গত পাঁচ বছরে সৌদি সামরিক জোটের হামলায় ইয়ামানের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
ইয়ামান যুদ্ধের পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হল। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলায় গত পাঁচ বছরে ইয়ামান বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়ামানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিত বর্তমান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তখন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তখনও তিনি যুবরাজের পদে অধিষ্ঠিত হননি। পরবর্তী রাজার পদ লাভের আশায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ইয়ামানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে তিনি সৌদি পররাষ্ট্র নীতিকে রক্ষণশীল অবস্থান থেকে সরিয়ে এনে আক্রমণাত্মক অবস্থানে নিয়ে গেছেন যাতে এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয় যে রিয়াদের পররাষ্ট্র নীতিতে নয়া অধ্যায় সূচিত হয়েছে। এর আগে সৌদি সরকার অন্য আরব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করত কিন্তু এবার তারা একটি আরব দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ বাধিয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই সৌদি নীতিতে এ ধরনের পরিবর্তন এনেছেন এবং অত্যন্ত দরিদ্র একটি আরব দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাহ্যিকভাবে যুবরাজ সালমান সবাইকে এটা দেখানোর চেষ্টা করছেন যে, ইয়ামানের পদত্যাগকারী ও পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে ফের ওই দেশটির ক্ষমতায় বসানো তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবের রাজার পদে বসার জন্য নিজেকে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করা। কিন্তু গত পাঁচ বছরের যুদ্ধে- না লোক দেখানো না প্রকৃত উদ্দেশ্য কোনোটিই অর্জন করতে পারেননি যুবরাজ সালমান। এই পাঁচ বছরে তিনি মানসুর হাদিকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসাতে তো পারেননি। এমনকি মানসুর হাদির মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এডেন বন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ এতে বোঝা যায় ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর সময়কালের তুলনায় বর্তমানে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, গত এক বছরে দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ এবং পলাতক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির সরকারের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইয়ামান যুদ্ধে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো লক্ষ্যই এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি বরং অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছেন। কারণ এই যুদ্ধ ইয়েমেনে বিরাট মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে যা সাম্প্রতিক দশকে নজিরবিহীন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থেনিও গুতেরেস বহুবার বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দশকে যুদ্ধের কারণে বিশ্বের মধ্যে ইয়েমেনে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।’
অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণা কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ইয়েমেন যুদ্ধে সরাসরি প্রায় ১৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে যার মধ্যে ৯ হাজার ৬৮২ জন পুরুষ, ২ হাজার ৪৬২ জন নারী ও ৩ হাজার ৯৩১ জন শিশু রয়েছে।
এ ছাড়া অসম এ যুদ্ধে সরাসরি আহত হয়েছে ২৫ হাজার ৪০০ ব্যক্তি যার মধ্যে ৪২০০টি শিশু, তিন হাজারের বেশি নারী এবং ১৮ হাজার ১০০এরও বেশি পুরুষ রয়েছে। সরাসরি হতাহতের বাইরেও আরো অনেক ব্যক্তি এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মোট নিহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি। কেননা সৌদি আরবের সরাসরি হামলা ছাড়াও ক্ষুধা ও বিভিন্ন ধরনের রোগে এসব মানুষ মারা গেছে। এ ছাড়া শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া ছাড়াও সৌদি আরব ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে খাদ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ক্ষুধা ও বিভিন্ন ধরনের রোগে মৃত্যু এটা বড় কারণ। ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও অবরোধের কারণে চিকিৎসার অভাবে বছরে ৫০ হাজার শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তোহা আল মোতাওয়াক্কেল বলেছেন, ‘সেদেশে কয়েক হাজার শিশু রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, ইয়েমেনের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। দেশটির বিমান পরিবহন সংস্থার মহাসচিব মাযেন গানাম জানিয়েছেন, ‘প্রায় ৩২ হাজার রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষা আছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’ জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সমন্বয়কারী দফতর চলতি বছর ৫ মার্চ এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধ পীড়িত ইয়েমেনের দুই কোটি ২ লাখ মানুষের জন্য ত্রাণের প্রয়োজন। এর মধ্যে এক কোটি চার লাখ মানুষের জন্য জরুরিভিত্তিতে সাহায্যের দরকার। যুদ্ধের কারণে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী জীবন যাপন করছে।
আরব বিশ্বের দরিদ্র এ দেশটিতে সৌদি আরবের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের ১৫টি বিমান বন্দর, ১৪টি সমুদ্র বন্দর, দুই হাজার ৭০০টি মহাসড়ক ও সেতু, ৪৪২টি যোগাযোগ কেন্দ্র, ১৮শ’৩২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, চার লাখ ২৮ হাজার ৮০০টি আবাসিক ভবন, ৯৫৩টি মসজিদ, ৩৪৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল, ৯১৪টি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩৫৫টি কারখানা, ৭৭৪টি খাদ্য বিক্রয় কেন্দ্র এবং ৩৭০টি তেল পাম্প স্টেশন হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
পশ্চিম এশিয় অঞ্চলে রেডক্রিসেন্টের মুখপাত্র সারা আল জুগ্বারি কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ইয়েমেনের বিভিন্ন শহরে জনগণের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির মাত্র ৫১ শতাংশ হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এ ছাড়া, খাদ্য, চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তার ঘটছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে এরই মধ্যে অনেক হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসনের ফলে শুধু ইয়েমেনের জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি একইসঙ্গে সৌদি আরব ও তার মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৌদি বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের তিন কোটির বেশি ডলার ব্যয় হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ ১৩০ শতাংশ বেড়ে। অস্ত্র আমদানির দিক থেকে ভারতের পর সৌদি আরবের অবস্থান।’
যাইহোক, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব এ পর্যন্ত বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু এতো প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি দিয়েও তারা আজ পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/09/35845/
ইয়ামান যুদ্ধের পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হল। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলায় গত পাঁচ বছরে ইয়ামান বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়ামানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিত বর্তমান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তখন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এবং তখনও তিনি যুবরাজের পদে অধিষ্ঠিত হননি। পরবর্তী রাজার পদ লাভের আশায় প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ইয়ামানের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধ শুরুর মাধ্যমে তিনি সৌদি পররাষ্ট্র নীতিকে রক্ষণশীল অবস্থান থেকে সরিয়ে এনে আক্রমণাত্মক অবস্থানে নিয়ে গেছেন যাতে এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয় যে রিয়াদের পররাষ্ট্র নীতিতে নয়া অধ্যায় সূচিত হয়েছে। এর আগে সৌদি সরকার অন্য আরব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করত কিন্তু এবার তারা একটি আরব দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ বাধিয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই সৌদি নীতিতে এ ধরনের পরিবর্তন এনেছেন এবং অত্যন্ত দরিদ্র একটি আরব দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাহ্যিকভাবে যুবরাজ সালমান সবাইকে এটা দেখানোর চেষ্টা করছেন যে, ইয়ামানের পদত্যাগকারী ও পলাতক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদিকে ফের ওই দেশটির ক্ষমতায় বসানো তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবের রাজার পদে বসার জন্য নিজেকে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করা। কিন্তু গত পাঁচ বছরের যুদ্ধে- না লোক দেখানো না প্রকৃত উদ্দেশ্য কোনোটিই অর্জন করতে পারেননি যুবরাজ সালমান। এই পাঁচ বছরে তিনি মানসুর হাদিকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসাতে তো পারেননি। এমনকি মানসুর হাদির মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এডেন বন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ এতে বোঝা যায় ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর সময়কালের তুলনায় বর্তমানে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, গত এক বছরে দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্তর্বর্তী পরিষদ এবং পলাতক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির সরকারের মধ্যকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ইয়ামান যুদ্ধে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো লক্ষ্যই এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি বরং অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছেন। কারণ এই যুদ্ধ ইয়েমেনে বিরাট মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে যা সাম্প্রতিক দশকে নজিরবিহীন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থেনিও গুতেরেস বহুবার বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক দশকে যুদ্ধের কারণে বিশ্বের মধ্যে ইয়েমেনে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।’
অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণা কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ইয়েমেন যুদ্ধে সরাসরি প্রায় ১৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে যার মধ্যে ৯ হাজার ৬৮২ জন পুরুষ, ২ হাজার ৪৬২ জন নারী ও ৩ হাজার ৯৩১ জন শিশু রয়েছে।
এ ছাড়া অসম এ যুদ্ধে সরাসরি আহত হয়েছে ২৫ হাজার ৪০০ ব্যক্তি যার মধ্যে ৪২০০টি শিশু, তিন হাজারের বেশি নারী এবং ১৮ হাজার ১০০এরও বেশি পুরুষ রয়েছে। সরাসরি হতাহতের বাইরেও আরো অনেক ব্যক্তি এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মোট নিহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি। কেননা সৌদি আরবের সরাসরি হামলা ছাড়াও ক্ষুধা ও বিভিন্ন ধরনের রোগে এসব মানুষ মারা গেছে। এ ছাড়া শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া ছাড়াও সৌদি আরব ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে খাদ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ক্ষুধা ও বিভিন্ন ধরনের রোগে মৃত্যু এটা বড় কারণ। ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও অবরোধের কারণে চিকিৎসার অভাবে বছরে ৫০ হাজার শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। ইয়েমেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তোহা আল মোতাওয়াক্কেল বলেছেন, ‘সেদেশে কয়েক হাজার শিশু রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, ইয়েমেনের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। দেশটির বিমান পরিবহন সংস্থার মহাসচিব মাযেন গানাম জানিয়েছেন, ‘প্রায় ৩২ হাজার রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষা আছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’ জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সমন্বয়কারী দফতর চলতি বছর ৫ মার্চ এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধ পীড়িত ইয়েমেনের দুই কোটি ২ লাখ মানুষের জন্য ত্রাণের প্রয়োজন। এর মধ্যে এক কোটি চার লাখ মানুষের জন্য জরুরিভিত্তিতে সাহায্যের দরকার। যুদ্ধের কারণে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী জীবন যাপন করছে।
আরব বিশ্বের দরিদ্র এ দেশটিতে সৌদি আরবের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। অধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের ১৫টি বিমান বন্দর, ১৪টি সমুদ্র বন্দর, দুই হাজার ৭০০টি মহাসড়ক ও সেতু, ৪৪২টি যোগাযোগ কেন্দ্র, ১৮শ’৩২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, চার লাখ ২৮ হাজার ৮০০টি আবাসিক ভবন, ৯৫৩টি মসজিদ, ৩৪৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতাল, ৯১৪টি স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩৫৫টি কারখানা, ৭৭৪টি খাদ্য বিক্রয় কেন্দ্র এবং ৩৭০টি তেল পাম্প স্টেশন হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
পশ্চিম এশিয় অঞ্চলে রেডক্রিসেন্টের মুখপাত্র সারা আল জুগ্বারি কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ইয়েমেনের বিভিন্ন শহরে জনগণের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির মাত্র ৫১ শতাংশ হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এ ছাড়া, খাদ্য, চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগের বিস্তার ঘটছে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে এরই মধ্যে অনেক হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসনের ফলে শুধু ইয়েমেনের জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি একইসঙ্গে সৌদি আরব ও তার মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৌদি বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের তিন কোটির বেশি ডলার ব্যয় হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ ১৩০ শতাংশ বেড়ে। অস্ত্র আমদানির দিক থেকে ভারতের পর সৌদি আরবের অবস্থান।’
যাইহোক, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব এ পর্যন্ত বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু এতো প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি দিয়েও তারা আজ পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/09/35845/
Comment