Announcement

Collapse
No announcement yet.

অ্যামেরিকার চাপের নীতি ও হিন্দুস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ : ফ্যাক্টর বাংলাদেশ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অ্যামেরিকার চাপের নীতি ও হিন্দুস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ : ফ্যাক্টর বাংলাদেশ

    অ্যামেরিকার চাপের নীতি ও হিন্দুস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ : ফ্যাক্টর বাংলাদেশ

    বিগত ২০ বছর যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে যে যুদ্ধে তারা অন্ততপক্ষে দু’বার পরাজিত হয়েছে।
    প্রথমত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলার মাধ্যমে।
    দ্বিতীয়ত বাহ্যত দূর্বল তালেবান মুজাহিদদের হাতে অপমানিত হয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করার মাধ্যমে।

    বিষয়টি আশ্চর্যজনক মনে হলেও সত্য যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা কোন সামরিক যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারেনি। এমন কি তাদের শুরু করা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এর চলমান পেক্ষাপটের দিকে তাকালে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে, কিভাবে একের পর এক মুসলিম ভূমিতে তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছে। সোমালিয়া, ইরাক বা আফগানিস্তান- কোথাও তারা এক মূহুর্তের জন্য শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ, পারবেও না।

    মার্কিন নীতিনির্ধারকরা তাদের নাগরিকদের দ্বারা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন যে, ‘গ্লোবাল ওয়ার অন টেররিজম’ এর নামে হাজার হাজার মার্কিন জীবন আর কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যায় (তথা অপচয়) করে প্রাপ্তি কী? অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা, মহামারী প্রতিরোধে ব্যর্থতা, গণতন্ত্রের পতনমুখীতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া আমেরিকার অর্জনের খাতা একেবারেই খালি।

    কিন্তু, ২০ বছরের অবিরাম লাঞ্ছনা আর পরাজয়ের মাধ্যমে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর তা হলো, “ময়দানের সম্মুখযুদ্ধ তাদের জন্য না।” বরং, তাদের জন্য উপযোগী যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে, “এক রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে অন্য রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ করা। আর কোনো রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক অবরোধ জারির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নেওয়া।”

    তাই, বিশ্বদরবারে ক্ষয়প্রাপ্ত আধিপত্য ও ক্ষমতা পুনরায় অর্জনের জন্য মার্কিন প্রশাসন “গ্লোবাল ওয়ার অন টেররিজম” এর পরাজয় থেকে প্রাপ্ত উপলব্ধি প্রয়োগের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছে।
    আর, এই নীতি প্রয়োগের জন্য মার্কিন প্রশাসন যে অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে সেটি হলো, এশিয়া মহাদেশ। বিশেষ করে ‘দক্ষিণ এশিয়া’।

    আমেরিকা ভারতকে মিত্ররাষ্ট্র ঘোষণা করে এশীয় রাষ্ট্রগুলোকে তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে আমেরিকা। ভারতের জন্য তার স্বপ্নের অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ) লাভের জন্য আমেরিকাকে প্রয়োজন।

    অন্যদিকে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের ও সামরিক উপস্থিতির জন্য মার্কিন প্রশাসনের ভারতের সাথে সাথে বাংলাদেশেরও প্রয়োজন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিতে লক্ষ্যে মার্কিন প্রশাসন অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও ভারতের সাথে কোয়াড চুক্তি করছে। তার জন্য আমেরিকার প্রয়োজন বাংলাদেশের সম্মতি ও ভূখণ্ড (সেন্টমার্টিন ও মনপুরা দ্বীপ)।

    কিন্তু, এবিষয়ে বাংলাদেশের নির্লিপ্ত আচরণ মার্কিন প্রশাসনের জন্য অপমানজনক ও চিন্তার বিষয়। কেননা, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নজরদারি ও এশিয়ার মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলোকে আয়ত্তে রাখার জন্য এই চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, বর্তমান সরকারকে স্বৈরশাসক ঘোষণা করে এবং মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ এনে উপর্যুপরি চাপ তৈরি করে চুক্তিতে সম্মতি নিতে চাচ্ছে অ্যামেরিকা।

    যদিও অনেকেই মনে করেন, বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে আমেরিকান আগ্রাসী নীতি পরিবর্তন করে উদার গণতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করেছে। এবং এই যুক্তির পক্ষে দলিল হিসেবে আফগান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার ও ইরাক থেকে তাদের প্রস্থানের চলমান আলোচনাকে পেশ করেন। আবার অনেকেই প্রশ্ন করেন, চুক্তি সমর্থনের জন্য আমেরিকাকে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে কেন; সামরিক আগ্রাসন তো তাদের জন্য এর চেয়ে অনেক সহজ উপায়।

    কিন্তু সহজেই বোধগম্য বাস্তবতা হচ্ছে, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, জনগণের চাপ ও উদার গণতান্ত্রিক মুখোশের কারণে, আমেরিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন সামরিক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে না।

    আবার, আমেরিকার মিত্র হয়ে ভারত সরাসরি বাংলাদেশের সামরিক আগ্রাসন না চালানোর পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, আফগান বিজয়ের ফলে ভারত ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক চাপের মধ্যে রয়েছে। একদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে; অন্যদিকে চীনের সাথে আফগানিস্তানের তৈরি হওয়া নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভারতের বাণিজ্য প্রসারকে ভয়ংকরভাবে বাধাগ্রস্থ করছে।

    এমতাবস্থায়, আমেরিকার প্রক্সি হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের সামরিক আগ্রাসন হয়তো ভারতকে একটি তাৎক্ষণিক বিজয় উপহার দিতে পারবে। কিন্তু, এর ফলে ভারত দীর্ঘমেয়াদী এক যুদ্ধে অবতরণ করবে, যা ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যেমনটা ভারত কখনই চাইবে না।

    সর্বোপরি, দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দুত্ববাদী-ক্রুসেডার জোটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপের উপর। বাংলার মুসলিমদের জন্য উচিৎ হবে না, ইসলাম ও মুসলিমদের ঐতিহাসিক ও জঘন্যতম দুই শত্রুকে (ভারত ও আমেরিকা) ভূরাজনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে বাংলাদেশের তাগুতি সরকারকে ভূমিকা রাখতে দেয়া।



    লেখক : আসাদ ইরফান
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X