এক. যাদুকর
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকিদা হল, যাদুর হাকিকত-বাস্তবতা রয়েছে। এর দ্বারা লোকজনের ক্ষতি করা সম্ভব। যাদু এমন জিনিস যা শিখা ও শিখানো যায়। তবে তা শিখা বা শিখানো হারাম। তবে বিশেষ জরুরতের দুয়েক ক্ষেত্র এর ব্যতিক্রম। যাদু বিদ্যার ব্যাপক প্রচলন কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত।
সকল যাদুকরই কি কাফের?
যাদুকর মাত্রই কাফের কি’না এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামে দ্বিমত রয়েছে:
- কারো কারো মতে যাদু বিদ্যা কুফর এবং প্রত্যেক যাদুকরই কাফের।
- কারো মতে (যেমন ইমাম শাফিয়ি রহ.) যদি যাদুতে কোন কুফরি বিশ্বাস, কথা বা কাজ থাকে তাহলে কাফের, অন্যথায় কাফের নয়।
যাদুকরের শাস্তি: হত্যা
যাদুকর তার যাদুর দ্বারা লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। স্বামী-স্ত্রীতে বিচ্ছেদ ঘটায়। তাই সে মুফসিদ ফিল আরদ তথা সমাজে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এদের শাস্তি হল- পাকড়াও হওয়ার আগেই যদি যাদু পরিত্যাগ করে তাওবা করে ভাল হয়ে যায়, তাহলে মাফ পাবে। আর যদি তাওবা করে ভাল হয়ে যাওয়ার আগেই পাকড়াও করা হয়, তাহলে হত্যা করে দেয়া হবে। পাকড়াও হওয়ার পর তাওবা করলেও মাফ করা হবে না। অবশ্য খালেস দিলে তাওবা করলে আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ পাবে।
‘আদদুররুল মুখতার’ গ্রন্থকার (১০৮৮হি.) বলেন,
উল্লেখ্য, যাদুকর মুসলিম হোক কি অমুসলিম, মুসলিম হলে যাদুর দ্বারা কাফের হোক বা না হোক, পুরুষ হোক কি নারী- সর্বাবস্থায় তার শাস্তি: হত্যা। মুসলিম, কাফের, মুরতাদ; মহিলা, পুরুষ- সকলের বিধান এক তথা হত্যা।
মুরতাদ যাদুকর সাধারণ মুরতাদের মতো নয়
সাধারণ মুরতাদের বিধান হল, তিন দিন পর্যন্ত তাওবার সুযোগ দেয়া। এর মধ্যে মুসলমান হয়ে গেলে মাফ পেয়ে যাবে, অন্যথায় হত্যা করে দেয়া হবে। কিন্তু মুরতাদ যাদুকরের বিধান ব্যতিক্রম। তার কাছে তাওবা তলব করা হবে না। পাকড়াও করার পর অবশ্যই হত্যা করে দিতে হবে।
মুরতাদ যদি মহিলা হয় তাহলে হানাফি মাযহাব মতে তাকে হত্যা করা হয় না, বন্দী করে রেখে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু মহিলা যদি যাদুকর হয় এবং যাদুর দ্বারা মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে তাকে হত্যা করে দিতে হবে। তার বিধান সাধারণ মুরতাদ মহিলার মতো নয়। কারণ, তাকে মূলত হত্যা করা হচ্ছে ইরতিদাদের কারণে নয়, বরং তার যাদুর কারণে।
মোটকথা- মুরতাদ যদি যাদুকর হয়, তাহলে পাকড়াও করার পর তাকে আর মাফ করা হবে না। কারণ, সে সাধারণ মুরতাদ নয় বরং ফাসাদকারী মুরতাদ। সাধারণ মুরতাদরা তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে মাফ করার সুযোগ আছে, কিন্তু ফাসাদকারী মুরতাদরা তাওবা করে ভাল হয়ে গেলেও মাফ পায় না। পাকড়াওয়ের পর মুফসিদ মুরতাদের শাস্তি হদের মতো। হদ যেমন মাফ হয় না, এদের শাস্তিও তেমন মাফ হয় না।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০হি.) বলেন,
তিনি আরও বলেন,
যেসব যাদুকর মুরতাদ হয়ে যায়নি, তাদেরও শাস্তি- পাকড়াওয়ের পর হত্যা। কারণ, সে মুরতাদ না হলেও মুফসিদ ফিল আরদ, যার শাস্তি হত্যা।
ইবনে আবেদিন রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
যাদুকরদের সাথে সাহাবা তাবিয়িগণের আচরণ
সাহাবা ও তাবেয়িগণ যাদুকরদের হত্যা করে দিতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে এসেছে,
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১হি.) বলেন,
আহলে ইলমদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, যাদু শিক্ষা দেয়া হারাম। একে বৈধ জ্ঞান করা কুফর। আমাদের আইম্মায়ে কেরাম, মালেক ও আহমাদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, যাদুকর যাদু শিখা এবং তা প্রয়োগের দ্বারাই কাফের হয়ে যাবে এবং তাকে হত্যা করে দেয়া হবে- চাই তা হারাম জ্ঞান করুক বা না করুক। উমর, উসমান ও ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এমনই বর্ণিত আছে। তদ্রূপ, জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ, হাবিব ইবনে কা’ব, কাইস ইবনে সা’দ এবং উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও এমনই বর্ণিত আছে। কেননা, তারা একে -যাদুকরকে- তাওবা তলব করা ব্যতীতই হত্যা করে দিয়েছেন।” (ফাতহুল কাদির: ৬/৯৯)
সামনে গিয়ে বলেন,
সারকথা-
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকিদা হল, যাদুর হাকিকত-বাস্তবতা রয়েছে। এর দ্বারা লোকজনের ক্ষতি করা সম্ভব। যাদু এমন জিনিস যা শিখা ও শিখানো যায়। তবে তা শিখা বা শিখানো হারাম। তবে বিশেষ জরুরতের দুয়েক ক্ষেত্র এর ব্যতিক্রম। যাদু বিদ্যার ব্যাপক প্রচলন কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত।
সকল যাদুকরই কি কাফের?
যাদুকর মাত্রই কাফের কি’না এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামে দ্বিমত রয়েছে:
- কারো কারো মতে যাদু বিদ্যা কুফর এবং প্রত্যেক যাদুকরই কাফের।
- কারো মতে (যেমন ইমাম শাফিয়ি রহ.) যদি যাদুতে কোন কুফরি বিশ্বাস, কথা বা কাজ থাকে তাহলে কাফের, অন্যথায় কাফের নয়।
যাদুকরের শাস্তি: হত্যা
যাদুকর তার যাদুর দ্বারা লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। স্বামী-স্ত্রীতে বিচ্ছেদ ঘটায়। তাই সে মুফসিদ ফিল আরদ তথা সমাজে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এদের শাস্তি হল- পাকড়াও হওয়ার আগেই যদি যাদু পরিত্যাগ করে তাওবা করে ভাল হয়ে যায়, তাহলে মাফ পাবে। আর যদি তাওবা করে ভাল হয়ে যাওয়ার আগেই পাকড়াও করা হয়, তাহলে হত্যা করে দেয়া হবে। পাকড়াও হওয়ার পর তাওবা করলেও মাফ করা হবে না। অবশ্য খালেস দিলে তাওবা করলে আখেরাতে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ পাবে।
‘আদদুররুল মুখতার’ গ্রন্থকার (১০৮৮হি.) বলেন,
إذا أخذ) الساحر ... (قبل توبته) ثم تاب لم تقبل توبته ويقتل، ولو أخذ بعدها قبلت. اهـ
“যাদুকর ধৃত হওয়ার পর তাওবা করলে তার তাওবা কবুল হবে না বরং হত্যা করে দেয়া হবে। আর যদি তাওবার পর ধৃত হয়, তাহলে তাওবা কবুল হবে (হত্যা করা হবে না)।” (‘আদদুররুল মুখতার’- রদ্দুল মুহতারের সাথে ছাপা: ৪/২৪২) উল্লেখ্য, যাদুকর মুসলিম হোক কি অমুসলিম, মুসলিম হলে যাদুর দ্বারা কাফের হোক বা না হোক, পুরুষ হোক কি নারী- সর্বাবস্থায় তার শাস্তি: হত্যা। মুসলিম, কাফের, মুরতাদ; মহিলা, পুরুষ- সকলের বিধান এক তথা হত্যা।
মুরতাদ যাদুকর সাধারণ মুরতাদের মতো নয়
সাধারণ মুরতাদের বিধান হল, তিন দিন পর্যন্ত তাওবার সুযোগ দেয়া। এর মধ্যে মুসলমান হয়ে গেলে মাফ পেয়ে যাবে, অন্যথায় হত্যা করে দেয়া হবে। কিন্তু মুরতাদ যাদুকরের বিধান ব্যতিক্রম। তার কাছে তাওবা তলব করা হবে না। পাকড়াও করার পর অবশ্যই হত্যা করে দিতে হবে।
মুরতাদ যদি মহিলা হয় তাহলে হানাফি মাযহাব মতে তাকে হত্যা করা হয় না, বন্দী করে রেখে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু মহিলা যদি যাদুকর হয় এবং যাদুর দ্বারা মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে তাকে হত্যা করে দিতে হবে। তার বিধান সাধারণ মুরতাদ মহিলার মতো নয়। কারণ, তাকে মূলত হত্যা করা হচ্ছে ইরতিদাদের কারণে নয়, বরং তার যাদুর কারণে।
মোটকথা- মুরতাদ যদি যাদুকর হয়, তাহলে পাকড়াও করার পর তাকে আর মাফ করা হবে না। কারণ, সে সাধারণ মুরতাদ নয় বরং ফাসাদকারী মুরতাদ। সাধারণ মুরতাদরা তাওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে মাফ করার সুযোগ আছে, কিন্তু ফাসাদকারী মুরতাদরা তাওবা করে ভাল হয়ে গেলেও মাফ পায় না। পাকড়াওয়ের পর মুফসিদ মুরতাদের শাস্তি হদের মতো। হদ যেমন মাফ হয় না, এদের শাস্তিও তেমন মাফ হয় না।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০হি.) বলেন,
وحكى محمد بن شجاع عن أبي علي الرازي قال: سألت أبا يوسف عن قول أبي حنيفة في الساحر "يقتل ولا يستتاب" لم لم يكن ذلك بمنزلة المرتد؟ فقال: الساحر قد جمع مع كفره السعي في الأرض بالفساد. اهـ
“মুহাম্মাদ ইবনে সুজা রহ. আবু আলী রাযি রহ. থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, যাদুকরের ব্যাপারে আবু হানিফা রহ. এর অভিমত ‘তাওবা তলব করা ব্যতীতই তাকে হত্যা করে দেয়া হবে’- এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম যে, তার বিধান সাধারণ মুরতাদের বিধানের মতো হল না কেন? তিনি উত্তর দেন- কারণ, যাদুকর কাফের হওয়ার পাশাপাশি যমিনে ফাসাদ সৃষ্টিরও সমন্বয় ঘটিয়েছে।” (আহকামুল কুরআন: ১/৬১)তিনি আরও বলেন,
ويستدل بظاهر قوله تعالى: {إنما جزاء الذين يحاربون الله ورسوله ويسعون في الأرض فسادا} [المائدة: 33] إلى آخر الآية، على وجوب قتل الساحر حدا; لأنه من أهل السعي في الأرض بالفساد لعمله السحر واستدعائه الناس إليه وإفساده إياهم مع ما صار إليه من الكفر. اهـ
“আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং যমিনে ফাসাদ-বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়ায় ... (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)’- এর ভাষ্য থেকে এ ব্যাপারে দলীল দেয়া যায় যে, যাদুকরকে হদরূপে হত্যা করা ফরয। কেননা, সে যমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। সে যাদু করে। লোকদেরকে এর দিকে আহ্বান করে। তাদের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করে। পাশাপাশি যে কুফরিতে সে নিপতিত হয়েছে তা তো আছেই।” (আহকামুল কুরআন: ১/৬৫)যেসব যাদুকর মুরতাদ হয়ে যায়নি, তাদেরও শাস্তি- পাকড়াওয়ের পর হত্যা। কারণ, সে মুরতাদ না হলেও মুফসিদ ফিল আরদ, যার শাস্তি হত্যা।
ইবনে আবেদিন রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
لا يلزم من عدم كفره مطلقا عدم قتله؛ لأن قتله بسبب سعيه بالفساد كما مر. فإذا ثبت إضراره بسحره ولو بغير مكفر: يقتل دفعا لشره كالخناق وقطاع الطريق. اهـ
“অনেক সময় যাদুকর কাফের হয় না- এর অর্থ এই নয় যে, তাকে হত্যা করা হবে না। কেননা, তাকে হত্যা করা হচ্ছে যমিনে ফাসাদ করে বেড়ানোর কারণে- যেমনটা আগেও অতিবাহিত হয়েছে। অতএব, যখন প্রমাণিত হবে যে, সে যাদুর দ্বারা লোকজনের ক্ষতি করে- যদিও তা কুফরির দ্বারা না হয়: তখন তার অনিষ্ট দমনার্থে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে। যেমন শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাকারী ও রাহজানদের হত্যা করা হয়।” (রদ্দুল মুহতার: ১/৪৫) যাদুকরদের সাথে সাহাবা তাবিয়িগণের আচরণ
সাহাবা ও তাবেয়িগণ যাদুকরদের হত্যা করে দিতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাতে এসেছে,
عن عمرو ؛ سمع بجالة ، يقول : كنت كاتبا لجزء بن معاوية ، فأتانا كتاب عمر بن الخطاب : أن اقتلوا كل ساحر وساحرة ، قال : فقتلنا ثلاث سواحر.
“বাজালা রহ. বলেন, আমি জায ইবনে মুআবিয়ার কেরানী ছিলাম। তখন আমাদের নিকট হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর পত্র আসল এই মর্মে যে, ‘প্রতিটি যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করে দাও।’ তিনি বলেন, তখন আমরা তিনটি যাদুকরকে (পেয়ে) হত্যা করে দিলাম।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৯৫৮৫) عن ابن عمر ؛ أن جارية لحفصة سحرتها ، ووجدوا سحرها ، واعترفت ، فأمرت عبد الرحمن بن زيد فقتلها
“ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার এক বাঁদি তাকে - হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে- যাদু করেছিল। তারা উক্ত বাঁদির যাদুর প্রমাণ পেল। বাঁদিও যাদুর কথা স্বীকার করল। তখন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদকে আদেশ দেন বাঁদিটিকে হত্যা করে ফেলতে। ফলে তিনি একে হত্যা করে দেন।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৯৫৮৩) عن همام بن يحيى ؛ أن عامل عمان كتب إلى عمر بن عبد العزيز في ساحرة أخذها ، فكتب إليه عمر : إن اعترفت ، أو قامت عليها البينة ، فاقتلها.
“হাম্মাম ইবনে ইয়াহইয়া রহ. বলেন, উম্মানের গভর্নর এক যাদুকর মহিলাকে গ্রেফতার করে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. এর কাছে এর বিধান জানতে চেয়ে পত্র লেখেন। উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. লিখে পাঠান, ‘যদি মহিলা যাদুর কথা স্বীকার করে বা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তার যাদু প্রমাণিত হয়, তাহলে একে হত্যা করে দাও।” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৯৫৮২) ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১হি.) বলেন,
وقال أصحابنا: للسحر حقيقة وتأثير في إيلام الأجسام خلافا لمن منع ذلك وقال إنما هو تخييل. وتعليم السحر حرام بلا خلاف بين أهل العلم، واعتقاد إباحته كفر. وعن أصحابنا ومالك وأحمد يكفر الساحر بتعلمه وفعله، سواء اعتقد تحريمه أو لا ويقتل. وقد روي عن عمر وعثمان وابن عمر وكذلك عن جندب بن عبد الله وحبيب بن كعب وقيس بن سعد وعمر بن عبد العزيز فإنهم قتلوه بدون الاستتابة. اهـ
“আমাদের আইম্মায়ে কেরামের অভিমত হল, যাদুর হাকিকত-বাস্তবতা রয়েছে (তা কেবল চোখের ধাঁ-ধাঁ নয়) এবং শারীরিক কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে এর প্রভাব রয়েছে। তবে কেউ কেউ তা মানতে চান না বরং বলেন, তা কেবল চোখের ধাঁ-ধাঁ। আহলে ইলমদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, যাদু শিক্ষা দেয়া হারাম। একে বৈধ জ্ঞান করা কুফর। আমাদের আইম্মায়ে কেরাম, মালেক ও আহমাদ রহ. থেকে বর্ণিত যে, যাদুকর যাদু শিখা এবং তা প্রয়োগের দ্বারাই কাফের হয়ে যাবে এবং তাকে হত্যা করে দেয়া হবে- চাই তা হারাম জ্ঞান করুক বা না করুক। উমর, উসমান ও ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে এমনই বর্ণিত আছে। তদ্রূপ, জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ, হাবিব ইবনে কা’ব, কাইস ইবনে সা’দ এবং উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও এমনই বর্ণিত আছে। কেননা, তারা একে -যাদুকরকে- তাওবা তলব করা ব্যতীতই হত্যা করে দিয়েছেন।” (ফাতহুল কাদির: ৬/৯৯)
সামনে গিয়ে বলেন,
وعند الشافعي لا يقتل ولا يكفر إلا إذا اعتقد إباحته ... ويجب أن لا يعدل عن مذهب الشافعي في كفر الساحر والعراف وعدمه. وأما قتله فيجب ولا يستتاب إذا عرفت مزاولته لعمل السحر لسعيه بالفساد في الأرض لا بمجرد عمله إذا لم يكن في اعتقاده ما يوجب كفره. اهـ
“তবে শাফিয়ি রহ. এর অভিমত হল, একে বৈধ জ্ঞান না করলে হত্যা করা হবে না এবং সে কাফেরও হবে না। ... যাদুকর ও গণকের কাফের হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে ইমাম শাফিয়ি রহ. এর অভিমত ছেড়ে অন্য কোন অভিমতের দিকে না যাওয়া আবশ্যক। তবে (তার হত্যার বিষয়ে শাফিয়ি রহ. এর অভিমত গ্রহণ করা হবে না, বরং) যাদু চর্চার বিষয়টা প্রমাণিত হলে তাকে হত্যা করে দেয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে তার থেকে তাওবা তলব করা হবে না। যদি তার মাঝে কোন কুফরি আকিদা না থাকে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে শুধু যাদুর কারণে নয়, বরং যমিনে ফাসাদ করে বেড়ানোর কারণে।” (ফাতহুল কাদির: ৬/৯৯)সারকথা-
যাদুতে কোন কুফরি কথা, কাজ বা বিশ্বাস থাকলে তা সর্বসম্মতিতে কুফর এবং যাদুকর (আগে মুসলিম থেকে থাকলে এখন) কাফের। আর কুফরি কিছু না থাকলে অনেকের মতে কাফের আর কারো কারো মতে কাফের নয়। তবে কুফরি থাকুক বা না থাকুক, কাফের হোক বা না হোক- তাওবার আগে পাকড়াও হলে সর্বাবস্থায় তাকে হত্যা করে দিতে হবে। যাদুকর মুসলিম হোক বা কাফের হোক, মুসলিম হয়ে থাকলে যাদুর দ্বারা মুরতাদ হোক বা না হোক, পুরুষ হোক কি মহিলা- সর্বাবস্থায় তার বিধান: তাওবার আগে পাকড়াও হলে হত্যা। কারণ, সে মুফসিদ ফিল আরদ তথা যমিনে ফাসাদ বিস্তারকারী। আর মুফসিদের ক্ষেত্রে কাফের-মুসলিম, পুরুষ-মহিলা, স্বাধীন-গোলাম সবার হুকুম সমান।
Comment