করোনা মহামারীতে যেমন আছে ফিলিস্তিনিরা : বাঙালি সাংবাদিকের মুখোমুখি ফিলিস্তিনি যুবক
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। লকডাউন করা হয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহরগুলো। এসময় ঘরবন্দী থাকা সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপন্ন। করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের আগ্রাসনে আরো বহুগুণে দুর্ভোগ নেমে এসেছে ফিলিস্তিনের রাজধানী আল কুদসের মুসলমানদের জীবনে। অনাহার, খাবার ও চিকিৎসা সংকটে হাজারো ফিলিস্তিনি।
ইনসাফের মুখোমুখি হোন ফিলিস্তিনের রাজধানী শহর আল কুদসের স্থানীয় বাসিন্দা আমর মুহাম্মাদ আমর। যিনি বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. এর বংশধর।
তার জন্ম, বেড়ে উঠা আল কুদসেই। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুরেছেন দেশবিদেশে। সফর করেছেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের নানান দেশে। বাংলাদেশেও আসতে চেয়েছিলেন আল কুদসের দ্বীন-দরদী এই বাসিন্দা। কিন্তু একমাত্র ফিলিস্তিনি হওয়ায় তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ৬ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে আমর বসবাস করছেন পুণ্যভূমি আল কুদসে। সেখানকার সার্বিক অবস্থা জানতে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইনসাফের বিশেষ প্রতিনিধি আরিফ মুসতাহসান।
ইনসাফ: করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে আল কুদসের বর্তমান অবস্থা কি?
আমর: করোনা ভাইরাসের কারণে ফিলিস্তিনের সকল মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। ফিলিস্তিন ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকার বাহিরে চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। বাইতুল মুকাদ্দাসে মুসলমানদের জন্য নামাজ বন্ধ করা হয়েছে। এবং ইহুদিদের প্রার্থনাগার ও কান্নার দেয়ালে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে।
ইনসাফ: বর্তমানে সেখানকার মুসলমানদের কী অবস্থা?
আমর: সবার কথা আর কী বলবো! আমি একজন সচ্ছল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে পরিবার নিয়ে সঙ্কটে আছি। আমার ঘরে খাবার নেই।সন্তানরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমার ছেলে আমার ওপর অভিমান করে আছে, কারণ তাকে খাবার দিতে পারছি না। আজ আমার কাছে শুকনো রুটি আছে। হয়তো পানিতে ভিজিয়ে জাইতুন দিয়ে খাবো। কিন্তু আগামীকাল কী খাবো তা জানিনা। হয়তো না খেয়ে মারাও যেতে পারি।
ইনসাফ: এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের সরকার কোনো সহায়তা করছে কি?
আমর: আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সরকারের উপর! ফিলিস্তিনের সরকার ইসরাইলের হয়ে কাজ করে। তারা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং আমাদের সম্পদ লুট করে খায়। তারা এতিমের সম্পদ লুট করে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলতে পারেনা ‘এটা হারাম’! কেউ যদি মুখ খুলে, তাকে এমন শাস্তি দিবে হয়তো সে মারা যাবে। ফিলিস্তিন সরকারের কারাগার রয়েছে। কেউ হকের পক্ষে কথা বললে তাকে কঠিন শাস্তি দিবে। হয়তো সে মারা যাবে, না-হয় তার সমস্ত অঙ্গ প্যারালাইজড হয়ে যাবে।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনের সরকার এমন কাজ করে?
আমর: ইসরাইলকে রক্ষা করতে ফিলিস্তিনের সরকার সৈন্য হিসেবে কাজ করে। তারা মুসলমানদের জিহাদী কর্মকাণ্ডে নিষেধ করে। পুরুষদের সামনে মহিলাদের নির্যাতন করে। কেউ কিছু বলতে পারেনা।
ইনসাফ: তাহলে সরকার ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে কিছুই করেনা?
আমর: ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্র নেই। সব মিথ্যা ও ধোঁকা। নামকাওয়াস্তে ফিলিস্তিনের সরকার রাখা হয়েছে, যাতে অন্য দেশ থেকে ত্রাণ আসতে পারে। ত্রাণ আসার পরে তারা তা চুরি করে খায়। ইসরাইল স্থল-জল সব যায়গার নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিন নামে আদতে কোনো রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্রপতি ও সরকার ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন।
ইনসাফ: চাষাবাদ করলে খাদ্যের জোগান আসতে পারে। ফিলিস্তিনিরা কি তা করেনা?
আমর: ফিলিস্তিনের সব কৃষিক্ষেত্র ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন। এছাড়া কোনো ভূমি নেই। আছে শুধু পাহাড়ি অঞ্চল। বেশিরভাগই ইসরাইলী অভিবাসীরা অবৈধভাবে দখল করে আছে। গোস্ত, গম, ভুট্টা, তেল ইসরাইল থেকে আসে। ফিলিস্তিনের কোনো কারখানা নেই। পানি, বিদ্যুৎও ইসরাইল থেকে আসে।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনিরা কি কোনো কাজই করতে পারেনা? কাজের সুযোগ কেঁড়ে নিলে কিভাবে জীবিকা উপার্জন হয়?
আমর: ফিলিস্তিনে কর্মক্ষেত্র না থাকায় অধিকাংশ ফিলিস্তিনি ইসরাইলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ছেলে ও ঘনিষ্ঠভাজনরা।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনিরা কি ইসরাইলে কাজ করতে পারে?
আমর: ইসরাইলের অনেক কোম্পানি, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের নিকট মোবাইল নেটওয়ার্ক, পেট্রোল, গ্যাসসহ সবকিছু রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের শুধু কাজের জন্য ইসরাইলের ভিসা দেওয়া হয়। অনেক মেধাবী ফিলিস্তিনিকে জোর করে ইসরাইলে কাজে পাঠানো হয়। কেউ যেতে না চাইলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। অনেককে মেরেও ফেলা হয়। “ইসরাইলের হয়ে কাজ করার চেয়ে আমি মৃত্যুবরণকে উত্তম মনে করি”।
ইনসাফ: ইসরাইলে ফিলিস্তিনি কর্মী সংখ্যা কত?
আমর: ইসরাইলে ফিলিস্তিনি কর্মী সংখ্যা অনেক বেশি। ইসরাইলের অধিকাংশ কাজই তারা করে। আর সেখান থেকে উপার্জন ও অনেক বেশি করতে পারে। ইসরাইলে যারা কাজ করে তারা সর্বনিম্ন দুই হাজার ডলার প্রতি মাসে পায়। আর একই কাজ ফিলিস্তিনে করে ৪০০ ডলারের বেশি পায়না। সব ফিলিস্তিনের সরকার লুন্ঠন করে নেয়।
ইনসাফ: আল কুদসে কি বাজার নেই, যেখান থেকে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে?
আমর: ৫ টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। আমার কাছে টাকা নেই। আমি বাজারে গিয়েই বা কী করবো!
সুত্র : ইনসাফ টুয়েন্টিফোর ডটকম
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/27/37062/
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। লকডাউন করা হয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহরগুলো। এসময় ঘরবন্দী থাকা সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বিপন্ন। করোনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের আগ্রাসনে আরো বহুগুণে দুর্ভোগ নেমে এসেছে ফিলিস্তিনের রাজধানী আল কুদসের মুসলমানদের জীবনে। অনাহার, খাবার ও চিকিৎসা সংকটে হাজারো ফিলিস্তিনি।
ইনসাফের মুখোমুখি হোন ফিলিস্তিনের রাজধানী শহর আল কুদসের স্থানীয় বাসিন্দা আমর মুহাম্মাদ আমর। যিনি বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আস রা. এর বংশধর।
তার জন্ম, বেড়ে উঠা আল কুদসেই। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে ঘুরেছেন দেশবিদেশে। সফর করেছেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও কম্বোডিয়াসহ বিশ্বের নানান দেশে। বাংলাদেশেও আসতে চেয়েছিলেন আল কুদসের দ্বীন-দরদী এই বাসিন্দা। কিন্তু একমাত্র ফিলিস্তিনি হওয়ায় তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ৬ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে আমর বসবাস করছেন পুণ্যভূমি আল কুদসে। সেখানকার সার্বিক অবস্থা জানতে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইনসাফের বিশেষ প্রতিনিধি আরিফ মুসতাহসান।
ইনসাফ: করোনা ভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে আল কুদসের বর্তমান অবস্থা কি?
আমর: করোনা ভাইরাসের কারণে ফিলিস্তিনের সকল মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। ফিলিস্তিন ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকার বাহিরে চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। বাইতুল মুকাদ্দাসে মুসলমানদের জন্য নামাজ বন্ধ করা হয়েছে। এবং ইহুদিদের প্রার্থনাগার ও কান্নার দেয়ালে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে।
ইনসাফ: বর্তমানে সেখানকার মুসলমানদের কী অবস্থা?
আমর: সবার কথা আর কী বলবো! আমি একজন সচ্ছল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে পরিবার নিয়ে সঙ্কটে আছি। আমার ঘরে খাবার নেই।সন্তানরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমার ছেলে আমার ওপর অভিমান করে আছে, কারণ তাকে খাবার দিতে পারছি না। আজ আমার কাছে শুকনো রুটি আছে। হয়তো পানিতে ভিজিয়ে জাইতুন দিয়ে খাবো। কিন্তু আগামীকাল কী খাবো তা জানিনা। হয়তো না খেয়ে মারাও যেতে পারি।
ইনসাফ: এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনের সরকার কোনো সহায়তা করছে কি?
আমর: আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সরকারের উপর! ফিলিস্তিনের সরকার ইসরাইলের হয়ে কাজ করে। তারা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং আমাদের সম্পদ লুট করে খায়। তারা এতিমের সম্পদ লুট করে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে বলতে পারেনা ‘এটা হারাম’! কেউ যদি মুখ খুলে, তাকে এমন শাস্তি দিবে হয়তো সে মারা যাবে। ফিলিস্তিন সরকারের কারাগার রয়েছে। কেউ হকের পক্ষে কথা বললে তাকে কঠিন শাস্তি দিবে। হয়তো সে মারা যাবে, না-হয় তার সমস্ত অঙ্গ প্যারালাইজড হয়ে যাবে।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনের সরকার এমন কাজ করে?
আমর: ইসরাইলকে রক্ষা করতে ফিলিস্তিনের সরকার সৈন্য হিসেবে কাজ করে। তারা মুসলমানদের জিহাদী কর্মকাণ্ডে নিষেধ করে। পুরুষদের সামনে মহিলাদের নির্যাতন করে। কেউ কিছু বলতে পারেনা।
ইনসাফ: তাহলে সরকার ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে কিছুই করেনা?
আমর: ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্র নেই। সব মিথ্যা ও ধোঁকা। নামকাওয়াস্তে ফিলিস্তিনের সরকার রাখা হয়েছে, যাতে অন্য দেশ থেকে ত্রাণ আসতে পারে। ত্রাণ আসার পরে তারা তা চুরি করে খায়। ইসরাইল স্থল-জল সব যায়গার নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিন নামে আদতে কোনো রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্রপতি ও সরকার ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন।
ইনসাফ: চাষাবাদ করলে খাদ্যের জোগান আসতে পারে। ফিলিস্তিনিরা কি তা করেনা?
আমর: ফিলিস্তিনের সব কৃষিক্ষেত্র ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন। এছাড়া কোনো ভূমি নেই। আছে শুধু পাহাড়ি অঞ্চল। বেশিরভাগই ইসরাইলী অভিবাসীরা অবৈধভাবে দখল করে আছে। গোস্ত, গম, ভুট্টা, তেল ইসরাইল থেকে আসে। ফিলিস্তিনের কোনো কারখানা নেই। পানি, বিদ্যুৎও ইসরাইল থেকে আসে।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনিরা কি কোনো কাজই করতে পারেনা? কাজের সুযোগ কেঁড়ে নিলে কিভাবে জীবিকা উপার্জন হয়?
আমর: ফিলিস্তিনে কর্মক্ষেত্র না থাকায় অধিকাংশ ফিলিস্তিনি ইসরাইলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ছেলে ও ঘনিষ্ঠভাজনরা।
ইনসাফ: ফিলিস্তিনিরা কি ইসরাইলে কাজ করতে পারে?
আমর: ইসরাইলের অনেক কোম্পানি, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের নিকট মোবাইল নেটওয়ার্ক, পেট্রোল, গ্যাসসহ সবকিছু রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের শুধু কাজের জন্য ইসরাইলের ভিসা দেওয়া হয়। অনেক মেধাবী ফিলিস্তিনিকে জোর করে ইসরাইলে কাজে পাঠানো হয়। কেউ যেতে না চাইলে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। অনেককে মেরেও ফেলা হয়। “ইসরাইলের হয়ে কাজ করার চেয়ে আমি মৃত্যুবরণকে উত্তম মনে করি”।
ইনসাফ: ইসরাইলে ফিলিস্তিনি কর্মী সংখ্যা কত?
আমর: ইসরাইলে ফিলিস্তিনি কর্মী সংখ্যা অনেক বেশি। ইসরাইলের অধিকাংশ কাজই তারা করে। আর সেখান থেকে উপার্জন ও অনেক বেশি করতে পারে। ইসরাইলে যারা কাজ করে তারা সর্বনিম্ন দুই হাজার ডলার প্রতি মাসে পায়। আর একই কাজ ফিলিস্তিনে করে ৪০০ ডলারের বেশি পায়না। সব ফিলিস্তিনের সরকার লুন্ঠন করে নেয়।
ইনসাফ: আল কুদসে কি বাজার নেই, যেখান থেকে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে?
আমর: ৫ টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। আমার কাছে টাকা নেই। আমি বাজারে গিয়েই বা কী করবো!
সুত্র : ইনসাফ টুয়েন্টিফোর ডটকম
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/27/37062/
Comment