দিল্লীতে দাঙ্গা নয়,
হয়েছে মুসলিম বিরোধী পগরম
হয়েছে মুসলিম বিরোধী পগরম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে আসার পর থেকেই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শুরু হয় মুসলিমবিরোধী পগরম । ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন চল্লিশের অধিক মানুষ *। বিষয়টাকে হলুদ মিডিয়াগুলো দাঙ্গা বলে প্রচার করলেও তা আসলে দাঙ্গা নয় , পগরম। দাঙ্গা বা রায়টের সাথে পগরম-এর (Pogrom) পার্থক্য হল, পগরমে সরকার এক পক্ষকে সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন দেয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নিশ্চিন্তে, নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংস চালানো হয়।
দিল্লীতে উগ্রবাদী হিন্দু সন্ত্রাসীরা ফেব্রুয়ারীর শেষ কয়েকদিন যাবৎ নিশ্চিন্তে , নির্বিঘ্নে, সংঘবদ্ধভাবে মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন, মুসলিম নারীদের গণধর্ষণ, মসজিদে হামলা, অগ্নিসংযোগ, বেছে বেছে মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠনসহ অজস্র অপকর্ম করেছে। এতে প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন দেখা যায়, বরং প্রশাসনই মূলত এদেরকে উস্কে দিয়েছে। পুলিশকে দেখা গেছে হিন্দু সন্ত্রাসীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে এবং কোথাও কোথাও পুলিশ নিজেই ধ্বংসযজ্ঞে হিন্দুদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে অংশ নিয়েছে।
কলকাতার সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , “রাজধানীতে চার দিনব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালীন দিল্লি পুলিশের কাছে ১৩ হাজার ২০০টি ফোন গিয়েছিল। কোথাও গুলি চলছে, কোথাও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ আসছিল। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।”
আহতদের হাসপাতালে সুচিকিৎসা দিতেও গড়িমসি করা হয় । কেউ কেউ বাধ্য হয়ে আদালতে রিট করেন *। দিল্লীর বিচারপতি মুড়ালিধর বুধবার এই সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রসঙ্গে নির্যাতিতদের করা রিট আবেদন শুনেন। আর মোট তিনটি শুনানিকালেই তিনি সরকার ও পুলিশকে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে পর্যবেক্ষণ দেন। উসকানিদাতা বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর না নেওয়ায় পুলিশ ও এটর্নি জেনারেলের দফতরকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেন এবং দ্রুত এফআইআর গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
তৃতীয় রিট আবেদনের শুনানি শেষে তিনি সরকারকে নির্দেশ দেন, ‘সংঘাতে আহতদের চিকিৎসা, উদ্বাস্তুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে।’ প্রত্যেকটা শুনানির বিরুদ্ধে পোক্ত অবস্থান ছিল সরকারের পক্ষে শুনানি করা সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার। কিন্তু বিচারপতি মুরালিধর তাতে একমত না হয়ে দ্রুততার সঙ্গে রিট পিটিশন আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তড়িৎ নির্দেশ দিয়েছেন।
বিস্ময়করভাবে সেই দিন রাতেই ভারত সরকার তাকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে ইমিডিয়েট বদলির নির্দেশ দেয়। এইরকম তাৎক্ষণিক আদেশ কেবল নজিরবিহীনই নয় বরং তা শাস্তিমূলক বদলির ক্ষেত্রেও তা বিরল।
আহতদের চিকিৎসায় সরকারের অবহেলা, হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে পুলিশের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এমনকি খোদ সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে শুনানি গ্রহণ করে জনগণের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের প্রশ্নে রায় দিয়ে নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ‘শাস্তিমূলক’ পদক্ষেপ আবারো প্রমাণ করে ভারতে আজ যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রেরই আঁকা ছক।
ফলত একথা বলতে আপত্তি নেই যে এটা কোন দাঙ্গা নয় বরং শাসনতন্ত্রের ছকে আঁকা সুপরিকল্পিত জাতিগত নিধন (Ethnic cleansing) তথা পগরম । সার্বিকভাবে যা দেখা যাচ্ছে তাকে পগরম না বলে, দাঙ্গা বলার কোন সুযোগ নেই ।
লেখক: রেদোয়ান সায়িদ, ইসলামী চিন্তাবিদ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/03/04/33975/
Comment