বদনজর - ৪ (শেষ)
-----
[ক]
গত তিন পর্বে আশা করছি বদনজর বিষয়ে আপনাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই। এরপরেও যদি থাকে তাহলে কমেন্টে সুওয়াল করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ উত্তর দেয়া হবে।
.
এপর্বের শুরুতে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক বিষয়ে ইসলামের বিধানটা ক্লিয়ার করি, এরপর বদনজর আক্রান্তের অনেকগুলো চিকিৎসা বলা হবে। জ্বিন বা যাদুর মত নজরের চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ঝামেলা নাই, এটা বেশ সহজ, অতএব আল্লাহর নামে পড়তে থাকুন...
.
[খ]
আচ্ছা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে উলামাদের মতামতের সারকথা হচ্ছে- যদি ঝাড়ফুঁকে শিরকি কিছু না থাকে তাহলে সেটা বৈধ হবে। এক্ষেত্রে সতর্কতাবশত কোরআন এর আয়াত অথবা দু'আয়ে মাসুর (যা হাদিস বা আসারে সাহাবায় আছে) এসব দ্বারা করা উত্তম।
.
দলিল হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করি, হাদিসটি মুসলিম শরিফের।
"...আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে বিভিন্ন মন্ত্র দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, যদি তাতে শিরক না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।" (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ইফাঃ ৫৫৪৪, ইসলাম ওয়েব ২২০০)
.
এটা হলো ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের বিধান, যে রাসুল সা. জাহেলি যুগের মন্ত্র দিয়েও ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন যদি তাতে শিরক না থাকে। উপরন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় তথা বদনজর এর জন্য ঝাড়ফুঁক করার ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী সহ প্রায় হাদীসের কিতাবেই একাধিক হাদিস আছে। অনেক কিতাবে যেমন সহীহ মুসলিমে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়-ই আছে বদনজরের জন্য রুকয়া করা নিয়ে। আমরা শুধু একটা হাদিস দেখে নেই-
"আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নযর এর জন্য রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁক) করার হুকুম করতেন।" (সহীহ মুসলিম, ৫৫৩২, ৩৩, ৩৪)
.
[গ]
এবার বদনজরে চিকিৎসা জেনে নিন..
প্রথম পদ্ধতিঃ যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে আমির ইবনে রাবি'আ এবং সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিস এর ব্যাপারটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে এরপর আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে(মাথায় ও পিঠে) ঢেলে দিবে।
.
সুওয়ালঃ কুলি করার পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ হ্যা, কুলির পানিও জমা করবে। মুসনাদে আহমাদ এর বিস্তারিত হাদিসে কুলি করা পানি নেয়ার কথা এসেছে। সমস্যা নেই! এরপর চাইলে অন্য ভালো পানি দিয়ে গোসল করাবে।
.
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দুয়া গুলো পড়বে, পড়া শেষে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবে.. এরকম কয়েকবার করবে।
১।
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
২।
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৩।
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
.
প্রথম দুটি দু'আ মুসলিম শরিফের দুই হাদিস থেকে নেয়া, রাসূল সা. অসুস্থ হলে জিবরীল আ. এসব দুয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন। তৃতীয় দু'আটি বুখারি মুসলিম উভয়টাতে আছে, দুয়ার শব্দগুলো বুখারি থেকে নেয়া। রাসূল সা. এটা পড়ে অসুস্থদের ফুঁ দিতেন। রাসুল সা. অসুস্থ হলে আয়েশা রা. এটা পড়েছেন।
.
তৃতীয় পদ্ধতিঃ ব্যাথা থাকলে সেই যায়গায় হাত রেখে, অথবা মাথায় হাত রেখে ৩বার করে সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়বেন এরপর সেখানে ফুঁ দিবেন। সমস্যা বেশি হলে এভাবে রুকয়া করা শেষে, এই সুরাগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করা উচিত। ব্যাথা থাকলে এসব সুরা পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
.
চতুর্থ পদ্ধতিঃ যদি কোনো গাছ, গৃহপালিত পশু, দোকান অথবা বাড়িতে নজর লাগে তাহলে উপরের সুরা এবং তার ওপরের দু'আগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন, এরপর ওই পানিটা (গাছে/ঘরে/পশুর গায়ে) ছিটিয়ে দিবেন।
.
[ঘ]
পঞ্চম পদ্ধতিঃ যদি না জানা যায় আপনাকে কার নজর লেগেছে, অথবা অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। আমার পরিচিতদের সমস্যা হলে আমি এভাবে রুকইয়া করতে সাজেস্ট করি।
.
নিয়ম হচ্ছে-
রুকইয়া শারইয়্যার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন, সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন। আর রুকইয়ার গোসল করবেন।
রুকইয়াহ ডাউনলোড পেজের লিংক-
সেখান থেকে প্রথমটি অর্থাৎ "বদনজর (Evil Eye)" এরটা শুনতে পারেন। এটাই রিকোমেনডেড। এছাড়া ৬নং অর্থাৎ সা'দ আল গামিদীর ৩৪মিনিটের রুকয়াটাও শুনতে পারেন।
যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি...
তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে ঘুমানো যাবেনা। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন.. ইনশাআল্লাহ! দুশ্চিন্তার কারণ নাই...
.
আর আপনি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্* আপনার কোনো সমস্যা নাই। আপনার যদি প্রবলেম থাকে তাহলে রুকইয়াহ শুনলে অবশ্যই প্রভাব টের পাবেন।
.
রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-
"একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে নিচের জিনিশগুলো পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে) -
"দরুদ শরিফ ৭বার, ফাতিহা ৭বার, আয়াতুল কুরসি ৭বার, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার, শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭বার"
পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। (এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না.. এমনিই গোসল করবেন)
প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নাই। যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্য কেউ এসব পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দিবে।
ভালো হয়, যদি প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যান।
.
সমস্যা বেশি হলে এরকম ২১দিন করতে পারেন। সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
.
[ঙ]
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কি করবো?
১। সব কথার মাঝে আল্লাহর জিকির করবে, উদাহরণ আগের পর্বে দেয়া হয়েছে।
২। হাদিসে বর্ণিত সকাল সন্ধ্যার দোয়াগুলো পড়বে, বিশেষতঃ "বিসমিল্লাহিল্লাযি...." এটা আর তিন ক্বুল তিনবার।
৩। মেয়ে হলে অবশ্যই পর্দার অভ্যাস করবে।
৪। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উচিত হলো, মাঝেমধ্যেই সুরা ফালাক নাস পড়ে বাচ্চাদেরকে ফুঁ দিবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করেছেন।
৫। শেষে দুটি কথা বলি..
১। আশার কথা হচ্ছে, কোনো ভালো কিছু কেউ দেখলেই বদনজর লাগবে.. এই আতংকে ভুগার দরকার নেই। তাহলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত বহুত আগেই। বাস্তবতা হচ্ছে, নজর লাগে সাধারণত ইউনিক জিনিশে। সবারই বাম্পার ফলন হয়েছে, এই অবস্থায় নজর লাগবেনা সাধারণত। গোটা পাড়ায় সবার অবস্থা করুণ, আপনার জমিতে অনেক ভালো ফসল হয়েছে। এখানে সম্ভাবনা আছে নজর লাগার।
২। এই দু'আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
.....
আল্লাহ আমাদেরকে সকলপ্রকার অনিষ্ঠ থেকে হিফাজত করুক..
.
----------
আল্লাহর রহমতে বদনজর সিরিজ সমাপ্ত
(সংগ্র*হিত)
-----
[ক]
গত তিন পর্বে আশা করছি বদনজর বিষয়ে আপনাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই। এরপরেও যদি থাকে তাহলে কমেন্টে সুওয়াল করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ উত্তর দেয়া হবে।
.
এপর্বের শুরুতে রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁক বিষয়ে ইসলামের বিধানটা ক্লিয়ার করি, এরপর বদনজর আক্রান্তের অনেকগুলো চিকিৎসা বলা হবে। জ্বিন বা যাদুর মত নজরের চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ঝামেলা নাই, এটা বেশ সহজ, অতএব আল্লাহর নামে পড়তে থাকুন...
.
[খ]
আচ্ছা রুকইয়াহ বা ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে উলামাদের মতামতের সারকথা হচ্ছে- যদি ঝাড়ফুঁকে শিরকি কিছু না থাকে তাহলে সেটা বৈধ হবে। এক্ষেত্রে সতর্কতাবশত কোরআন এর আয়াত অথবা দু'আয়ে মাসুর (যা হাদিস বা আসারে সাহাবায় আছে) এসব দ্বারা করা উত্তম।
.
দলিল হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করি, হাদিসটি মুসলিম শরিফের।
"...আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাহেলী যুগে বিভিন্ন মন্ত্র দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, যদি তাতে শিরক না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।" (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ইফাঃ ৫৫৪৪, ইসলাম ওয়েব ২২০০)
.
এটা হলো ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের বিধান, যে রাসুল সা. জাহেলি যুগের মন্ত্র দিয়েও ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন যদি তাতে শিরক না থাকে। উপরন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় তথা বদনজর এর জন্য ঝাড়ফুঁক করার ব্যাপারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী সহ প্রায় হাদীসের কিতাবেই একাধিক হাদিস আছে। অনেক কিতাবে যেমন সহীহ মুসলিমে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায়-ই আছে বদনজরের জন্য রুকয়া করা নিয়ে। আমরা শুধু একটা হাদিস দেখে নেই-
"আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নযর এর জন্য রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁক) করার হুকুম করতেন।" (সহীহ মুসলিম, ৫৫৩২, ৩৩, ৩৪)
.
[গ]
এবার বদনজরে চিকিৎসা জেনে নিন..
প্রথম পদ্ধতিঃ যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে আমির ইবনে রাবি'আ এবং সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিস এর ব্যাপারটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে এরপর আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে(মাথায় ও পিঠে) ঢেলে দিবে।
.
সুওয়ালঃ কুলি করার পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ হ্যা, কুলির পানিও জমা করবে। মুসনাদে আহমাদ এর বিস্তারিত হাদিসে কুলি করা পানি নেয়ার কথা এসেছে। সমস্যা নেই! এরপর চাইলে অন্য ভালো পানি দিয়ে গোসল করাবে।
.
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দুয়া গুলো পড়বে, পড়া শেষে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবে.. এরকম কয়েকবার করবে।
১।
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
২।
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৩।
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
.
প্রথম দুটি দু'আ মুসলিম শরিফের দুই হাদিস থেকে নেয়া, রাসূল সা. অসুস্থ হলে জিবরীল আ. এসব দুয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন। তৃতীয় দু'আটি বুখারি মুসলিম উভয়টাতে আছে, দুয়ার শব্দগুলো বুখারি থেকে নেয়া। রাসূল সা. এটা পড়ে অসুস্থদের ফুঁ দিতেন। রাসুল সা. অসুস্থ হলে আয়েশা রা. এটা পড়েছেন।
.
তৃতীয় পদ্ধতিঃ ব্যাথা থাকলে সেই যায়গায় হাত রেখে, অথবা মাথায় হাত রেখে ৩বার করে সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়বেন এরপর সেখানে ফুঁ দিবেন। সমস্যা বেশি হলে এভাবে রুকয়া করা শেষে, এই সুরাগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করা উচিত। ব্যাথা থাকলে এসব সুরা পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
.
চতুর্থ পদ্ধতিঃ যদি কোনো গাছ, গৃহপালিত পশু, দোকান অথবা বাড়িতে নজর লাগে তাহলে উপরের সুরা এবং তার ওপরের দু'আগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন, এরপর ওই পানিটা (গাছে/ঘরে/পশুর গায়ে) ছিটিয়ে দিবেন।
.
[ঘ]
পঞ্চম পদ্ধতিঃ যদি না জানা যায় আপনাকে কার নজর লেগেছে, অথবা অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। আমার পরিচিতদের সমস্যা হলে আমি এভাবে রুকইয়া করতে সাজেস্ট করি।
.
নিয়ম হচ্ছে-
রুকইয়া শারইয়্যার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন, সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন। আর রুকইয়ার গোসল করবেন।
রুকইয়াহ ডাউনলোড পেজের লিংক-
সেখান থেকে প্রথমটি অর্থাৎ "বদনজর (Evil Eye)" এরটা শুনতে পারেন। এটাই রিকোমেনডেড। এছাড়া ৬নং অর্থাৎ সা'দ আল গামিদীর ৩৪মিনিটের রুকয়াটাও শুনতে পারেন।
যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি...
তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে ঘুমানো যাবেনা। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন.. ইনশাআল্লাহ! দুশ্চিন্তার কারণ নাই...
.
আর আপনি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্* আপনার কোনো সমস্যা নাই। আপনার যদি প্রবলেম থাকে তাহলে রুকইয়াহ শুনলে অবশ্যই প্রভাব টের পাবেন।
.
রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-
"একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে নিচের জিনিশগুলো পড়বেন (যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে) -
"দরুদ শরিফ ৭বার, ফাতিহা ৭বার, আয়াতুল কুরসি ৭বার, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭বার, শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭বার"
পড়ার পর হাত উঠাবেন, এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। (এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না.. এমনিই গোসল করবেন)
প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন, সমস্যা নাই। যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্য কেউ এসব পড়ে পানিতে ফু দিয়ে দিবে।
ভালো হয়, যদি প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যান।
.
সমস্যা বেশি হলে এরকম ২১দিন করতে পারেন। সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
.
[ঙ]
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কি করবো?
১। সব কথার মাঝে আল্লাহর জিকির করবে, উদাহরণ আগের পর্বে দেয়া হয়েছে।
২। হাদিসে বর্ণিত সকাল সন্ধ্যার দোয়াগুলো পড়বে, বিশেষতঃ "বিসমিল্লাহিল্লাযি...." এটা আর তিন ক্বুল তিনবার।
৩। মেয়ে হলে অবশ্যই পর্দার অভ্যাস করবে।
৪। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উচিত হলো, মাঝেমধ্যেই সুরা ফালাক নাস পড়ে বাচ্চাদেরকে ফুঁ দিবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করেছেন।
৫। শেষে দুটি কথা বলি..
১। আশার কথা হচ্ছে, কোনো ভালো কিছু কেউ দেখলেই বদনজর লাগবে.. এই আতংকে ভুগার দরকার নেই। তাহলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত বহুত আগেই। বাস্তবতা হচ্ছে, নজর লাগে সাধারণত ইউনিক জিনিশে। সবারই বাম্পার ফলন হয়েছে, এই অবস্থায় নজর লাগবেনা সাধারণত। গোটা পাড়ায় সবার অবস্থা করুণ, আপনার জমিতে অনেক ভালো ফসল হয়েছে। এখানে সম্ভাবনা আছে নজর লাগার।
২। এই দু'আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন
.
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
.....
আল্লাহ আমাদেরকে সকলপ্রকার অনিষ্ঠ থেকে হিফাজত করুক..
.
----------
আল্লাহর রহমতে বদনজর সিরিজ সমাপ্ত
(সংগ্র*হিত)
Comment