একজন মুসলিমের জন্য যা কিছু জানা থাকা আবশ্যক (পর্ব-১)
তাওহীদের হেফাজত
তাওহীদের হেফাজত
আমরা বিশ্বাস করি, যেই ব্যক্তি এই স্বাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর রসূল । আর সে আল্লাহ ব্যতীত সকল মা’বুদকে অস্বীকার করে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, রমজানের রোযা রাখে এবং সক্ষম হলে হজ্ব আদায় করে সে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। সে মুসলিমদের যে অধিকার আছে তা পাবে এবং মুসলিমদের উপর যা কিছু করা আবশ্যক তার জন্যও তা করা আবশ্যক।
কিন্তু অনেক সময় আমরা এই বিষয়টি ভুলে যাই যে, বিতাড়িত শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিবে না যে, তারা তাদের দ্বীন নিয়ে নিরাপদে থাকবে এবং তারা তাদের তাওহীদের উপর মৃত্যুবরণ করবে। শয়তান তার পূর্ণ শক্তি ব্যয় করবে আল্লাহর বান্দাদেরকে সিরাতে মুস্তাকিম থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। সে মুসলিমদের মাঝে জাহেরী(প্রকাশ্য)এবং বাতেনী(অপ্রকাশ্য)যে ভাবেই হোক শিরক ছড়িয়ে দিতে কোন চেষ্টা বাকি রাখবে না। সে চেষ্টা করবে যাতে মুমিনদের অন্তরে খাঁটি তাওহীদ না থাকে। ফলে ঐ নেয়ামতটা ছুটে যাবে যার জন্য আল্লাহ তায়ালা আসমান জমীন সৃষ্টি করেছেন।
এমন অনেক লোক দেখা যায়, যারা শাহাদাতাইন মুখে উচ্চারণ করে। কিন্তু শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে। ফলে সে গাইরুল্লাহর জন্য পশু জবাই করে। সে মাজারকে তাওয়াফ করে। গাইরুল্লাহর নিকট দোয়া করে। (পীরদের কাছে) গাইরুল্লাহর জন্য মান্নত করে। (পীরদের জন্য) সে গাইরুল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করে। (পীরদের নিকট) এখানে সে বিশ্বাস করছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ তার বিপদসমূহ দূর করবে। (যেমনঃ ওলীরা)!! সে এখানে বিশ্বাস করছে যে, আল্লাহর সাথে এই দুনিয়াতে কিছু কুতুব আছে যারা জগতের বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত করে থাকে!!
আবার এমন কিছু মানুষও আছে যারা মুখে শাহাদাতাইন উচ্চারণ করছে। কিন্তু শয়তান তার অন্তরে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, গনতন্ত্র ইসলামেরই একটি বিধান। সে মনে করে গনতন্ত্রে ইসলাম বিরুধী কিছু নেই। সে মনে করে শাসন জনগনের, আল্লাহর নয়। সে মনে করে আহলে সুন্নাহ এবং শীয়াদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। সে মনে করে তার জন্য এই সুযোগ আছে যে, শরীয়ত যেটাকে উত্তম বলেছে সেটাকে সে অনুত্তম বলতে পারবে এবং শরীয়ত যেটাকে অনুত্তম বলেছে সেটাকে সে উত্তম বলতে পারবে। সে মনে করে ঈমান অন্তরের বিষয়, আমলের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এর প্রত্যেকটি বিষয়ই পবিত্র তাওহীদের আক্বীদাহকে নষ্ট করে দেয়।
আল্লাহ তায়ালা তার কালামে সত্যই বলেছেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ [١٢:١٠٦]
অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।আমার কামনা যে, আমরা আমাদের প্রাণকে জীবিত করবো মহা জগতের প্রতিপালক আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পূর্ণ একত্ববাদকে স্বীকার করার মাধ্যমে। আর তা হবে তাওহীদের উসূল এবং তার শর্তসমূহ ও তা ভঙ্গকারী বিষয়গুলো বিজ্ঞ আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেয়ার পর।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ [٤٧:١٩]
জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।আল্লাহ তায়ালা ইলমকে আমলের আগে এনেছেন। আমার আকাঙ্খা, আমি আমার তাওহীদকে হেফাজত করবো বিতাড়িত শয়তান থেকে। আমার আক্বীদাহ সংক্রান্ত উপকারী যে ইলমগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোতে আছে তা গ্রহণ করার মাধ্যমে (যেগুলো কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং সালফে সালেহীনদের আক্বীদার সাথে মিল পাওয়া যায়)। শুধু শাহাদাতাইন উচ্চারণে করে শয়তানের জন্য মাঠ খালি করে রেখে দিবো না। যাতে শয়তান আমার বিবেক ও অন্তরে ঘুরে বেড়ায় এবং কুফর শিরকের মতো জঘন্য বিষয়গুলোর মাধ্যমে আমার তাওহীদ ও আক্বীদা নষ্ট করে দেয়। যেমনটা আমরা অনেক ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকদের ক্ষেত্রে দেখতে পাই।
আল্লাহ তায়ালা তাওহীদকে আখেরাতে মুক্তির শর্ত বানিয়েছেন। সুতরাং কোন সত্যবাদী, যে আখেরাতের নাজাত চায় সে কি তার থেকে দূরে থাকতে পারে? এবং এই বিষয়টিকে অবহেলা বা তাতে বাড়াবাড়ি করতে পারে?
হে আল্লাহর বান্দারা!তোমরা তোমাদের তাওহীদকে খালেস আল্লাহর জন্য করে নাও। সব সময় তোমাদের তাওহীদকে হেফাজত করতে চেষ্টা করো। যার মাধ্যমে আখেরাতে তোমাদের মুক্তি মিলে।
একজন মুসলিমের জন্য যা কিছু জানা থাকা আবশ্যক - শুরুর বার্তা
Comment