যেসব কারণে একজন মুসলিম হত্যার উপযুক্ত হয়ে পড়ে
পর্ব-১
==================
==============================
==============================
بسم الله الرحمن الرحيم
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه وسلم
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه وسلم
أما بعد ...
অনেকেই মনে করেন, ‘ইসলাম কোন মুসলমানকে হত্যার অনুমতি দেয় না। যত অপরাধই করুক, তাকে হত্যা করা যাবে না। ইসলাম যেখানে একটা পিঁপড়াকে কষ্ট দেয়ারও অনুমতি দেয় না, সেখানে কালিমার দাবিদার একজন মুসলমানকে কিভাবে হত্যা করা যাবে!!’
ফরিদ মাসউদদের মতো দালালদের বিকৃতি আর প্রোপাগাণ্ডার কারণে ইদানিং এ ধরণের ধ্যান-ধারণা অনেক ছড়িয়েছে। এ কারণে মুজাহিদরা কোন নাস্তিক, মুরতাদ বা জুলহাজ মান্নানের মতো কোন ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করলে কারো কারো মনে সংশয় জাগে, এ হত্যা কিভাবে জায়েয হল? জিহাদিরা হালাল-হারামের তোয়াক্কা করে না। এরা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। এরা নির্দয়। এরা হিংস্র। এরা রক্তপিপাসু- ইত্যাদি।
আর যারা মোটামুটি দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের অনেকের ধারণা- ইসলাম কেবল তিন শ্রেণীর মুসলমানকে হত্যার অনুমতি দেয়:
১. যে মুসলমান ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে কোন নিরপরাধ মুসলমানকে হত্যা করেছে।
২. বিবাহিত যিনাকার পুরুষ বা মহিলা।
৩. দ্বীন ত্যাগী মুরতাদ।
তাদের ধারণা, এর বাহিরে কাউকে হত্যা করা বৈধ নয়। যেমন এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله إلا بإحدى ثلاث النفس بالنفس والثيب الزاني والمارق من الدين التارك للجماعة.
“যে মুসলমান স্বাক্ষী দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহর রাসূল; তিন কারণের কোন একটা ব্যতীত তার রক্ত হালাল নয়: জানের বদলায় জান, বিবাহিত যিনাকার এবং মুসলমানদের জামাআত পরিত্যাগকারী দ্বীনত্যাগী (মুরতাদ)।” (সহীহ বুখারী: হাদিস নং ৬৪৮৪ , সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ৪৪৬৮)এ হাদিসের কারণে তারা মনে করেন, উল্লিখিত তিন প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত আর কাউকে হত্যা করা ইসলামে বৈধ নয়।
আর এই তিন শ্রেণীর হত্যার ব্যাপারেও তাদের অনেকের আকীদা- তা ইমাম ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। তাই, মুজাহিদরা যখন কোন মুরতাদকে হত্যা করেন, তখন তাদের সংশয় লাগে, কিভাবে তা জায়েয হলো! এর প্রেক্ষিতে তারা বিভিন্ন অশোভন মন্তব্যও করে থাকেন।
এখানে তারা দুটো ভুল করেছেন-
এক.
হত্যাকে এই সুনির্দিষ্ট তিন শ্রেণীর মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন; অথচ বাস্তবে হত্যার গণ্ডি আরো অনেক ব্যাপক। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
قال علماؤنا : إن أسباب القتل عشرة بما ورد من الأدلة. اهـ
“আমাদের আইম্মায়ে কেরাম বলেন, দলীল-প্রমাণ দিয়ে সাব্যস্ত যে, হত্যার সবব- দশটি।” (তাফসীরে কুরতুবী: ৭/১১৮) অর্থাৎ এই দশ সববের কোন একটা কোন মুসলিমের মাঝে পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করা হবে।
হাদিসের জওয়াব
উপরোক্ত হাদিসে যে হত্যার সবব তিনটিতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে, এর জওয়াব- হাদিসে মৌলিক তিনটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর শাখা-প্রশাখা দশ (এমনকি দশেরও বেশি) পর্যান্ত পৌঁছায়। অর্থাৎ উপরোক্ত তিন সবব হলো মৌলিক তিনটি সবব, যার ভেতরে আরো অনেক সবব প্রবিষ্ট হয়ে আছে। যেমন- হাদিসে হত্যার একটি সবব বলা হয়েছে ‘কোন মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে হত্যা করা।’ কিন্তু কোন মুসলমানের হত্যায় যদি অনেকে শরীক থাকে, যাদের কেউ সরাসরি হত্যায় (যেমন- যবাই করা বা গুলী করায়) অংশ নিয়েছে, আর কেউ কেউ পাহাড়ায় নিয়োজিত ছিল- তাহলে এই একজন মুসলমানের জানের বদলায় অংশগ্রহণকারী সকলকেই হত্যা করা হবে। যারা সরাসরি যবাই বা গুলী করেছে তাদেরকে যেমন হত্যা করা হবে, যারা পাহাড়ায় নিয়োজিত ছিল তাদেরকেও হত্যা করা হবে। কারণ, তাদের সকলের সম্মিলিত শক্তির বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাই সকলকেই হত্যা করা হবে। পাহাড়াদারদের হত্যার কথাটা এ হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে হাদিসের ব্যাপকতার মধ্যে তারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যান্য হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আছার থেকে সেটা প্রমাণিত। এ সম্পর্কে আলাচনা ইনশাআল্লাহ সামনে আসবে।
দুই.
দ্বিতীয় যে ভুলটি তারা করেছেন, তা হলো- সকল শ্রেণীর হত্যার জন্য ইমামের শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। অথচ মুরতাদ (এবং আরো অনেকের) হত্যার জন্য ইমাম শর্ত নয়, বরং যে কোন মুসলমানই তাদেরকে হত্যা করতে পারবে। যেমন- কোন পিতা তরবারি নিয়ে তার পুত্রকে হত্যার চেষ্টা করছে। পিতাকে হত্যা করা ব্যতীত তার হাত থেকে রক্ষার কোন পথ নেই। এমতাবস্থায় শরীয়তের মাসআলা হল- উক্ত পুত্র তার পিতাকে হত্যা করে দেবে। এ হত্যা নিজের জান রক্ষার জন্য। যেমন- হিদায়াতে বলা হয়েছে,
لو شهر الأب المسلم سيفه على ابنه ولا يمكنه دفعه إلا بقلته يقتله. اهـ
“মুসলিম পিতা যদি তার পুত্রের বিরুদ্ধে তরবারি কোষমুক্ত করে, আর হত্যা ব্যতীত তাকে প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তাহলে (উক্ত পুত্র তার পিতাকে) হত্যা করে দেবে।” (হিদায়া: ১/৩৭৯) দেখুন- এখানে কিন্তু পিতাকে হত্যার জন্য ইমামের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে কোন মুসলমানকে হত্যার জন্য ইমাম শর্ত নয়। ইমাম বিদ্যমান থাকাও শর্ত নয়, ইমামের অনুমতিও শর্ত নয়। দারুল ইসলাম থাকাও শর্ত নয়। দারুল ইসলামের বাসিন্দা হওয়াও শর্ত নয়। কাজেই, যে কোন ধরণের হত্যার জন্য ইমাম কিংবা দারুল ইসলামের শর্ত করা নিতান্তই ভুল।
পরিস্থিতির বিবেচনায় বিষয়টা একটু আলোচনা করে দিলে অনেকেরই উপকারে আসবে মনে হল। তাই আল্লাহর নামে শুরু করলাম। বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে নেই। যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকুতেই ক্ষান্ত রাখবো ইনশাআল্লাহ। ওমা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
Comment