار القضاة(১/৫২) ، وذكره الحافظ ابن حجر في المطالب العالية (২/২৫০) ونسبه لمسدد ، ونقل الشيخ حبيب الرحمن الأعظمي في تعليقه على المطالب العالية قول البوصيري : " رواه مسدد وأبويعلى والطبراني موقوفاً بإسناد صحيح والحاكم وعنه البيهقي ..." .
ইমাম আবু ই’য়ালা মাসরুক হতে বর্ণনা করেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর নিকট বসা ছিলাম, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, সুহত (অবৈধ উপার্জন) কি? তিনি বললেন, এটা হচ্ছে ঘুষ। সে বললো, বিচার কাজে? তিনি বললেন, এটা যথেষ্ট কুফরী।
- মুসনাদে আবু ইয়ালা (৫২৬৬), ইমাম বায়হাকী (১০/১৩৯), আখবারুল কুদা লি ইমাম ওয়াকি (১/৫২)।
হাফিজ ইবনে হাজার (র.) মাতালিবুল ’আলিয়া (২/২৫০)-তে বর্ণনা করেন এবং মুসাদ্দাদ-এর প্রতি সম্পর্কিত করেন।
এছাড়াও শাইখ হাবিবুর রাহমান আজামী মাতালিবুল ’আলিয়া-এর টীকায় ইমাম বুসিরি (রঃ) এর মন্তব্য উদ্ধৃত করেন যে – ‘মুসাদ্দাদ, আবু ই’য়ালা ও তাবারানী সহীহ সূত্রে মওকুফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন’। এছাড়া ইমাম হাকিম (রঃ) এবং তাঁর থেকে ইমাম বায়হাকী (রঃ) আছারটি রেওয়ায়েত করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে হুকুম-এর তিনটি ভাগ রয়েছে :
ক. আইন প্রণয়ন করা :
আইন-এর মাধ্যমে হালাল-হারাম নির্ধারণ করা যা ইতোমধ্যে ইসলামী শরীয়াতে নির্ধারিত আছে। এটা শুধুমাত্র আল্লাহর অধিকার। যে কেউ এ কাজ করবে, সে নিঃসন্দেহে শিরকে-এ লিপ্ত হবে এবং সে কাফির।
وَالْإِنْسَانُ مَتَى حَلَّلَ الْحَرَامَ - الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ - أَوْ حَرَّمَ الْحَلَالَ - الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ - أَوْ بَدَّلَ الشَّرْعَ - الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ - كَانَ كَافِرًا مُرْتَدًّا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ .- (مجموع الفتاوى)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.) বলেন, যে ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে হারামকে (অননুমোদিত) হালাল (অনুমোদিত) করে, কিংবা সর্বসম্মতিমে হালালকে হারাম করে অথবা সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শরীয়াতকে প্রতিস্থাপন করে, সে আলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। (মাজমু আল ফাতাওয়া : ৩/২৬৭)
খ. মানব রচিত আইন দ্বারা শাসন / বিচার করা :
১. সর্বদা আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইনে বিচার করা :
এটা ইসলামী শরীয়াত পরিবর্তনের শামিল। এই ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়। মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ শাকির (র.) বলেন :
إن في الأمر في هذه القوانين الوضعية واضح وضوح الشمس، هي كفر بواحلإخفاء فيه ولا مداورة، ولا عذر لأحد ممن ينتسب للإسلام ـ كأننا منكان ـ في العمل بها أو الخضوع لها أو إقرارهافليحذر امرؤ لنفسه وكل امرئ حسيب نفسه–(عمدة التفسير لأحمد شاكر)
মানব রচিত আইনের এই ব্যাপারটি সূর্যের আলোর মতো পরিস্কার। এটা পরিস্কার কুফ্রী এবং এর মধ্যে লুকানো কিছু নেই, যারা ইসলামের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, তাদের জন্য এ অনুযায়ী কাজ করা অথবা এর কাছে আত্মসমর্পণ করা অথবা একে স্বীকার করার কোন অজুহাত নেই, সে যে কেউ হোক না কেন। তাই সবাইকেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রত্যেকে নিজের জন্য দায়ী থাকবে। তাই আলিমরা পরিস্কারভাবে সত্যকে জানিয়ে দিবেন এবং কোন কিছু গোপন করবেন না, যা বলতে ইসলাম তাদেরকে নির্দেশ দেয়, তা বলে দিবেন। (উমদাতুত তাফসীর, মুখতাছার তাফসীর ইবনে কাছীর : ৪/১৭৩-১৭৪)
২. শরীয়া আইন অপরিবর্তনীয় রেখে, ব্যক্তি স্বার্থে মাঝে মাঝে আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইনে বিচার করা :
এই ব্যক্তি এখনো মুসলিম, ইবনে আব্বাস (রা.)-এর প্রথম উক্তি এই ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। সৌদি আরবের শরীয়া কাউন্সিলের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শাইখ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম (র.) বলেন:
وأما الذي قيل فيه : كفر دون كفر . إذا حاكم إلى غير الله مع اعتقاد أنه عاصر وأن حكم الله هو الحق فهذا الذي يصدر منه المرة نحوها أما الذي جعل قوانين بترتيب وتخضيع فهو كفر وإن قالوا أخطأنا وحكم الشرع أعدل ففرق بين المقرر والمثبت والمرجح جعلوه هو المرجع فهذا كفر ناقل عن الملة - (فتَاوى ورَسَائل)
“আর কুফর দুনা কুফর বলতে বুঝায়, যখন কোন বিচারক যে কোন ফায়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে বিচার করে এ অবস্থায় যে, সে জানে যে এ কাজের মাধ্যমে সে আল্লাহর অবাধ্য হচ্ছে, আল্লাহর হুকুমটাই এ ক্ষেত্রে সত্য (অধিক কল্যাণকর) এবং এ কাজ তার থেকে একবার কিংবা এরূপ অল্প সংখ্যক বার প্রকাশ পায়। এই ব্যক্তি বড় কুফ্রী করেনি। আর যারাই আইন প্রণয়ন করে, অন্যদেরকে তা মানতে বাধ্য করে, সেটা কুফরী যদিও তারা ভুল হয়ে যাওয়ার দাবী করে, যদিও আল্লাহর আইনকেই অধিক সত্য মনে করে, এটা হচ্ছে এমন কুফরী যাতে মানুষ দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়। (ফাতওয়া ওয়া রাসায়েল: ১২/২৮০)
গ. মানব রচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা :
যদিও তারা আইন-প্রণয়ন কিংবা বিচার-ফায়সালা করছে না, কিন্তু তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরী আইন বাস্তবায়ন এবং প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, আর যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে’। (সুরা নিসা : ৭৬)
Comment