হরিদ্বারে মুসলিমদের জমি কেনায় নিষেধআজ্ঞা ও মুসলিম নির্যাতন

ভারতের হরিদ্বার স্থানটি বিশ্ববাসীর নজরে আসে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী জ্যোতি নরসিংহানন্দের নেতৃত্বে উগ্র হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের মুসলিম গণহত্যার আহ্বানের কারণে। উগ্র সন্ত্রাসবাদের বহিঃপ্রকাশের ধারাবাহিকতায় এবার হরিদ্বার শহরে মুসলিমরা সম্পত্তি ক্রয় করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
হরিদ্বারের কানখাল এবং মায়াপুর এলাকায় মুসলমানদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানখাল এবং মায়াপুর জায়গা দু’টি বিশ্ব হিন্দুদের পরিদর্শন করার তীর্থস্থান।
হরিদ্বার প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজেন্দ্র নাথ গোস্বামী বলেছে যে, স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, এমনকি ধর্মীয় স্থানগুলিতে বিভিন্ন ধরণের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন শত শত মুসলমান হরিদ্বারে আসে।
একটি হিন্দি দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিক দিলশাদ আলীর মতে, গঙ্গা নদীতে ডুব দেওয়ার পর হিন্দু তীর্থযাত্রীদের মাথা ন্যাড়া করা সকল নাপিতই মুসলমান। এই নাপিতরা তাদের গ্রাম এবং হরিদ্বারে প্রতিদিন যাতায়াত করে।
মুসলিম প্রযুক্তিবিদরা হরিদ্বারে নদীর গভীরতা নির্ণয়, বৈদ্যুতিক এবং মোবাইল মেরামতসহ অন্যান্য সমস্ত কাজও করেন। এই টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কেউ কেউ ভাড়া করা জায়গা থেকে কাজ করেন, অন্যরা হিন্দুদের মালিকানাধীন দোকানে কাজ করেন।
“কানভার” বা “বহঙ্গী”, যা “গঙ্গা জল” বহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়, এগুলো হরিদ্বার সংলগ্ন বিজনোর এবং জ্বালাপুরের মুসলমানরা তৈরি করেন।
কট্টরপন্থী হিন্দু ধর্মীয় নেতারা ভারতে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানোর জন্য মুসলমানদের গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছে। তারা শুধুমাত্র এই শহরেই নয়, সমগ্র ভারত থেকে মুসলিমদের নির্মূল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হরিদ্বারে নরসিংহানন্দ ও তার সঙ্গীরা যে শুধু মুসলমানদের গণহত্যার প্রকাশ্য আহ্ববান জানিয়েছে তা-ই নয়, তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকেও মুসলিম গণহত্যায় অংশগ্রহণের আবেদন জানায়।
তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই এই ধর্মান্ধদের নিন্দা করেনি যারা মুসলমানদের গণহত্যার জন্য আবেদন করে। বিপরীতে, উভয়েই নীরবতা বজায় রেখেছে যেন কিছুই ঘটেনি যদিও বিষয়টি বিশ্বব্যাপী রিপোর্ট করা এবং আলোচিত হয়েছে। তাদের নীরবতাকে মুসলিম গণহত্যার সমর্থন হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
ভারতের হরিদ্বার জেলায় একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য রাজ্যে হরিদ্বার হল একমাত্র জেলা যেখানে প্রচুর মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, জেলার মোট জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
ইসলামী ধর্মপ্রচারক ও সুফি সাধক আলাউদ্দিন আলী আহমেদ সাবির, যিনি সাবির কালিয়ারী নামে পরিচিত, এর সমাধির কারণেও জেলাটি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বিখ্যাত। বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক বাবা ফরিদ গঞ্জশকরের বড় বোনের ছেলে, সাবির কালিয়ারি, ১৩শতকে ইসলাম প্রচার করেছেন এবং উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর, বিজনোর এবং সাহারানপুরের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে পড়ে এমন এলাকাগুলি সহ একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক অনুসারী তৈরী করেছেন। .
বিপুল সংখ্যক মুসলিম থাকলেও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে হরিদ্বার জেলায় মুসলিমদের জন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নেই। যদিও মুসলমানরা জেলার জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশেরও বেশি এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল।
বিপরীতে, খ্রিস্টান এবং শিখদের মতো অন্যান্য সম্প্রদায়, যারা এই জেলায় ক্ষুদ্রতর, তাদের স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিখদের জন্য একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট কলেজও স্থাপন করা হয়েছে।
গুলবাহার খান, একজন ছাত্র যিনি নরসিংহানন্দ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন, বলেছেন যে স্থানীয় স্কুল ও কলেজে অনেক হিন্দু স্টাফ মুসলমানদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তবুও মুসলমানদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের কাছেই যেতে বাধ্য।
একজন সমাজকর্মীর মতে, গত কয়েক বছরে জ্বালাপুর কলেজে অধ্যয়নরত ১২জন মুসলিম মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হিন্দু ছেলেরা বিয়ের নামে ধর্ষণ করেছে।
তিনি বলেছিলেন যে, মুসলিম রোগীরা বিশেষ করে গাইনিক রোগীরা প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং প্রায়ই স্থানীয় ডাক্তারদের খারাপ আচরণের শিকার হন।
ইসলামিক খিলাফা ব্যবস্থা না থাকায় মুসলিমরা অভিবাবকহীন দুর্বল হয়ে পড়েছেন। যে হিন্দুরা এক সময় মুসলিমদের তোষামদী করে চলত, তারাই এখন মুসলিমদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। মুসলিম মুক্ত অখণ্ড ভারত বানানোর স্বপ্ন দেখছে।
এসব কিছুর বিপরীতে তাই নিজেদের আভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং নিজেদের জান-মাল রক্ষায় প্রস্তুত হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ইসলমিক চিন্তাবীদগণ।
লেখক : মাহমুদ উল্লাহ্

ভারতের হরিদ্বার স্থানটি বিশ্ববাসীর নজরে আসে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী জ্যোতি নরসিংহানন্দের নেতৃত্বে উগ্র হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের মুসলিম গণহত্যার আহ্বানের কারণে। উগ্র সন্ত্রাসবাদের বহিঃপ্রকাশের ধারাবাহিকতায় এবার হরিদ্বার শহরে মুসলিমরা সম্পত্তি ক্রয় করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
হরিদ্বারের কানখাল এবং মায়াপুর এলাকায় মুসলমানদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানখাল এবং মায়াপুর জায়গা দু’টি বিশ্ব হিন্দুদের পরিদর্শন করার তীর্থস্থান।
হরিদ্বার প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজেন্দ্র নাথ গোস্বামী বলেছে যে, স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, এমনকি ধর্মীয় স্থানগুলিতে বিভিন্ন ধরণের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন শত শত মুসলমান হরিদ্বারে আসে।
একটি হিন্দি দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিক দিলশাদ আলীর মতে, গঙ্গা নদীতে ডুব দেওয়ার পর হিন্দু তীর্থযাত্রীদের মাথা ন্যাড়া করা সকল নাপিতই মুসলমান। এই নাপিতরা তাদের গ্রাম এবং হরিদ্বারে প্রতিদিন যাতায়াত করে।
মুসলিম প্রযুক্তিবিদরা হরিদ্বারে নদীর গভীরতা নির্ণয়, বৈদ্যুতিক এবং মোবাইল মেরামতসহ অন্যান্য সমস্ত কাজও করেন। এই টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কেউ কেউ ভাড়া করা জায়গা থেকে কাজ করেন, অন্যরা হিন্দুদের মালিকানাধীন দোকানে কাজ করেন।
“কানভার” বা “বহঙ্গী”, যা “গঙ্গা জল” বহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়, এগুলো হরিদ্বার সংলগ্ন বিজনোর এবং জ্বালাপুরের মুসলমানরা তৈরি করেন।
কট্টরপন্থী হিন্দু ধর্মীয় নেতারা ভারতে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানোর জন্য মুসলমানদের গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছে। তারা শুধুমাত্র এই শহরেই নয়, সমগ্র ভারত থেকে মুসলিমদের নির্মূল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হরিদ্বারে নরসিংহানন্দ ও তার সঙ্গীরা যে শুধু মুসলমানদের গণহত্যার প্রকাশ্য আহ্ববান জানিয়েছে তা-ই নয়, তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকেও মুসলিম গণহত্যায় অংশগ্রহণের আবেদন জানায়।
তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই এই ধর্মান্ধদের নিন্দা করেনি যারা মুসলমানদের গণহত্যার জন্য আবেদন করে। বিপরীতে, উভয়েই নীরবতা বজায় রেখেছে যেন কিছুই ঘটেনি যদিও বিষয়টি বিশ্বব্যাপী রিপোর্ট করা এবং আলোচিত হয়েছে। তাদের নীরবতাকে মুসলিম গণহত্যার সমর্থন হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
ভারতের হরিদ্বার জেলায় একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য রাজ্যে হরিদ্বার হল একমাত্র জেলা যেখানে প্রচুর মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, জেলার মোট জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
ইসলামী ধর্মপ্রচারক ও সুফি সাধক আলাউদ্দিন আলী আহমেদ সাবির, যিনি সাবির কালিয়ারী নামে পরিচিত, এর সমাধির কারণেও জেলাটি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বিখ্যাত। বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক বাবা ফরিদ গঞ্জশকরের বড় বোনের ছেলে, সাবির কালিয়ারি, ১৩শতকে ইসলাম প্রচার করেছেন এবং উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর, বিজনোর এবং সাহারানপুরের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে পড়ে এমন এলাকাগুলি সহ একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর সংখ্যক অনুসারী তৈরী করেছেন। .
বিপুল সংখ্যক মুসলিম থাকলেও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে হরিদ্বার জেলায় মুসলিমদের জন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নেই। যদিও মুসলমানরা জেলার জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশেরও বেশি এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল।
বিপরীতে, খ্রিস্টান এবং শিখদের মতো অন্যান্য সম্প্রদায়, যারা এই জেলায় ক্ষুদ্রতর, তাদের স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিখদের জন্য একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট কলেজও স্থাপন করা হয়েছে।
গুলবাহার খান, একজন ছাত্র যিনি নরসিংহানন্দ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন, বলেছেন যে স্থানীয় স্কুল ও কলেজে অনেক হিন্দু স্টাফ মুসলমানদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তবুও মুসলমানদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের কাছেই যেতে বাধ্য।
একজন সমাজকর্মীর মতে, গত কয়েক বছরে জ্বালাপুর কলেজে অধ্যয়নরত ১২জন মুসলিম মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হিন্দু ছেলেরা বিয়ের নামে ধর্ষণ করেছে।
তিনি বলেছিলেন যে, মুসলিম রোগীরা বিশেষ করে গাইনিক রোগীরা প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং প্রায়ই স্থানীয় ডাক্তারদের খারাপ আচরণের শিকার হন।
ইসলামিক খিলাফা ব্যবস্থা না থাকায় মুসলিমরা অভিবাবকহীন দুর্বল হয়ে পড়েছেন। যে হিন্দুরা এক সময় মুসলিমদের তোষামদী করে চলত, তারাই এখন মুসলিমদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। মুসলিম মুক্ত অখণ্ড ভারত বানানোর স্বপ্ন দেখছে।
এসব কিছুর বিপরীতে তাই নিজেদের আভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং নিজেদের জান-মাল রক্ষায় প্রস্তুত হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ইসলমিক চিন্তাবীদগণ।
লেখক : মাহমুদ উল্লাহ্