জিহাদ কবুল হওয়ার জন্য আমীরের আনুগত্য শর্ত। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
এ তো হল জিহাদ কবুল হওয়া এবং সওয়াব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কথা। আর বাস্তবেও জিহাদে সফলতা লাভের জন্য, শত্রুকে পরাজিত করে খেলাফত কায়েমের জন্য আমীরের আনুগত্য অপরিহার্য। আনুগত্য ছাড়া প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ বুঝ অনুযায়ী কাজ করতে থাকে- তাহলে একদিকে যেমন সওয়াব থেকে মাহরুম হবে, অন্যদিকে দুনিয়াতেও সফলতা হতে বঞ্চিত হবে। এজন্য হযরত উমারে ফারুক রায়িল্লাহু আনহুর চিরন্তন বাণীটি সর্বদা স্মরণযোগ্য,
হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
আমীরের আনুগত্যের ব্যাপারে শরীয়ত একটা সীমারেখা দিয়েছে। এর বাহিরে যাওয়া যাবে না। গেলে নাফরমানি হবে।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে আমীরের আনুগত্য করতে হবে:
- আমীরের আদেশ যদি শরীয়ত অনুযায়ী হয়, তাহলে আনুগত্য করতে হবে।
- আমীরের আদেশের আনুগত্যে যদি কল্যাণ হবে মনে হয় এবং এ ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ না থাকে বা অধিকাংশ মা’মূরের ধারণা হয় যে, তাতে কল্যাণ রয়েছে: তাহলেও আনুগত্য করতে হবে। তদ্রূপ কল্যাণ হবে কি হবে না তা যদি নিশ্চিত না হয়, বরং উভয়টারই সম্ভাবনা থাকে: তাহলেও আনুগত্য করতে হবে। কেননা, আমীরের আনুগত্য আবশ্যক। সন্দেহের কারণে তা বাদ দেয়া যাবে না।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে আমীরের আনুগত্য করা যাবে না
- আমীরের আদেশ যদি সুস্পষ্ট শরীয়ত পরিপন্থী হয় তাহলে আমীরের আনুগত্য জায়েয হবে না।
- যদি সকলেই নিশ্চিত হয় যে, আমীরের আদেশ মানতে গেলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো বা আমাদের ক্ষতি হবে কিংবা অধিকাংশ মা’মূর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়: তাহলেও আমীরের আনুগত্য করা যাবে না।
মোটকথা: যেখানে আমীরের আনুগত্যের করলে সকলের বা অধিকাংশের রায় অনুযায়ী ক্ষতি নিশ্চিত- সেখানে আমীরের আনুগত্য করা যাবে না, অন্য সকল ক্ষেত্রে আমীরের আদেশ মানতে হবে। অতএব, যেখানে আমীরের আদেশ মানলে কল্যাণ হওয়া না হওয়া উভয়টারই সম্ভাবনা রয়েছে, কোন একটা নিশ্চত না- সেখানেও আমীরের আদেশ মানতে হবে। বাহানা ধরে আমীরের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজের বুঝ মতো চলা জায়েয হবে না।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. (১৮৯হি.) বলেন [ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) এর ব্যাখ্যা সহ]:
وإذا دخل العسكر دار الحرب للقتال بتوفيق الله عز وجل فأمرهم أميرهم بشيء من أمر الحرب؛ فإن كان فيما أمرهم به منفعة لهم فعليهم أن يطيعوه لقوله تعالى : { أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ } النساء : 59 ...
وكذلك إن أمروهم بشيء لا يدرون أ ينتفعون به أم لا؟ فعليهم أن يطيعوه لأن فريضة الطاعة ثابتة بنص مقطوع به، وما تردد لهم من الرأي في أن ما أمر به منتفع أو غير منتفع به لا يصلح معارضاً للنص المقطوع .
وقد تكون طاعة الأمير في الكف عن القتال خيراً من كثير من القتال وقد يكون الظاهر الذي يعتمده الجند يدلهم على شيء والأمر في الحقيقة بخلاف ذلك عند الأمير ولا يرى الصواب في أن يطلع على ما هو الحقيقة عامة الجند، فلهذا كان عليهم الطاعة ما لم يأمرهم بأمر يخافون فيه الهلكة وعلى ذلك أكثر رأي جماعتهم لا يشكون في ذلك، فإذا كان هكذا فلا طاعة له عليهم لقوله صلى الله عليه وسلم : لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق ...
وإن كان الناس في ذلك الأمر مختلفين، فمنهم من يقول فيه الهلكة و منهم من يقول فيه النجاة: فليطيعوا الأمير في ذلك؛ لأن الاجتهاد لا يعارض النص. ولأن الامتناع من الطاعة فتح لسان اللائمة عليهم وفي إظهار الطاعة قطع ذلك عنهم فعليهم أن يطيعوه .
إلا أن يأمرهم بأمر ظاهر لا يكاد يخفى على أحد أنه هلكة أو أمرهم بمعصية فحينئذ لا طاعة عليهم في ذلك ولكن ينبغي أن يصبروا ولا يخرجوا على أميرهم لحديث ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : " من أتاه من أميره ما يكرهه فليصبر فإن من خالف المسلمين قيد شبر ثم مات ما ت ميتة الجاهلية . اهـ
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা যারা তানজীমে যোগ দিয়েছি, আমাদের উচিৎ তানজীমের নির্দেশনা মেনে চলা। তানজীমের আমীরগণের কথা মান্য করা। নিজের মন মতো যেন না চলি। ইতাআতের মধ্যেই কল্যাণ। মন মতো চলার মধ্যে কোনই কল্যাণ নেই। আর আমাদের উমারাদের ব্যাপারে আমাদের আস্থা আছে যে, তারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুবিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তারা আমাদের যে নির্দেশ দেবেন, তা আমাদের ও তানজীমের সার্বিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করেই দেবেন। আমাদের উচিৎ সেগুলো মেনে চলে। বিরোধীতা না করা। সমালোচনা না করে। পালনে অবহেলা না করা। হ্যাঁ, কারো যদি কোন বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমরা তানজীমকে তা জানাতে পারি। তানজীম তা বিবেচনা করবে। প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত বদলে দেবে। তবে তা বিনয়ের সাথে। ঔদ্ধত্তের সাথে নয়। সমালোচনার ভাষায় নয়, নসীহতের ভাষায়। দিলের দরদ নিয়ে।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনারা জানেন, তাগুতরা আমাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। এদের চোখ ফাঁকি দিয়েই কাজ করতে হবে। তানজীম আমাদেরকে এ ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা দেবে- আমাদের উচিৎ সেগুলো যথাযথ মেনে চলা। সামান্য এদিক সেদিক হলেই সমূহ বিপদের আশঙ্কা। এটা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়।
তদ্রূপ আমাদেরকে কিভাবে যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে তানজীম সর্বদা ফিকিরে আছে। যে যে বিভাগে আছেন, সে অনুযায়ী তানজীম তাদের নির্দেশনা দেন। আমাদের উচিৎ সেগুলো মেনে চলা। জিহাদের রাস্তা বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। বহু দীর্ঘ রাস্তা। গন্তব্য অনেক দূর। চতুর্দিকে হায়েনার দল। অন্ধকার রাত্রির মতো ফিতনা সবখানে। একটু অধৈর্য হলেই, একটু গাফেল হলেই জীবনের সব নাস্তানুবাদ হয়ে যাবে। সব আশা নিরাশা হয়ে যাবে। তাই ভাইয়েরা! নিজের মন মতো চলবো না। ইতাআত করে চলবো।
আসলে একটা বাস্তব কথা না বলে পারছি না: আমরা আসলে আমীরের অধীনে চলতে অভ্যস্ত নই। ইমারাত কাকে বলে আমরা দেখিইনি। আমীরকে কিভাবে মানতে হয়- আমরা আসলে তা কখনো দেখিনি। আমরা খেলাফত হারিয়েছি, ইমারতও হারিয়েছি। নেতৃত্ত্বের অধীনে চলার সৌভাগ্য আমাদের কখনো হয়নি। আমীরকে কিভাবে সম্মান করতে হয়, কিভাবে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হয়- তা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। বেশির চেয়ে বেশি কিতাবের দু’চারটা পাতায় পড়েছি। বাস্তবতা আমাদের থেকে অনেক দূরে। আমীর নামক নেআমত আমাদের জীবনে লাভ হয়নি কখনোও। তাই তার কদর বুঝি না। আমরা আসলে নতুন। আবেগের বশে হয়তো কাজে জড়িয়েছি। দ্বীনের দরদে কাফেলায় যোগ দিয়েছি। কিন্তু বাস্তব ময়দান আমাদের সামনে নেই। শরীয়তের প্রকৃত রূপও আমাদের সামনে নেই। তাই আমাদের পদে পদে ভুল হয়ে যায়। হঠাৎ এক সময় অনুভব হয়- এতদিন তাহলে আমি ভুলের উপর চলেছি। এটাই বাস্তবতা। এটা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই।
ভাইয়েরা আমার! আমরা দুর্বল বান্দা। আশাকরি আল্লাহ তাআলা আমাদের মাফ করবেন। তাঁর দ্বীনের জন্য আমাদের কবুল করবেন।
আমি কয়েকটি উদাহরণ দেই, যেগুলোতে আমাদের প্রায়ই ভুল হয়:
- আমরা সিকিউরিটির নিয়ম কানূন প্রায়ই অমান্য করি। অথচ একটা ভুল জীবনের সব কিছুকে তছনছ করে দিতে পারে।
- আমীর সাহেব কখনে কখনো নিষেধ করেন, আপনি অমুক ভাইয়ের কাছে যাবেন না। কিন্তু আমরা প্রায়ই যাই। ফলে ঐ ভাইয়ের বিপদ হলে আমিও আশঙ্কায় থাকি, আমার বিপদ হলে ঐ ভাইও আশঙ্কায় থাকেন।
- আমীর সাহেব বলেনে, আপনি নেটে ঢুকবেন না। কিন্তু আমরা ফাঁকি দিয়ে নেট চালাই।
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি অমুক কিতাবটা পড়বেন বা অমুক শায়খের অমুক বয়ানটা শোনবেন। কিন্তু গাফলতি করে আমরা আর পড়ি না, শুনিও না।
- আমীর সাহেব বলেন, কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না। কিন্তু আমরা আমাদের জযবা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই।
- আমীর সাহেব বলেন, যে কাউকে জিহাদের দাওয়াত দেবেন না। কিন্তু আমরা কারো ভাল কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে জিহাদের দাওয়াত দিতে থাকি।
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি অমুক মাসআলাটা দেখুন। আমরা সেটা ছেড়ে আরেকটা দেখি।
- আমীর সাহেব বলেন, পড়াশুনার বিকল্প নেই। আমরা বলি, পড়ে কি হবে? আমি তো শহীদ হতে চাই!
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি ফেসবুকে এই ধরণের স্ট্যাটাস দেবেন না। কিন্তু আমরা তার বিপরীত করি।
- আমীর সাহেব বলেন, সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাবেন। তাহাজ্জুদে মুজাহিদদের জন্য, মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করবেন। আমরা রাতভর নেট চালিয়ে তাহাজ্জুদের সময় ঘুমিয়ে থাকি।
এ ধরণের অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে, যেগুলোতে আমারা প্রায়ই আদেশ অমান্য করি।
ভাইয়েরা আমার! আমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেব। আমীরের কথার গুরুত্ব দেব। তাকে মেনে চলার চেষ্টা করবো। হতে পারেন তিনি আমার চেয়ে বয়সে ও ইলম-আমলে ছোট, কিন্তু তিনি তো আমার আমীর। কোথায় আবু বকর সিদ্দিক আর কোথায় খালেদ বিন ওয়ালিদ! কিন্তু তিনি কি তাকে মেনে চলতেন না? আমাদেরও এমনটা করা চাই। তদ্রূপ আমীর উমরা যারা আছেন, তাদেরও উচিৎ মা’মূরদের প্রতি বিবেচনা করে পরিচালনা করা। যাকে যেভাবে পরিচালনা করলে তিনি আপনাকে মেনে চলতে পারবেন, তাকে সেভাবে পরিচালনা করা। প্রত্যেকের তবিয়ত বুঝে তার সাথে আচরণ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলাহ করে দিন। আমীন।
الغزو غزوان فأما من ابتغى وجه الله و أطاع الإمام و أنفق الكريمة و ياسر الشريك و اجتنب الفساد فإن نومه و نبهه أجر كله و أما من غزا فخرا و رياء و سمعة و عصى الإمام و أفسد في الأرض فإنه لن يرجع بكفاف
“যুদ্ধ দুই রকম: যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করবে, ইমামের আনুগত্য করবে, নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাহে খরচ করবে, সাথীদের সাথে নরম আচরণ করবে, ফাসাদ-বিশৃংখলা থেকে দূরে থাকবে: তার ঘুম, তার জাগরণ সবকিছুই সওয়াবের কাজে পরিণত হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করবে গৌরব ও যশ খ্যাতির উদ্দেশ্যে, মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে, ইমামের নাফরমানী করবে, যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করবে: সে তার মূল পুঁজি নিয়েও ফিরতে পারবে না।”
[মুসতাদরাকে হাকেম: ২/৩৫৩]
[মুসতাদরাকে হাকেম: ২/৩৫৩]
এ তো হল জিহাদ কবুল হওয়া এবং সওয়াব পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কথা। আর বাস্তবেও জিহাদে সফলতা লাভের জন্য, শত্রুকে পরাজিত করে খেলাফত কায়েমের জন্য আমীরের আনুগত্য অপরিহার্য। আনুগত্য ছাড়া প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ বুঝ অনুযায়ী কাজ করতে থাকে- তাহলে একদিকে যেমন সওয়াব থেকে মাহরুম হবে, অন্যদিকে দুনিয়াতেও সফলতা হতে বঞ্চিত হবে। এজন্য হযরত উমারে ফারুক রায়িল্লাহু আনহুর চিরন্তন বাণীটি সর্বদা স্মরণযোগ্য,
لا إسلام إلا بجماعة ولا جماعة إلا بإمارة ولا إمارة إلا بطاعة
“জামাআত ব্যতীত ইসলাম নেই। নেতৃত্ব ব্যতীত জামাআত নেই। আর আনুগত্য ব্যতীত নেতৃত্বের কোন ফায়েদা নেই।”
[জামিউ বয়ানিল ইলম: ১/২৬৩]
অতএব, আনুগত্য না হলে জামাআত টিকবে না, আর জামাআত না হলে ইসলাম কায়েমও সম্ভব না। এ কারণে শরীয়ত জামআতবদ্ধ হওয়া এবং আমীরের আনুগত্য করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আমীরের আদেশ যদি নিজের মনের চাহিদার বিপরীতও হয়, এ কারণে যদি নিজের অধিকারে কিছু ছাড়ও দিতে হয়, তবুও ইসলাম আমীরের আনুগত্যের আদেশ দিয়েছে। [জামিউ বয়ানিল ইলম: ১/২৬৩]
হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
(دعانا النبي صلى الله عليه وسلم فَبَايَعْنَاهُ. فكان فيما أخذ علينا أَنْ بَايَعَنَا على السمع والطاعة في مَنشَطِنا ومَكْرَهِنا، وعُسرنا ويُسرنا، وَأَثَرَة علينا، وَأَنْ لا نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَه. قَالَ: إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ).
“রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাঁর হাতে বাইআত হলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে যে বিষয়ে বাইআত নিলেন তা হলো, আমরা আমাদের পছন্দনীয়-অপছন্দনীয় বিষয়ে, সুখে-দুঃখে এবং আমাদের উপর যদি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেয়া হয় তথাপিও (আমীরের কথা) শুনবো ও আনুগত্য করবো এবং আমরা দায়িত্বশীলের সাথে দায়িত্ব নিয়ে বিবাদে জড়াবো না। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- তবে হাঁ, যদি তোমরা কোন স্পষ্ট কুফর দেখতে পাও, যার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে (তাহলে কথা ভিন্ন)।”
[সহীহ্ মুসলিম: ১৭০৯]
তাই ভাইদের কর্তব্য: জামাআতের স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে নিজের চাহিদা অনুপাতে হোক বা না হোক আমীরের আনুগত্য করা- যতক্ষণ তা শরীয়তের আদেশের পরিপন্থী না হয়। শরীয়তের পরিপন্থী হলে তখন আমীরের আদেশ পালনযোগ্য নয়। যেমনটা হাদিসে এসেছে- “রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাঁর হাতে বাইআত হলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে যে বিষয়ে বাইআত নিলেন তা হলো, আমরা আমাদের পছন্দনীয়-অপছন্দনীয় বিষয়ে, সুখে-দুঃখে এবং আমাদের উপর যদি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেয়া হয় তথাপিও (আমীরের কথা) শুনবো ও আনুগত্য করবো এবং আমরা দায়িত্বশীলের সাথে দায়িত্ব নিয়ে বিবাদে জড়াবো না। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- তবে হাঁ, যদি তোমরা কোন স্পষ্ট কুফর দেখতে পাও, যার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে (তাহলে কথা ভিন্ন)।”
[সহীহ্ মুসলিম: ১৭০৯]
(لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق)
“সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি করে বান্দার আনুগত্য বৈধ নয়।”
তবে এক্ষেত্রেও আমীরের বিরুদ্ধে না গিয়ে, তার সাথে বেয়াদবি না করে বরং সবর করবে। বুঝানোর চেষ্টা করবে। তার জন্য দোয়া করবে। “সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি করে বান্দার আনুগত্য বৈধ নয়।”
কোথায় আমীরের আনুগত্য করতে হবে আর কোথায় করা যাবে না?
আমীরের আনুগত্যের ব্যাপারে শরীয়ত একটা সীমারেখা দিয়েছে। এর বাহিরে যাওয়া যাবে না। গেলে নাফরমানি হবে।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে আমীরের আনুগত্য করতে হবে:
- আমীরের আদেশ যদি শরীয়ত অনুযায়ী হয়, তাহলে আনুগত্য করতে হবে।
- আমীরের আদেশের আনুগত্যে যদি কল্যাণ হবে মনে হয় এবং এ ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ না থাকে বা অধিকাংশ মা’মূরের ধারণা হয় যে, তাতে কল্যাণ রয়েছে: তাহলেও আনুগত্য করতে হবে। তদ্রূপ কল্যাণ হবে কি হবে না তা যদি নিশ্চিত না হয়, বরং উভয়টারই সম্ভাবনা থাকে: তাহলেও আনুগত্য করতে হবে। কেননা, আমীরের আনুগত্য আবশ্যক। সন্দেহের কারণে তা বাদ দেয়া যাবে না।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে আমীরের আনুগত্য করা যাবে না
- আমীরের আদেশ যদি সুস্পষ্ট শরীয়ত পরিপন্থী হয় তাহলে আমীরের আনুগত্য জায়েয হবে না।
- যদি সকলেই নিশ্চিত হয় যে, আমীরের আদেশ মানতে গেলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো বা আমাদের ক্ষতি হবে কিংবা অধিকাংশ মা’মূর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়: তাহলেও আমীরের আনুগত্য করা যাবে না।
মোটকথা: যেখানে আমীরের আনুগত্যের করলে সকলের বা অধিকাংশের রায় অনুযায়ী ক্ষতি নিশ্চিত- সেখানে আমীরের আনুগত্য করা যাবে না, অন্য সকল ক্ষেত্রে আমীরের আদেশ মানতে হবে। অতএব, যেখানে আমীরের আদেশ মানলে কল্যাণ হওয়া না হওয়া উভয়টারই সম্ভাবনা রয়েছে, কোন একটা নিশ্চত না- সেখানেও আমীরের আদেশ মানতে হবে। বাহানা ধরে আমীরের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজের বুঝ মতো চলা জায়েয হবে না।
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. (১৮৯হি.) বলেন [ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) এর ব্যাখ্যা সহ]:
وإذا دخل العسكر دار الحرب للقتال بتوفيق الله عز وجل فأمرهم أميرهم بشيء من أمر الحرب؛ فإن كان فيما أمرهم به منفعة لهم فعليهم أن يطيعوه لقوله تعالى : { أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ } النساء : 59 ...
وكذلك إن أمروهم بشيء لا يدرون أ ينتفعون به أم لا؟ فعليهم أن يطيعوه لأن فريضة الطاعة ثابتة بنص مقطوع به، وما تردد لهم من الرأي في أن ما أمر به منتفع أو غير منتفع به لا يصلح معارضاً للنص المقطوع .
وقد تكون طاعة الأمير في الكف عن القتال خيراً من كثير من القتال وقد يكون الظاهر الذي يعتمده الجند يدلهم على شيء والأمر في الحقيقة بخلاف ذلك عند الأمير ولا يرى الصواب في أن يطلع على ما هو الحقيقة عامة الجند، فلهذا كان عليهم الطاعة ما لم يأمرهم بأمر يخافون فيه الهلكة وعلى ذلك أكثر رأي جماعتهم لا يشكون في ذلك، فإذا كان هكذا فلا طاعة له عليهم لقوله صلى الله عليه وسلم : لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق ...
وإن كان الناس في ذلك الأمر مختلفين، فمنهم من يقول فيه الهلكة و منهم من يقول فيه النجاة: فليطيعوا الأمير في ذلك؛ لأن الاجتهاد لا يعارض النص. ولأن الامتناع من الطاعة فتح لسان اللائمة عليهم وفي إظهار الطاعة قطع ذلك عنهم فعليهم أن يطيعوه .
إلا أن يأمرهم بأمر ظاهر لا يكاد يخفى على أحد أنه هلكة أو أمرهم بمعصية فحينئذ لا طاعة عليهم في ذلك ولكن ينبغي أن يصبروا ولا يخرجوا على أميرهم لحديث ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : " من أتاه من أميره ما يكرهه فليصبر فإن من خالف المسلمين قيد شبر ثم مات ما ت ميتة الجاهلية . اهـ
“আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লার তাওফিকে (মুসলিম) বাহিনি দারুল হরবে পৌঁছার পর তাদের আমীর তাদেরকে যুদ্ধ সংক্রান্ত কোন কিছুর আদেশ দিলে- যদি তার আদিষ্ট বিষয়ে কল্যাণ থাকে, তাহলে তাদের জন্য তার আদেশ পালন করা আবশ্যক। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের দায়িত্বশীলদের।’
... তদ্রূপ তিনি যদি তাদেরকে এমন কোন কিছুর আদেশ দেন, তারা বুঝতে পারছে না যে, তাতে তারা উপকৃত হবে কি’না- তাহলেও তাদের জন্য তার আদেশ পালন করা আবশ্যক। কেননা, আনুগত্য ফরয হওয়ার বিষয়টি অকাট্য নস দিয়ে প্রমাণিত। আর তাদের যে দ্বিধাদ্বন্ধ দেখা দিয়েছে যে, তিনি যা আদেশ করেছেন সেটা উপকারী কি উপকারী না- সেটা অকাট্য নসের সাংঘর্ষিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
অনেক সময় আমীরের আনুগত্য করে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার মাঝে অনেক যুদ্ধের চেয়েও অধিক কল্যাণ নিহিত থাকে। কখনো এমন হয়, বাহ্যত যে বিষয়টির উপর সৈনিকরা নির্ভর করছে, সেটা তাদেরকে কোন এক বিষয়ের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে আমীরের নিকট বিষয়টি এর বিপরীত। কিন্তু সাধারণ সৈনিকরা বাস্তব বিষয়টির ব্যাপারে অবগত হোক এটা তিনি যথার্থ মনে করেন না। এজন্য তাদের উপর আবশ্যক- তার আনুগত্য করে যাওয়া, যতক্ষণ না তিনি এমন কোন কিছুর আদেশ দেন, যার মাঝে তারা নিজেদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে এবং তাদের জামাআতের অধিকাংশের রায়ও এমনই; এ ব্যাপারে তাদের কোন সন্দেহ নেই। যদি এমনটাই হয়, তাহলে তাদের জন্য তার আনুগত্যের কোন বিধান নেই। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি করে বান্দার আনুগত্য বৈধ নয়।’
আর উক্ত আদিষ্ট বিষয়টিতে যদি লোকজনের বিভিন্ন রকম অভিমত থাকে; কেউ বলছে- এতে ধ্বংস নিহিত, আর কেউ বলছে- এতে মুক্তি মিলবে: তাহলে তারা যেন এতে আমীরের কথা মান্য করে। কেননা, ইজতিহাদ (আনুত্যের ব্যাপারে বর্ণিত সুস্পষ্ট) নসের সাংঘর্ষিক হতে পারে না। তাছাড়া আনুগত্য থেকে বিরত থাকার অর্থ উমারাদের ব্যাপারে ইতর লোকদের সমালোচনার যবান খোলে দেয়া। আর আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাই তাদের জন্য আবশ্যক- তার আনুগত্য করা।
তবে হ্যাঁ, তিনি যদি এমন সুস্পষ্ট ধ্বংসাত্মক কিছুর আদেশ দেন, যা ধ্বংসাত্মক হওয়াটা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়; কিংবা কোন গুনাহের আদেশ দেন- তাহলে তখন তাতে তাদের জন্য তার আনুগত্যের বিধান নেই। তবে তাদের উচিৎ সবর করা এবং আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা। কেননা, হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘যে ব্যক্তি তার আমীরের কাছ থেকে এমন কিছুর সম্মখীন হয়েছে, যা সে অপছন্দ করে- তাহলে সে যেন সবর করে। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলমানদের থেকে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে, সে (যেন) জাহিলী মরা মরল।”
[শরহুস সিয়ারিল কাবীর: ১/১০৯-১১০]
প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা! আপনাদের হীন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য- নসীহত। যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আমার সকল মুজাহিদ ভাইকে পূর্ণ ইতাআতের তাওফিক দান করেন। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের দায়িত্বশীলদের।’
... তদ্রূপ তিনি যদি তাদেরকে এমন কোন কিছুর আদেশ দেন, তারা বুঝতে পারছে না যে, তাতে তারা উপকৃত হবে কি’না- তাহলেও তাদের জন্য তার আদেশ পালন করা আবশ্যক। কেননা, আনুগত্য ফরয হওয়ার বিষয়টি অকাট্য নস দিয়ে প্রমাণিত। আর তাদের যে দ্বিধাদ্বন্ধ দেখা দিয়েছে যে, তিনি যা আদেশ করেছেন সেটা উপকারী কি উপকারী না- সেটা অকাট্য নসের সাংঘর্ষিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
অনেক সময় আমীরের আনুগত্য করে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার মাঝে অনেক যুদ্ধের চেয়েও অধিক কল্যাণ নিহিত থাকে। কখনো এমন হয়, বাহ্যত যে বিষয়টির উপর সৈনিকরা নির্ভর করছে, সেটা তাদেরকে কোন এক বিষয়ের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে আমীরের নিকট বিষয়টি এর বিপরীত। কিন্তু সাধারণ সৈনিকরা বাস্তব বিষয়টির ব্যাপারে অবগত হোক এটা তিনি যথার্থ মনে করেন না। এজন্য তাদের উপর আবশ্যক- তার আনুগত্য করে যাওয়া, যতক্ষণ না তিনি এমন কোন কিছুর আদেশ দেন, যার মাঝে তারা নিজেদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে এবং তাদের জামাআতের অধিকাংশের রায়ও এমনই; এ ব্যাপারে তাদের কোন সন্দেহ নেই। যদি এমনটাই হয়, তাহলে তাদের জন্য তার আনুগত্যের কোন বিধান নেই। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানি করে বান্দার আনুগত্য বৈধ নয়।’
আর উক্ত আদিষ্ট বিষয়টিতে যদি লোকজনের বিভিন্ন রকম অভিমত থাকে; কেউ বলছে- এতে ধ্বংস নিহিত, আর কেউ বলছে- এতে মুক্তি মিলবে: তাহলে তারা যেন এতে আমীরের কথা মান্য করে। কেননা, ইজতিহাদ (আনুত্যের ব্যাপারে বর্ণিত সুস্পষ্ট) নসের সাংঘর্ষিক হতে পারে না। তাছাড়া আনুগত্য থেকে বিরত থাকার অর্থ উমারাদের ব্যাপারে ইতর লোকদের সমালোচনার যবান খোলে দেয়া। আর আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাই তাদের জন্য আবশ্যক- তার আনুগত্য করা।
তবে হ্যাঁ, তিনি যদি এমন সুস্পষ্ট ধ্বংসাত্মক কিছুর আদেশ দেন, যা ধ্বংসাত্মক হওয়াটা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়; কিংবা কোন গুনাহের আদেশ দেন- তাহলে তখন তাতে তাদের জন্য তার আনুগত্যের বিধান নেই। তবে তাদের উচিৎ সবর করা এবং আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা। কেননা, হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘যে ব্যক্তি তার আমীরের কাছ থেকে এমন কিছুর সম্মখীন হয়েছে, যা সে অপছন্দ করে- তাহলে সে যেন সবর করে। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলমানদের থেকে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে, সে (যেন) জাহিলী মরা মরল।”
[শরহুস সিয়ারিল কাবীর: ১/১০৯-১১০]
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা যারা তানজীমে যোগ দিয়েছি, আমাদের উচিৎ তানজীমের নির্দেশনা মেনে চলা। তানজীমের আমীরগণের কথা মান্য করা। নিজের মন মতো যেন না চলি। ইতাআতের মধ্যেই কল্যাণ। মন মতো চলার মধ্যে কোনই কল্যাণ নেই। আর আমাদের উমারাদের ব্যাপারে আমাদের আস্থা আছে যে, তারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুবিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তারা আমাদের যে নির্দেশ দেবেন, তা আমাদের ও তানজীমের সার্বিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করেই দেবেন। আমাদের উচিৎ সেগুলো মেনে চলে। বিরোধীতা না করা। সমালোচনা না করে। পালনে অবহেলা না করা। হ্যাঁ, কারো যদি কোন বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমরা তানজীমকে তা জানাতে পারি। তানজীম তা বিবেচনা করবে। প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত বদলে দেবে। তবে তা বিনয়ের সাথে। ঔদ্ধত্তের সাথে নয়। সমালোচনার ভাষায় নয়, নসীহতের ভাষায়। দিলের দরদ নিয়ে।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনারা জানেন, তাগুতরা আমাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। এদের চোখ ফাঁকি দিয়েই কাজ করতে হবে। তানজীম আমাদেরকে এ ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা দেবে- আমাদের উচিৎ সেগুলো যথাযথ মেনে চলা। সামান্য এদিক সেদিক হলেই সমূহ বিপদের আশঙ্কা। এটা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়।
তদ্রূপ আমাদেরকে কিভাবে যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে তানজীম সর্বদা ফিকিরে আছে। যে যে বিভাগে আছেন, সে অনুযায়ী তানজীম তাদের নির্দেশনা দেন। আমাদের উচিৎ সেগুলো মেনে চলা। জিহাদের রাস্তা বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। বহু দীর্ঘ রাস্তা। গন্তব্য অনেক দূর। চতুর্দিকে হায়েনার দল। অন্ধকার রাত্রির মতো ফিতনা সবখানে। একটু অধৈর্য হলেই, একটু গাফেল হলেই জীবনের সব নাস্তানুবাদ হয়ে যাবে। সব আশা নিরাশা হয়ে যাবে। তাই ভাইয়েরা! নিজের মন মতো চলবো না। ইতাআত করে চলবো।
আসলে একটা বাস্তব কথা না বলে পারছি না: আমরা আসলে আমীরের অধীনে চলতে অভ্যস্ত নই। ইমারাত কাকে বলে আমরা দেখিইনি। আমীরকে কিভাবে মানতে হয়- আমরা আসলে তা কখনো দেখিনি। আমরা খেলাফত হারিয়েছি, ইমারতও হারিয়েছি। নেতৃত্ত্বের অধীনে চলার সৌভাগ্য আমাদের কখনো হয়নি। আমীরকে কিভাবে সম্মান করতে হয়, কিভাবে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হয়- তা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। বেশির চেয়ে বেশি কিতাবের দু’চারটা পাতায় পড়েছি। বাস্তবতা আমাদের থেকে অনেক দূরে। আমীর নামক নেআমত আমাদের জীবনে লাভ হয়নি কখনোও। তাই তার কদর বুঝি না। আমরা আসলে নতুন। আবেগের বশে হয়তো কাজে জড়িয়েছি। দ্বীনের দরদে কাফেলায় যোগ দিয়েছি। কিন্তু বাস্তব ময়দান আমাদের সামনে নেই। শরীয়তের প্রকৃত রূপও আমাদের সামনে নেই। তাই আমাদের পদে পদে ভুল হয়ে যায়। হঠাৎ এক সময় অনুভব হয়- এতদিন তাহলে আমি ভুলের উপর চলেছি। এটাই বাস্তবতা। এটা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই।
ভাইয়েরা আমার! আমরা দুর্বল বান্দা। আশাকরি আল্লাহ তাআলা আমাদের মাফ করবেন। তাঁর দ্বীনের জন্য আমাদের কবুল করবেন।
আমি কয়েকটি উদাহরণ দেই, যেগুলোতে আমাদের প্রায়ই ভুল হয়:
- আমরা সিকিউরিটির নিয়ম কানূন প্রায়ই অমান্য করি। অথচ একটা ভুল জীবনের সব কিছুকে তছনছ করে দিতে পারে।
- আমীর সাহেব কখনে কখনো নিষেধ করেন, আপনি অমুক ভাইয়ের কাছে যাবেন না। কিন্তু আমরা প্রায়ই যাই। ফলে ঐ ভাইয়ের বিপদ হলে আমিও আশঙ্কায় থাকি, আমার বিপদ হলে ঐ ভাইও আশঙ্কায় থাকেন।
- আমীর সাহেব বলেনে, আপনি নেটে ঢুকবেন না। কিন্তু আমরা ফাঁকি দিয়ে নেট চালাই।
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি অমুক কিতাবটা পড়বেন বা অমুক শায়খের অমুক বয়ানটা শোনবেন। কিন্তু গাফলতি করে আমরা আর পড়ি না, শুনিও না।
- আমীর সাহেব বলেন, কারো সাথে তর্কে জড়াবেন না। কিন্তু আমরা আমাদের জযবা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই।
- আমীর সাহেব বলেন, যে কাউকে জিহাদের দাওয়াত দেবেন না। কিন্তু আমরা কারো ভাল কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে জিহাদের দাওয়াত দিতে থাকি।
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি অমুক মাসআলাটা দেখুন। আমরা সেটা ছেড়ে আরেকটা দেখি।
- আমীর সাহেব বলেন, পড়াশুনার বিকল্প নেই। আমরা বলি, পড়ে কি হবে? আমি তো শহীদ হতে চাই!
- আমীর সাহেব বলেন, আপনি ফেসবুকে এই ধরণের স্ট্যাটাস দেবেন না। কিন্তু আমরা তার বিপরীত করি।
- আমীর সাহেব বলেন, সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাবেন। তাহাজ্জুদে মুজাহিদদের জন্য, মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করবেন। আমরা রাতভর নেট চালিয়ে তাহাজ্জুদের সময় ঘুমিয়ে থাকি।
এ ধরণের অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে, যেগুলোতে আমারা প্রায়ই আদেশ অমান্য করি।
ভাইয়েরা আমার! আমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে নেব। আমীরের কথার গুরুত্ব দেব। তাকে মেনে চলার চেষ্টা করবো। হতে পারেন তিনি আমার চেয়ে বয়সে ও ইলম-আমলে ছোট, কিন্তু তিনি তো আমার আমীর। কোথায় আবু বকর সিদ্দিক আর কোথায় খালেদ বিন ওয়ালিদ! কিন্তু তিনি কি তাকে মেনে চলতেন না? আমাদেরও এমনটা করা চাই। তদ্রূপ আমীর উমরা যারা আছেন, তাদেরও উচিৎ মা’মূরদের প্রতি বিবেচনা করে পরিচালনা করা। যাকে যেভাবে পরিচালনা করলে তিনি আপনাকে মেনে চলতে পারবেন, তাকে সেভাবে পরিচালনা করা। প্রত্যেকের তবিয়ত বুঝে তার সাথে আচরণ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলাহ করে দিন। আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله و صحبه أجمعين
Comment