Announcement

Collapse
No announcement yet.

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বতি ও সরকারের লুকচুরির উদাসিনতা : দুর্ভিক্ষ কি তবে অত্যাসন্ন?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বতি ও সরকারের লুকচুরির উদাসিনতা : দুর্ভিক্ষ কি তবে অত্যাসন্ন?

    দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বতি ও সরকারের লুকচুরির উদাসিনতা : দুর্ভিক্ষ কি তবে অত্যাসন্ন?

    শেখ হাসিনার কথিত আওয়ামী সরকার। গদি টিকিয়ে রাখতে মোদীর হাতে দেশ তুলে দিয়েছেন, মোদীর পছন্দের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছেন, মোদীর ইশারাতেই নানা ইস্যুতে দেশের নীতি নির্ধারণ করছেন, আবার মোদীর ইশারাতেই এদেশের সাধারণ মুসলিমদের হাতেও মারছে ভাতেও মারছে।

    তবে আজকের ইস্যু সরকার-সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি, এবং তা নিয়ে সরকারের লুকচুরির বিলাসিতা। আর সাথে আসন্ন দুর্ভিক্ষের হাতছানি তো আছেই।

    গত তিন বছরে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে আড়াই গুন! আর হিন্দুত্ববাদের পেটোয়া আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে, মানে হাসিনার পুরো শাসনামলের হিসাব করলে সেই অংকটা আরও লাগামহীন ঠেকবে।

    আওয়ামী লীগ সরকার এই মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েছিল ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওই দিনের বাজারদরের তালিকা ও গত বৃহস্পতিবারের তালিকা ধরে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটা চালের দাম ১৫, মোটা দানার মসুর ডাল ৭৭, খোলা সয়াবিন তেল ৫৪, চিনি ৪৯ ও আটার দাম ২১ শতাংশ বেড়েছে।

    অথচ, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ; তার আগের মাস নভেম্বরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ গত জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে বা পণ্যের দাম কমেছে। খাদ্যসহ ভোগ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে বিবিএসের এই তথ্যে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। যেখানে খাদ্যপণ্য চাল, তেল, ডাল থেকে শুরু করে টিস্যু ও কাপড় কাচার সাবানের দাম পর্যন্ত বেড়েছে। সেখানে সরকারি জরিপ সংস্থা বলছে দাম কমেছে। সরকারের এ কি নির্জলা মিথ্যাচার!

    বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করার পুরনো আমলী ‘সিপিআই’ পদ্ধতিকে খুবই ত্রুটিপুর্ণ বলেছেন। সরকারি কর্তারা ‘এভ্রিডে প্রাইসিং’ পদ্ধতিতে হিসাব করে না। বরং পুরানো এবং ভুল পদ্ধতির মাধ্যমে বছর বা প্রান্তিকের সুবিধাজনক সময়ে সুবিধাজনক স্থানে পাইকারি বাজারের গিয়ে বাজারের সবচেয়ে নিন্মমান পণ্যের দাম হিসেব করে মূল্যস্ফীতি অনেক অনেক কম করে দেখায় তারা। এর বাইরে বিবিএস এর বিরুদ্ধে ব্যাক ক্যাল্কুলেশান করে সংখ্যা উপস্থাপনের নিয়মিত অভিযোগ তো আছেই।

    অথচ দেশের জাতীয় ও দৈনিক পত্রিকাগুলোর দ্রব্যমূল্য বিষয়ক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংস্থার তথ্যের আলোকে হিসেব করে গড় মূল্যস্ফীতি ২০% এর কাছাকাছি পাওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

    এখানে বলা যেতে পারে যে, আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম বেড়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ৫-৬% কিন্তু দেশে ১৫ থেকে ২০%। বাজেট ঘাটতি মেটাতে, শুল্ক ছাড় না দিয়ে উল্টা রাজস্ব আয় বাড়াতে গ্যাস বিদ্যুৎ পানি তেলের দাম আরো বাড়াতে যাচ্ছে সরকার, ফলে মূল্যস্ফীতি ২০% ছাড়ানোর সতর্কবার্তা দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞরা!

    গত কয়েক মাস আগেই সরকার জ্বালানী তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। আবার এই সরকারের আমলেই গ্যাসের দাম আড়াই গুণ ও বিদ্যুৎ’এর দাম দ্বিগুণ হওয়ার পরেও, সরকারের লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ সংস্থাগুলো আবারো এই পরিসেবাগুলোর দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

    যেহেতু গ্যাস পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা তাই জোড় দিয়ে বলছেন যে, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিশ্চিতভাবেই ২০% ছড়াতে যাচ্ছে।

    এদিকে বিগত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছেন অনেকেই, আর নিম্ন-মধ্যবিত্ত হয়েছে হত-দরিদ্র।
    ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) একটি যৌথ জরিপে সম্প্রতি জানানো হয়, দেশে করোনাকালে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।

    এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ জনজীবনকে স্থবির করে দেবে। শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দেবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি কৃষি, পরিবহন, দ্রব্যমূল্য, শিল্প উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। থমকে যায় অর্থনীতির অগ্রযাত্রা। এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা দেবে। মূল্যবৃদ্ধির নিচে চাপা পড়া জনগণের জন্য তা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেবে।

    ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে মানুষ তখন উৎপাদন ক্ষমতাও হারাবে। উৎপাদন কাজে ব্যবহার করার মতো সামান্য পুঁজিও তখন মানুষের কাছে থাকবে না। আর এর প্রথম ও প্রধান প্রভাব পরবে কৃষি উৎপাদনের উপর। গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক, যারা মূল্যবৃদ্ধির সামান্যতম সুবিধা তো পায়-ই না, তার উপর সুদি মহাজনের ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে ভিটে-মাটি আর সহায়-সম্বল হারায়। এই সুদি মহাজন আর পুঁজিপতিরা আর যাই পারুক, মাঠে গিয়ে তো আর চাষাবাদ বা উৎপাদন করতে পারবে না, এই কাজ কৃষককেই করতে হবে।

    কৃষক আর শ্রমজীবীদের হতদরিদ্র বানিয়ে তাই সরকার নিজেকেও পঙ্গু করছে। কৃষিদ্রব্যের দেশীয় উৎপাদন কমে গেলে দেশে এক মহাদুর্ভিক্ষের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়।

    এছাড়াও, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার এই প্রভাব আমাদের দেশের মুদ্রাবাজার ও বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ডলার ও বিদেশী মুদ্রার বিপরীতে টাকার দামে আরও পতন আসতে যাচ্ছে, যার আলামত আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি। এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে এদেশের সরকারি-বেসরকারি আমদানিকারকরা ক্রয়ক্ষমতা হারাবে আর আমদানিও কমে যাবে। আর আমদানি-নির্ভর এই দেশের আমদানির পরিমাণ কমে গেলে দেশে দুর্ভিক্ষ লাগা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

    মূল্যস্ফীতি কমানর কোন ফিকির ও পদক্ষেপ না নিয়ে দালাল হাসিনা সরকার এ নিয়ে তথ্য সন্ত্রাস করছে, আর জনগণকে ধীরে ধীরে নিয়ে ফেলছে প্রবল আর্থিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের গহ্বরে।

    ঘুনে ধরা অর্থনৈতিক কাঠামো আর মেকির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এদেশকে এদেশের মুসলিম জনসাধারণকে শুধু আর্থিক দুরাবস্থা, অন্যায়-জুলুম, বিদেশীদের দালালি আর দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষ ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি।

    ভঙ্গুর এসব কাঠামো ও তন্ত্র-মন্ত্রের শিকল ভেঙ্গে এদেশের মুসলিম সাধারণকে তাই আল্লাহ্‌ মনোনীত হক্ক দ্বীন – দ্বীন আল ইসলামের ছায়াতলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন হক্কপন্থী উলামাগণ। আর সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামি পদ্ধতির বাস্তবায়ন ব্যতীত এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির ভিন্ন কোন উপায় নেই বলেও মত ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।


    লিখেছেন : আব্দুল্লাহ বিন নজর



    তথ্যসূত্র :
    ১। গ্যাসের দাম আড়াই গুণ, বিদ্যুৎ দ্বিগুণ তবু বাড়ানোর চেষ্টা

    ২। গরিব সংকটে, মধ্যবিত্ত দুর্দশায়

    ৩। দাম বাড়ছে বাজারে, রাজস্ব দ্বিগুণ সরকারের



    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    মাশা আল্লাহ সময় উপযোগি পোষ্ট

    Comment


    • #3
      সুন্দর একটি প্রতিবেদন।
      পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

      Comment

      Working...
      X