Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফতওয়া_২ঃ- আমার ছেলের নাম রাখবো বলে ঠিক করেছি, এ ব্যাপারে ইসলাম কি কোন নির্দেশনা দিয়েছে?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফতওয়া_২ঃ- আমার ছেলের নাম রাখবো বলে ঠিক করেছি, এ ব্যাপারে ইসলাম কি কোন নির্দেশনা দিয়েছে?

    ২। প্রশ্নঃ আমার ছেলের নাম রাখবো বলে ঠিক করেছি, এ ব্যাপারে ইসলাম কি কোন নির্দেশনা দিয়েছে?



    উত্তরঃ
    সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
    এব্যাপারে কোন দ্বিধা নেই যে, কারো নাম রাখা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা নাম একজন মানুষের পরিচয় বহন করে এবং এর মাধ্যমেই আমরা এক অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি। নাম হলো একজন মানুষের এমন একটি অলংকার বা চিহ্ন যা দ্বারা একজন মানুষকে দুনিয়াতে ডাকা হয় এবং আখিরাতেও ডাকা হবে। বরং নামের মাধ্যমেই একজন ব্যাক্তি কোন দ্বীনের অনুসারী তা নির্নয় করা যায়। একজন ব্যক্তির নাম পোষাকের মতোই তার ব্যক্তিত্বকে আরো আকর্ষনীয় করে। তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে আমাদের চিন্তা করতে হবে তা যেনো পোষাকের মতোই না দীর্ঘ হয়, না খুব ছোট হয়!

    প্রাথমিকভাবে শারীয়াহর কিছু সাধারন মুলনীতি আছে যা মানুষের নাম রাখার ক্ষেত্রে কিছু শ্রেনীবিভাগ করেছে, এর মাঝে কিছু জায়েজ আবার অনেকগুলো আছে যেগুলো নাজায়েজ এবং এই নাজায়েজ নামগুলো রাখার জন্য কোনভাবেই বেছে নেওয়া যাবে না। এধরনের নামের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো-



    - এমন নাম না রাখা, যে নামের অর্থ দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব ব্যতিত অপর কোন কিছুর দাসত্ব বোঝায়; তা কোন রাসুল,নবী কিংবা ফেরেশতা যাই হোক কেনো। আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কোন সত্ত্বার দাসত্ব যেভাবে জায়েজ নেই, ঠিক তেমনি নাম রাখার ক্ষেত্রেও একই হুকুম। উদাহরন দিলে আরো সহজে বুঝতে পারবেন, যেমনঃ কেউ যদি নাম হিসেবে আব্দুর রাসুল (রাসুলের দাস), আব্দুন নাবী (নবীর দাস), আব্দুল আমীর (রাজার দাস) সহ এধরনের যেই নামগুলো আল্লাহ ব্যতির অন্য কোন সত্ত্বার দাসত্বের পরিচয় বহন করে তা রাখা নাজায়েজ। এধরনের নাম কেউ রাখলে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।



    একজন মহান সাহাবী ছিলেন, আব্দুর রহমান ইবনে 'আউফ (রা)। তিনি বলেন, 'আমার নাম ছিলো আব্দে 'আমর, অপর এক বর্ননায় আছে তিনি বলেন, 'আমার নাম ছিলো আব্দুল কাবাহ- কিন্তু আমি ইসলাম গ্রহন করার পর আল্লাহর রাসুল (সা) আমার নাম দিলেন, আব্দুর রহমান'। (আল-হাকীম, ৩/৩০৬। আয যাহাবী (রহ) এই বর্ননা সমর্থন দিয়েছেন)



    - এমন নাম রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে যে সকল নাম কেবল আল্লাহ তা'য়লার সাথে খাস। যেমনঃ আল-খালিক (সৃষ্টিকর্তা), আর-রব (পালনকর্তা), আর-রহমান (পরম করুনাময়), ইত্যাদি। সে সকল নাম যেগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই উপযুক্ত - মালিকুল মুলুক (রাজাদের রাজা), আল-কাহীর (প্রতাপশালী) ; এই ধরনের নাম রাখার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। কারন আল্লাহ পবিত্র কোর'আনে বলেন, "আপনি তাঁর (আল্লাহর) সমমানের কেউ আছে বলে কি জানেন?" (সুরা মারিয়ামঃ ৬৫)



    - যেসকল নাম সরাসরি কুফফারদের পরিচয় বহন করে অথবা যেগুলো তারা ব্যতিত অপর কেউ ব্যবহার করে না;যেমনঃ আব্দুল মসীহ (মসীহ এর দাস), বুটরউস ( নিঃশেষ আত্মা), জুরজুস ( জর্জ)। অর্থ্যাৎ যেসকল নাম কুফফারদের ধর্মের সাথে সম্পর্কিত এমন নাম রাখা যাবে না।



    -যেসকল নামে কোন মুর্তি কিংবা মিথ্যে ইলাহকে ডাকা হয়, তবে সে সকল নামে রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এসকল নাম সম্পুর্নরূপে হারাম, কেউ এ ধরনের নাম ধারন করে থাকলে, অবশ্যই তার নাম পরিবর্তন করতে হবে।



    - যেসকল নামের কোন ভালো অর্থ নেই, যেসকল নাম বাজে অর্থ বহন করে অথবা, যেসকল নাম কারো মর্যাদাকে হীন করে এধরনের নাম রাখা শারীয়াহগত ভাবে মাকরূহ। এধরনের নাম রাখা আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহ বিরোধী, কেননা আল্লাহর রাসুল (সা) আমাদের সুন্দর নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকের নামে যুদ্ধ সম্পর্কিত অর্থ, অথবা কোন রোগের নাম প্রকাশমান থাকে; আর তাই বাজে অর্থ সংবলিত এধরনের নামের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।



    - কিছু নামে খুবই আকর্ষনীয় কিংবা উত্তেজক অর্থ নির্দেশ করে থাকে। আর বিশেষ করে যখন এ ধরনের নাম নারীদের ক্ষেত্রে রাখা হয় তখন তা অনুধাবন করা যায়, মানুষ খুব লোভনীয় চোখে তাদের দিকে তাকায়। এ ধরনের নাম রাখা মাকরূহ।



    - নৈতিক অবস্থার অবক্ষয় হয়েছে এমন কারো নামে সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে মাকরূহ বলা হয়েছে; যেমনঃ গায়ক, নর্তকী এদের নামে। তবে হ্যাঁ, এসকল নৈতিকতা বিচ্যুত মানুষের নাম যদি শারীয়াহ বিরোধি নাম না হয় তবে রাখা যাবে; কিন্তু অবশ্যই সে নাম রাখতে হবে এর অর্থের সৌন্দর্যের কারনে। গায়কের ভক্ত হিসেবে সেই নাম রাখা যাবে না, তা যতো ভালো অর্থই প্রকাশ করুক।



    - যেসকল নামের অর্থ পাপকে নির্দেশ করে বা পাপের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়, এমন নাম রাখাও মাকরূহ। যেমনঃ সারিক (চোর), যালিম (অত্যাচারী)। অথবা কোন পাপাচারীর নাম ;যেমনঃ ফেরাউন, কারুন, এদের নামও রাখা মাকরূহ।



    - পশু-পাখির নাম রাখাও মাকরূহ নির্দেশের মাঝে পরে যায়। কেননা তাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট মানুষ থেকে পৃথক। যেমনঃ আল-হিমার(গাধা), আল-কালব(কুকুর), আল-কিরদ(বানর); এসব নাম রাখা যাবে না।



    - এছাড়া এমন কোন নাম; যেসকল নামের অর্থ এতোই ভালো যে তা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে অতিরিক্ত প্রদর্শন করে, তবে এমন নাম রাখাও মাকরুহ। যেমনঃ আদ-দ্বীন, আল-ইসলাম অথবা নুরুদ্দীন (ধর্মের বাতি), শামসুদ্দীন( দ্বীনের সূরুজ), নুরুল ইসলাম (ইসলামের আলো), শামসুল ইসলাম (ইসলামের সুর্য) এবং আরো অনেক। এধরনের নাম রাখা মাকরূহ; কেননা তা একজন ব্যক্তির মর্যাদাকে অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়। আলেমগন ডাক নাম হিসেবে এধরনের নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। ইমাম আন-নববী (রহ) নিজেই তাঁর ডাক নাম-মুহীউদ্দীন (দ্বীনের প্রান সঞ্চারকারী) ডাকাকে অপছন্দ করতেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (রহ) তাঁর ডাক নাম ত্বকী উদ্দিন ( ধর্মভীরু) ডাকাকে অপছন্দ করতেন, তিনি প্রায় সময় বলতেন, "কিন্তু আমার পরিবার এই নাম রেখেছে আর তাই এই নাম পরিচিত লাভ করেছে"।



    - কেবল মাত্র আল্লাহর স্বতন্ত্র নামগুলোর সাথে দাসত্বের যে নামগুলো যুক্ত; যেমনঃ আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম, নাম গুলো ব্যতিত নিম্নের উল্লেখিত উদাহরনগুলোর সাথে মিল রেখে অন্য কোন নাম রাখাও মাকরূহ। যেমনঃ হাসাবাল্লাহ, রহমতুল্লাহ (আল্লাহর রহমত) এইধরনের নাম রাখা মাকরূহ।

    দেখুনঃ তুহফাত আল মাওদুদ -পৃ-১০৯ ( ইবনুল কাইয়্যিম রহ.)



    - কোন ফেরশতা কিংবা কোর'আন এর সুরা এর সাথে মিল রেখে কারো নাম রাখা মাকরূহ। যেমনঃ কারো নাম যদি রাখা হয় ত্ব-হা, কিংবা ইয়াসীন। কারন এধরনের নামগুলোকে বলা হয়, "হুরুফ আল মুকাত্ত্বা'আহ (যেগুলোর অর্থ কেবল আল্লাহই জানে)। এধরনের নাম রাখা মাকরূহ। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি এমন হয়ে থাকে যে, পরিবার কর্তৃক ছোট থেকেই কোন এক ব্যাক্তি এধরনের নামে পরিচিত হয়ে বড় হয়েছেন, তবে তার ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন করাটা আলেমগন জরুরি মনে করেন নি। তাই নাম পরিবর্তন না করলেও চলবে।



    যেসকল নাম রাখতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এর মাঝে চারটি ভাগ রয়েছেঃ



    -সবচেয়ে ভালো ক্যাটাগরিতে যেদু'টো নাম রাখতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে সেদু'টো হলো-আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন, "আল্লাহর সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেন আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান ;এইদু'টো নাম" (মুসলিম-১৩৯৮)



    -দ্বিতীয় ক্যাটাগরীতে সেসকল নামগুলোকে রাখা হয়েছে যেগুলোর অর্থ আল্লাহর দাসত্বের প্রমান দেয়। যেমনঃ আব্দুল আযীয,আব্দুর রহিম, আব্দুল মালিক, আব্দুসসালাম, ইত্যাদি।



    -তৃতীয় ক্যাটাগরির ভালো নামের মাঝে রয়েছে - আল্লাহর রাসুল এবং নবীগনের নাম। নিশ্চিতভাবে আল্লাহর রাসুল (সা) এর নাম এই ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে ভালো নাম। এরপর মর্যাদা হিসেবে যেকোন নবী কিংবা রাসুলগনের নামে নাম রাখতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (আল-আহক্বাফ ৪৬:৩৫) এক্ষেত্রে ইব্রাহীম, মুসা, 'ঈসা, নুহ (আলাইহিমুসসালাম) এবং এভাবে অন্য নবীগনের নামে নাম রাখা ভালো।



    -চতুর্থ ক্যাটাগরিতে রয়েছে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নামে নাম রাখা। এর মাঝে পুর্বেকার ভালো ব্যক্তি এবং আল্লাহর রাসুল (সা) এর প্রিয় সাহাবীদের নামে নাম রাখা মুস্তাহাব। আলেমগন বলেন, এই নামে নাম রাখা হলে হয়তো নামের প্রভাবে একজন ব্যক্তি উঁচু মর্যাদায় আসীন হতে পারেন।



    - এছাড়া বাকী যেসকল নামগুলোর অর্থ ভালো এবং সুন্দর এমন নাম ও রাখা যায়।



    তবে বাচ্চাদের নাম রাখার পুর্বে কিছু বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত, যেমনঃ



    - এমন নাম বেছে নেয়া যে নামে তাকে আমৃত্যু পরিচয় দিতে কোন বাধা থাকবে না। আর তাই যেনো এমন কোন লজ্জাজনক অবস্থায় আপনার বাচ্চা সম্মুক্ষিন হয়ে না পরে, সে বিষয় বিবেচনা করে সুন্দর নাম রাখা উচিত।



    - বাচ্চার নাম রাখার পুর্বে কয়েকটি দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। নামটি রাখার পুর্বে ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে। বাচ্চাটিকে এই নামে ডাকলে কেমন শোনাবে, যখন সে কৈশোরে পৌছুবে, যুবক বয়সে পৌছুবে, বৃদ্ধ হবে, সব বয়সেই যেনো নামটি তার ব্যক্তিত্বের সাথে সামঞ্জস্য হয় তা বিবেচনায় রাখতে হবে। এমনকি যখন সে বাবা হবে তখন এই নামে কেমন স্যুট করবে তাও বিবেচনাধীন হওয়া উচিত। কারন ইসলামে বাবার নামেই সন্তান পরিচিত লাভ করে। যেহেতু ' আবু'(পিতা).... , এভাবে এই চেইন দীর্ঘ হবে তাই সেভাবেই নাম বেছে নেওয়া উচিত।



    - বাচ্চার নাম রাখার অধিকার বাবার বেশী থাকবে। কেননা বাবার পরিচয়েই সন্তান বড় হবে। অবশ্য স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সন্তানের নাম বেছে নেওয়া মুস্তাহাব; এতে করে আপনার স্ত্রীও তার পছন্দের নাম উপস্থাপন করার সুযোগ পাবে, এবং এতে নিশ্চিতভাবে তিনি খুশি হবেন।



    -সর্বাবস্থায় সন্তান পিতার পরিচয়ে বড় হবে। অর্থ্যাৎ বাবার নাম ব্যতিত অন্য কারো নামে সন্তানের নাম রাখা যাবে না; এমনকি যদি বাবা সন্তানের দেখাশুনা না করে তবেও অন্যের নামে নাম রাখা যাবে না। শারীয়াহ স্পষ্টভাবে এটি হারাম করেছে। তবে যদি কোন বাচ্চা অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে (যা আল্লাহ হারাম করেছেন) পৃথিবীর মুখ দেখে তবে কেবল সেক্ষেত্রে মায়ের নামেই বাচ্চার নাম রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাবার নামে কোনভাবেই সন্তানের নাম রাখা যাবে না।



    আল্লাহ সর্বজ্ঞ।


  • #2
    জাযাকাল্লাহ আখি! আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন। -আমিন!

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ, আখি!

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ আঁখি, অনেক কিছু জানতে পারলাম।। ইনশাল্লাহ আমার বাচ্চাদের নাম রাখার সময় এগুলো অনেক কাজে আসবে। দুয়া করবেন আমি যাতে অনেকগুলো বাচ্চার বাবা হতে পারি আর সুন্দর সুন্দর নাম রাখতে পারি।।

        Comment

        Working...
        X