"চায়নার কসাইখানা"
[IMG]https://i.ibb.co/K6ZDrx/92341504-129...04781056-n.jpg[/IMG]
(প্রথম কিস্তি)
মুখের মাস্ক খুলে ফেলেছে আগেই, হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরোলো মাত্র দুদিন আগে চল্লিশতম জন্মদিনের কেক কাটা সার্জন। একসময় একহারা গড়ন ছিল, এখন পেটে চর্বি জমেছে। চশমটা নাকের ডগা বরাবর নেমে এসেছিল, ঠেলে ওপরে তুলে দিলো সার্জন। চশমার পেছনের চোখদুটো গাঁজাখোরদের মতো লাল। না সার্জন গাঁজা খায়নি, পরপর কয়েকটা রাত প্রায় নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে তাকে ওটিতে। রোগির চাপ বেড়েছে। মন কিছুটা বিক্ষিপ্ত। অপারেশন একদম সাকসেসফুল। তবে রোগীকে বাচানো যায়নি! বাঁচানোর ইচ্ছে, আগ্রহ অবশ্য ছিলনা!
রোগিকে অজ্ঞান করা হয়নি, অ্যানেস্থেশিয়া দেয়া হয়েছিল কেবল। হাত পা হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল বেডের সঙ্গে। মুখে স্কচটেপ পেচানো। বেচারাকে মেডিকেল চেকাপের কথা বলে ঢুকানো হয়েছিল অপারেশন থিয়েটারে। বিন্দুমাত্র ধারণাও করতে পারেনি আর কয়েক মুহূর্ত পর কী ঘটতে চলেছে তাঁর সাথে!
অপারেশনের সময় রোগীর চোখ বেঁধে রাখে আমাদের এই সার্জন। আজকেও সেটাই করা হয়েছিল, তবে একটা পর্যায়ে এসে চোখ খুলে দিতে হয়েছে। চোখেরই ওপারেশন যে!
বাঁধন খুলে দিতেই নগ্ন আতঙ্কভরা চোখে সার্জনের দিকে তাকিয়েছিল রোগী! অবিশ্বাস, মিনতি, আতঙ্ক মিলেমিশে একাকার দুচোখে...। বারবার সেই দৃষ্টির কথা মনে পড়ছে সার্জনের। আগে এরকম হতোনা, তার কাছে আলু, টমেটো যা একজন রোগিও তা…কাটাকাটি করার বস্তু। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে দুর্বলতা জেঁকে বসেছে সার্জনের মনে।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে বড়কাজটা সারলো সার্জন। সড়সড় শব্দে ফ্ল্যাশ টেনে দিয়ে দাড়ালো বেসিনের আয়নার সামনে। কল থেকে পরপর বেশ কয়েকবার আঁজলা ভরে পানি নিয়ে চোখমুখে ছিটালো। মন যেন কিছুটা শান্ত হলো। আয়নার তাকিয়ে দুচুলের ফাঁকে আঙ্গুল চালিয়ে মনোযোগের সাথে চুল ঠিক করছে এখন… দ্রুত বাড়ি যেতে হবে। গরম লাগছে কেমন জানি- ভাবলো সার্জন। হঠাৎ আয়নায় একটা নড়াচড়া ধরা পড়লো। ভূত দেখার মতো চমকে গেলো সার্জন। সাঁই করে পেছনে ঘুরলো এবং সত্যিই ভূত দেখলো … ওয়াশরুমের বদ্ধ দরজা ভেদ করে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটা লোক, পাঁচমিনিট আগে যাকে নিজের হাতে অপারেশন থিয়েটারে মেরে রেখে এসেছে, সেই রোগী!
এক হাতে দুটো কিডনি আর অন্য হাতে খোলা চোখ নিয়ে তার দিকে চেয়ে বীভৎস ভাবে হাসছে লাশটা।
প্রাণপনে চিৎকার করতে চাইছে সার্জন! কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছেনা।
এক পা তার দিকে এগিয়ে এলো লাশটা। কিডনি দুটো শূন্যে দোলাচ্ছে, চোখের খালি কোটর দিয়ে অশ্রুর মতো রক্ত ঝরছে। রক্তে ভেসে গেছে দামী টাইলসের মেঝে। আরেকধাপ এগিয়ে এলো লাশটা। ওর পেটের কাটা জায়গা দিয়ে সব নাড়িভূড়ি বের হয়ে এসেছে। কিলবিল করছে অক্টোপাসের শুঁড়ের মতো।
শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে সেখান থেকে সরতে চাইলো সার্জন। কিন্তু নড়তে পারলোনা একচুলও। একদম কাছে চলে এলো লাশ, ওর নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছে সার্জন এখন। নিঃশ্বাসের পঁচা আষটে গন্ধে বমি চলে এলো সার্জনের, একপাও নড়তে পারলোনা ও। কিলবিলে শুঁড়গুলো পেঁচিয়ে ধরলো ওর গলা…
চমকে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো সার্জন। হাপরের মতো হাঁপাচ্ছে তার বুক। মধ্যরাতের নিঃস্তব্ধতা খান খান করে দিচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। আবারো সেই দু;সপ্নটা দেখলো সার্জন। এই নিয়ে গতো এক মাসে ২০ বার। ঘুমুলেই স্বপ্নটা ফিরে আসে বারেবারে। একটু ধাতস্থ হয়ে পাশে তাকালো। মড়ার মতো ঘুমুচ্ছে সার্জনের স্ত্রী। বেডসাইট ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে, ল্যাম্পের পাশে রাখা পানির গ্লাস থেকে ঢকঢক শব্দে পানি খেলো ও। জানালার ভেতর দিয়ে একফালি জ্যোৎস্না ঢুকে পড়েছে ঘরে। আকাশে শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ। হলুদ আলোয় কেমন অপারথিব দেখাচ্ছে ঘরটাকে। ঘড়ি দেখলো সার্জন। ১ টা ৩৫ মিনিট। আর ঘুমুনোর সাহস হলোনা। জানালার পাশের চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো।
কাঁটায় কাঁটায় ২ টা ৪৫ মিনিটে স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগালো সার্জন। সময় হয়েছে স্ত্রীকে সবকিছু জানানোর!
(দ্বিতীয় কিস্তি)
মেডিকেল রেফারেন্স বইগুলোতে অর্গান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট (Organ Transplant) কে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে এভাবে- এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে মানবদেহের কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে একই মানবের শরীরের অন্য জায়গায়, অথবা অন্য কোনো মানুষের শরীরে জুড়ে দেয়া হয়।
তা কোন কোন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় এভাবে? হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, চোখ, স্কিন, টিস্যু, হাড়, পাকস্থলী, পেনিস, টেস্টিস, ইত্যাদি। পাঠক, অঙ্গের লিস্টগুলো দেখে ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন কিছু কিছু অঙ্গ শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেই পাওয়া সম্ভব। কারণ এগুলো ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে জীবিত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও এগুলো পাওয়া যায়! জোর করে! প্রতারণা করে!
যার শরীর থেকে অঙ্গ কেটে নেয়া হয়, মানে যিনি দান করেন তাকে বলা হয় দাতা। আর যার শরীরে অঙ্গ জুড়ে দেয়া হয় তাকে বলা হয় গ্রহীতা। দাতা স্বেচ্ছায় অঙ্গ দান করতে পারেন আবার সময় সময় বল প্রয়োগ করে, প্রতারণা করে দাতার অজান্তে বা দাতাকে জানিয়ে অঙ্গ কেটে নেয়া হয়। ধরুন আপনাকে কিডন্যাপ করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। তারপর আপনাকে জীবিত রেখেই ছুরি কাচি দিয়ে একে একে কেটে নেয়া হলো আপনার কিডনি, লিভার, কর্নিয়া… আহ! কী ভয়ংকর! ভাবলেই শরীরের সব পশম দাঁড়িয়ে যায়!
অথবা মনে করুণ, মেডিকেল চেকাপের নামে, কিংবা ছোটোখাটো কোনো অপারেশনের কথা বলে ডেকে নিয়ে আপনার শরীর থেকে একটা কিডনি কেটে রেখে দেয়া হলো। আপনি টেরও পেলেননা আপনার কী অমূল্য জিনিস ওরা চুরি করে রেখে দিল! কতোটা অমানবিক, কতোটা পশু হলে মানুষের পক্ষে এমন নৃশংস কাজ করা সম্ভব!
অর্গান হারভেস্টিং আর অর্গান ট্রান্যপ্ল্যান্টেশান কি একই বস্তু? অনেকটাই তাই। তবে অর্গান হারভেস্টিং নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। জোরপূর্বক দাতাদের কাছ থেকে অঙ্গ কেটে নেয়া আরকি!
সারা বিশ্বজুড়ে অর্গান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু চাহিদার তুলয়ায় যোগান খুবই সীমিত। অর্গানের চাহিদা আকাশ ছুঁয়েছে বহু আগেই, কিন্তু অর্গানের যোগান ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে, আকাশ ছোয়া তো বহু দূরের কথা!
কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে আসি । বুঝতে সুবিধা হবে। কলেবর ছোটো রাখার জন্য শুধু অ্যামেরিকার উদাহরণই আনলাম।
অ্যামেরিকাতে ২০১৫ সালে ৩০ হাজার ৯৭৩ টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপারেশন হয়েছে। এ সময় অঙ্গ দাতার সংখ্যা ছিলো ১৫ হাজার ৬২ জন। আর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৭১ জন!
২০১৮ তে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৫২৯ এ। দাতা ছিলেন ১৭ হাজার ৫৫৪ জন আর ওয়েটিং লিস্টে ছিলো ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৯ জন![1]
ওয়েটিং লিস্টেই আছে লাখের ওপরে মানুষ! প্রতি ১০ মিনিটে ১ জন করে অ্যামেরিকান যোগ দিচ্ছে এই লিস্টে![2]
ক্যানাডাতে যদি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে চান তাহলে আপনাকে অপেক্ষা করা লাগবে ৪ বছর। কখনো কখনো ৭ বছরও লাগতে পারে।[ 3] ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে অ্যামেরিকাতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে সাড়ে তিন বছর।[ 4] ইংল্যান্ডের জন্য সময়টা ২ থেকে ৩ বছর। তবে লাগতে পারে এর বেশীও।[ 5]
প্রতিদিন অ্যামেরিকাতে বিশটা করে নতুন কবর খোড়া হচ্ছে, বিশটা করে কফিন কবরে নামানো হচ্ছে। প্রতিদিন ২০ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে আমেরিকায় কারণ অর্গানের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে সঠিক সময়ে অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পারেনি ওরা। [ 6]
আশা করি বুঝতে পেরেছেন চাহিদার বিপরীতে মানব অঙ্গের যোগান কতোটা কম! কারণটা খুবই সহজ। নিজের শরীর থেকে অঙ্গ কেটে অন্য মানুষকে দিতে কে চায় বলুন? আর মানবঅঙ্গের সবচেয়ে বড় জোগান আসে মৃতদেহ থেকে। কিন্তু মরণোত্তর দেহদান কয়জন করতে চায় বা কয়জনের আত্মীয় স্বজন রাজি হবে তাদের প্রিয় মানুষটার লাশ যথাযথ মর্যাদায় কবর না দিয়ে ডাক্তারদের হাতে তুলে দিবে কাটাকুটি করার জন্য!
চাহিদা যোগানের এই আকাশ পাতাল ফারাক, বৈধভাবে পারস্পরিক ব্যবধান কমিয়ে একে ওপরের কাছে আসার সুযোগ অত্যন্ত কম। অংগ প্রত্যঙ্গের দাম আকাশছোঁয়া, অপারেশন ব্যয়বহুল – এমন জটিল, সংকটময় পরিস্থিতিতে অবশ্যই একদল মানুষ সুযোগ নেবে। এক্ষেত্রে সুযোগটা নিচ্ছে মানবপাচারকারীর দল।
University of California Berkeley এর medical anthropology ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর Scherper-Hughes। ভদ্রমহিলা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন শাখার একজন উপদেষ্টা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন অর্গান হারভেস্টিং, চোরাচালান ইত্যাদির ওপরে। তিনি বলছেন, ‘ জ্বি , আসলেই মানবপাচারকারীরা অর্গান সংগ্রহের জন্য মানব পাচার করে। হয়তো আপনার বাড়ির পাশের হাসপাতালেই চোরা অর্গান কেনাবেচা হয়’।[7 ]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, বছরে প্রায় ১০ হাজার কিডনি কেনাবেচা হয় ব্ল্যাক মার্কেটে। প্রতি ঘন্টায় প্রায় দুইটা করে কিডনি বিক্রি হচ্ছে চোরাই মার্কেটে। Global Financial Integrity (GFI) বলছে, আনুমানিক প্রতি ১০ টা অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশনের ১ টা হয় মানব পাচারকারীদের কাছ থেকে কেনা লিভার, কিডনি কিংবা ফুসফুস নিয়ে’।[ 8,9 ]
আফ্রিকার কিছু দেশ, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ফিলিপাইন, ইরান, ইত্যাদি হলো মানবঅংগ চোরাচালানকারীদের স্বর্গরাজ্য। দারিদ্র্য, জনসংখ্যার আধিক্য, শিক্ষার অভাব ইত্যাদি সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানবপাচারকারীর দল জোর করে, ধোঁকা দিয়ে, মেরে ফেলে বা সহজসরল অশিক্ষিত মানুষদের ভুলিয়ে ভালিয়ে পানির দরে কিনে নিয়ে আসে মানব অঙ্গ। দাতা সুস্থ কিনা,তার অঙ্গ গ্রহীতার অংগে জুড়ে দিলে গ্রহীতার কোনো ক্ষতি হবে কিনা এসবের কোনো চিন্তা ওরা করেনা। ওদের দরকার নগদ টাকা! আর কোনো কিছু চিন্তার সময় ওদের নেই।
সেক্স ইন্ডাস্ট্রি নামক ইউরোপ অ্যামেরিকার নব্য দাসপ্রথার জন্য পাচার হওয়া হতভাগ্য মানুষদের কাছ থেকেও সময় সময় অর্গান কেটে নেয় ওরা। ধরুন, ভারত বা ব্রাজিলের কোনো মেয়েকে ইউরোপ অ্যামেরিকার কোনো পতিতালয় বা পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে বিক্রি করার জন্য পাচার করা হলো। ওর শরীর থেকে যতোটুকু ফায়দা নেবার সবটুকু নিয়ে নিল সেক্স ইন্ডাস্ট্রি। তারপর ওকে পাঠিয়ে দিলো কোনো কসাইখানায়। ডাক্তার নামের কোনো কসাই কেটে রেখে দিল ওর সম্ভাব্য বিক্রয়যোগ্য প্রত্যেকটি অঙ্গ- কিডনি, হৃদপিন্ড, চোখ, লিভার ইত্যাদি। একটা মানুষ থেকে দুই তিনবার লাভ করলো মানবপাচারকারীর দল। লাভের ওপর লাভ। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবাধিকার, গনতন্ত্র,সাম্যবাদের ফিচারওয়ালা আধুনিক এই পৃথিবীতে মানবদেহ চমৎকার এক পণ্য!
ইউরোপ অ্যামেরিকা সহ পৃথিবীর সব নামীদামী হসপিটালগুলোতে এই চোরাই মানবঅঙ্গ গুলো বিক্রি হয়। একেকটার দাম পড়ে একেকরকম। কর্নিয়ার দাম সবচেয়ে কম। দাম শুরু হয় ৩০ হাজার ইউএস ডলার থেকে। ফুসফুস কিনতে হলে আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে এক লাখ ৫০ হাজার ডলার। হৃদপিন্ডের জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ডলার। লিভার আর কিডনির দাম কিছুটা কম। লিভারের দাম শুরু হয় ৯৮ হাজার ইউএস ডলার থেকে আর কিডনির ৬২ হাজার![ 10]
চরম এক টাকার খেলা !
এই ইন্ডাস্ট্রি ঠিক কতো বড় তার সঠিক কোনো হিসেব কারো কাছে নেই। ভূতের মতো কাজ সারে অর্গান হারভেস্টিং এর গ্যাং। মারাত্মক সংগঠিত এরা। কখনো চুনোপুঁটি ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা ধরা ছোঁয়ার আড়ালেই থেকে যায় সবসময়। টাকা পয়সার আদান প্রদানও করে খুবই গোপনে। ব্যবহার করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। Global Financial Integrity (GFI) এর মতে প্রতিবছর প্রায় দুই বিলিয়ন ইউএস ডলার টাকার লেনদেন হয় এই ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবার সম্ভাবনা খুবই বেশী। কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে যদি বছরে ১ বিলিয়ন টাকার বেশি লেনদেন হয় তাহলে সেখানকার সব অর্থনৈতিক আদান প্রদান নজরদারির আওতায় রাখার সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নেই।[ 11,12 ]
একটা দেশ অর্গান ট্রান্সপ্লান্টকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আর সেটা হলো চীন। অ্যামেরিকার চোখে চোখ রেখে মোড়লগিরি করা শুরু করেছে চীন। বিশ্ব পাড়ায় নতুন এক রংবাজের উত্থান দেখছে পৃথিবী। তথ্য প্রযুক্তিতে অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়েছে, নিজেদের মতো করে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে মেডিকেল সায়েন্সে। অরগ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্টকে নিয়ে গেছে একেবারে শিল্পের পর্যায়ে।
অ্যামেরিকা, ক্যানাডা বা ইংল্যান্ডের মতো বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোতেও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পেতে যেখানে রোগীদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় চীনে সেটা মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপার! কিছু কিছু রোগীর ভাগ্য তো আরো ভালো। ওরা চীনে নামে, হাসপাতালে যায়, অর্গান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করে খুশিমনে আবার উড়াল দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে! চীনের হাসপাতালগুলো আপনাকে দিনক্ষণ ধরে বলে দেবে, অমুক দিন আসুন, স্বাস্থ্যবান একটা হৃদপিণ্ড পেয়ে যাবেন!
এটা কীভাবে সম্ভব? বিশ্বজুড়ে যেখানে অর্গানের মারাত্মক ঘাটতি সেখানে চীনে অর্গানের এতো ছড়াছড়ি কেন? অন্যান্য দেশে যখন কেবল কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের সুযোগ পেতেই বছর বছর লেগে যাচ্ছে, অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে চীনে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই কীভাবে অর্গান ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা সম্ভব? ওদের কাছে অর্গানের অনিঃশেষ কোনো ভান্ডার আছে নাকি? নাকি ওদের জীবিত মানুষের খোঁয়াড় আছে, মুরগির দোকানে গিয়ে চাওয়া মাত্র দোকানদার যেমন মুরগি জবাই করে মাংস দেয়, ঠিক তেমনি ওরা চাওয়ামাত্র কোনো মানব সন্তানকে জবাই করে অর্গান দেয়… হৃদপিণ্ড, লিভার, কিডনি, ফুসফুস… যার যা লাগবে লন, দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন?
চীনে প্রতিবছর প্রায় ৬৯ হাজার ৩০০ টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা হচ্ছে। দাতার সংখ্যা কতো জানেন? মাত্র ৫ হাজার ১৪৬!
কেমনে কী! ম্যাজিক দেখাচ্ছে নাকি চায়নিজরা? বাকী অঙ্গ গুলো আসছে কোথা থেকে? কারা অঙ্গ দিচ্ছে? যারা দিচ্ছে তাঁরা কি স্বেচ্ছায়, জেনে শুনে দিচ্ছে নাকি জোর করে ওদের অজান্তে শরীর থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে?
অলক্ষ্যে থেকে কেউ কি কোনো নোংরা খেলা খেলে যাচ্ছে? কোনো কিছুর গন্ধ কি পাচ্ছেন পাঠক? কেঁচো খুড়তে গেলে সাপ বের হয়ে আসবে নাতো?
হচ্ছেটা কী চীনে?
চলবে ইনশা আল্লাহ...
(সংগৃহীত)
রেফারেন্সঃ
1. Organ Donation and Transplantation Statistics: Graph Data- https://tinyurl.com/mocbqez
2. Organ Donation Statistics-https://tinyurl.com/sf9yhgo
3. “Organ Donation,” The Kidney Foundation of Canada, https://www.kidney.ca/organ-donation
4. Waiting list,” NHS, October 14, 2015, https://tinyurl.com/qqdnjel
5. “Waiting list,” NHS, October 14, 2015, https://tinyurl.com/qqdnjel
6. Organ Donation Statistics- https://tinyurl.com/sf9yhgo, https://tinyurl.com/sf9yhgo
7. What you need to know about human organ trafficking- https://tinyurl.com/wt78dd8
8. Transnational Crime and the Developing World,” Global Financial Integrity, March 2017- https://tinyurl.com/wrdztxn
9. Denis Campbell and Nicola Davison, “Illegal kidney trade booms as new organ is sold ‘every hour,’” The Guardian, May 27, 2012, -https://tinyurl.com/rd7q4na
10. Organ Trafficking: The Unseen Form of Human Trafficking- https://tinyurl.com/y3rg27xz
11. Transnational Crime and the Developing World,” Global Financial Integrity, March 2017- https://tinyurl.com/wrdztxn
12. Organ trade- https://tinyurl.com/rl9g6yu
Comment