আল্লামা শাওকানী রহ. (মৃত্যু: ১২৫০হি.) এর যামানায় কতক এলাকার অধিবাসীরা তৎকালীন সুলতানের আয়ত্ব থেকে বের হয়ে যায়। তারা সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেসব এলাকা দখল করে নিয়ে নিজেদের শাসন কায়েম করে। এরপর তারা শরয়ী বিধান ছেড়ে কুফরী বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করতে এবং করাতে থাকে। তিনি তাদের ব্যাপারে বলেন,
أنهم يحكمون ويتحاكمون إلى من يعرف الأحكام الطاغوتية منهم في جميع الأمور التي تنونبهم وتعرض لهم من غير انكار ولا حياء من الله ولا من عباده ولا يخافون من أحد بل قد يحكمون بذلك بين من يقدرون على الوصول إليهم من الرعايا ومن كان قريبا منهم. وهذا الأمر معلوم لكل أحد من الناس لا يقدر أحد على انكاره ودفعه وهو أشهر من نار على علم. ولا شك ولا ريب أن هذا كفر بالله سبحانه وتعالى وبشريعته التي أمر بها على لسان رسوله واختارها لعباده في كتابه وعلى لسان رسوله. بل كفروا بجميع الشرائع من عند آدم عليه السلام إلى الآن، وهؤلاء جهادهم واجب وقتالهم متعين حتى يقبلوا أحكام الإسلام ويذعنوا لها ويحكموا بينهم بالشريعة المطهرة ويخرجوا من جميع ما هم فيه من الطواغيت الشيطانية. و مع هذا، فهم مصرون على أمور غير الحكم بالطاغوت والتحاكم إليه. وكل واحد منها على انفراده يوجب كفر فاعله و خروجه من الإسلام. و ذلك إطباقهم على قطع ميراث النساء، و إصرارهم عليه وتعاضدهم على فعله. اهـ
“তারা তাদের সকল বিষয়ে বিচারক বানায় এবং বিচার নিয়ে যায় তাদের ঐসব লোকদের নিকট যারা তাগুতী বিধি-বিধান জানে। এতে তাদের কোন আপত্তিও নেই, আল্লাহ তাআলা বা তার বান্দাদের থেকে কোন লজ্জাবোধও নেই। কাউকে তারা ভয়ও করে না। কখনোও কখনোও তো বরং তারা তাদের আশেপাশের বাসিন্দা এবং অন্যান্য প্রজাসাধারণের যাদেরকে বাগে পায় তাদের মাঝেও এই সব বিধান দিয়ে বিচার-ফায়সালা করে। বিষয়টি সর্বজন বিদিত। কেউ তাতে আপত্তি জানাতে কিংবা প্রতিহত করতে সক্ষম নয়। পর্বতচূড়ায় অগ্নিকুন্ডের চেয়েও তা অধিক প্রসিদ্ধ। কোন সন্দেহ, কোন সংশয় নেই যে, এটি আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর শরীয়তের সাথে কুফরী; যে শরীয়তের আদেশ তিনি তাঁর রাসূলের মাধ্যমে দিয়েছেন, তাঁর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের মাধ্যমে যে শরীয়ত তিনি তার বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন। বরং তারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত অবতীর্ণ সকল শরীয়তের সাথেই কুফরী করেছে। এদের বিরুদ্ধে জিহাদ আবশ্যক। এদের সাথে কিতাল করা ফরযে আইন; যতক্ষণ না তারা ইসলামী বিধি-বিধান কবুল করে, তার সামনে আত্মসমর্পণ করে, পবিত্র শরীয়ত দিয়ে নিজেদের মাঝে বিচার ফায়সালা করে এবং যত শয়তানী তাগুতের মাঝে তারা লিপ্ত আছে তার সব থেকে বের হয়ে আসে।
তাগুতী বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করা-করানো ছাড়াও তারা আরোও কতক এমন কর্মে নিমজ্জিত আছে যার প্রত্যেকটাই স্বতন্ত্রভাবে তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে কাফেরে পরিণত করে এবং তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। তা হচ্ছে, তারা মহিলাদেরকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এর উপরই অটল অবিচল আছে। এ বিষয়ে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগীতা করছে।”
[আদ-দাওয়াউল আ-জিল: ১২-১৩, (‘মাজমুআতুর রাসায়িলিল মুনিরিয়্যাহ্ এর অন্তর্ভুক্ত এক রিসালা।)]
প্রিয় পাঠক, শাওকানী রহ. যেসব লোকের কুফরীর ফতোয়া দিচ্ছেন তাদের চেয়ে কি আমাদের শাসকগুলোর অবস্থা আরোও জঘন্য নয়? তাহলে কেন তারা কাফের হবে না?
আবার দেখুন, তিনি শুধু মহিলাদেরকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হওয়াকেই ইসলাম থেকে বহিষ্কৃতকারী স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফর সাব্যস্ত করেছেন। অথচ তা তো শরীয়তের একটামাত্র বিষয়। যদি তাই হয়, তাহলে আজ যারা গোটা শরীয়তকেই প্রত্যাখান করেছে, এর বিপরীতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়ত বিরোধি আইন প্রবর্তন করেছে- পাঠক একটু ভাবুন! এদের কুফর কত জঘন্য হবে?!
Comment