ক্রুসেডার যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ফিলিস্তিন দখলের নতুন অধ্যায়, নিশ্চুপ কথিত জাতিসংঘ
সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত ১৮ নভেম্বর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছে : “the establishment of Israeli civilian settlements is not,per se, inconsistent with international law.”
ক্রুসেডার যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণা কার্যত ফিলিস্তিনকে পাকাপোক্তভাবে ইসরাইলের দখলে নেয়ার আরো একটি অধ্যায়ের সূচনা করা হলো। সেই সাথে আবারো যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন প্রমাণ করল, সন্ত্রাসী দেশটি ইসরাইলের প্রত্যাশা পূরণে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির কোনো ধার ধারে না।
আসলে তার এই বক্তব্য হচ্ছে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক বক্তব্য। কারণ, সে এই বক্তব্যের মাধ্যমে যা প্রকাশ করল, তা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন-সম্পর্কিত পূববর্তী নীতি-অবস্থান থেকে রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি সরে যাওয়া। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পম্পেও খোলাখুলিই বলেছে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বেসরকারি বসতি গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের শান্তিকামী ও বিকেবান মানুষকে অবাক করে দিয়ে পম্পেও তার এই বক্তব্যের মধ্যে জানিয়ে দিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এই ডিক্রি জারি করল যে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনে যেসব অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে, তা কোনো-না-কোনোভাবে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইসরাইল বেশ আগে থেকেই ধীরে ধীরে এমন একটি উপসংহারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-সম্পর্কিত পররাষ্ট্রনীতি ধীরে ধীরে পাল্টে ফেলতে শুরু করে।
সন্ত্রাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের সময়টার ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্ব’ সম্পর্কিত বিষয়টির দিকে ফিরে তাকালে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমরা জানি, ইসরাইল নামের দুষ্ট রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল সেই ১৯৪৮ সালে, আর এর মাধ্যমেই একটি আন্তর্জাতিক চক্র কার্যত কবর রচনা করেছিল ফিলিস্তিন নামের রাষ্ট্রটির। সেই ১৯৪৮ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই, এমনকি একটি বারের জন্যও ফিলিস্তিন বা আরবের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। অধিকন্তু, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব উপায়ে ইসরাইলকে অর্থসহায়তা দিয়েছে ফিলিস্তিন দখলের কাজে। যেমন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কাজে ভর্তুকি জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আগেই বলা হয়েছে, পম্পেওর সাম্প্রতিক বক্তব্যের মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্ব প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী নীতি-অবস্থানের পুরোপুরি পরিবর্তন ঘটানো হলো। প্রশ্ন হচ্ছে : কিভাবে? ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনকে বুঝতে বারবার ভুল করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে আইন বোঝার মতো লোকের অভাব। বরং এর পেছনে কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজের সাথে। এমনিভাবে বারবার ঘটে চলা একটি বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ভোট দিয়েছে কিংবা ভেটো দিয়েছে কথিত জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের অসংখ্য প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। এসব প্রস্তাবে হয় ইসরাইলের সমালোচনা করা হয়েছিল, নয়তো সমর্থন জানানো হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি। তবে শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রে ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সাহস দেখাতে পেরেছিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন বলে উল্লেখ করে (inconsistent with international law)। যখন জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, তখন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপ্রক্রিয়ার একটি রাজনৈতিক মডেল নিয়ে কথা বলছিল। আর এর সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত হয় ‘মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি’। এটি ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত হয় ক্যাম্পডেভিডে। এটি ক্যাম্পডেভিড চুক্তি নামে সমধিক পরিচিত।
সেই তখন টাইম ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে জোসেফ হিঙ্কস লিখেছিল : “Republican and Democratic Presidents have referred to settlements as ‘illegitimate’ but declined to call them illegal— a designation that would make them subject to international sanctions.”। এর সারকথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট কেউই অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলে বসতি স্থাপনের কাজটিকে ‘অনুচিত’ (ইলেজিটিমেট) বললেও ‘অবৈধ’ বলতে রাজি হয়নি। কারণ ‘অবৈধ’ বললে ইসরাইল আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারত। এই লেখায় আরো বলা হয়- প্রেসিডেন্ট রিগ্যান নিজে ইসরাইলের এই বসতি স্থাপনের নীতির বিরোধী হলেও সে বিষয়টি দেখেছে শান্তির পথে একটি বাধা হিসেবে। সেই সাথে সব ধরনের বসতি নির্মাণের কাজ বন্ধের দাবিও সে জানিয়েছিল।
সন্ত্রাসী পম্পেওর বক্তব্যে, অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বৈপরীত্ব রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বারাক ওবামা প্রশাসন জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিনি বসতি স্থাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (ফ্র্যাগরেন্ট ভায়োলেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ল)। সে প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছিল, এগুলো নির্মাণের কোনো আইনি বৈধতা নেই (দে হ্যাভ নো লিগ্যাল ভ্যালিডিটি)। যদিও শেষ পর্যন্ত ওবামা ভোটদানে বিরত থাককেই বেছে নেয়। এ সিদ্ধান্তটি বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত বিদেশনীতি অবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম। কিন্তু সম্প্রতি ঘোষিত পম্পেওর ঘোষণায় দেয়া সিদ্ধান্তটিকে বিবেচনা করা হয় ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন ও অন্ধ সমর্থনের একটি উদাহরণ হিসেবে। আজকের দিনে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে চলেছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি প্রশাসনের জন্য একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের আগের সরকারগুলো কাজ করেছে নিজেদের স্বার্থ ও ইসরাইলের স্বার্থের মাঝে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে। অন্য দিকে ট্রাম্প প্রশাসন মনে হয় তার দেশের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-সম্পর্কিত বিদেশনীত পুরোপুরি মিশিয়ে ফেলেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার ডানপন্থী শিবিরের নীতির সাথে। আমরা যদি বিগত দু’টি বছরের দিকে নজর দিই, তবে দেখব- যুক্তরাষ্ট্র যেন এর সব রাজনৈতিক ক্ষমতা ইসরাইলকে সমর্পণ করে বসেছে। নইলে কোনো কিছু বিনিময়ের কথা চিন্তা না করেই কেন ইসরাইলের সব দাবি ও প্রত্যাশা অনেকটা বিনা বাক্য ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র পূরণ করে চলেছে। এর ফলে ওয়াশিংটনকে কেউ কেউ অভিহিত করছেন ‘জেরুসালেম’ নামে। এই জেরুসালেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ‘ইটারনাল আনডিভাইডেড ক্যাপিটেল’ পূর্ব জেরুসালেমকেও। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমি ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে সম্মতি দিয়েছে। সেই সাথে সম্মতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যাটি বেমালুম ভুলে যাওয়ার। পম্পেওর আলোচ্য সর্বশেষ ঘোষণাটি তেমনি নানা পদক্ষেপেরই উদাহরণ।
আসলে সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কাছে এর পররাষ্ট্রনীতি সারেন্ডার করে বসে আছে। এর একটি তত্ত্ব হচ্ছে- ওয়াশিংটন ধীরে ধীরে, কিন্তু স্থায়ীভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়াটির শুরু প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের শাসনামলের শেষ দিকের বছরগুলোতে এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদেও তা অবাধে অব্যাহত থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের ইচ্ছার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পরাভূত হয়ে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে বৈধতা দেয়ার বিষয়টি হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র ইসরাইলকে দেয়া বিদায়ী এক উপহার। এর আরেকটি ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট রয়েছে, এর আপাত বাতিল কর তথাকথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির’ সাথে। এই ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি হচ্ছে অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত একটি পলিটিক্যাল ডকট্রিন, যা দিয়ে ইসরাইলকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা চলেছে। বর্ণবাদ ও দখলদারিত্বে কোনো পরিবর্তন না এনেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রয়াসও এর মধ্যে রয়েছে।
এই ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির বিষয়টি কয়েক মাস নিষ্ক্রিয় রাখার পর আবার নতুন করে চালুর জন্য ওয়াশিংটন প্রবল আগ্রহে কাজ করেছে নেতানিয়াহুর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ আরো দীর্ঘায়িত করতে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুদীর্ঘকাল থাকা এই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ।
বর্তমানে ইসরাইলে চলছে এক ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট- ছয় মাস সময়ে দু’টি সাধারণ নির্বাচন, সেই সাথে সম্ভাবনা রয়েছে তৃতীয় একটি নির্বাচনেরও। এর সাথে জড়িত রয়েছে জনগণের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ। নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে ওয়াশিংটনে তার মিত্ররা তাকে দিয়েছে কিছু বড় ধরনের লাইফলাইন, এসব করা হয়েছে ইসরাইলের প্রাধান্য বিস্তারকারী ডানপন্থী শিবিরে সন্ত্রাসী নেতানিয়াহুর সমর্থন বাড়িয়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন ইসরাইলের জন্য পথ প্রশস্ত করছে সব ইহুদি বসতি ব্লককে পশ্চিম তীরের সাথে একীভূত করতে। ইসরাইল কখনোই আন্তর্জাতিক আইনকে প্রথম বিবেচ্য হিসেবে আমল দেয়নি। তাই ইসরাইলের জন্য জরুরি প্রয়োজন ছিল আমেরিকার কাছ থেকে এ ধরনের একটি সম্মতি বা স্বীকৃতি, যাতে কমপক্ষে পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ ইসরাইলের সাথে একীভূত করা যায়। ইসরাইলের প্রতি সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল ছাড়ের ব্যাপারে নেতানিয়াহু ছিল আরো বেশি আগ্রহী। ইসরাইলি এই সন্ত্রাসী নেতা গত ২০ নভেম্বর সম্মত হয় আরো একটি ষড়যন্ত্রমূলক বিল এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে। এই বিলে বলা হয় জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের সাথে একীভূত করতে হবে। এই বিলের খসড়া তৈরি করেছে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির সদস্য শ্যারেন হাস্কেল। সে নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের পর এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাটি হচ্ছে : “an opportunity to promote my law for sovereignty in the [Jordan] Valley.”
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইহুদি বসতি স্থাপন-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা শুধু এ কারণেই বিপজ্জনক নয় যে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি লঙ্ঘন। বরং এটি বিপজ্জনক এ কারণে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে উদ্বিঘ্ন নয়। প্রকৃত বিপদ হচ্ছে- ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখল প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিণত হয়েছে নিছক একটি রাবার স্ট্যাম্পে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পিত বিদেশনীতি ইসরাইলের চরম ডানপন্থী সরকারকে ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দিলো। সেই সাথে বপন করা হলো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির বীজ, যা চলতে পারে বহু বছর ধরে। যদি না এর বিপরীত কোনো প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সমাজ সূচনা করতে পারে। কিন্তু তেমনটি করার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, কার গোয়ালে কে ধোঁয়া দেয়- বিশেষ করে বিষয়টি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কিছু। অতএব, শেষ ভরসা একমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণ। ফিলিস্তিনি জনগণ যদি যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলে অধিকার আদায় করতে না পারে, তবে বিশ্বমানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব হারাবে। সে অবস্থা পরিত্রাণে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে কিছু করণীয় আছে বৈকি!
সূত্র: https://alfirdaws.org/2019/12/04/29280/
সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত ১৮ নভেম্বর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছে : “the establishment of Israeli civilian settlements is not,per se, inconsistent with international law.”
ক্রুসেডার যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণা কার্যত ফিলিস্তিনকে পাকাপোক্তভাবে ইসরাইলের দখলে নেয়ার আরো একটি অধ্যায়ের সূচনা করা হলো। সেই সাথে আবারো যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন প্রমাণ করল, সন্ত্রাসী দেশটি ইসরাইলের প্রত্যাশা পূরণে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির কোনো ধার ধারে না।
আসলে তার এই বক্তব্য হচ্ছে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক বক্তব্য। কারণ, সে এই বক্তব্যের মাধ্যমে যা প্রকাশ করল, তা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন-সম্পর্কিত পূববর্তী নীতি-অবস্থান থেকে রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি সরে যাওয়া। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পম্পেও খোলাখুলিই বলেছে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বেসরকারি বসতি গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের শান্তিকামী ও বিকেবান মানুষকে অবাক করে দিয়ে পম্পেও তার এই বক্তব্যের মধ্যে জানিয়ে দিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এই ডিক্রি জারি করল যে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনে যেসব অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে, তা কোনো-না-কোনোভাবে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইসরাইল বেশ আগে থেকেই ধীরে ধীরে এমন একটি উপসংহারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-সম্পর্কিত পররাষ্ট্রনীতি ধীরে ধীরে পাল্টে ফেলতে শুরু করে।
সন্ত্রাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের সময়টার ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্ব’ সম্পর্কিত বিষয়টির দিকে ফিরে তাকালে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমরা জানি, ইসরাইল নামের দুষ্ট রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল সেই ১৯৪৮ সালে, আর এর মাধ্যমেই একটি আন্তর্জাতিক চক্র কার্যত কবর রচনা করেছিল ফিলিস্তিন নামের রাষ্ট্রটির। সেই ১৯৪৮ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই, এমনকি একটি বারের জন্যও ফিলিস্তিন বা আরবের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। অধিকন্তু, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব উপায়ে ইসরাইলকে অর্থসহায়তা দিয়েছে ফিলিস্তিন দখলের কাজে। যেমন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কাজে ভর্তুকি জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আগেই বলা হয়েছে, পম্পেওর সাম্প্রতিক বক্তব্যের মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্ব প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী নীতি-অবস্থানের পুরোপুরি পরিবর্তন ঘটানো হলো। প্রশ্ন হচ্ছে : কিভাবে? ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনকে বুঝতে বারবার ভুল করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে আইন বোঝার মতো লোকের অভাব। বরং এর পেছনে কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজের সাথে। এমনিভাবে বারবার ঘটে চলা একটি বিষয় হচ্ছে, ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ভোট দিয়েছে কিংবা ভেটো দিয়েছে কথিত জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের অসংখ্য প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। এসব প্রস্তাবে হয় ইসরাইলের সমালোচনা করা হয়েছিল, নয়তো সমর্থন জানানো হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি। তবে শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রে ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সাহস দেখাতে পেরেছিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন বলে উল্লেখ করে (inconsistent with international law)। যখন জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, তখন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপ্রক্রিয়ার একটি রাজনৈতিক মডেল নিয়ে কথা বলছিল। আর এর সূত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত হয় ‘মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি’। এটি ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত হয় ক্যাম্পডেভিডে। এটি ক্যাম্পডেভিড চুক্তি নামে সমধিক পরিচিত।
সেই তখন টাইম ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে জোসেফ হিঙ্কস লিখেছিল : “Republican and Democratic Presidents have referred to settlements as ‘illegitimate’ but declined to call them illegal— a designation that would make them subject to international sanctions.”। এর সারকথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট কেউই অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলে বসতি স্থাপনের কাজটিকে ‘অনুচিত’ (ইলেজিটিমেট) বললেও ‘অবৈধ’ বলতে রাজি হয়নি। কারণ ‘অবৈধ’ বললে ইসরাইল আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারত। এই লেখায় আরো বলা হয়- প্রেসিডেন্ট রিগ্যান নিজে ইসরাইলের এই বসতি স্থাপনের নীতির বিরোধী হলেও সে বিষয়টি দেখেছে শান্তির পথে একটি বাধা হিসেবে। সেই সাথে সব ধরনের বসতি নির্মাণের কাজ বন্ধের দাবিও সে জানিয়েছিল।
সন্ত্রাসী পম্পেওর বক্তব্যে, অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বৈপরীত্ব রয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বারাক ওবামা প্রশাসন জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিনি বসতি স্থাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (ফ্র্যাগরেন্ট ভায়োলেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ল)। সে প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছিল, এগুলো নির্মাণের কোনো আইনি বৈধতা নেই (দে হ্যাভ নো লিগ্যাল ভ্যালিডিটি)। যদিও শেষ পর্যন্ত ওবামা ভোটদানে বিরত থাককেই বেছে নেয়। এ সিদ্ধান্তটি বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত বিদেশনীতি অবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম। কিন্তু সম্প্রতি ঘোষিত পম্পেওর ঘোষণায় দেয়া সিদ্ধান্তটিকে বিবেচনা করা হয় ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন ও অন্ধ সমর্থনের একটি উদাহরণ হিসেবে। আজকের দিনে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে চলেছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি প্রশাসনের জন্য একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের আগের সরকারগুলো কাজ করেছে নিজেদের স্বার্থ ও ইসরাইলের স্বার্থের মাঝে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে। অন্য দিকে ট্রাম্প প্রশাসন মনে হয় তার দেশের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-সম্পর্কিত বিদেশনীত পুরোপুরি মিশিয়ে ফেলেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার ডানপন্থী শিবিরের নীতির সাথে। আমরা যদি বিগত দু’টি বছরের দিকে নজর দিই, তবে দেখব- যুক্তরাষ্ট্র যেন এর সব রাজনৈতিক ক্ষমতা ইসরাইলকে সমর্পণ করে বসেছে। নইলে কোনো কিছু বিনিময়ের কথা চিন্তা না করেই কেন ইসরাইলের সব দাবি ও প্রত্যাশা অনেকটা বিনা বাক্য ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র পূরণ করে চলেছে। এর ফলে ওয়াশিংটনকে কেউ কেউ অভিহিত করছেন ‘জেরুসালেম’ নামে। এই জেরুসালেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ‘ইটারনাল আনডিভাইডেড ক্যাপিটেল’ পূর্ব জেরুসালেমকেও। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমি ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে সম্মতি দিয়েছে। সেই সাথে সম্মতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যাটি বেমালুম ভুলে যাওয়ার। পম্পেওর আলোচ্য সর্বশেষ ঘোষণাটি তেমনি নানা পদক্ষেপেরই উদাহরণ।
আসলে সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কাছে এর পররাষ্ট্রনীতি সারেন্ডার করে বসে আছে। এর একটি তত্ত্ব হচ্ছে- ওয়াশিংটন ধীরে ধীরে, কিন্তু স্থায়ীভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়াটির শুরু প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের শাসনামলের শেষ দিকের বছরগুলোতে এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদেও তা অবাধে অব্যাহত থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের ইচ্ছার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পরাভূত হয়ে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে বৈধতা দেয়ার বিষয়টি হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র ইসরাইলকে দেয়া বিদায়ী এক উপহার। এর আরেকটি ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট রয়েছে, এর আপাত বাতিল কর তথাকথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির’ সাথে। এই ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি হচ্ছে অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত একটি পলিটিক্যাল ডকট্রিন, যা দিয়ে ইসরাইলকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা চলেছে। বর্ণবাদ ও দখলদারিত্বে কোনো পরিবর্তন না এনেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রয়াসও এর মধ্যে রয়েছে।
এই ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির বিষয়টি কয়েক মাস নিষ্ক্রিয় রাখার পর আবার নতুন করে চালুর জন্য ওয়াশিংটন প্রবল আগ্রহে কাজ করেছে নেতানিয়াহুর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ আরো দীর্ঘায়িত করতে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুদীর্ঘকাল থাকা এই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ।
বর্তমানে ইসরাইলে চলছে এক ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট- ছয় মাস সময়ে দু’টি সাধারণ নির্বাচন, সেই সাথে সম্ভাবনা রয়েছে তৃতীয় একটি নির্বাচনেরও। এর সাথে জড়িত রয়েছে জনগণের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ। নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে ওয়াশিংটনে তার মিত্ররা তাকে দিয়েছে কিছু বড় ধরনের লাইফলাইন, এসব করা হয়েছে ইসরাইলের প্রাধান্য বিস্তারকারী ডানপন্থী শিবিরে সন্ত্রাসী নেতানিয়াহুর সমর্থন বাড়িয়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন ইসরাইলের জন্য পথ প্রশস্ত করছে সব ইহুদি বসতি ব্লককে পশ্চিম তীরের সাথে একীভূত করতে। ইসরাইল কখনোই আন্তর্জাতিক আইনকে প্রথম বিবেচ্য হিসেবে আমল দেয়নি। তাই ইসরাইলের জন্য জরুরি প্রয়োজন ছিল আমেরিকার কাছ থেকে এ ধরনের একটি সম্মতি বা স্বীকৃতি, যাতে কমপক্ষে পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশ ইসরাইলের সাথে একীভূত করা যায়। ইসরাইলের প্রতি সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল ছাড়ের ব্যাপারে নেতানিয়াহু ছিল আরো বেশি আগ্রহী। ইসরাইলি এই সন্ত্রাসী নেতা গত ২০ নভেম্বর সম্মত হয় আরো একটি ষড়যন্ত্রমূলক বিল এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে। এই বিলে বলা হয় জর্দান উপত্যকাকে ইসরাইলের সাথে একীভূত করতে হবে। এই বিলের খসড়া তৈরি করেছে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির সদস্য শ্যারেন হাস্কেল। সে নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের পর এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণাটি হচ্ছে : “an opportunity to promote my law for sovereignty in the [Jordan] Valley.”
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইহুদি বসতি স্থাপন-সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা শুধু এ কারণেই বিপজ্জনক নয় যে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি লঙ্ঘন। বরং এটি বিপজ্জনক এ কারণে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে উদ্বিঘ্ন নয়। প্রকৃত বিপদ হচ্ছে- ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখল প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিণত হয়েছে নিছক একটি রাবার স্ট্যাম্পে। যুক্তরাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পিত বিদেশনীতি ইসরাইলের চরম ডানপন্থী সরকারকে ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দিলো। সেই সাথে বপন করা হলো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির বীজ, যা চলতে পারে বহু বছর ধরে। যদি না এর বিপরীত কোনো প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সমাজ সূচনা করতে পারে। কিন্তু তেমনটি করার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, কার গোয়ালে কে ধোঁয়া দেয়- বিশেষ করে বিষয়টি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কিছু। অতএব, শেষ ভরসা একমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণ। ফিলিস্তিনি জনগণ যদি যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলে অধিকার আদায় করতে না পারে, তবে বিশ্বমানচিত্র থেকে ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব হারাবে। সে অবস্থা পরিত্রাণে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে কিছু করণীয় আছে বৈকি!
সূত্র: https://alfirdaws.org/2019/12/04/29280/
Comment