ধ্বংসের মুখে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা
স্কুল-কলেজ বা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিই হলো সেক্যুলারিজম বা ইসলামহীনতা। তাই যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানকে দ্বীন শেখাতে চান, তারা স্বাভাবিকভাবেই সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করান – হয়তো আলিয়ায় কিংবা কওমীতে। এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি জর্জরিত থাকে দ্বীনহীনতার থাবায়, তখন আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যে সত্যিই দ্বীন শেখা বড্ড কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
পদস্খলনের এ কালো পথে এগিয়ে আছে আলিয়া মাদরাসা। তবে সব আলিয়ার পদস্খলন-মাত্রা সমান নয়। কোনোটায় কম, কোনোটায় বেশি। কোনোটা, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও খানিকটা টিকে আছে, কোনোটা আবার তলিয়ে গেছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে।
আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক এবং সিলেবাস প্রণয়ন করা হয় মূলত সরকারের ইচ্ছানুযায়ী। সরকার যা পছন্দ করে, যেটুকু পছন্দ করে বা যেভাবে পছন্দ করে, কেবল সেটুকুই, সেভাবেই অন্তর্ভুক্ত হয় পাঠ্যপুস্তক এবং সিলেবাসে। এ তাগুত সরকার যেখানে ইসলামকে মিটিয়ে দেবার জন্যে নানান ষড়যন্ত্রে সদা তৎপর, সেখানে তারাই কিনা ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়ন করবে বা প্রণীত সিলেবাসের অনুমোদন দেবে!
শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দিলে যা হবার কথা, এ ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়া হয়েছে আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা। পাল্টে ফেলা হয়েছে সিলেবাস ; বিয়োগ করা হয়েছে দ্বীনি ইলমের অনেক কিছুই ; যোগ করা হয়েছে তাগুতের মর্জিমাফিক দ্বীনহীন পাঠ।
অধিকাংশ মাদরাসায়ই মূল কিতাব পড়ানো হয় না। সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে প্রদানকৃত বইকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় শিখন কার্যক্রম। তাছাড়া সরকার প্রণীত এসব বইয়ে মূল কিতাবের অনেক কিছুই বাদ দেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ইলমের গভীরে প্রবেশ করা থেকে হয় বঞ্চিত।
আকাইদ এবং ফিকহের বইয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আকিদা, মাসয়ালা বা ফতোয়া নিয়ে নেই বিস্তারিত আলোচনা, বরং ইসলামের কিছু বিষয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। আল ওয়ালা ওয়াল বারাআ, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর হুকুম, হুদুদ-কিসাস, শাতিমে রাসূলের বিধান, মুরতাদের বিধান, ই’দাদের প্রয়োজনীয়তা, জিহাদের বর্তমান হুকুম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে।
এছাড়াও বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান – এ জাতীয় বইগুলো ইসলাম বহির্ভূত অগণিত পাঠ দিয়ে ভরপুর। কোথাও দেখবেন শিরকের ছিটেফোঁটা, কোথাও দেখবেন ইসলামী আক্বিদা বহির্ভূত কথা, কোথাও আবার লজ্জাশীলতার শেকড়কে উপড়ে ফেলার চক্রান্ত, আবার কোথাও দেখবেন হিন্দুয়ানী, বিজাতীয় প্রথাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা।
তাছাড়া এ বইগুলো পড়ানোর জন্যে সরকার কর্তৃক নিয়োগ পাচ্ছে সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিতরা। এ জাতীয় শিক্ষকদের নিজ চরিত্রেই নেই ইসলামি আলো, তারা আবার কীভাবে ছাত্রদেরকে আলোকিত করবে? তাদের থেকে ছাত্ররাই বা কী পাবে? কী পাচ্ছে? মাদরাসায় শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত একাংশ রয়ে যাচ্ছে বেদ্বীন। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্যে সুকৌশলে ঢোকানো হচ্ছে এসব শিক্ষকদের।
আলিয়া মাদরাসা ধ্বংসের আরো একটা উপকরণ ‘সহশিক্ষা’। ছাত্রছাত্রী একই প্রতিষ্ঠানে, কোথাও আবার একই কক্ষে। একই কক্ষে অবস্থানের ক্ষেত্রে নামকাওয়াস্তে কিছুটা পর্দার ব্যবস্থা থাকলেও, অনেক মাদরাসায় তাও নেই। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো কিছু মাদরাসা ছাত্রীদের পর্দার ব্যাপারে কঠোর। তবে অধিকাংশ মাদরাসাতেই পর্দার শিথিলতা, বরং পর্দাহীনতা তিক্তভাবে সত্য। এর ফলে কী হচ্ছে? ছাত্রছাত্রীরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের নৈতিক চরিত্র। ছাত্রছাত্রীর মাঝে অবৈধ প্রেম এখানে খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে আজকাল। প্রেমের পরবর্তী ধাপেও অবৈধভাবে পা বাড়াচ্ছে অনেকে। শুধু ছাত্রই না, এ ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষকও নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। ছাত্রীর সাথে প্রেম বা ছাত্রীকে ধর্ষণ আজকাল অহরহই ঘটছে ঐসকল মাদরাসাগুলোতে।
আরো একটা খতরনাক বিষয় হলো ৩০% মহিলা শিক্ষক রাখার বাধ্যবাধকতা। প্রত্যেকটি মাদরাসায় ৩০% মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দেয় সরকার। এতে করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আলেম শিক্ষকদের মিশতে হয় এসব শিক্ষিকাদের সাথে। এর ফলাফল কী হয়, বা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
আজ আমরা আলিয়া মাদরাসার পদস্খলন নিয়ে আলোচনা করলাম। পদস্খলনের চলমান এ ধারায় কওমী মাদরাসাও ইতোমধ্যে যোগ হয়েছে, সরকারী স্বীকৃতির নামে কওমী মাদ্রাসাগুলোতেও সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে। আল্লাহ না করুক, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আলিয়ার মত কওমীও চলে যাবে ধ্বংসের নিম্নস্তরে। আল্লাহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেক্যুলারদের কবল থেকে হেফাজত করুন।
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু উসামা, ইসলামী চিন্তাবিদ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/16/33072/
স্কুল-কলেজ বা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তিই হলো সেক্যুলারিজম বা ইসলামহীনতা। তাই যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানকে দ্বীন শেখাতে চান, তারা স্বাভাবিকভাবেই সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করান – হয়তো আলিয়ায় কিংবা কওমীতে। এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোই যদি জর্জরিত থাকে দ্বীনহীনতার থাবায়, তখন আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যে সত্যিই দ্বীন শেখা বড্ড কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
পদস্খলনের এ কালো পথে এগিয়ে আছে আলিয়া মাদরাসা। তবে সব আলিয়ার পদস্খলন-মাত্রা সমান নয়। কোনোটায় কম, কোনোটায় বেশি। কোনোটা, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও খানিকটা টিকে আছে, কোনোটা আবার তলিয়ে গেছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে।
আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক এবং সিলেবাস প্রণয়ন করা হয় মূলত সরকারের ইচ্ছানুযায়ী। সরকার যা পছন্দ করে, যেটুকু পছন্দ করে বা যেভাবে পছন্দ করে, কেবল সেটুকুই, সেভাবেই অন্তর্ভুক্ত হয় পাঠ্যপুস্তক এবং সিলেবাসে। এ তাগুত সরকার যেখানে ইসলামকে মিটিয়ে দেবার জন্যে নানান ষড়যন্ত্রে সদা তৎপর, সেখানে তারাই কিনা ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস প্রণয়ন করবে বা প্রণীত সিলেবাসের অনুমোদন দেবে!
শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দিলে যা হবার কথা, এ ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়া হয়েছে আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা। পাল্টে ফেলা হয়েছে সিলেবাস ; বিয়োগ করা হয়েছে দ্বীনি ইলমের অনেক কিছুই ; যোগ করা হয়েছে তাগুতের মর্জিমাফিক দ্বীনহীন পাঠ।
অধিকাংশ মাদরাসায়ই মূল কিতাব পড়ানো হয় না। সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে প্রদানকৃত বইকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় শিখন কার্যক্রম। তাছাড়া সরকার প্রণীত এসব বইয়ে মূল কিতাবের অনেক কিছুই বাদ দেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ইলমের গভীরে প্রবেশ করা থেকে হয় বঞ্চিত।
আকাইদ এবং ফিকহের বইয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আকিদা, মাসয়ালা বা ফতোয়া নিয়ে নেই বিস্তারিত আলোচনা, বরং ইসলামের কিছু বিষয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। আল ওয়ালা ওয়াল বারাআ, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর হুকুম, হুদুদ-কিসাস, শাতিমে রাসূলের বিধান, মুরতাদের বিধান, ই’দাদের প্রয়োজনীয়তা, জিহাদের বর্তমান হুকুম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে।
এছাড়াও বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান – এ জাতীয় বইগুলো ইসলাম বহির্ভূত অগণিত পাঠ দিয়ে ভরপুর। কোথাও দেখবেন শিরকের ছিটেফোঁটা, কোথাও দেখবেন ইসলামী আক্বিদা বহির্ভূত কথা, কোথাও আবার লজ্জাশীলতার শেকড়কে উপড়ে ফেলার চক্রান্ত, আবার কোথাও দেখবেন হিন্দুয়ানী, বিজাতীয় প্রথাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা।
তাছাড়া এ বইগুলো পড়ানোর জন্যে সরকার কর্তৃক নিয়োগ পাচ্ছে সেক্যুলার শিক্ষায় শিক্ষিতরা। এ জাতীয় শিক্ষকদের নিজ চরিত্রেই নেই ইসলামি আলো, তারা আবার কীভাবে ছাত্রদেরকে আলোকিত করবে? তাদের থেকে ছাত্ররাই বা কী পাবে? কী পাচ্ছে? মাদরাসায় শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত একাংশ রয়ে যাচ্ছে বেদ্বীন। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্যে সুকৌশলে ঢোকানো হচ্ছে এসব শিক্ষকদের।
আলিয়া মাদরাসা ধ্বংসের আরো একটা উপকরণ ‘সহশিক্ষা’। ছাত্রছাত্রী একই প্রতিষ্ঠানে, কোথাও আবার একই কক্ষে। একই কক্ষে অবস্থানের ক্ষেত্রে নামকাওয়াস্তে কিছুটা পর্দার ব্যবস্থা থাকলেও, অনেক মাদরাসায় তাও নেই। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো কিছু মাদরাসা ছাত্রীদের পর্দার ব্যাপারে কঠোর। তবে অধিকাংশ মাদরাসাতেই পর্দার শিথিলতা, বরং পর্দাহীনতা তিক্তভাবে সত্য। এর ফলে কী হচ্ছে? ছাত্রছাত্রীরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের নৈতিক চরিত্র। ছাত্রছাত্রীর মাঝে অবৈধ প্রেম এখানে খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে আজকাল। প্রেমের পরবর্তী ধাপেও অবৈধভাবে পা বাড়াচ্ছে অনেকে। শুধু ছাত্রই না, এ ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষকও নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। ছাত্রীর সাথে প্রেম বা ছাত্রীকে ধর্ষণ আজকাল অহরহই ঘটছে ঐসকল মাদরাসাগুলোতে।
আরো একটা খতরনাক বিষয় হলো ৩০% মহিলা শিক্ষক রাখার বাধ্যবাধকতা। প্রত্যেকটি মাদরাসায় ৩০% মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দেয় সরকার। এতে করে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আলেম শিক্ষকদের মিশতে হয় এসব শিক্ষিকাদের সাথে। এর ফলাফল কী হয়, বা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
আজ আমরা আলিয়া মাদরাসার পদস্খলন নিয়ে আলোচনা করলাম। পদস্খলনের চলমান এ ধারায় কওমী মাদরাসাও ইতোমধ্যে যোগ হয়েছে, সরকারী স্বীকৃতির নামে কওমী মাদ্রাসাগুলোতেও সরকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে। আল্লাহ না করুক, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আলিয়ার মত কওমীও চলে যাবে ধ্বংসের নিম্নস্তরে। আল্লাহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেক্যুলারদের কবল থেকে হেফাজত করুন।
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু উসামা, ইসলামী চিন্তাবিদ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/16/33072/
Comment