দোয়া দ্বারা গুনাহ মাফ হওয়া সংক্রান্ত হাদীসগুলোর কয়েক রকম ব্যাখ্যা হতে পারে:
১. যে সকল হাদিসে দোয়ার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার কথা এসেছে সেগুলোতে সগীরা গুনাহ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সগীরা এ সকল দোয়ার দ্বারা মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু কবীরা গুনাহ মাফ হবে না। কেননা, কবীরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা যদি ইহসান করে কাউকে মাফ করে দেন তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে, কোন কোন হাদিসে এসেছে, ‘যুদ্ধের থেকে পলায়ন করে থাকলেও’; আবার কোন কোন হাদিসে এসেছে ‘সাগরের ফেনা পরিমাণ গুনাহ হলেও’- মাফ হয়ে যাবে। এ থেকে তো বোঝা যায় সগীরা কবীরা সব ধরণের গুনাহই মাফ হয়ে যায়!’
এর সমাধান হল, এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য, সে যতবড় গুনাহগারই হোক না কেন, এ সকল দোয়ার দ্বারা তার সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এ সব কবীরা গুনাহ দোয়ার দ্বারা সগীরা গুনাহ মাফ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না।
ইবনে আল্লান রহ. (মৃত্যু ১০৫৭ হি.) বলেন,
أي:غفرت صغائر ذنوبه المتعلقة بحق ربه، وإن كان قد اقترف ما هو من الكبائر فلا يمنع ذلك من غفر الصغائر بالذكر المذكور
“অর্থাৎ তার রবের সাথে সম্পৃক্ত সগীরা গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও সে কবীরা গুনাহ করেছে। এটা উল্লেখিত যিকিরের দ্বারা সগীরা গুনাহ মাফ হওয়ার পথে বাধা হবে না।” (দালীলুল ফালিহীন, ৮:৭১৮)
তবে কবীরা গুনাহ মাফ হওয়ার জন্য তাওবা লাগবে।
২. কোন কোন দোয়াতে ‘আমি তাওবা করছি’ জাতীয় শব্দ থাকে। এ সকল দোয়ার দ্বারা সগীরা কবীরা সব ধরণের গুনাহই মাফ হবে, যদি আন্তরিক তাওবার সাথে পড়ে থাকে। তখন মূলত গুনাহ মাফ হচ্ছে আন্তরিক তাওবার দ্বারা। কারণ তাওবার দ্বারা সগীরা কবীরা সব ধরণের গুনাহই মাফ হয়ে যায়। আর তাওবা না করে শুধু দোয়া পড়ার দ্বারা গুনাহ মাফ হবে না। গুনাহে অটল থেকে শুধু মুখে মুখে মাফ চাওয়া বরং অনেক সময় ঠাট্টা বিদ্রেূাপ বলে গণ্য হতে পারে।
মোল্লা আলী কারী রহ. (মৃত্যু ১০১৪ হি.) বলেন,
ينبغي أن لا يتلفظ بذلك إلا أن كان صادقا وإلا يكون بين يدي الله كاذبا منافقا ولذا روى أن المستغفر من الذنب وهو مقيم عليه كالمستهزىء
“ (আমি তাওবা করছি কথাটি) সত্য দিলে উচ্চারণ করা চাই। অন্যথায় আল্লাহ তাআলার কাছে মিথ্যাবাদি মুনাফিক বলে গণ্য হবে। এ কারণেই বর্ণিত আছে, ‘গুনাহে অটল থেকে ইসতিগফারকারী ব্যক্তি যেন ঠাট্টা বিদ্রেূাপকারী।” (মিরকাত, ৮: ২০৩)
৩. কোন কোন কবীরা গুনাহ অন্যান্য নেক আমলের দ্বারা মাফ হয়ে যেতে পারে। আর দোয়া যেহেতু একটি নেক আমল কাজেই দোয়ার দ্বারাও এই শ্রেণীর কোন কোন কবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যেতে পারে।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. আবু নুআইম ইস্পাহানী রহ. থেকে বর্ণনা করেন,
ان بعض الكبائر تغفر ببعض العمل الصالح وضابطه الذنوب التي لا توجب على مرتكبها حكما في نفس ولا مال
“কোন কোন কবীরা গুনাহ কতক নেক আমলের দ্বারা মাফ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হল, কবীরা গুনাহটি এমন হতে হবে যার কারণে উক্ত গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির জান বা মালের উপর নির্ধারিত কোন (দুনিয়াবী) শাস্তি আবশ্যক না হয়।” (ফাতহুল বারী, ২৫: ১৬০)
আবু নুআইম ইস্পাহানী রহ. এর এ অভিমত অনুযায়ীও ঐসব কবীরা গুনাহ মাফ হবে না যার কারণে দুনিয়াতে উক্ত গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির জানের উপর বা মালের উপর নির্ধারিত কোন শাস্তি বা জরিমানা আবশ্যক হয়।
মোটকথা, তাওবা ছাড়া এবং বান্দার হক আদায় করা এবং আল্লাহর হক কাজা করা ব্যতীত শুধু দোয়ার দ্বারা সব গুনাহ মাফ হওয়ার কোন সূরত নেই। তবে দোয়ার মাধ্যমে সগীরা গুনাহ এবং কোন কোন কবীরা গুনাহও মাফ হয়ে যায়। কাজেই আমাদের উচিৎ দোয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া। সাথে সাথে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা।
[বি.দ্র.সগীরা গুনাহ রীতিমত করে যেতে থাকলে সেটা তখন আর সগীরা থাকে না, বরং কবীরা হয়ে যায়।]
***
Comment