হিন্দুত্ববাদী মালাউনদের অপশাসনে ভারতের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হারে নাটকীয় পতন!
কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসীন সন্ত্রাসী দল ভারতীয় জনতা পার্টি বলছে— সব ঠিকই আছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু ভারতের আর্থিক বিকাশ নিয়ে, বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে এ দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত যে হিসেব দিচ্ছে তা যথেষ্টই উদ্বেগজনক।
আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্টে প্রকাশ, কয়েক মাস আগে পর্যন্তও যে সব বড় বড় আর্থিক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ দেশের উন্নয়নের গতি নিয়ে প্রবল আশাবাদী ছিল, তারা হঠাত্ উল্টো সুর গাইতে শুরু করে দিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের শুরুতে, অর্থাত্ গত এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছিল— শেষ দু’বছরের নিম্নগতি সামলে এ বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে যাচ্ছে ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু ছ’মাস কাটতে না কাটতে সেই হিসেব তারা নামিয়ে এনেছে ৬ শতাংশে।
একা বিশ্বব্যাঙ্কই নয়— আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি), ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) থেকে শুরু করে মুডি’জ ইনভেস্টরস সার্ভিস, ফিচ রেটিংস, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক মাস আগে ভারতের বৃদ্ধির যে সম্ভাব্য হার ঘোষণা করেছিল, তা ঝপ করে অনেকটাই নীচে নামিয়ে এনেছে সম্প্রতি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার হবে ৭.৪ শতাংশ। এপ্রিলে এই হার তারা কমিয়ে আনে ৭.২ শতাংশে। আর গত ৪ অক্টোবর এক লাফে এটা নেমে এসেছে ৬.১ শতাংশে। প্রসঙ্গত, এর কিছু দিন আগেই, গত ২৬ অগস্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে পৌনে দুই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। অতীতে এত বিশাল অঙ্কের অর্থ কখনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঞ্চয় থেকে কেন্দ্রের তহবিলে যায়নি।
আইএমএফ মাস তিনেক আগে বলেছিল, এ বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হবে। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর তারা বলে দেয়, এই হার ৬.১ শতাংশের বেশি হওয়া মুশকিল। সারা বিশ্বে আর্থিক মন্দা দেখা দিলেও, ভারতের সমস্যা তুলনায় বেশি প্রকট বলেও মন্তব্য করেছে আইএমএফের নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভা।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অবশ্য ভারতীয় অর্থনীতির আর একটু বেশি বৃদ্ধির আশা দেখছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া হিসেবে তারা বলেছে, ৬.৫ শতাংশের মতো হবে এ বছর ভারতের বৃদ্ধির হার। জুলাইতে এডিবি বলেছিল ৭.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা।
মুডি’জ ইনভেস্টর্স সার্ভিস আবার ভারতের বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশেরও কম হবে বলে মনে করছে। আগে তারা ৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলেছিল। গত ১০ অক্টোবর তাদের দেওয়া হিসেবে এই হার ৫.৮ শতাংশ।
ফিচ রেটিংস গত জুনে ৬.৬ শতাংশের প্রোজেকশন দিয়েছে। আগে বলেছিল ৬.৮ শতাংশ। অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) মনে করছে, ৫.৯ শতাংশ হবে ভারতের এ বছরের বৃদ্ধির হার। চার মাস আগে তাদের হিসেব ছিল ৭.২ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস-এর আগের হিসেব ছিল ৭.১ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তারা বলছে এটা ৬.৩ শতাংশ হবে।
মোদী সরকার এবং বৃদ্ধির হার
নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথম যখন দেশের ক্ষমতায় বসছে, ঠিক সেই ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮.০২ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের ৩০ মে সে যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছে, সেই ত্রৈমাসিকে দেশের বৃদ্ধির হার ৫.০১ শতাংশ। ফারাকটা চেখে পড়ার মতো। যদিও মাঝে অনেক ওঠানামা রয়েছে, কিন্তু গত আর্থিক বছরটা (২০১৮-১৯) যদি দেখা যায়— প্রত্যেকটা ত্রৈমাসিকেই কমেছে বৃদ্ধির হার। এবং চলতি অর্থবর্ষের শুরুর ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন ২০১৯) তা আরও কমেছে, এবং এই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আশঙ্কার মেঘটা ঘনীভূত হচ্ছিল নোটবন্দির পর থেকে। এ দেশের দুই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ (একজন অবশ্য তখনও নোবেল পাননি) থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর এবং আরও অনেকে, ভারতীয় অর্থনীতির আকাশে অশনি সঙ্কেত দেখতে পেয়েছিল। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আচমকাই নোটবন্দির ঘোষণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাতারাতি বাতিল করে দেওয়া হয় পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট। সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই পদক্ষেপ। অমর্ত্য সেন, মনমোহন সিংহ, অভিজিত্ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য ছিল— এই সিদ্ধান্ত কালো টাকা উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারবে না, উল্টে ভারতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাবে। সরকার পক্ষের অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এই তত্ত্ব আমল দেয়নি। এমনকি বিশ্বব্যাঙ্ক বা আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে কোনও উদ্বেগ তো প্রকাশ করেইনি, উল্টে আশু এবং পরবর্তী ভবিষ্যত্ কমবেশি উজ্জ্বল বলেই মনে করছিল।
নোটবন্দির মাস আটেক পরে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে ভাবে, যে কাঠামোয় এই নতুন করব্যবস্থা চালু হয়, তাও দেশের অর্থনীতির পক্ষে ভাল হবে না বলে মনে করেছিল অনেকেই। নোটবন্দি আর জিএসটির প্রভাব কোথায়, কী ভাবে, কতটা পড়েছে তা নিয়ে এখনও বিস্তর আলোচনা, তর্কবিতর্ক অব্যাহত। কিন্তু কাঠখোট্টা তথ্যটা হল এই যে— এই দুটো পদক্ষেপের পরে ভারতীয় অর্থনীতিতে বাৎসরিক বৃদ্ধির হার আর বাড়েনি, কমেছে।
২০১৪-১৫ সালে, নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রথম বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪১ শতাংশ। পরের বছর বেড়ে হয় ৮ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে আরও একটু বেড়ে ৮.১৭ শতাংশ। এই বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারেই নোটবন্দির ঘোষণা হয়। পরের বছর অর্থাত্ ২০১৭-১৮ সালে বৃদ্ধির হার এক শতাংশ কমে হয় ৭.১৭। গত অর্থবর্ষে তা সাতেরও নীচে নেমে এসে হয় ৬.৮১ শতাংশ। এ বছরের সম্ভাব্য ছবিটা আরও খারাপ।
‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল নরেন্দ্র মোদী। যদিও পরের ভোট জয়ে তাঁর প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল উগ্র দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ। শিল্প থেকে কৃষি, কোনও ক্ষেত্রেই অচ্ছে দিনের আলো দেখানোর মতো তথ্য নেই। এ কথা সত্যি যে— জিডিপি, বৃদ্ধির হার ইত্যাদি দিয়ে সব সময় দেশের অর্থনীতির বা দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা যায় না। কিন্তু বর্তমান সঙ্কট তো শুধু পরিসংখ্যানের পাতায় নয়, বাস্তবের মাঠঘাট-কলকারখানাতেও তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাড়ি শিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। মন্দার ছবি আরও অনেক শিল্পেই। কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। গত বছর আগস্টের তুলনায় এ বছর আগস্টে দেশের শিল্পোৎপাদন সূচক নেমে গিয়েছে ১ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রকই সেটা জানিয়েছে। গত অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাস (এপ্রিল-অগস্ট) মিলিয়ে শিল্পোৎপাদন সূচকের বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৩ শতাংশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেই হার নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা কিন্তু একেবারেই ‘অচ্ছে’ বলার মতো নয়।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2019/10/20/28127/
কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসীন সন্ত্রাসী দল ভারতীয় জনতা পার্টি বলছে— সব ঠিকই আছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু ভারতের আর্থিক বিকাশ নিয়ে, বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে এ দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত যে হিসেব দিচ্ছে তা যথেষ্টই উদ্বেগজনক।
আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্টে প্রকাশ, কয়েক মাস আগে পর্যন্তও যে সব বড় বড় আর্থিক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ দেশের উন্নয়নের গতি নিয়ে প্রবল আশাবাদী ছিল, তারা হঠাত্ উল্টো সুর গাইতে শুরু করে দিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের শুরুতে, অর্থাত্ গত এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছিল— শেষ দু’বছরের নিম্নগতি সামলে এ বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে যাচ্ছে ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু ছ’মাস কাটতে না কাটতে সেই হিসেব তারা নামিয়ে এনেছে ৬ শতাংশে।
একা বিশ্বব্যাঙ্কই নয়— আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি), ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) থেকে শুরু করে মুডি’জ ইনভেস্টরস সার্ভিস, ফিচ রেটিংস, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক মাস আগে ভারতের বৃদ্ধির যে সম্ভাব্য হার ঘোষণা করেছিল, তা ঝপ করে অনেকটাই নীচে নামিয়ে এনেছে সম্প্রতি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার হবে ৭.৪ শতাংশ। এপ্রিলে এই হার তারা কমিয়ে আনে ৭.২ শতাংশে। আর গত ৪ অক্টোবর এক লাফে এটা নেমে এসেছে ৬.১ শতাংশে। প্রসঙ্গত, এর কিছু দিন আগেই, গত ২৬ অগস্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে পৌনে দুই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। অতীতে এত বিশাল অঙ্কের অর্থ কখনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঞ্চয় থেকে কেন্দ্রের তহবিলে যায়নি।
আইএমএফ মাস তিনেক আগে বলেছিল, এ বছর ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হবে। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর তারা বলে দেয়, এই হার ৬.১ শতাংশের বেশি হওয়া মুশকিল। সারা বিশ্বে আর্থিক মন্দা দেখা দিলেও, ভারতের সমস্যা তুলনায় বেশি প্রকট বলেও মন্তব্য করেছে আইএমএফের নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিভা।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অবশ্য ভারতীয় অর্থনীতির আর একটু বেশি বৃদ্ধির আশা দেখছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া হিসেবে তারা বলেছে, ৬.৫ শতাংশের মতো হবে এ বছর ভারতের বৃদ্ধির হার। জুলাইতে এডিবি বলেছিল ৭.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা।
মুডি’জ ইনভেস্টর্স সার্ভিস আবার ভারতের বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশেরও কম হবে বলে মনে করছে। আগে তারা ৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলেছিল। গত ১০ অক্টোবর তাদের দেওয়া হিসেবে এই হার ৫.৮ শতাংশ।
ফিচ রেটিংস গত জুনে ৬.৬ শতাংশের প্রোজেকশন দিয়েছে। আগে বলেছিল ৬.৮ শতাংশ। অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) মনে করছে, ৫.৯ শতাংশ হবে ভারতের এ বছরের বৃদ্ধির হার। চার মাস আগে তাদের হিসেব ছিল ৭.২ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস-এর আগের হিসেব ছিল ৭.১ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তারা বলছে এটা ৬.৩ শতাংশ হবে।
মোদী সরকার এবং বৃদ্ধির হার
নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালের ২৬ মে প্রথম যখন দেশের ক্ষমতায় বসছে, ঠিক সেই ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮.০২ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের ৩০ মে সে যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছে, সেই ত্রৈমাসিকে দেশের বৃদ্ধির হার ৫.০১ শতাংশ। ফারাকটা চেখে পড়ার মতো। যদিও মাঝে অনেক ওঠানামা রয়েছে, কিন্তু গত আর্থিক বছরটা (২০১৮-১৯) যদি দেখা যায়— প্রত্যেকটা ত্রৈমাসিকেই কমেছে বৃদ্ধির হার। এবং চলতি অর্থবর্ষের শুরুর ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন ২০১৯) তা আরও কমেছে, এবং এই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আশঙ্কার মেঘটা ঘনীভূত হচ্ছিল নোটবন্দির পর থেকে। এ দেশের দুই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ (একজন অবশ্য তখনও নোবেল পাননি) থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর এবং আরও অনেকে, ভারতীয় অর্থনীতির আকাশে অশনি সঙ্কেত দেখতে পেয়েছিল। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আচমকাই নোটবন্দির ঘোষণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাতারাতি বাতিল করে দেওয়া হয় পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট। সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই পদক্ষেপ। অমর্ত্য সেন, মনমোহন সিংহ, অভিজিত্ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য ছিল— এই সিদ্ধান্ত কালো টাকা উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারবে না, উল্টে ভারতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাবে। সরকার পক্ষের অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এই তত্ত্ব আমল দেয়নি। এমনকি বিশ্বব্যাঙ্ক বা আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে কোনও উদ্বেগ তো প্রকাশ করেইনি, উল্টে আশু এবং পরবর্তী ভবিষ্যত্ কমবেশি উজ্জ্বল বলেই মনে করছিল।
নোটবন্দির মাস আটেক পরে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে ভাবে, যে কাঠামোয় এই নতুন করব্যবস্থা চালু হয়, তাও দেশের অর্থনীতির পক্ষে ভাল হবে না বলে মনে করেছিল অনেকেই। নোটবন্দি আর জিএসটির প্রভাব কোথায়, কী ভাবে, কতটা পড়েছে তা নিয়ে এখনও বিস্তর আলোচনা, তর্কবিতর্ক অব্যাহত। কিন্তু কাঠখোট্টা তথ্যটা হল এই যে— এই দুটো পদক্ষেপের পরে ভারতীয় অর্থনীতিতে বাৎসরিক বৃদ্ধির হার আর বাড়েনি, কমেছে।
২০১৪-১৫ সালে, নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রথম বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪১ শতাংশ। পরের বছর বেড়ে হয় ৮ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে আরও একটু বেড়ে ৮.১৭ শতাংশ। এই বছরের তৃতীয় কোয়ার্টারেই নোটবন্দির ঘোষণা হয়। পরের বছর অর্থাত্ ২০১৭-১৮ সালে বৃদ্ধির হার এক শতাংশ কমে হয় ৭.১৭। গত অর্থবর্ষে তা সাতেরও নীচে নেমে এসে হয় ৬.৮১ শতাংশ। এ বছরের সম্ভাব্য ছবিটা আরও খারাপ।
‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল নরেন্দ্র মোদী। যদিও পরের ভোট জয়ে তাঁর প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল উগ্র দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ। শিল্প থেকে কৃষি, কোনও ক্ষেত্রেই অচ্ছে দিনের আলো দেখানোর মতো তথ্য নেই। এ কথা সত্যি যে— জিডিপি, বৃদ্ধির হার ইত্যাদি দিয়ে সব সময় দেশের অর্থনীতির বা দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা যায় না। কিন্তু বর্তমান সঙ্কট তো শুধু পরিসংখ্যানের পাতায় নয়, বাস্তবের মাঠঘাট-কলকারখানাতেও তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাড়ি শিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। মন্দার ছবি আরও অনেক শিল্পেই। কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। গত বছর আগস্টের তুলনায় এ বছর আগস্টে দেশের শিল্পোৎপাদন সূচক নেমে গিয়েছে ১ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রকই সেটা জানিয়েছে। গত অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাস (এপ্রিল-অগস্ট) মিলিয়ে শিল্পোৎপাদন সূচকের বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৩ শতাংশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেই হার নেমে এসেছে ২.৪ শতাংশে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা কিন্তু একেবারেই ‘অচ্ছে’ বলার মতো নয়।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2019/10/20/28127/
Comment