মুসলিমের জন্য যা জানা আবশ্যক - (পর্ব-৮)
ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান
( শেষ দরস)
ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান
( শেষ দরস)
ফেরেস্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ফেরেস্তারা হলো আল্লাহ তায়ালার বাহিনী সমূহ থেকে একটি বাহিনী। আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর অনেক দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। আর তা পূর্ণরুপে সম্পাদনের যোগ্যতাও তিনি দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা হিসেবে ফেরেস্তারা কয়েক প্রকারঃ
ফেরেস্তাদের একজন আছেন যিনি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবীদের নিকট ওহী নিয়ে আসার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর তিনি হচ্ছেন জিবরাঈল আঃ
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ [٢٦:١٩٣]
বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। عَلَىٰ قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنذِرِينَ [٢٦:١٩٤]
আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন, بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُّبِينٍ [٢٦:١٩٥]
সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। পূর্বে এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে যে, ফেরেস্তাদের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ফেরেস্তা হলেন জিবরাঈল আঃ। আল্লাহ তায়ালা তাকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী এবং আমানতদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তাকে মাত্র দুইবার তার আসল চেহারায় দেখেছেন। আর অন্যান্য সময় জিবরাঈল আঃ এক লোকের আকৃতিতে আসতেন।
একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম তাকে পূর্বে দিগন্তে দেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَقَدْ رَآهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِينِ [٨١:٢٣]
তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন। আর অন্যবার দেখেছেন মে’রাজের রজনীতে আকাশে। আল্লাহ তায়ালা এব্যাপারে ইরশাদ করেনঃ
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ [٥٣:١٣]
নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ [٥٣:١٤]
সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে, عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ [٥٣:١٥]
যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। মুসলিম শরীফে উপরুক্ত আয়াতের তাফসীর নিয়ে আয়েশা রাঃ এর বর্ণিত একটি হাদীস আছে যে, তিনি নবী করীম সাঃ কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ তখন তিনি বলেছিলেনঃ ইনি হচ্ছেন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম। তাকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে সেভাবে শুধু দুইবার আমি দেখেছি। আমি তাকে আকাশ থেকে নামতে দেখেছি তার বিশাল গঠনাকৃতিকে প্রকাশ করে। যা পরিব্যাপ্ত ছিল আসমান ও যমীনের মাঝে। (মুসলিম-১৭৭)
ফেরেস্তাদের মাঝে একজন আছেন যিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে নিয়োজিত। তিনি হচ্ছেন মিকাঈল আলাইহিস সালাম। কুরআনে তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ [٢:٩٨]
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু। তিনি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন একজন ফেরেস্তা। আল্লাহ তায়ালার কাছে তার অনেক সম্মান রয়েছে। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর সাথে তার আলোচনা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাকে ফেরেস্তাদের উপর সম্পৃক্ত করেছেন তারা ফেরেস্তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারনে। সুন্নাহতেও তার আলোচনা হয়েছে। যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তার দোয়ায় তাকে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! হে জিবরাঈল, মিকাঈল ও ঈসরাফীলের রব......। (নাসায়ী)
এজন্য উলামায়ে কেরাম *উল্লেখিত তিন ফেরেস্তাকে সর্বোত্তম ফেরেস্তা বলেছেন।
ফেরেস্তাদের মধ্যে একজন আছে যিনি “সূর” এর দায়িত্বে আছেন। তিনি হচ্ছেন ঈসরাফিল আলাইহিস সালাম। তিনি ফেরেস্তাদের মাঝে তৃতীয়জন যারা আলোচনা পিছনে গত হয়েছে। তিনি আরশবহনকারী ফেরেস্তাদের একজন।
“সূর” বলা হয় বিরাট এক সিঙ্গা যাতে *ফুৎকার দেওয়া হবে। আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, এক বেদুইন রাসূল সাঃ এর নিকট এসে বললেন,“ ইয়া রাসূলাল্লাহ! *সূর কী?” তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেন,“ এটা একটা সিঙ্গা যাতে ফুৎকার দেওয়া হবে।” (মুসনাদে আহমাদ)
আবূ *সাঈদ আল খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেনঃ কিভাবে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবো? অথচ সিংগা ফুতকারকারী মুখে *সিঙ্গা নিয়ে বসে আছে এবং কপাল ঝুঁকে আছে, কান খাড়া হয়ে আছে। সে অপেক্ষা করছে কখন তাকে (ফুৎকারের) আদেশ দেওয়া হবে। মুসলিমরা বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন আমরা কী বলব ? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেনঃ তোমরা বলবে “হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি’মাল ওয়াকীল আলাল্লাহি তাওয়াক্কালনা। ( মুসনাদে আহমাদ, তিরমীজি)
ঈসরাফিল আলাইহিস সালাম সিংগায় তিনটা ফুৎকার দিবেনঃ-
১/ নাফখাতুল ফাযা’ বা ভীতি সৃষ্টি করার ফুৎকার।
২/ নাফখাতুস সয়িক্ব বা বেহুশ করার ফুৎকার।
৩/ নাফখাতুল বা’স বা পুনরায় জীবিত করার ফুৎকার।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَيَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ۚ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ [٢٧:٨٧]
যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন, তারা ব্যতীত নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তাঁর কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়। আর এটাই হচ্ছে নাফখাতুল ফাযা’ বা ভয় সৃষ্টি কারী ফুৎকার। আর অপর দুই ফুৎকারে নিম্নের আয়াত দালালত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ [٣٩:٦٨]
শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে। ফেরেস্তাদের একজন হলেন রুহ কবজাকারী ফেরেস্তা। তিনি হচ্ছে মালাকুল মওত বা মৃত্যুর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেস্তা।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ [٣٢:١١]
বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। • মালাকুল মাওতের জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতাকারী ফেরেস্তা আছে যারা বান্দাদের নিকট তাদের আমল অনুযায়ী আসে। যদি বান্দা নেককার হয় তাহলে তার সামনে ভালো আকৃতিতে আসে। আর যদি বদকার হয় তাহলে অত্যন্ত ভয়ংকর সুরতে তার কাছে আসে। আল্লাহ তায়ারা বলেনঃ
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۖ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ [٦:٦١]
তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর প্রবল। তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়। আর তারা বাড়া বাড়ি করে না।• ফেরেস্তাদের একজন আছেন যিনি পাহাড়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মালাকুল জিবাল বলা হয়।
রাসূল সাঃ এর তায়িফে গমন সংক্রান্ত হাদীসে এই ফেরেস্তার কথা বর্ণিত আছে। নবী করীম সাঃ বলেন,“ হঠাৎ একটি মেঘ খন্ড আমাকে ছায়া দিতে লাগল। আমি তার দিকে তাকালাম। তখন দেখি তাতে জিবরাঈল আঃ। তিনি আমাকে ডাক দিলেন এবং বললেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আপনার কওম কী বলেছে তা শুনেছেন এবং আপনাকে তারা কী উত্তর দিয়েছেন (তাও শুনেছেন)। আল্লাহ তায়ালা আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেস্তাকে পাঠিয়েছেনা। আপনি তাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তাকে আদেশ করুন। অতঃপর আমাকে পাহাড়ের ফেরেস্তা ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি তাদের ব্যাপারে যা চান (তাই হবে)। আপনি যদি চান তাহলে আমি তাদের উপর “আখশাবাইন” কে সমান করে দিবো। তখন নবী করীম সাঃ বললেনঃ না, বরং আমি আশা করি যে, তাদের বংশধরদের কেউ এমন হবে যে এক আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী)
আল আখশাবান দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মক্কার দু’টি পাহাড়। আবূ কুবাইস এবং তার বিপরীত যে পাহাড় আছে তা।
• ফেরেস্তাদের একজন আছেন যিনি রেহেম বা জরায়ূর কাজে নিয়োজিত।
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাঃ বলেনঃ« আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেস্তাকে নিযুক্ত করেছেন যিনি বলেনঃ হে আমার রব, নুতফা ( বীর্য)। হে রব, জমাট রক্ত। হে রব, গোস্তর টুকরো। যখন তিনি তার গঠনকে পূর্ণ রুপ দিতে চান তখন বলেনঃ *পুরুষ নাকি নারী? ভাগ্যবান নাকি হতভাগা? তার রিযিক কি আর তার মৃত্যু কথন? সুতরাং (এই বিষয়গুলো) পেটে থাকা অবস্থাই লেখা হয়। (বুখারী)
• ফেরেস্তাদের কিছু আছে আরশবহনকারী ফেরেস্তা।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ [٤٠:٧]
যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
وَالْمَلَكُ عَلَىٰ أَرْجَائِهَا ۚ وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ [٦٩:١٧]
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।• ফেরেস্তাদের কতক আছে যারা জান্নাতের দায়িত্বশীল।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ [٣٩:٧٣]
যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ [١٣:٢٣]
তা হচ্ছে বসবাসের বাগান। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। • ফেরেস্তাদের কতক আছে জাহান্নামের দায়িত্বশীল। ( আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের থেকে আশ্রয় কামনা করছি।) তারা হচ্ছে “যাবানিয়্যাহ”। তাদের নেতা হচ্ছে উনিশ জন।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ فِي النَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ادْعُوا رَبَّكُمْ يُخَفِّفْ عَنَّا يَوْمًا مِّنَ الْعَذَابِ [٤٠:٤٩]
যারা জাহান্নামে আছে, তারা জাহান্নামের রক্ষীদেরকে বলবে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের আযাব লাঘব করে দেন। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ [٩٦:١٧]
অতএব, সে তার সভাসদদেরকে আহবান করুক।سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ [٩٦:١٨]
আমিও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।তিনি আরও বলেনঃ
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ [٧٤:٣٠]
এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা)।وَمَا جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً ۙ وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا
আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি।আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّاكِثُونَ [٤٣:٧٧]
তারা ডেকে বলবে, হে মালেক, পালনকর্তা আমাদের কিসসাই শেষ করে দিন। সে বলবে, নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।হাদীসে মালেক নামক ফেরেস্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাকেই জাহান্নামের সর্দার বলা হয়েছে।
বুখারীতে আছে নবী করীম সাঃ বলেনঃ « আমি রাতে স্বপ্নে দেখেছি দু জন লোক আমার কাছে এসেছে। তারা আমাকে বললঃ যে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্বলিত করে সে হলো মালেক জাহান্নামের সর্দার। আর আমি হলাম জিবরাঈল। আর ইনি হলেন মিকাঈল ।» (বুখারী)
ফেরেস্তাদের কতক আছে যারা বায়তুল মা’মুর তওয়াফ করে।
তাদের থেকে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেস্তা বায়তুল মা’মুরে প্রবেশ করে। আর তারা দ্বিতীয় বার আর ফিরে আসে না। আর এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বুখারীতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাঃ বলেনঃ « অতঃপর আমার সামনে বায়তুল মা’মুরকে উঁচু করে ধরা হলো। আমি বললাম,“ হে জিবরাঈল! এটা কী? তিনি বললেন এটা বায়তুল মা’মুর। প্রতিদিন তাতে সত্তর হাজার ফেরেস্তা প্রবেশ করে। তারা যখন এখান থেকে বের হয়ে যায় আর কখনো তাতে প্রবেশ করে না।» (বুখারী)
• ফেরেস্তাদের মাঝে কিছু আছে যারা ভ্রমনকারী।
তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যে সব মজলিসে আল্লাহ তায়ালার যিকির করা হয় সেখানে উপস্থিত হয়। আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ « আল্লাহ তায়ালার এমন কিছু ফেরেস্তা আছে যারা রাস্তায় ঘুরা ফেরা করে। তারা যিকির কারীদেরকে খুঁজতে থাকে। যখন তারা কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালার যিকির করা অবস্থায় পায় তখন একে অপরকে ডেকে বলে,তোমরা তোমাদের কাঙ্খিত বিষয়ের দিকে এসো! তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর তারা তাদেরকে দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত নিজেদের ডানা দিয়ে ঢেকে নেয়। (বুখারী,মুসলিম)
উলামায়ে কেরাম বলেন, এসকল ফেরেস্তারা অতিরিক্ত ফেরেস্তা যারা বিভিন্ন দায়িত্ব মুক্ত।
আর এই বিষয়টিও প্রমাণিত যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছিয়ে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ« আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লাহু এর যমীনে ভ্রমনকারী এমন কিছু ফেরেস্তা আছে যারা আমার *উম্মতের পক্ষ থেকে আমার নিকট সালাম পৌঁছিয়ে দেয়। (তিরমিজী, মুসনাদে আহমাদ)
• ফেরেস্তাদের কিছু হলো কেরামুন কাতিবীন যারা বান্দাদের আমল লিপিবদ্ধ করে এবং তার হিসাব রাখে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ [٨٢:١٠]
অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। كِرَامًا كَاتِبِينَ [٨٢:١١]
সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ [٨٢:١٢]
তারা জানে যা তোমরা কর। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেনঃ
إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ [٥٠:١٧]
যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ [٥٠:١٨]
সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। মুজাহিদ রাহঃ বলেনঃ « একজন ফেরেস্তা ডানদিকে অপরজন বাম দিকে। ডানদিকের ফেরেস্তা নেক আমল লিখে আর বাম দিকের ফেরেস্তা বদ আমল লিখে।
• ফেরেস্তাদের কতক আছে যারা কবরের পরীক্ষা এবং সেখানে বান্দার সওয়াল-জওয়াবের জন্য নিয়োজিত। তারা হলেন মুনকার এবং নাকীর ।
আর এব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। বুখারী এবং মুসলিমে আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ « বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা তার থেকে চলে আসে। অথচ সে তাদের পায়ের জুতার আওয়াজ শুনছে। এমতাবস্থায় তার নিকট দুইজন ফেরেস্তা আসে। তারা তাকে উঠিয়ে বসায়। অতঃপর তাকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, তুমি এই ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলো? সুতরাং মুমিন ব্যক্তি বলে যে, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, উনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রসূল। তারপর তাকে বলা হয়ঃ তুমি জাহান্নামে তোমারা ঐ স্থানটি দেখ! আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে তোমাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। সে তা সব দেখে।»
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ« যখন কোন মাইয়্যেতকে অথবা (তিনি বলেন) তোমাদের কাউকে কবরস্থ করা হয় তখন কালো সবুজ বর্ণের দুইজন ফেরেস্তা আগমন করে। তাদের একজনকে মুনকার বলে অপর জনকে নাকীর বলে। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি এই লোকের ব্যাপারে কী বলো?.......» (তিরমীজি, সহীহ ইবনে হিব্বান»
উপরে উল্লেখিত ফেরেস্তারা হচ্ছেন প্রসিদ্ধ কয়েকজন ফেরেস্তা যাদের নাম এবং কর্ম নিয়ে কুরআন এবং সুন্নাহতে আলোচনা করা হয়েছে। যাদের প্রতি ঈমান আনা বান্দার উপর জরুরী এবং তাদের ব্যাপারে যে সকল শরয়ী নুসূস এসেছে তার সত্যায়ন করাও জরুরী। ( আল্লাহ তায়ালাই সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞানী)
ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান আনার ফায়দাঃ
ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান আনায় মুমিনদের জন্য ফায়দাঃ
১/ আল্লাহ তায়ালার মহত্ব, বড়ত্ব এবং পরিপূর্ণ ক্ষমতা ও শক্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া।
২/ বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার সুক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ এবং বান্দার প্রতি বিশেষ খেয়াল যা এভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের হেফাজত এবং আমল নামা লিপিবদ্ধ ইত্যাদি যাতে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ রয়েছে তার জন্য ফেরেস্তা নিযুক্ত করে দিয়েছেন। বান্দা আল্লাহ তায়ালার এই দয়া ও করুনার উপর শুকরিয়া আদায় করবে।
৩/ ফেরেস্তাদের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি হবে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পূর্ণরুপে তার ইবাদাত করার তাওফীক দিয়েছেন এবং তারা মুমিনদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করে থাকেন।
Comment