রাখাইনে বিদ্রোহীদের হামলায় ৭ সেনা নিহত।
গত ৪ জানুয়ারী শুক্রবার ভোর বেলায় আরাকান আর্মি নামক একটি বৌদ্ধ বিদ্রোহী গ্রুপ রাখাইনের চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছিল। এ হামলায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হয়েছে। এসময় আটক করা হয়েছে আরো ১২ পুলিশ সদস্যকে।
সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে এ খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা আল-ইমারাহ পুশ্ত এর সাংবাদিক আহমদ জারীফ।
বৌদ্ধ বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মুখপাত্র খিন থু খা তার এক বিবৃতিতে জানায় যে, মায়ানমারের ৫ পুলিশ সদস্য প্রথমে তাদের উপর হামলা চালায়, পরে তারা চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছে। যার ফলে সামরীক বাহিনীর ৭ সদস্য নিহত হয়। এছাড়াও তারা সামরিক বাহিনীর আরও ১২ সদস্যকে আটক করেছে বলে দাবি করে উক্ত মুখপাত্র।
আটককৃতদের কোন ক্ষতি করবেনা বলেও জানায় বিদ্রোহী গ্রুপটি এবং তাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে চলবে তারা।
বৌদ্ধ গ্রুপটির মুখপাত্র জানায়, "মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যে হামলা চালিয়েছে তার জবাবেই এ হামলা চালানো হয়েছে"।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গত মঙ্গলবারেও একই গোষ্ঠীর হাতে আরেকটি হামলার খবর নিশ্চিত করেছিল।
যে চারটি পুলিশ পোস্টে হামলা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া।
এদিকে সামরিক বাহিনীর প্রধান জানায়, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই অঞ্চলে সেনা অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এই হামলাগুলো তখনই চালানো হয় যখন, ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৭১বছর পূর্তিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা শেষ করছিল।
মূলত বৌদ্ধ এই বিদ্রোহী গ্রুপটি রাখাইনে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চাইছে।
তাদের অভিযোগ পুলিশ পোস্টগুলোকে সামরিক বাহিনী আর্টিলারি হিসেবে ব্যবহার করছে।
মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যটিতে গত ডিসেম্বর থেকেই বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ জোরদার হতে থাকলে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়।
সংবাদটিতে আরো বলা হয় আরাকান আর্মির সাথে সাম্প্রতিক লড়াইয়ের জের ধরে আরও আড়াই হাজার (২৫০০) বেসামরিক নাগরিককে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
গত বছরের গোঁড়ার কথা, এই রাখাইনেই গত বছর ভয়াবহ সেনা অভিযানের প্রাণ হারায় হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলিম। সহিংস হামলার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো। যাদের সংখ্যা ৭ লাখেরও বেশি। এদের অধিকাংশই আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী মুসলিম নামক বাংলাদেশে, এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও পাড়িজমান তারা। বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা তখন ঐক্যবদ্ধ ভাবেই হামলা চালায় মুসলিমদের উপর, চাই তারা হোক সামরিক বাহিনী বা আরাকান আর্মি হোক সাধারণ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। তাদের সবারই লক্ষ্য ছিলো মুসলিম মুক্ত আরাকান গড়া।
বাংলাদেশে এখনও সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে শরণার্থী রোহিঙ্গা মুসলিমরা, যদিও বাংলাদেশ ও মায়ানমারের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশে ফিরে আসা নিয়ে একটি চুক্তিও করেছিল, কিন্তু তারা তাদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও সেখানে নেই তাদের জন্য কোন নিরাপত্তা। যে কয়েকজন মুসলিম ফিরে গিয়েছিলেন আরাকানে, তারা পুনরায় ফিরে আসেন বাংলাদেশে, মূলত মুসলিমদের নিরাপত্তার কোন গ্যারান্টিই নেই সেখানে।
Comment