ইসলামে অস্ত্র প্রয়োগের গুরুত্ব
ইসলাম এমন ধর্ম, অস্ত্র যার সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। অস্ত্র প্রয়োগ ব্যতীত এ দ্বীন যথাযথ প্রতিষ্ঠা বা সংরক্ষণ কোনটাই হতে পারে না। বিজাতীয় দুশমনকে প্রতিহত করা এবং ইসলামকে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার আসনে প্রতিষ্ঠা করা যেমন অস্ত্র প্রয়োগ ব্যতীত সম্ভব নয়; মুসলমানদের পারস্পরিক শান্তি-শৃংখলা; জান, মাল ও ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তাও তেমনি অস্ত্র প্রয়োগ ব্যতীত সম্ভব নয়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা কিতাব নাযিল করেছেন, সাথে যমিনে অস্ত্র তৈরির উপাদানও সৃষ্টি করেছেন, যাতে কিতাবে বর্ণিত হেদায়াত ও জীবন বিধানকে অস্ত্রের বলে প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা যায়। কারণ, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে দ্বীন ও দ্বীনের বিধান মেনে চলা সকলের জন্য সম্ভব হয় না। আল্লাহর বিধান ছেড়ে বাঁক পথ ধরা অনেকেরই তবিয়ত। এদেরকে সোজা পথে চালাতে অস্ত্র প্রয়োগের বিকল্প নেই। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কিতাব নাযিলের পাশাপাশি যমিনে অস্ত্রের উপাদান সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ}
“আমি অবশ্যই আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শন(মু’জিযা)সহ লোকদের নিকট প্রেরণ করেছি। আমি তাদের সাথে কিতাব নাযিল করেছি, নাযিল করেছি (আমার তরফ থেকে) এক ন্যায়দণ্ড, যাতে মানুষ (এর মাধ্যমে) ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর আমি লোহা পয়দা করেছি, যার ভেতর রয়েছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ উপকার। তা এ জন্য যে, আল্লাহ দেখতে চান কে তাকে না দেখেও তাঁর (দ্বীনের) ও তাঁর রসূলদের সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অসীমশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী।” (হাদিদ: ২৫) ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
{وأنزلنا الحديد فيه بأس شديد} أي: وجعلنا الحديد رادعا لمن أبى الحق وعانده بعد قيام الحجة عليه. اهـ
“(আর আমি লোহা পয়দা করেছি, যার ভেতর রয়েছে প্রচণ্ড রণশক্তি) অর্থাৎ লৌহকে আমি এমন সব লোকের দমনকারী বানিয়েছি, যারা সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ এসে যাওয়ার পরও হক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং তার সাথে শত্রুতা পোষণ করে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৮/২৭) অতএব, অবাধ্যদেরকে বশীভূত করার জন্য অস্ত্র প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
ولن يقوم الدين إلا بالكتاب والميزان والحديد . كتاب يهدي به، وحديد ينصره، كما قال تعالي ... اهـ
“দ্বীন কিছুতেই কায়েম হবে না কিতাব, মীযান (ন্যায়দণ্ড) এবং লোহা(র সমন্বয়) ব্যতীত। কিতাব থেকে হিদায়াত নেয়া হবে আর লোহা তাকে সাহায্য করবে; যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেছেন ...।” (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৫/৩৬) তিনি অন্যত্র বলেন,
قال تعالى: {وأنزلنا الحديد فيه بأس شديد ومنافع للناس وليعلم الله من ينصره ورسله بالغيب} فمن عدل عن الكتاب قُوِّمَ بالحديد ولهذا كان قوام الدين بالمصحف والسيف. وقد روى عن جابر بن عبد الله رضى الله عنهما قال: امرنا رسول الله صلى الله عليه و سلم ان نضرب بهذا يعنى السيف من عدل عن هذا يعنى المصحف. اهـ
“আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর আমি লোহা পয়দা করেছি, যার ভেতর রয়েছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ উপকার। তা এ জন্য যে, আল্লাহ দেখতে চান কে তাকে না দেখেও তাঁর (দ্বীনের) ও তাঁর রসূলদের সাহায্য করে।’ অতএব, যে কেউ কিতাব ছেড়ে বাঁকা পথ ধরবে, তাকে লৌহ প্রয়োগে সোজা করা হবে। এ কারণেই দ্বীন কায়েমের মাধ্যম (দুটি): কুরআন ও তরবারি। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, এই (কুরআন) ছেড়ে যে ভিন্ন পথ ধরবে, তাকে এই (তরবারি) দ্বারা আঘাত করতে।” (মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/২৬৪) শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. বলেন,
فإن امتناع الناس مما لا يحل لمخافة العقوبة أكثر من امتناعهم خوفاً من الله تعالى وبه ورد الأثر " إن الله يزع بالسلطان فوق ما يزع بالقرآن " . اهـ
“আল্লাহ তাআলার ভয়ের চেয়ে শাস্তির ভয়ে মানুষ নাজায়েয থেকে বেঁচে থাকে বেশি । এ ব্যাপারেই এ আছারটি বর্ণিত আছে- ‘আল্লাহ তাআলা কুরআন দ্বারা যতটুকু শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করেন, সুলতানের দ্বারা এর চেয়ে বেশি করেন।” (শরহুস সিয়ারিল কাবীর: ১/৯১) ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
فى بعض فوائد العقوبات المشروعة فى الدنيا ضبط العوام كما قال عثمان بن عفان رضى الله عنه ان الله ليزع بالسلطان مالا يزع بالقرآن فان من يكون من المنافقين والفجار فانه ينزجر بما يشاهده من العقوبات وينضبط عن انتهاك المحرمات فهذا بعض فوائد العقوبات السلطانية المشروعة واما فوائد الأمر والنهى فأعظم من ان يحصيها خطاب أو كتاب بل هى الجامعة لكل خير يطلب ويراد وفى الخروج عنها كل شر وفساد. اهـ
“শরীয়ত নির্ধারিত কিছু কিছু দুনিয়াবি শাস্তির একটি ফায়েদা এই যে, সেগুলো দ্বারা জনসাধারণের মাঝে শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা হয়। যেমনটা হযরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যতটুকু শান্তি-শৃংখলা আল্লাহ তাআলা কুরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠা করেন না, তার চেয়ে বেশি তিনি সুলতানের দ্বারা প্রতিষ্ঠা করেন।’ কেননা, মুনাফিক ও পাপাচারি লোকেরা শাস্তি দর্শনে বারণ হয় এবং হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। এটি শরীয়ত নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় শাস্তির একটি উপকারী দিক। আর আমর বিল মা’রূপ ও নাহি আনিল মুনকারের উপকারের কথা তো কোন এক বয়ানে বা কিতাবে বুঝানো সম্ভব না। বরং প্রত্যাশিত সকল কল্যাণ এতেই নিহিত। আর তা পরিত্যাগ করাতেই সকল অনিষ্ট ও ফাসাদ।” (মাজমুউল ফাতাওয়া: ১১/৪১৬)অতএব, যারা ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে বুলি আওড়ান; ইসলামে মারামারি নেই, কাটাকাটি নেই বলে মুখে ফেনা তুলেন; দাওয়াত ও ইসলাহের মাধ্যমেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন- তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করেন। আল্লাহ তাআলার চিরন্তন সুন্নাহ’র বিরোধি কথা বলেন। তারা কিছুতেই ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। উপরন্তু উম্মাহকে এক ভয়াবহ বিকৃতি, ফাসাদ ও পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেবে।
Comment