Announcement

Collapse
No announcement yet.

কাশ্মীর-যুদ্ধ : এক বিশ্বাসঘাতকতার লড়াই

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কাশ্মীর-যুদ্ধ : এক বিশ্বাসঘাতকতার লড়াই

    কাশ্মীর-যুদ্ধ : এক বিশ্বাসঘাতকতার লড়াই


    একদিন ফেসবুকে একটি পোস্ট পড়লাম। পোস্টটিতে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করা হয়েছিল। এই অভিযোগটি কৌতূহলী মনে হলো। তাই আমি বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

    প্রথমে অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনে হয়েছিল। কাশ্মীর নিয়ে পাক সেনাবাহিনীর নিয়মিত বক্তব্য হচ্ছে এটি দেশভাগের ফলে সৃষ্ট একটি অমীমাংসিত সমস্যা।

    ১৯৪৮ সালে ভারতীয় দখলদারিত্ব থেকে কাশ্মীর মুক্তির জন্য উপজাতীয় নেতাদের সাহায্যে পাক সেনাবাহিনী নিয়মিত সৈন্যদের প্রেরণ করেছে। ১৯৬৫ সালে পাক বাহিনী তাদের নিয়মিত সৈন্যদের বিদ্রোহী ছদ্মবেশে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করিয়েছে যাতে বিদ্রোহ করে কাশ্মীরকে মুক্ত করা যায়। এমনকি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের লজ্জাজনক পরাজয়ের পরও ভুট্টোকে কাশ্মীর ইস্যুতে ছাড় দিতে দেয়নি পাক সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে আশির দশকের শেষের দিকে মুজাহিদীনদের ট্রেনিং ও অস্ত্রসহ কাশ্মীরে পাঠানোর কাজটিও করেছে তারা।

    যাইহোক, নব্বই দশকের শুরুতে তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে, স্থানীয় কাশ্মীরিদের দিয়ে ‘সশস্ত্র সংগ্রামে’ কোনো অগ্রগতি হবে না। তাই, নতুন উদ্দীপনা যোগাতে পাক বাহিনী বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন থেকে আসা মুজাহিদীনদের পাশাপাশি স্বদেশিদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। এরই ফলে লস্কর-ই তায়্যিবার’ মতো সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। অতএব, কাশ্মীরিদের প্রতি পাক সেনাবাহিনীর সমর্থন চিত্তাকর্ষক ও প্রশংসনীয় মনে হচ্ছে। তবুও, এই প্রশংসনীয় প্রচেষ্টার পেছনে কিছু বিতর্কিত প্রশ্ন চাপা পড়ে আছে। সেসবের উত্তর খোঁজে দেখতে হবে। বর্তমানে পাক সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিজ দেশেই সন্দেহের মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে, কাশ্মীরের ব্যাপারে তাদের কার্যক্রম অবশ্যই পরিষ্কার করা দরকার।

    ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে তারা। এজন্য কেউ তাদের সন্দেহ করেনি, যেহেতু তারা দেশ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে নিজ রাজ্যের ভবিষ্যত নির্ধারণে ব্যর্থ হয়ে তৎকালীন জম্মু-কাশ্মীরের সবশেষ রাজা হরি সিং পাকিস্তান সরকারের সাথে একটি ‘স্থিরচুক্তি'(standstill) স্বাক্ষর করে। তবে, পাক সেনাবাহিনী রাজার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করার থেকে কাশ্মীরকে স্বাধীন করে দেওয়ার চিন্তাকে বিচক্ষণ মনে করেছিল। আর নির্ভুলভাবে বললে, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল; কারণ হিন্দু রাজা যেকোনো সময় ভারতের সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়ার আশংকা ছিল। রাজার ক্ষুদ্র বাহিনীকে পরাজিত করতে কাশ্মীরি উপজাতিদের ব্যবহার করে এক সুদক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল পাক জেনারেলরা। এতে শুধু বিজয়ই নিশ্চিত করা হয়নি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে পাকিস্তানের সমালোচনা করতে না পারে তাও নিশ্চিত করা হয়েছিল।

    তবুও একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেন এই কাশ্মীরি যোদ্ধাদের নিয়মিত বাহিনী হিসেবে গড়তে ব্যর্থ হয়েছিল? অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের মাটিতে সরাসরি লড়াই করছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কি ভেবেছিল যে, কাশ্মীরিরা ভারতীয় প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে? অবশ্যই না! পাকিস্তানি জেনারেলরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়েছে। তাই তাদের যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতা ছিল। পাক জেনারেলরা নিশ্চিতভাবেই জানত কাশ্মীরের বিদ্রোহীরা ভারতীয় নিয়মিত সেনাবাহিনীর বিপরীতে কিছুই না। এরপরও পাক সেনাবাহিনী কেন ভারতীয়দের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামেনি? এটা কি পরাজিত হবার ভয়ে? এবারও উত্তর হবে, অবশ্যই না! এক বছর আগেও পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের সেনাবাহিনীই ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির অন্তর্ভুক্ত এবং তারা একই প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামে সজ্জিত ছিল। একই রকম শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও কেন পাক বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নামেনি? অথবা, যদি সক্ষমতা না থাকত তাহলে তারা কেন কাশ্মীরিদের মুক্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিল? কেন তারা পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক রাজার সাথে স্বাক্ষরিত ‘স্থিরচুক্তি’ (standstill) কেন লঙ্ঘন করেছিল? এতকিছু করার পর তারা আবার কেন কাশ্মীর পরিত্যাগ করল?

    কাশ্মীরে পাক বাহিনীর এই আচরণের কিছু গুজামিল ব্যাখ্যা পূর্বে দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ ব্যাখ্যাই সঠিক কোনো কারণ দাঁড় করাতে পারেনি। বরং অজুহাত হিসেবে বলেছে, তাদের এসব পদক্ষেপের কারণে নাকি কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। বিশ্ববাসী এ ব্যাপারে ভালোই জানেন। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়াই করা কাশ্মীরিদের হঠাৎ পরিত্যাগ করেছে পাক বাহিনী। কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের চেয়ে বরং কৃতিত্ব ও ধন্যবাদ দেয়া উচিত ভারতের অদক্ষ নিয়ন্ত্রণকে। বাকিটা ইতিহাস। পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার এই সুযোগে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের বিতর্কিত অঞ্চলগুলোতে পরিপূর্ণ দখলদারিত্বের বৈধতা অর্জন করেছে। এটাই কাশ্মীরিদের সঙ্গে পাক বাহিনীর প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ তারা কাশ্মীরে ‘মুক্তিবাহিনী’ পাঠায়নি, বরং পাঠিয়েছিল কিছু ‘দখলদার’।

    আশির দশকের শেষের দিকে যখন কাশ্মীরে অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল পাক সেনাবাহিনী, তখন শুরুটা ভালোই করেছিল তারা। উপত্যকা থেকে অনেক যুবক ও কিশোরকে সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। পরিকল্পনাটি সঠিক ছিল, কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে পরিচালনার কাজটি ভালো হয়নি। যদিও প্রত্যেক যুবককে নামেমাত্র কিছু অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রশিক্ষণ ছিল একেবারেই অপ্রতুল। পাক বাহিনী তাদের ‘জিহাদ’ শুরু করতে তাড়াহুড়া করেছিল। যার ফল ভোগ করতে হয়েছে কাশ্মীরি যুবকদের। তাদের মধ্যে বীরত্ব ও প্রবল উৎসাহ থাকলেও দক্ষতা ছিল খুবই স্বল্প। যার ফলে ভারতীয় বাহিনীর বিপরীতে দাঁড়াতে না পেরে হাজার হাজার যুবককে জীবন দিতে হয়েছে।

    পাক সেনাবাহিনী কি এতই নির্বোধ যে, তারা ভেবেছিল মাত্র কয়েকজন অস্ত্রধারী বিদ্রোহীই কাশ্মীর থেকে ভারতীয় সেনাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে? অথবা সেখানে একটি সশস্ত্র সংগ্রাম করবে যা নয়াদিল্লিকে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য করবে? উত্তর হলো, ‘না’।
    তাহলে কেন পাক বাহিনী এই মিশনটি গ্রহণ করেছিল যা কাশ্মীরিদের কেবল মৃত্যু এবং ধ্বংসের দিকেই নিয়ে গেছে?
    এখন কাশ্মীরে পাক সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসি। এটি স্পষ্ট যে, কাশ্মীর ইস্যুতে তারা কখনোই উদ্বিগ্ন ছিল না। উপত্যকায় ঘটমান প্রাণহানি তাদের একটুও বিচলিত করেনি। বরং যখনই ভারতীয় দখলদারদের হাতে কেউ নিহত হয়, তখন পাক বাহিনী আরো বেশি উৎফুল্ল হয়েছে। কারণ এটি তাদের প্রচারণার খোরাক যোগায়। পাক জেনারেলদের পাকিস্তানে প্রচার করতে সুবিধা হয় যে, জম্মু ও কাশ্মীরে জোরপূর্বক ভারতীয় দখলদারিত্ব চলছে।
    এভাবে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘কাশ্মীর ইস্যু’ পাক সেনাবাহিনীর জন্য কখনোই আন্তরিক বিষয় ছিল না। কাশ্মীরকে স্বাধীন নয় বরং ভারতীয় দখলকৃত কাশ্মীরই পাক বাহিনীর জন্য বেশি প্রয়োজন। কারণ, কাশ্মীর ইস্যুতে হালকা টান দেখিয়ে তাদের বিশাল বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে পাক জনগণের সহমর্মিতা আদায় করতে পারে।

    লেখক: ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট’-এর অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিলুফার কোরেশি। ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট-এ ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল ‘Kashmir- a Struggle Betrayed’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন লিখেন তিনি। প্রতিবেদনটিতে কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাহায্যের আড়ালে চরম বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র তুলে ধরা হয়। বাংলাভাষীদের জন্য প্রতিবেদনটির সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হয়েছে।

    তথ্যসূত্র:

    Kashmir- a Struggle Betrayed; https://tinyurl.com/2w6ex4dj

    অনুবাদ: ইউসুফ আল-হাসান
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    পাকিস্তান শাসক-সেনাবাহিনী হল সে নারীর মতো যে তাঁর সন্তানকে দ্বিখণ্ডিত পেতে সন্তুষ্ট!

    [প্রসিদ্ধ গল্পঃ মিথ্যা মাতৃত্বের দাবীদার ও কাজীর বিচার।]

    Comment


    • #3
      আয় আল্লাহ কাশ্মীরের মুসলিম ভাই বোনদেরকে সাহায্য কর,

      Comment

      Working...
      X