বি.দ্র.-১: এক অপরাধ কতবার করলে ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হবে?
এটি অপরাধের ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন- চুরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয়বার চুরি করাটা ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হয় না। এ দুই বারের শাস্তি হদের অন্তর্ভুক্ত যা সুনির্ধারিত। তৃতীয় বা চতুর্থ বার চুরি করা ফাসাদ ফিল আরদ বলে গণ্য। তখন মুনাসিব মনে হলে ইমামুল মুসলিমীন চোরকে হত্যা করতে পারেন।
অপর দিকে কাউকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা দ্বিতীয় বারেই ফাসাদ ফিল আরদ বলে গণ্য। কাজেই কারো থেকে একাধিক বার শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার অপরাধ পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে।
এক কথায় বলা যায়- যেখানে হদ নির্ধারিত আছে, সেখানে হদ কায়েম করা হবে। হদের সীমা পেরিয়ে গেলে তখন (যেমন তৃতীয় বার চুরি করা) ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হবে। আর যেখানে হদ নেই সেখানে একাধিক বার পাওয়া গেলে (যেমন একাধিক বার শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা) ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হবে।
বি.দ্র.-২: ফাসাদকারীদেরকে অপরাধে লিপ্ত থাকা না থাকা উভয় অবস্থায় হত্যা করা হবে
আমরা আগে আলোচনা করেছি যে, দফউস সায়েলরূপে যাদের হত্যা করা হবে, তাদেরকে কেবল তখনই হত্যা করা হবে, যখন তারা অপরাধে লিপ্ত থাকে এবং হত্যা ব্যতীত তাদের থেকে জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষা সম্ভব না হয়। অপরাধ থেকে নিবৃত হয়ে গেলে আর হত্যা করা যাবে না। তখন শরয়ী দলীল-প্রমাণের আলোকে যে অপরাধ প্রমাণিত হবে সে হিসেবে হদ-কেসাস বা অন্য শাস্তি কায়েম করা হবে।
এ আলোচনা থেকে কারো সন্দেহ হতে পারে যে, অপরাধে লিপ্ত থাকাবস্থা ছাড়া সাধারণ অবস্থায় কাউকে হত্যা করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা এমন নয়। যারা ফাসাদকারীরূপে চিহ্নিত হয়ে যাবে, তাদেরকে যেকোনো অবস্থায় হত্যা করা যাবে- চাই অপরাধে লিপ্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন ধরুন, এক লোক প্রসিদ্ধ সন্ত্রাস। সে ফাসাদকারীরূপে চিহ্নিত। সে হত্যার উপযুক্ত। এমতাবস্থায় তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা যাবে। বাড়িতে কি বাড়ির বাইরে, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার যেখানে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাবে হত্যা করা যাবে।
যেমন ধরুন- সাপ, বিচ্চু, ইঁদুর ইত্যাদি অনিষ্টকর প্রাণী। এদেরকে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে হত্যা করা হবে। এ অপেক্ষায় থাকা হবে না যে, সাপ-বিচ্চু কামড় দিতে শুরু করলে বা ইঁদুর কাটতে শুরু করলে তখন হত্যা করা হবে, এর আগে হত্যা করা হবে না। কারণ, এদেরকে হত্যা করা হচ্ছে ফাসাদ দূরীকরণের জন্য। এরা যদি বর্তমানে ফাসাদে লিপ্ত নাও থাকে, তবুও তাদের ব্যাপারে জানা কথা যে, তারা অচিরেই ফাসাদ করে বেড়াবে। ভবিষ্যতে তাদের থেকে যে ফাসাদের আশঙ্কা, সেটাকে প্রতিহত করতেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কা তাদের থেকে সর্বাবস্থায়ই বিদ্যমান। বাড়িতে থাকলেও, গাড়িতে থাকলেও। হাটে থাকলেও, ঘাটে থাকলেও। ঘুমে থাকলেও, জাগ্রত থাকলেও। এ জন্য এদের ব্যাপারে কোন পরোয়া নেই। যখন যেখানেই সুযোগ মিলবে হত্যা করে দেয়া হবে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. (৭৫১হি.) বলেন,
“যদি প্রশ্ন করা হয়- বিড়াল যদি পাখি খেয়ে ফেলে এবং ডেগ-পাতিল উল্টে ফেলে তাহলে এর (জরিমানার ব্যাপারে) আপনারা কি বলেন? উত্তর হবে- (যদি অনিষ্টসাধন করা ঐ বিড়ালের অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে তাহলে) বিড়াল পালককে নষ্টকৃত জিনিসের জরিমানা দিতে হবে। ... কেননা, এ বিড়াল ঐ কুকুরের মতো, দংশন করা যার স্বভাব। ... আর যদি এমনটা এর অভ্যাস না হয়ে থাকে, বরং ঘটনাক্রমে করে ফেলেছে, তাহলে জরিমানা দিতে হবে না।
যদি প্রশ্ন করা হয়- এ অপরাধের কারণে কি আপনারা একে মেরে ফেলার অনুমতি দেন? উত্তরে বলব, হ্যাঁ (মেরে ফেলা যাবে)- যদি এমনটা করা এর অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে।
তবে ইবনে আকীল রহ. এবং শাফিয়ি মাযহাবের কেউ কেউ বলেন, অনিষ্টে লিপ্ত থাকাবস্থায় হত্যা করা যাবে। নিবৃত থাকাবস্থায় এবং আক্রমণ না করাবস্থায় হত্যা করা যাবে না।
তবে সঠিক কথা হল এর বিপরীতটা। নিবৃত থাকাবস্থায়ও একে হত্যা করা যাবে; যেমন- ফাসাদ করে বেড়ানো এবং কষ্ট দেয়া যে লোকের অভ্যাস, তাকে নিবৃত থাকাবস্থায়ও হত্যা করা যাবে। অপরাধে লিপ্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা হবে না। ...
সহীহাইনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে- ‘পাঁচটি ফাসেক প্রাণী আছে, যেগুলোকে হরম শরীফ কি হরমের বাইরে সবখানে হত্যা করা হবে। সেগুলো হল: চিল, ইঁদুর, সাপ, পেটে বা পিটে সাদা দাগবিশিষ্ট কাক এবং ঐ কুকুর, দংশন করা যার স্বভাব।’ অন্য বর্ণনায় সাপের বদলে বিচ্চুর কথা আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের হত্যার জন্য হত্যা অনিষ্টে লিপ্ত থাকাবস্থায় হওয়ার শর্ত করেননি।” (আততুরুকুল হুকমিয়্যাহ্: ২৪১-২৪২)
হাদিসে যে পাঁচটি প্রাণীর কথা বলা হয়েছে, শুধু সেগুলোই নয়; যে প্রাণীই কষ্টদায়ক হবে- তাকেই হত্যা করে দেয়া হবে। যেখানে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাবে, হত্যা করে দেয়া যাবে। হাদিসে এ পাঁচটি উল্লেখ করে এ দিকেই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
যাহোক, বুঝানো উদ্দেশ্য- ফাসাদকারী যেই হবে, তাকেই হত্যা করা। যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে- হত্যা করে দেয়া হবে। ফাসাদকারী মানুষ হোক কি অন্য কোন প্রাণী হোক। ফাসাদকারী যদি মানুষ হয়, তাহলে তাকে হত্যা করে দেয়ার বিষয়টি সুবিদিত। এ কারণেই ইবনুল কায়্যিম রহ. বিড়াল হত্যা বুঝাতে গিয়ে মানুষ হত্যার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এবং এর উপর বিড়ালকে কিয়াস করেছেন।
কতক ব্যক্তির অভ্যাস এমন যে, তারা জালেম শাসকদের দরবারে গিয়ে লোকজনের ব্যাপারে বানিয়ে চিনিয়ে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। এদের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শাসকরা নিরপরাধ লোকজনকে হত্যা করে। এসব লোকও ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এরাও হত্যাযোগ্য। এদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে আবেদিন রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
“শাইখুল ইসলাম রহ.কে শাসকদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনকারী এবং জালেমদেরকে বিরতিকালীন সময়ে (হত্যার) ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘তাদেরকে হত্যা করা বৈধ। কেননা, তারা যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়।’ এর উপর প্রশ্ন করা হল- বিরতিকালীন সময়ে তো তারা তা থেকে বিরত থাকে এবং আত্মগোপনে থাকে? তিনি উত্তর দেন: ‘এ বিরত থাকা তো জরুরতের কারণে। যদি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হত, তাহলে যা হতে তাদেরকে বারণ করা হয়েছে তারা পুনর্বার তাতেই লিপ্ত হতো। [আনআম: ২৮] যেমনটা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। তিনি বলেন, শায়খ আবু সুজা রহ.কে আমরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তর দেন: একে হত্যা করা বৈধ এবং তার হত্যাকরী সওয়াবের অধিকারী হবে।” (রদ্দুল মুহতার: ৪/৬৪)
মোটকথা: যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে যারা বেড়ায়, তাদেরকে সর্বাবস্থায় হত্যা করা যাবে- চাই তারা সে সময়ে ফাসাদে লিপ্ত থাকুক বা না থাকুক।
বি.দ্র.-৩: ফাসাদকারী যদি তাওবা করে
ফাসাদকারীদের উক্ত বিধান হল যখন তারা তাওবা করে ভাল না হবে। কিন্তু যদি তাওবা করে ফেলে এবং ফাসাদ পরিত্যাগ করে সংশোধন হয়ে যায়, তাহলে তাদের বিধান কি হবে?
উত্তর: তাওবা হয়তো পাকড়াও করার আগে হবে, নয়তো পরে হবে। কোন কোন ফাসাদকারী এমন আছে যে, পাকড়াও করার আগে তাওবা করলে মাফ পেয়ে যাবে কিন্তু পাকড়াও করার পর তাওবা করলেও মাফ নেই। আবার কোন কোন ফাসাদকারী এমন আছে, তাদেরকে কোন অবস্থায়ই মাফ করে হবে না। আগে তাওবা করলেও তাদের বিধান- হত্যা। অবশ্য এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামের মতভেদ আছে। সামনে ইনশাআল্লাহ এর আলোচনা আসবে।
এটি অপরাধের ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন- চুরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয়বার চুরি করাটা ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হয় না। এ দুই বারের শাস্তি হদের অন্তর্ভুক্ত যা সুনির্ধারিত। তৃতীয় বা চতুর্থ বার চুরি করা ফাসাদ ফিল আরদ বলে গণ্য। তখন মুনাসিব মনে হলে ইমামুল মুসলিমীন চোরকে হত্যা করতে পারেন।
অপর দিকে কাউকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা দ্বিতীয় বারেই ফাসাদ ফিল আরদ বলে গণ্য। কাজেই কারো থেকে একাধিক বার শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার অপরাধ পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে।
এক কথায় বলা যায়- যেখানে হদ নির্ধারিত আছে, সেখানে হদ কায়েম করা হবে। হদের সীমা পেরিয়ে গেলে তখন (যেমন তৃতীয় বার চুরি করা) ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হবে। আর যেখানে হদ নেই সেখানে একাধিক বার পাওয়া গেলে (যেমন একাধিক বার শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা) ফাসাদ ফিল আরদ গণ্য হবে।
বি.দ্র.-২: ফাসাদকারীদেরকে অপরাধে লিপ্ত থাকা না থাকা উভয় অবস্থায় হত্যা করা হবে
আমরা আগে আলোচনা করেছি যে, দফউস সায়েলরূপে যাদের হত্যা করা হবে, তাদেরকে কেবল তখনই হত্যা করা হবে, যখন তারা অপরাধে লিপ্ত থাকে এবং হত্যা ব্যতীত তাদের থেকে জান-মাল ও ইজ্জত-আব্রু রক্ষা সম্ভব না হয়। অপরাধ থেকে নিবৃত হয়ে গেলে আর হত্যা করা যাবে না। তখন শরয়ী দলীল-প্রমাণের আলোকে যে অপরাধ প্রমাণিত হবে সে হিসেবে হদ-কেসাস বা অন্য শাস্তি কায়েম করা হবে।
এ আলোচনা থেকে কারো সন্দেহ হতে পারে যে, অপরাধে লিপ্ত থাকাবস্থা ছাড়া সাধারণ অবস্থায় কাউকে হত্যা করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা এমন নয়। যারা ফাসাদকারীরূপে চিহ্নিত হয়ে যাবে, তাদেরকে যেকোনো অবস্থায় হত্যা করা যাবে- চাই অপরাধে লিপ্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন ধরুন, এক লোক প্রসিদ্ধ সন্ত্রাস। সে ফাসাদকারীরূপে চিহ্নিত। সে হত্যার উপযুক্ত। এমতাবস্থায় তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা যাবে। বাড়িতে কি বাড়ির বাইরে, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার যেখানে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাবে হত্যা করা যাবে।
যেমন ধরুন- সাপ, বিচ্চু, ইঁদুর ইত্যাদি অনিষ্টকর প্রাণী। এদেরকে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে হত্যা করা হবে। এ অপেক্ষায় থাকা হবে না যে, সাপ-বিচ্চু কামড় দিতে শুরু করলে বা ইঁদুর কাটতে শুরু করলে তখন হত্যা করা হবে, এর আগে হত্যা করা হবে না। কারণ, এদেরকে হত্যা করা হচ্ছে ফাসাদ দূরীকরণের জন্য। এরা যদি বর্তমানে ফাসাদে লিপ্ত নাও থাকে, তবুও তাদের ব্যাপারে জানা কথা যে, তারা অচিরেই ফাসাদ করে বেড়াবে। ভবিষ্যতে তাদের থেকে যে ফাসাদের আশঙ্কা, সেটাকে প্রতিহত করতেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কা তাদের থেকে সর্বাবস্থায়ই বিদ্যমান। বাড়িতে থাকলেও, গাড়িতে থাকলেও। হাটে থাকলেও, ঘাটে থাকলেও। ঘুমে থাকলেও, জাগ্রত থাকলেও। এ জন্য এদের ব্যাপারে কোন পরোয়া নেই। যখন যেখানেই সুযোগ মিলবে হত্যা করে দেয়া হবে।
ইবনুল কায়্যিম রহ. (৭৫১হি.) বলেন,
فإن قيل: فما تقولون في السنور إذا أكلت الطيور، وأكفأت القدور؟ قيل: على مقتنيها ضمان ما تتلفه من ذلك ... لأنها في معنى الكلب العقور ... وإن لم يكن ذلك من عادتها بل فعلته نادرا: فلا ضمان.
فإن قيل: فهل تسوغون قتلها لذلك؟ قلنا: نعم، إذا كان ذلك عادة لها.
وقال ابن عقيل، وبعض الشافعية: إنما تقتل حال مباشرتها للجناية، فأما في حال سكونها وعدم صولها: فلا.
والصحيح: خلاف ذلك، وأنها تقتل، وإن كانت ساكنة، كما يقتل من طبعه الفساد والأذى في حال سكونه، ولا تنتظر مباشرته ...
وفي " الصحيحين " عنه - صلى الله عليه وسلم -: «خمس فواسق يقتلن في الحل والحرم: الحدأة، والفأرة، والحية، والغراب الأبقع، والكلب العقور» وفي لفظ " العقرب " بدل " الحية " ولم يشترط في قتلهن أن يكون حال المباشرة. اهـ
فإن قيل: فهل تسوغون قتلها لذلك؟ قلنا: نعم، إذا كان ذلك عادة لها.
وقال ابن عقيل، وبعض الشافعية: إنما تقتل حال مباشرتها للجناية، فأما في حال سكونها وعدم صولها: فلا.
والصحيح: خلاف ذلك، وأنها تقتل، وإن كانت ساكنة، كما يقتل من طبعه الفساد والأذى في حال سكونه، ولا تنتظر مباشرته ...
وفي " الصحيحين " عنه - صلى الله عليه وسلم -: «خمس فواسق يقتلن في الحل والحرم: الحدأة، والفأرة، والحية، والغراب الأبقع، والكلب العقور» وفي لفظ " العقرب " بدل " الحية " ولم يشترط في قتلهن أن يكون حال المباشرة. اهـ
“যদি প্রশ্ন করা হয়- বিড়াল যদি পাখি খেয়ে ফেলে এবং ডেগ-পাতিল উল্টে ফেলে তাহলে এর (জরিমানার ব্যাপারে) আপনারা কি বলেন? উত্তর হবে- (যদি অনিষ্টসাধন করা ঐ বিড়ালের অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে তাহলে) বিড়াল পালককে নষ্টকৃত জিনিসের জরিমানা দিতে হবে। ... কেননা, এ বিড়াল ঐ কুকুরের মতো, দংশন করা যার স্বভাব। ... আর যদি এমনটা এর অভ্যাস না হয়ে থাকে, বরং ঘটনাক্রমে করে ফেলেছে, তাহলে জরিমানা দিতে হবে না।
যদি প্রশ্ন করা হয়- এ অপরাধের কারণে কি আপনারা একে মেরে ফেলার অনুমতি দেন? উত্তরে বলব, হ্যাঁ (মেরে ফেলা যাবে)- যদি এমনটা করা এর অভ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে।
তবে ইবনে আকীল রহ. এবং শাফিয়ি মাযহাবের কেউ কেউ বলেন, অনিষ্টে লিপ্ত থাকাবস্থায় হত্যা করা যাবে। নিবৃত থাকাবস্থায় এবং আক্রমণ না করাবস্থায় হত্যা করা যাবে না।
তবে সঠিক কথা হল এর বিপরীতটা। নিবৃত থাকাবস্থায়ও একে হত্যা করা যাবে; যেমন- ফাসাদ করে বেড়ানো এবং কষ্ট দেয়া যে লোকের অভ্যাস, তাকে নিবৃত থাকাবস্থায়ও হত্যা করা যাবে। অপরাধে লিপ্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা হবে না। ...
সহীহাইনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে- ‘পাঁচটি ফাসেক প্রাণী আছে, যেগুলোকে হরম শরীফ কি হরমের বাইরে সবখানে হত্যা করা হবে। সেগুলো হল: চিল, ইঁদুর, সাপ, পেটে বা পিটে সাদা দাগবিশিষ্ট কাক এবং ঐ কুকুর, দংশন করা যার স্বভাব।’ অন্য বর্ণনায় সাপের বদলে বিচ্চুর কথা আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদের হত্যার জন্য হত্যা অনিষ্টে লিপ্ত থাকাবস্থায় হওয়ার শর্ত করেননি।” (আততুরুকুল হুকমিয়্যাহ্: ২৪১-২৪২)
হাদিসে যে পাঁচটি প্রাণীর কথা বলা হয়েছে, শুধু সেগুলোই নয়; যে প্রাণীই কষ্টদায়ক হবে- তাকেই হত্যা করে দেয়া হবে। যেখানে যে অবস্থায়ই পাওয়া যাবে, হত্যা করে দেয়া যাবে। হাদিসে এ পাঁচটি উল্লেখ করে এ দিকেই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
যাহোক, বুঝানো উদ্দেশ্য- ফাসাদকারী যেই হবে, তাকেই হত্যা করা। যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে- হত্যা করে দেয়া হবে। ফাসাদকারী মানুষ হোক কি অন্য কোন প্রাণী হোক। ফাসাদকারী যদি মানুষ হয়, তাহলে তাকে হত্যা করে দেয়ার বিষয়টি সুবিদিত। এ কারণেই ইবনুল কায়্যিম রহ. বিড়াল হত্যা বুঝাতে গিয়ে মানুষ হত্যার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এবং এর উপর বিড়ালকে কিয়াস করেছেন।
কতক ব্যক্তির অভ্যাস এমন যে, তারা জালেম শাসকদের দরবারে গিয়ে লোকজনের ব্যাপারে বানিয়ে চিনিয়ে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে। এদের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শাসকরা নিরপরাধ লোকজনকে হত্যা করে। এসব লোকও ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এরাও হত্যাযোগ্য। এদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে আবেদিন রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
سئل شيخ الإسلام عن قتل الأعونة والظلمة والسعاة في أيام الفترة: قال يباح قتلهم؛ لأنهم ساعون في الأرض بالفساد، فقيل إنهم يمتنعون عن ذلك في أيام الفترة ويختفون. قال: ذلك امتناع ضرورة - {ولو ردوا لعادوا لما نهوا عنه} [الأنعام: 28]- كما نشاهد. قال وسألنا الشيخ أبا شجاع عنه، فقال: يباح قتله ويثاب قاتله. اهـ.
“শাইখুল ইসলাম রহ.কে শাসকদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনকারী এবং জালেমদেরকে বিরতিকালীন সময়ে (হত্যার) ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘তাদেরকে হত্যা করা বৈধ। কেননা, তারা যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়।’ এর উপর প্রশ্ন করা হল- বিরতিকালীন সময়ে তো তারা তা থেকে বিরত থাকে এবং আত্মগোপনে থাকে? তিনি উত্তর দেন: ‘এ বিরত থাকা তো জরুরতের কারণে। যদি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হত, তাহলে যা হতে তাদেরকে বারণ করা হয়েছে তারা পুনর্বার তাতেই লিপ্ত হতো। [আনআম: ২৮] যেমনটা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। তিনি বলেন, শায়খ আবু সুজা রহ.কে আমরা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তর দেন: একে হত্যা করা বৈধ এবং তার হত্যাকরী সওয়াবের অধিকারী হবে।” (রদ্দুল মুহতার: ৪/৬৪)
মোটকথা: যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করে যারা বেড়ায়, তাদেরকে সর্বাবস্থায় হত্যা করা যাবে- চাই তারা সে সময়ে ফাসাদে লিপ্ত থাকুক বা না থাকুক।
বি.দ্র.-৩: ফাসাদকারী যদি তাওবা করে
ফাসাদকারীদের উক্ত বিধান হল যখন তারা তাওবা করে ভাল না হবে। কিন্তু যদি তাওবা করে ফেলে এবং ফাসাদ পরিত্যাগ করে সংশোধন হয়ে যায়, তাহলে তাদের বিধান কি হবে?
উত্তর: তাওবা হয়তো পাকড়াও করার আগে হবে, নয়তো পরে হবে। কোন কোন ফাসাদকারী এমন আছে যে, পাকড়াও করার আগে তাওবা করলে মাফ পেয়ে যাবে কিন্তু পাকড়াও করার পর তাওবা করলেও মাফ নেই। আবার কোন কোন ফাসাদকারী এমন আছে, তাদেরকে কোন অবস্থায়ই মাফ করে হবে না। আগে তাওবা করলেও তাদের বিধান- হত্যা। অবশ্য এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামের মতভেদ আছে। সামনে ইনশাআল্লাহ এর আলোচনা আসবে।
Comment