বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা কাচাঁ বাজার বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে
ট্রেনের হুইসেল শুনলেই তড়িঘড়ি করে মালামাল সরিয়ে ফেলছে দোকানিরা। ট্রেন চলে গেলে আবারো আগের অবস্থা। একেবারে লাইন ঘেঁষে সারিবদ্ধ দোকান। কাঁচামালের টুকরি থরে থরে সাজানো। রেললাইনের পাশ ধরে পথচারীরা হেঁটে যাবেন সে স্থানটুকুও নেই। কখন হঠাৎ ট্রেন এলে বিপদে পড়তে হয় পথচারীদের। কোন দিকে যাবেন, কোন দিক দিয়ে গেলে নিরাপদ থাকবেন তা ঠিক করতে হুড়োহুড়ি শুরু হয় তখন। এতে কখনো কখনো ঘটে যায় দুর্ঘটনা। রাজধানীর বুক চিরে এগিয়ে চলা রেললাইনের পাশে অনেক স্থানেই এ অবস্থা। বিশেষ করে যে স্থানে রেললাইনের পাশে বেড়া নেই সেখানেই বসছে বাজার। এ বাজার নিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, গেটম্যান থেকে শুরু করে রেলভবন পর্যন্ত এ টাকার ভাগ যায়। গেন্ডারিয়ার ঘুমটিঘর থেকে শুরু করে জুরাইন রেলক্রসিং পর্যন্ত রেল সড়কের দুই পাশে প্রতিদিনই বসছে নানা পণ্যের দোকান। রেললাইনের পাশে চা-সিগারেটের স্থায়ী কিছু দোকান আছে। আর সকাল বিকেল কাঁচাবাজার বসছে সেখানে। খিলগাঁও রেলগেট বাজারটি দিনভর জমজমাট থাকে। এখানে মাছ-গোশতসহ সব পণ্যই মিলছে। স্থানীয়রা বলেন, রেলগেট বাজারটিতে মালামালের দাম কিছুটা কম। সে কারণে দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এ বাজারে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টঙ্গী, উত্তরখান, কসাইবাড়ী, বিমানবন্দর, খিলতে, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী, নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, মগবাজার, গোপীবাগ, টিটিপাড়া, জুরাইনসহ বেশ কিছু এলাকায় রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক বাজার বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে বিপজ্জনক বাঁক, যেখান থেকে ৫০ গজ দূরে ট্রেন থাকলেও দেখা সম্ভব হয় না। অথচ সেসব স্থানেও বসছে বাজার। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে কোনো ভাবলেস ছাড়াই পণ্য কেনাবেচা করে যাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কাওরান বাজার রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাজারটিকে অনেকেই মৃত্যুফাঁদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেললাইনের ওপর মাছের বাজার এবং পাশের জায়গা দখল করে দোকান গড়ে তোলার কারণেই বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে আসছে। প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত পুরো রেললাইনের ওপর বিরাট এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা মাছের আড়তে হাজার হাজার মানুষের সমাগম থাকে। রেললাইনের দুই পাশে দোকান থাকায় ট্রেন আসা-যাওয়ার মুহূর্তে লোকজন নিরাপদ দূরত্বে যেতে পারে না। স্থানীয় সূত্র জানায়, রেল পুলিশকে মাছবাজারের পক্ষ থেকে বড় সুবিধা দেয়া হয়, যে কারণে সেখানে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। যে যেভাবে পারছে রেললাইনের পাশের জায়গা দখল করে দোকান বসাচ্ছে। খিলগাঁও রেল ক্রসিং হচ্ছে কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিটি রেলের অভিমুখ এবং আন্তঃমুখ পয়েন্ট। অথচ এ ক্রসিংমুখের চারপাশেই ঝুপরি টানিয়ে গড়ে উঠেছে শাকসবজি ও মাছ-গোশতের বাজার। এমনকি দুই রেলপথের মাঝখানেও পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য চলছে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা স্থায়ী হয় না। সকালে উচ্ছেদ অভিযান চললে বিকেলেই সেখানে আবার বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। বিমানবন্দর রেল ক্রসিংয়ের ওপর নিয়মিত বসছে বাজার। ফলমূল, মাছ, সবজিসহ নানা পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। খিলতে রেল ক্রসিংয়ের ওপর দিনভর বসে কাঁচাবাজার। ভয়াবহ অবস্থা জুরাইনে। ক্রেতারাও রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে বাজার সারছেন। রেললাইনের দু-তিন ফুট দূরেই বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ বাজার করছে। আর হঠাৎ ট্রেন এসে পড়ল। মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। তখন হুড়োহুড়ি লেগে যায়। গতকাল শাহজাহানপুর রেল ক্রসিং এলাকায় শামসুল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, মাঝে মধ্যেই এ রকম ঝুঁকিতে পড়তে হয়। তারপরও ক্রেতারা রেললাইনের পাশের এ বাজারে নিয়মিত বাজার করছেন। এ দিকে অনেক এলাকায় রেললাইনের পাশ দিয়েই রাস্তা রয়েছে। বাজারের কারণে ওই সব রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। বাজারের ময়লা আবর্জনা স্থানে স্থানে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে, যা থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনও স্থান রয়েছে যেখান থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণও সম্ভব নয়, যে কারণে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এ বাজারগুলো বসছে টাকার বিনিময়ে। আর এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন অনেকেই। সে কারণে পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না এই ঝুঁকিপূর্ণ বাজারগুলো।
[সূত্র: নয়া দিগন্ত ০৯.০৯.২০১৮]
ট্রেনের হুইসেল শুনলেই তড়িঘড়ি করে মালামাল সরিয়ে ফেলছে দোকানিরা। ট্রেন চলে গেলে আবারো আগের অবস্থা। একেবারে লাইন ঘেঁষে সারিবদ্ধ দোকান। কাঁচামালের টুকরি থরে থরে সাজানো। রেললাইনের পাশ ধরে পথচারীরা হেঁটে যাবেন সে স্থানটুকুও নেই। কখন হঠাৎ ট্রেন এলে বিপদে পড়তে হয় পথচারীদের। কোন দিকে যাবেন, কোন দিক দিয়ে গেলে নিরাপদ থাকবেন তা ঠিক করতে হুড়োহুড়ি শুরু হয় তখন। এতে কখনো কখনো ঘটে যায় দুর্ঘটনা। রাজধানীর বুক চিরে এগিয়ে চলা রেললাইনের পাশে অনেক স্থানেই এ অবস্থা। বিশেষ করে যে স্থানে রেললাইনের পাশে বেড়া নেই সেখানেই বসছে বাজার। এ বাজার নিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, গেটম্যান থেকে শুরু করে রেলভবন পর্যন্ত এ টাকার ভাগ যায়। গেন্ডারিয়ার ঘুমটিঘর থেকে শুরু করে জুরাইন রেলক্রসিং পর্যন্ত রেল সড়কের দুই পাশে প্রতিদিনই বসছে নানা পণ্যের দোকান। রেললাইনের পাশে চা-সিগারেটের স্থায়ী কিছু দোকান আছে। আর সকাল বিকেল কাঁচাবাজার বসছে সেখানে। খিলগাঁও রেলগেট বাজারটি দিনভর জমজমাট থাকে। এখানে মাছ-গোশতসহ সব পণ্যই মিলছে। স্থানীয়রা বলেন, রেলগেট বাজারটিতে মালামালের দাম কিছুটা কম। সে কারণে দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এ বাজারে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টঙ্গী, উত্তরখান, কসাইবাড়ী, বিমানবন্দর, খিলতে, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী, নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, কাওরান বাজার, মগবাজার, গোপীবাগ, টিটিপাড়া, জুরাইনসহ বেশ কিছু এলাকায় রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক বাজার বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে বিপজ্জনক বাঁক, যেখান থেকে ৫০ গজ দূরে ট্রেন থাকলেও দেখা সম্ভব হয় না। অথচ সেসব স্থানেও বসছে বাজার। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে কোনো ভাবলেস ছাড়াই পণ্য কেনাবেচা করে যাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কাওরান বাজার রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাজারটিকে অনেকেই মৃত্যুফাঁদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেললাইনের ওপর মাছের বাজার এবং পাশের জায়গা দখল করে দোকান গড়ে তোলার কারণেই বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে আসছে। প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত পুরো রেললাইনের ওপর বিরাট এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা মাছের আড়তে হাজার হাজার মানুষের সমাগম থাকে। রেললাইনের দুই পাশে দোকান থাকায় ট্রেন আসা-যাওয়ার মুহূর্তে লোকজন নিরাপদ দূরত্বে যেতে পারে না। স্থানীয় সূত্র জানায়, রেল পুলিশকে মাছবাজারের পক্ষ থেকে বড় সুবিধা দেয়া হয়, যে কারণে সেখানে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। যে যেভাবে পারছে রেললাইনের পাশের জায়গা দখল করে দোকান বসাচ্ছে। খিলগাঁও রেল ক্রসিং হচ্ছে কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিটি রেলের অভিমুখ এবং আন্তঃমুখ পয়েন্ট। অথচ এ ক্রসিংমুখের চারপাশেই ঝুপরি টানিয়ে গড়ে উঠেছে শাকসবজি ও মাছ-গোশতের বাজার। এমনকি দুই রেলপথের মাঝখানেও পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য চলছে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও তা স্থায়ী হয় না। সকালে উচ্ছেদ অভিযান চললে বিকেলেই সেখানে আবার বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। বিমানবন্দর রেল ক্রসিংয়ের ওপর নিয়মিত বসছে বাজার। ফলমূল, মাছ, সবজিসহ নানা পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। খিলতে রেল ক্রসিংয়ের ওপর দিনভর বসে কাঁচাবাজার। ভয়াবহ অবস্থা জুরাইনে। ক্রেতারাও রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে বাজার সারছেন। রেললাইনের দু-তিন ফুট দূরেই বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ বাজার করছে। আর হঠাৎ ট্রেন এসে পড়ল। মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। তখন হুড়োহুড়ি লেগে যায়। গতকাল শাহজাহানপুর রেল ক্রসিং এলাকায় শামসুল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, মাঝে মধ্যেই এ রকম ঝুঁকিতে পড়তে হয়। তারপরও ক্রেতারা রেললাইনের পাশের এ বাজারে নিয়মিত বাজার করছেন। এ দিকে অনেক এলাকায় রেললাইনের পাশ দিয়েই রাস্তা রয়েছে। বাজারের কারণে ওই সব রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। বাজারের ময়লা আবর্জনা স্থানে স্থানে স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে, যা থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনও স্থান রয়েছে যেখান থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণও সম্ভব নয়, যে কারণে ওই সব এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এ বাজারগুলো বসছে টাকার বিনিময়ে। আর এ টাকার ভাগ পাচ্ছেন অনেকেই। সে কারণে পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না এই ঝুঁকিপূর্ণ বাজারগুলো।
[সূত্র: নয়া দিগন্ত ০৯.০৯.২০১৮]
Comment