Announcement

Collapse
No announcement yet.

রাজকন্যার চোখে জল..!

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • রাজকন্যার চোখে জল..!

    রাজকন্যার চোখে জল (শেষ কিস্তি)
    চায়নিজ নিষ্ঠুরতা


    .
    সরকার একেবারে আদাজল খেয়ে লেগেছে হান ছেলেদের সাথে উইঘুর মেয়েদের বিয়েকে স্বাভাবিক বানাতে। হান যুবকদের বোঝানো হচ্ছে-বিরল এক জীবন হাতছানি দিয়ে ডাকছে তোমাকে। চাকরি, গাড়ি,বাড়ি, ডাঁশা ডাঁশা সুন্দরী উইঘুর নারী সব অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য পশ্চিমে, পূর্ব তুর্কিস্থানে । যাও, লুফে নাও এ সুযোগ। ভুল কোরোনা।
    .
    বিগবাজেটের ভিডিও বানানো হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে সম্ভাব্য সকল প্লাটফর্মে-
    মাথার ওপরে সুবিশাল সুনীল আকাশ। নীল আকাশ এসে ডুব দিয়েছে পাহাড়ের পাশের হৃদে। আকাশের কিছু নীল মিশে গিয়েছে হৃদে। ঝকঝকে রোদে ভেসে যাওয়া চরাচরে অপেক্ষারত এক উইঘুর তরুণী। অসম্ভব সুন্দর সে। দুর্বল হৃদয়ের কোনো পুরুষ এক নজর দেখলে হার্ট এটাক করে বসতে পারে, তরুণী প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে যেন, লেকের পানিতে পা ভেজাচ্ছে, হাসিতে ঢলে পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। হান রাজপুত্র আসলো গাড়িতে চড়ে, উইঘুর তরুণী লজ্জা মেশানো পদক্ষেপে এগিয়ে গেলো তার দিকে। হাত ধরে নিয়ে গেলো লেকের পাশে। দুজনে একসাথে পা ভেজাবে [৭]…
    .
    আরেকটা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে অনলাইনে। রুপকথার ‘অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে চিরকাল বসবাস করিতে থাকিলো’ টাইপের সুখের গল্প বলে বেড়াচ্ছে এই ভিডিওটা। উইঘুর-হান দম্পতির। [৮]
    .
    প্রায় তিনকোটি হান পুরুষ পাত্রী পাচ্ছেনা চীনের একসন্তান নীতির কারণে। এদেরকে যতোবেশি সম্ভব ব্রেইন ওয়াশের চেষ্টা করছে সরকার যেনো উইঘুর মেয়ে বিয়ে করে। [৯]
    .
    ‘হাও টু উইন দ্যা হার্ট অফ উইঘুর গার্লস’ নামে বই লেখা হয়েছে এদের জন্য। লেখক, হান পুরুষদের নানাবিধ টিপস দিয়েছে কীভাবে আগালে উইঘুর মেয়েদের বিয়ে করতে পারবে। লেখক ইউ লুংগী যে নিজেকে ‘হান ভলান্টিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসে, অবিবাহিত ক্ষুধার্ত হান পুরষদের উস্কে দিচ্ছে তার বইয়ে- ‘উইঘুর মেয়েরা কিন্তু মারাত্মক সুন্দরী’। তবে উইঘুর মেয়ে বিয়ে করার পথ বাতলে দেবার সাথে সাথে সে হান যুবকদের এটা বলেও সাবধান করে দিচ্ছে- সাবধান, উইঘুর মেয়ের রুপে মজে গিয়ে ভুলে যেওনা তোমার প্রধান পবিত্র দায়িত্ব ছিলো তিন শয়তান - বিচ্ছিন্নতাবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদ আর সহিংস সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! [১০]
    সরকারের তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে উইঘুর-হান বিয়ে জাতীয় ঐক্যকে আরো সুসংহত করবে। কিন্তু এই যে এতোকিছু, এর মূল লক্ষ্যটা আসলে ইউ লুঙ্গীর এই শেষের কথাগুলো। তথাকথিত বিচ্ছিন্নতাবাদ,উগ্রবাদ আর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! উইঘুর মুসলিম পরিচয় এই দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া! চিরদিনের জন্য!
    .
    উইঘুর পুরুষদের তো কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। যা ডলা দেবার ওখানেই তা দেয়া হবে। কাজেই তাদের নিয়ে এখন আর তেমন চিন্তা নেই। এখন উইঘুর মেয়েদের যদি হান পুরুষদের সাথে বিয়ে দেয়া যায় তাহলে এক ধাক্কায় বাস্তবায়িত হয়ে যাবে অনেক গুলো উদ্দেশ্য ।
    .
    উইঘুর মেয়ে ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। শূকরের মাংস খাওয়া, মদ খাওয়া , স্কার্ফ না পরা ইত্যাদিতে সে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তার হান স্বামী, স্বামীর পরিবার তাকে ইসলাম ও উইঘুর সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখবে। বদলে যাবে ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনা। সে ধীরে ধীরে ভুলে যাবে কী ছিল তার ধর্ম, কী ছিলো তার পরিচয়, কী ছিলো তার ভাষা। স্বামীর হান পরিচয়ে একেবারে নিজেকে বিলীন করে দিবে সে। হারিয়ে যাবে তার উইঘুর, মুসলিম পরিচয়।
    .
    হান পুরুষদের সাথে বিয়ে না হলে তার সন্তানের মধ্যে উইঘুর মুসলিম সত্তা ঠিকই টিকে থাকতো। দুনিয়াতে আরেকজন ‘সন্ত্রাসী’ জন্ম নিতো। একদিন হয়তো চীনের সকল অপরাধের হিসেব কষতে বসতো সেই ‘সন্ত্রাসীরা’! কিন্তু এখন আর সেই সম্ভাবনাটুকুও নেই।
    দুনিয়ার বুক থেকে নীরবে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার কী মারাত্মক মাস্টারপ্ল্যান!
    .
    উইঘুরদের ‘শিক্ষা’ দেবার জন্য চীন সরকারকে পথ বাতলে দিয়েছিলো তিনজন অ্যাকাডেমিক। পিকিং ইউনিভারসিটির প্রফেসর মা রং, ড. হু লিয়ানহি এবং Tsinghua ইউনিভার্সিটির হু আংগাং। সরকারকে বুদ্ধি দেয়া হয়েছিল- উইঘুর মেয়েদের সাথে হান পুরুষদের বিয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যারা বিয়ের বিরোধিতা করবে তাদের আনতে হবে কঠোর শাস্তির আওতায়। বিয়ের ফলে যেসব বাচ্চা জন্ম নেবে বিশেষ যত্ন নিতে হবে তাদের। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে করে উইঘুর মেয়েরা হান পুরুষদের সাথে বেশি বেশি মেলামেশার সুযোগ পায়।
    দেখা যাচ্ছে শি জিন পিং এর কমিউনিস্ট সরকার অনুগত ছাত্রের মতো অক্ষরে অক্ষরে তাদের কথা মেনে চলছে।
    .
    চীন সরকার জোর গলায় দাবী করছে গোত্রদের মধ্যে ঐক্য সুসংহত করার জন্যই উইঘুর-হান বিয়েকে প্রমোট করা হচ্ছে, কিন্তু উইঘুর অ্যাক্টিভিস্ট রুশান আব্বাসের মতে এটা সিস্টেমেটিক রেইপ ছাড়া আর কিছুই না। সংখ্যালঘু উইঘুর, কাযাখদের ওপর চীন সরকার যে বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে তার শক্তিশালী এক হাতিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই নিয়মতান্ত্রিক ধর্ষন।
    .
    ‘গণধর্ষণ ছাড়া আপনি এটাকে আর কী বলবেন’? রুশান আব্বাস সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন এক সাক্ষাৎকারে । ‘সরকার হান পুরুষদের সামনে টাকা পয়সা, বাড়িগাড়ি, চাকরির মুলো ঝুলিয়ে বলছে যাও পূর্ব তুর্কিস্থানে গিয়ে উইঘুর মেয়েদের বিয়ে করো। উইঘুর মেয়ে বা মেয়ের পরিবার কেউই নাস্তিক হান চাইনিজদের সাথে বিয়েতে আপত্তি করতে পারছেনা। মৃদু আপত্তি করলেও সরকার উগ্রবাদী, জঙ্গীর ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। তারপর ছুঁড়ে দিচ্ছে দুনিয়ার জাহান্নাম- কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে!
    কয়েকবছর ধরে বিয়ের নাম করে হান চাইনিজরা উইঘুর মেয়েদের রেইপ করে যাচ্ছে। কিন্তু অন্ত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল এতোদিন পর মিডিয়াতে এ নিয়ে আলোচনা কেবল মাত্র শুরু হয়েছে! [১১]
    .
    যুবাইরা শামসেদিন উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রজেক্টের কো অরডিনেটর। গতো এপ্রিলে লিখা এক আর্টিকেলে তিনি দাবী করেন- ‘চীন সরকার উইঘুর নারীদের ভেঙে চুরে নতুন করে গড়ে আসলে উইঘুর সংস্কৃতি এবং উইঘুর পরিচয় পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে চায়। যদি আপনি কোনো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই তার নারীদের ধ্বংস করতে হবে। চীন সরকার এটাই করছে। নারীদের গর্ভপাতে বাধ্য করা, বন্ধ্যা করে দেয়া, তাদের কাছ থেকে বাচ্চা কেড়ে নেয়া, ধর্ষণ করা, যৌন দাসী বানানো, যৌন নিপীড়ন করা এ সবই জেনেভা জেনোসাইড কনভেনশন অনুসারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ । কিন্তু চীন সরকার এতো এতো অপরাধ করে যাবার পরেও এগুলো নিয়ে খুবই কম উচ্চবাচ্য হচ্ছে’। [১২]
    আজকাল পৃথিবীতে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমানাধিকার, ম্যরিটাল রেইপ (বিয়ের পরে স্বামীর হাতে স্ত্রী ধর্ষণ!) নিয়ে খুব কথা হয়! কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয়, ক্যাম্পেইন চালানো হয় পৃথিবীর আনাচে কানাচে। পেটে ভাত নেই, গায়ে কাপড় নেই, তলাবিহীন ঝুড়ির মতো দেশেও নারীবাদীরা গিয়ে নারীবাদের সবক দেয়ার বিলাসিতা দেখায় । কিন্তু চীন সরকার উইঘুর নারীদের সমানাধিকার দূরে থাক মানবাধিকার থেকেই যে বঞ্চিত করেছে সে ব্যাপারে নারীবাদীদের কোনো কথা শোনা যায়না তেমন। কুকুর বিড়ালও নিজের ইচ্ছেমতো সংগী বেছে নেবার সুযোগ পায়, কিন্ত উইঘুর নারীরা সে সুযোগও তো পায়না। এখন পর্যন্ত চীনের চোখে চোখ রেখে কোনো নারীবাদী বলতে পারলোনা ‘মানবাধিকার নয় উইঘুর নারীদের পশুঅধিকার ফেরত দাও’।
    .
    কতোটা আতঙ্ক নিয়ে কাটে উইঘুরদের জীবন চিন্তা করুন একবার পাঠক। এই বুঝি আমার মেয়ে, আমার বোনের ওপর সরকার বা কোনো হান পুরুষের নজর পড়লো! এই বুঝি ওকে জোর করে বিয়ে করে নিয়ে গেলো কোন নাস্তিক কমিউনিস্ট, কোনো হান! এই অসহায় বাবা,ভাইদের জায়গায় একবার নিজেকে কল্পনা করুন- আপনার আদরের ছোটো বোন, যাকে আপনি পিঠে নিয়ে কতো ঘুরেছেন, তাঁকে কোনো নাস্তিক পুরুষ জোর করে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি কিছু বলতে পারছেন না। আপনাকে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাসিখুশি থাকতে হচ্ছে, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে হচ্ছে, নাচতে হচ্ছে। শূকরের মাংস খেতে হচ্ছে, মদের গ্লাসে চুমুক দিতে হচ্ছে। আপনি জানেন আপনার বোনকে হান জানোয়ারের বাচ্চাটা ছিড়ে ছিবড়ে খেয়ে ফেলবে …… অসীম এই অসহায়ত্ব, চেপে রাখ ক্রোধ এর চেয়ে কষ্টের কি কিছু আছে একজন ভাইয়ের কাছে? একজন পুরুষের কাছে?
    .
    ইউরোপে পড়তে আসা উইঘুর যুবক নুরযাতের কথা ছিলো কয়েক মাস পরেই ঘরে ফিরে বিয়ে করবে আদিলাকে। আদিলা জানিয়েছিলো বিয়ের পোষাক কিনে সেও অপেক্ষা করবে নুরযাতের জন্য। যদিও আদিলা জানতো এটা আর কখনোই সম্ভব না । হয়তো নুরযাতও জানতো। কী চলছিল নুরযাতের মনে আমরা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারিনা। হয়তো আদিলার মতো নুরযাতও জানতো খুব তাড়াতাড়ি আদিলাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে কোনো হান চাইনিজ কুত্তা। প্রতিরাতে নির্মম ভাবে খুন হবে আদিলা। রক্ত ঝরবে অশ্রু হয়ে ।
    .
    সাক্ষাতকার দেবার সময় আদিলাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো উইঘুরদের ভবিষত নিয়ে। আদিলা কিছু বললোনা। ছোট্ট একটা চিরকুট হাতে তুলে নিয়ে ক্যামেরার দিকে ধরলো সে। চিরকুটে লিখা- ‘আমরা আর কখনোই ফিরতে পারবোনা জীবনে’। দু সেকেন্ড ক্যামেরাতে চিরকুট স্থির রেখে দলা পাকিয়ে নিয়ে মুখে পুরলো সে। ধীরে ধীরে চিবুলো সেটা একদৃষ্টিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে। তারপর গিলে ফেললো। টপ টপ কয়েকফোটা নোনা জল ঝরে পড়লো তাঁর কাজল কালো চোখ থেকে। [১৩]
    .
    পৃথিবীতে এতো কোটি মুসলিম কিন্তু আদিলাদের চোখের জল মুছে দেবার কেউ নেই আজ।
    আফসোস!
    .
    (শেষ)
    পড়ুন – রাজকন্যার চোখে জল (প্রথম কিস্তি)- https://dawahilallah.com/showthread....%26%232482%3B-!
    .
    সংগৃহীত..
    .
    রেফারেন্সঃ
    [৭] Video argues beautiful Uyghur women would love to have a Han husband- https://tinyurl.com/rw2vyzv
    [৮]Video promoting marriage between Han men and Uyghur women- https://tinyurl.com/ralowbh
    [৯]Muslim wives in China 'are forced to sleep in the same bed as male officials while their husbands are being indoctrinated in re-education camps- https://tinyurl.com/umvm3ld
    [১০]Uyghur Love In A Time Of Interethnic Marriage- https://tinyurl.com/wns6tcc
    [১১]‘This is mass rape’: China slammed over program that ‘appoints’ men to sleep with Uighur women - https://tinyurl.com/vw4r4ok
    [১২]China’s attacks on Uighur women are crimes against humanity- https://tinyurl.com/y6b44guu
    [১৩]Uyghur Love In A Time Of Interethnic Marriage- https://tinyurl.com/wns6tcc
    Last edited by সুরের কুঁড়েঘর; 05-02-2020, 06:00 PM.
    সত্য ন্যায়ের গান, গেয়ে মোরা সবে
    উড়াবো বিজয় নিশান...


  • #2
    পুরোটা পড়া সম্ভব হলো না, এর আগেই হৃদয়কোণে অশ্রুকণা এসে বিক্ষোভ শুরু করেছে...
    نحن الذين بايعوا محمدا، على الجهاد ما بقينا أبدا

    Comment

    Working...
    X