ভারতের ইতিহাস পুনর্লিখন ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য ধ্বংস করার ভয়াবহ হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প
ভারতজুড়ে মুসলিমদের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপনা। মুসলিম শাসনের ৬০০ বছরে মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি সভ্য, সমৃদ্ধ ও উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আর এখন সেই ইতিহাসকে বিকৃত করতে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী ₹১৩,৪৫০ কোটিরও বেশি রুপি ব্যয়ে আইকনিক সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সারাদেশে ইতিহাস পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য সরকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বর্তমান ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সরকার নানা কৌশলে ভারতীয় ইতিহাসকে তাদের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কল্পিত মিথ্যা ধারণাগুলোকে ইতিহাস হিসেবে লিখছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ইতিহাসকে এমনভাবে পুনর্লিখন করছে যা হিন্দুদের কাল্পনিক বই পুরাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, এবং হিন্দু শাসনের সময়কালকে মহিমান্বিত করবে।
অন্যদিকে ভারতের রুপকার মুসলিম শাসক ও শাসনকে পৈশাচিক হিসেবে তুলে ধরছে। এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলছে।
বিভিন্ন রাজ্য স্কুলের পাঠ্যক্রমের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে, বিশেষ করে গুজরাটে; এবং ইতিহাসের বইগুলো মুসলিম বিদ্বেষ, মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা দিয়ে পূর্ণ করেছে।
এই সিদ্ধান্তগুলো হিন্দুত্বের আখ্যানকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিকৃত করে ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। তারা ভারতের মুসলিম শাসকদের অত্যাচারী হিসাবে তুলে ধরছে। মুসলিম শাসকদের নামে অভিযোগ তুলছে যে, তারা মন্দির ধ্বংস করেছিল এবং তাদের অমুসলিম প্রজাদের গণহত্যা করেছিল।
বর্তমানে ভারতের অনেক স্কুলে এই পরিবর্তিত ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে। ইতিহাসের এই স্যাফরানাইজেশন তথা গেরুয়াকরণ করে হিন্দুদের মহান এবং মুসলিমদের অত্যাচারী দানব হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
তারা হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শী ভিডি সাভারকারের আদর্শকে মহান হিসেবে বর্ণনা করছে। অথচ এই ব্যক্তি কুখ্যাত অ্যাডলফ হিটলার এবং বেনিটো মুসোলিনির আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। এমনকি সে ধর্ষণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে ওকালতি করতো।
এভাবে সাম্প্রদায়িক ইতিহাস পুনঃলিখনে ইসলামবিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করছে। ব্যাপক সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে। কারণ ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী এবং তার আদর্শিক গুর আরএসএস, বিজেপির সিনিয়র মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের সক্রিয় সমর্থনে সম্প্রতি বিভিন্ন মসজিদ ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করে যে, মুসলিমরা সেই জমিতে ইসলামিক স্থাপনা তৈরি করে যেখানে মূলত মন্দির ছিল। যদিও এ ভ্রান্ত মনগড়া দাবির পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদও এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভেঙ্গে দিয়েছিল হিন্দুরা। বাবরি মসজিদ ইস্যুতে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ হিন্দুদের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে মসজিদের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
বর্তমানে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অধীনে মুসলিমদের নির্মাণাধীন ভারতীয় সংসদ, রাজপথ এবং অগণিত অন্যান্য ভবনগুলিকে “সংস্কার” করার নামে ধ্বংস কিংবা নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। ইসলামিক স্থাপনাগুলোকে “ল্যান্ড জিহাদ” তথা ভূমি জিহাদ আখ্যা দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। তারা একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে মুসলিমদের স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো।
তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভবনগুলো ভেঙে ফেলা কিংবা কয়েক শতকের পুরনো মুসলিম ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা এবং ইতিহাসকে বিকৃত করে লেখার মাধ্যমে মুসলিম শাসনের উত্তরাধিকার পরিবর্তন করতে পারবে না বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ।
তাঁরা মনে করেন, হিন্দুত্ববাদীরা যতই চক্রান্ত করুক মুসলিম প্রজন্ম তাদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস ভুলে যাবে না। বরং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। হিন্দুত্ববাদীদের মসনদ ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। তাদেরকে লোহার শিকলের বেড়ি পরাবে ইনশাআল্লাহ।
আর এই চেতনাকে সামনে রেখে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় স্থাপনা তথা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তন্ত্র-মন্ত্রের ধোঁকায় না পড়ে মুসলিমদেরকে নববী মানহাজের অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপদেশও দিয়ে থাকেন সচেতন উলামায়ে কেরাম।
লেখক: উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
2. প্রত্নতাত্ত্বিক দেয়ালেও ছিল মসজিদের বৈশিষ্ট্য – https://tinyurl.com/2p87ufxw
ভারতজুড়ে মুসলিমদের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপনা। মুসলিম শাসনের ৬০০ বছরে মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি সভ্য, সমৃদ্ধ ও উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আর এখন সেই ইতিহাসকে বিকৃত করতে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী ₹১৩,৪৫০ কোটিরও বেশি রুপি ব্যয়ে আইকনিক সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সারাদেশে ইতিহাস পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য সরকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বর্তমান ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সরকার নানা কৌশলে ভারতীয় ইতিহাসকে তাদের আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কল্পিত মিথ্যা ধারণাগুলোকে ইতিহাস হিসেবে লিখছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ইতিহাসকে এমনভাবে পুনর্লিখন করছে যা হিন্দুদের কাল্পনিক বই পুরাণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, এবং হিন্দু শাসনের সময়কালকে মহিমান্বিত করবে।
অন্যদিকে ভারতের রুপকার মুসলিম শাসক ও শাসনকে পৈশাচিক হিসেবে তুলে ধরছে। এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলছে।
বিভিন্ন রাজ্য স্কুলের পাঠ্যক্রমের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে, বিশেষ করে গুজরাটে; এবং ইতিহাসের বইগুলো মুসলিম বিদ্বেষ, মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা দিয়ে পূর্ণ করেছে।
এই সিদ্ধান্তগুলো হিন্দুত্বের আখ্যানকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিকৃত করে ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। তারা ভারতের মুসলিম শাসকদের অত্যাচারী হিসাবে তুলে ধরছে। মুসলিম শাসকদের নামে অভিযোগ তুলছে যে, তারা মন্দির ধ্বংস করেছিল এবং তাদের অমুসলিম প্রজাদের গণহত্যা করেছিল।
বর্তমানে ভারতের অনেক স্কুলে এই পরিবর্তিত ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে। ইতিহাসের এই স্যাফরানাইজেশন তথা গেরুয়াকরণ করে হিন্দুদের মহান এবং মুসলিমদের অত্যাচারী দানব হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
তারা হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শী ভিডি সাভারকারের আদর্শকে মহান হিসেবে বর্ণনা করছে। অথচ এই ব্যক্তি কুখ্যাত অ্যাডলফ হিটলার এবং বেনিটো মুসোলিনির আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। এমনকি সে ধর্ষণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পক্ষে ওকালতি করতো।
এভাবে সাম্প্রদায়িক ইতিহাস পুনঃলিখনে ইসলামবিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করছে। ব্যাপক সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে। কারণ ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী এবং তার আদর্শিক গুর আরএসএস, বিজেপির সিনিয়র মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের সক্রিয় সমর্থনে সম্প্রতি বিভিন্ন মসজিদ ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করে যে, মুসলিমরা সেই জমিতে ইসলামিক স্থাপনা তৈরি করে যেখানে মূলত মন্দির ছিল। যদিও এ ভ্রান্ত মনগড়া দাবির পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদও এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভেঙ্গে দিয়েছিল হিন্দুরা। বাবরি মসজিদ ইস্যুতে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ হিন্দুদের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে মসজিদের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
বর্তমানে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অধীনে মুসলিমদের নির্মাণাধীন ভারতীয় সংসদ, রাজপথ এবং অগণিত অন্যান্য ভবনগুলিকে “সংস্কার” করার নামে ধ্বংস কিংবা নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। ইসলামিক স্থাপনাগুলোকে “ল্যান্ড জিহাদ” তথা ভূমি জিহাদ আখ্যা দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। তারা একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে মুসলিমদের স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো।
তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভবনগুলো ভেঙে ফেলা কিংবা কয়েক শতকের পুরনো মুসলিম ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা এবং ইতিহাসকে বিকৃত করে লেখার মাধ্যমে মুসলিম শাসনের উত্তরাধিকার পরিবর্তন করতে পারবে না বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ।
তাঁরা মনে করেন, হিন্দুত্ববাদীরা যতই চক্রান্ত করুক মুসলিম প্রজন্ম তাদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস ভুলে যাবে না। বরং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। হিন্দুত্ববাদীদের মসনদ ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। তাদেরকে লোহার শিকলের বেড়ি পরাবে ইনশাআল্লাহ।
আর এই চেতনাকে সামনে রেখে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় স্থাপনা তথা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তন্ত্র-মন্ত্রের ধোঁকায় না পড়ে মুসলিমদেরকে নববী মানহাজের অনুসরণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপদেশও দিয়ে থাকেন সচেতন উলামায়ে কেরাম।
লেখক: উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
- The Hindutva Project To Rewrite History And Destroy Historic Architecture – https://tinyurl.com/zukd4856
2. প্রত্নতাত্ত্বিক দেয়ালেও ছিল মসজিদের বৈশিষ্ট্য – https://tinyurl.com/2p87ufxw