মাছ-মুরগির খাবারের আড়ালে আনা হচ্ছে হারাম বস্তু শূকরের বর্জ্য!
মাছের খাবারের নামে আনা আরও ১৫টি চালানে পাওয়া গেছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হারাম বস্তু শূকরের বর্জ্য। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা এসব চালানে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ১৩শ’ তিন মেট্রিক টন মাছের খাদ্য রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারসহ দেশের নামকরা তিনটি পরীক্ষাগারে এসব চালানের নমুনা পরীক্ষায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও আমদানি নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক গণমাধ্যম ইনকিলাব।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫টি চালানে শূকরসহ গবাদিপশুর বর্জ্যযুক্ত মাছের খাবার পাওয়া গেছে। আরও অন্তত ৩০টি চালানের নমুনা পরীক্ষা চলছে। মাছের খাবারের নামে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি হচ্ছে অহরহ।
এ নিয়ে গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১৮টি চালানে আমদানি নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিল পাওয়া গেল। এসব চালানে পণ্যের পরিমাণ দুই হাজার ৭১১ মেট্রিক টন। গত ২৪ জুলাই প্রথম দফায় তিনটি চালানে আসা ৮৫ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক হাজার ৪০৯ টন মাছের খাবারে শূকরের বর্জ্য পাওয়া যায়। এরপর নড়েচড়ে বসে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি চালানের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগার ছাড়াও ঢাকার আইসিডিডিআর বি, চট্টগ্রামের পোল্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে এসব চালানের নমুনা পাঠানো হয়। এবার কয়েকটি চালানের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫টি চালানে ক্ষতিকর বর্জ্য থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ১১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এসব চালানের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ কেজি বা ১,৩০৩ মেট্রিক টন। জব্দকৃত ১৫টি চালানের মধ্যে ১৩টি আমদানি হয় ভিয়েতনাম থেকে। বাকি দুটি বেলজিয়াম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা। এসব চালানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ৩০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি তিন লাখ ৭৫ হাজার কেজি চালানটির আমদানিকারক রাজশাহীর ফিশটেক বিডি লিমিটেড। ভাসমান মাছের খাবার হিসেবে ভিয়েতনাম থেকে এ চালানটি আমদানি করে তারা।
চালানটি খালাসের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের এশিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। একই আমদানিকারকের নামে আনা ছয় টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি ৭৫ হাজার কেজি আরও একটি চালান জব্দ করা হয়। ১২ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক লাখ ৫০ হাজার কেজি মাছের খাবার আমদানি করে সিরাজগঞ্জের মিশাম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। এ প্রতিষ্ঠানটিরও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের এশিয়া এন্টারপ্রাইজ। এ দুটি চালানসহ আটক চালানের মধ্যে মোট ছয়টি চালান খালাসের দায়িত্বে রয়েছে এশিয়া এন্টারপ্রাইজ।
জব্দকৃত চালানের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের একোয়াটেক অ্যাগ্রো লিমিটেডের ১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক লাখ আট হাজার কেজি মাছের খাবার। এ চালানটির ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়েছে। ঢাকার এডভান্স অ্যাগ্রোর ১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি মাছের খাবারের পরিমাণ এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ কেজি। এছাড়া গাজীপুরের কোয়ালিটি ফিডসের আনা দুই লাখ কেজি, পাবনার আর আর পি অ্যাগ্রো ফার্মসের ২৭ হাজার কেজি, ঢাকার ইন্টার অ্যাগ্রোর ৭০ হাজার কেজি, ম্যাগনিফাই অ্যাগ্রোর ২৬ হাজার কেজি, ময়মনসিংহের ভিএনএফ অ্যাগ্রোর ৫০ হাজার কেজি, কক্সবাজারের এমকেএ হ্যাচারীর ২১ হাজার কেজি চালানে ক্ষতিকর বর্জ্য পাওয়া যায়।
উন্নত দেশগুলোতে শূকর ও গবাদিপশুর বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রফতানি করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে অনেক সময় অ্যানথ্রাক্স, মেডকাউসহ বিভিন্ন মারাত্মক মহামারি আক্রান্ত শূকর ও গবাদিপশুকে মেরে ক্রাশ করা হয়। এরপর এসব বর্জ্য সার ও পশুখাদ্য হিসেবে অনুন্নত দেশে রফতানি করা হয়।
দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আমদানিকারকেরা মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে এসব পণ্য নিয়ে আসে। ফলে এসব বর্জ্যে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক, টেনারি উপজাত ও মেলামাইনের মিশ্রণ থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব খাবার খেয়ে মাছ ও মুরগির বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। এসব মাছ এবং মুরগি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন মাছের খাবার আমদানি হয়।
Comment