তারা চায় আপনি ফিলিস্তিনকে ভুলে যান
গতবছর আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পবিত্র হজ্জ পালন করার তৌফিক দিয়েছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। হজ্জ শেষে আমরা জর্ডান গিয়েছিলাম। ফিলিস্তিন যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা জর্ডান যাই।
সেখান থেকে বাসে করে আমরা সামনে যেতে শুরু করি। আপনি সিমান্তের কাছাকাছি গেলেই ইসরাইলের পতাকা দেখতে পাবেন, অনেক উঁচুতে উড়ছে।
এটা দেখেই আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে। যখন আপনি সেই জায়গায় প্রবেশ করবেন তখন, এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পাবেন। কিছুটা ভয়, কিছুটা ক্ষোভ, এবং কিছুটা হতাশা।
বর্ডার অতিক্রম করার সময়, যেহেতু আমি অস্ট্রেলিয়ান, আমার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট লাগবে। ওয়াল্লাহি, যখন আপনি প্রথমবারের মতো ইসরাইলিদের দেখবেন হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে, মনে হবে শরীরে যেন বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
তাদের কাছে গেলে তারা আপনাকে স্বাগত জানাবে না। নিজেকে একজন নির্বাসিত ব্যক্তি ভাবতে আপনাকে বাধ্য করবে। বর্ডারে পৌঁছালে তারা আপনাকে বাস থেকে নামিয়ে দিবে এবং ভেতরে গিয়ে এক জায়গায় আপনাকে বসে থাকতে হবে ১ঘন্টা, ২ঘন্টা, ৩ঘন্টা, ৪ঘন্টা, ৫ঘন্টা, ৬ঘন্টা, ৭ঘন্টা,…. এমনকি ৯ ঘন্টা। এত সময় পরেও আপনাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না। আপনি ফিলিস্তিনের বেড়াতে যাওয়া অস্ট্রলিয়ান নাগরিক। অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা আপনাকে বসিয়ে রাখা হব।
সেখানে থাকার সময় আপনি দেখবেন একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক বয়স্ক লোক, যাকে আমরা চাচা বা হাজী সাহেব বলে সম্বোধন করি। ৭০-৭৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মানুষ। ১৮-১৯ বছরের ইসরাইলি নারী বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলছে। এমনভাবে অর্ডার দিচ্ছে, যেন মনে হয় বৃদ্ধ লোকটি কোন জন্তু জানোয়ার, মানুষই নয়। তার কোন মূল্যই নেই। সেই নারী কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে বৃদ্ধ ফিলিস্তিনি লোকটিকে অর্ডার দিচ্ছে। তখন আপনি কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন। আর সেখানে বসে দাঁতে দাঁত চেপে আপনাকে এগুলো সহ্য করতে হবে।
এই লোকটি ফিলিস্তানের অধিবাসী। এই ফিলিস্তিনি বৃদ্ধটির সেখানে সম্মান পাওয়ার কথা। সেখানে ১৮ বছরের এক মেয়ে তাকে অর্ডার দিচ্ছে।
যাহোক, সেখানে বসে থাকার পর অবশেষে আপনাকে ডাকা হবে। এরপর একজন তরুনী আসবে সেখানে নারীদের উপস্থিতি কাকতালীয় বিষয় নয়। সেই তরুণী সেনা আপনাকে ডাকলে তাকে অনুসরণ করে অন্য রুমে গিয়ে বসে থাকতে হবে। সে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কে? কেন ফিলিস্তিনে এসেছ? দুঃখিত তারা এটিকে ইসরাইল বলে। তোমার এখানে কী কাজ? হজ্জ শেষে বাড়ি না গিয়ে এখানে এলে কেন? প্রশ্ন করতেই থাকবে আধাঘন্টা। প্রশ্ন করে চলে যাবে। ২-৩ ঘণ্টা বসে থাকার পর ফিরে এসে আবার একই প্রশ্ন করবে।
এরপর আপনাকে আরেক জায়গায় পাঠাবে। আরো ১২ ঘন্টা বসে থাকার পর অন্য একজন এসে আপনাকে একই প্রশ্ন করবে। এভাবে চলতেই থাকবে। একসময় ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার আর ইচ্ছা থাকবেনা। তখন তারা আপনাকে ফিলিস্তিনি প্রবেশের অনুমতি দিবে।
আপনি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করলেই ইসরাইলের শোষণ টের পাবেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মাইলের পর মাইল কংক্রিটের দেয়াল দেখতে পাবেন। এই উঁচু উঁচু দেয়ালগুলো ফিলিস্তিনিদের আলাদা করেছে। শহরের ভেতরে দেয়ালগুলো এমনভাবে গ্রাফিটি অঙ্কন করা যাতে আপনার সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়। এরপর যখন আপনি মসজিদে আকসার প্রবেশ করতে যাবেন, দেখবেন ইসরাইলি সেনারা এর চারদিক ঘিরে রেখেছে। তাদের কাছে আপনার পাসপোর্ট আইডি সব দেখাতে হবে। ইসরাইলি সেনার হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রয়েছেন। তাকে বলতে হবে কেন আমি আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করতে চাই। যাহোক, এসবকিছুর পর আপনি মসজিদে প্রবেশ করবেন।
ভেতরে গিয়ে মনে হবে মসজিদের দেয়ালগুলো যেন কাঁদছে। সেখানে কোনো যুবক নেই, কারণ সেখানে তাদের প্রবেশাধিকার নেই। সেখানে আপনি গ্লাসের তৈরি একটি স্ট্যান্ড দেখতে পাবেন। যার ওপর বোমা, গোলাবারুদ ইত্যাদি রাখা আছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে এই মসজিদে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এগুলোর গায়ে লিখা ‘Made in USA’ (আমেরিকার তৈরি)।
যাইহোক, এশার নামাজ শেষে হয়তো ভাববেন যে, আরও কিছু সময় আল্লাহর ইবাদত করি। কিন্তু এটি অসম্ভব। কারণ তারা মসজিদে তালা লাগিয়ে দেবে রাত ০৯:৩০ এর মধ্যেই। সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ইসরাইলিরা সবশেষে মসজিদ পরিদর্শন করবে। তারা কী মসজিদকে সম্মান করে খালি পায়ে প্রবেশ করবে। না, মোটেই নয়। আর সবকিছু আপনার চোখের সামনে ঘটলেও আপনি কিছুই বলতে পারবেন না।
ফিলিস্তিনিদের কাউকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন মুসলিমরা কোথায়? এখানে এত কম সংখ্যক মুসলিম কেন? সে বলবে, মসজিদের দরজা পর্যন্ত আসতে হলে আমাকে পাঁচবার আইডি ও পাসপোর্ট দেখাতে হয়। একজন স্থানীয় লোককে প্রতিবার মসজিদে প্রবেশের পূর্বে আইডি ও পাসপোর্ট পাঁচবার করে প্রদর্শন করতে হয়। আর যদি সে পাসপোর্ট আনতে ভুলে যায়। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আর তার ক্ষতি হতে পারে।
মনে করুন, অস্ট্রেলিয়াতে একটি শহর থেকে অস্ট্রেলিয়ার অন্য একটি এলাকায় ৭ কিলোমিটার যেতে আপনাকে দুইবার থামতে হয়। স্থানীয়দের কথা বলছি। নিজের দেশে ৭ কিলোমিটার যেতে দুইবার গাড়ি থেকে নেমে দুইবার আইডি কার্ড দেখাতে হয়। গাড়ি থেকে নামতে হয় এরপর গাড়িটি সার্চ করা হয়। প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর কাউকে যদি দিনে দুই থেকে চার বার সেই পথে চলতে হয় তখন! অথচ প্রতিবারই একই লোক সার্চ করছে, কিছুক্ষন পূর্বে তাদের দেখা হয়েছে; এরপর লোকটিকে তার স্ত্রী সন্তানসহ গাড়ি থেকে নামতে হচ্ছে, এবং তাদেরকে সার্চ করা হচ্ছে- তখন কেমন লাগবে? মারাত্মক বাজে ব্যাপার!
তো আমরা হাইওয়ে দিয়ে চলতে চলতে ফিলিস্তিনের পবিত্রভূমি দেখছিলাম। হঠাৎ এমন অদ্ভুত জিনিস দেখলাম, যেগুলো সেই পরিবেশে একদমই থাকার কথা নয়। দেখলাম মাঝে মাঝে জমিতে কন্টেইনার পড়ে আছে।
জানেন সেগুলো কেন রয়েছে?
ফিলিস্তিনির জমিতে কোন এক ইসরাইলি কন্টেইনার রেখে দিয়েছে। সে আর কিছু করে না। শুধু বসে থাকে, কয়েক মাস বা বছর খানিক পর একসময় আপনি এটি দেখে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। যখন ফিলিস্তিনিরা আর কোনো প্রশ্ন করবেনা তখনই ইসরাইলিরস সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে। সে জমির মালিক হয়ে গেল। সর্বত্র এই ছোট ছোট কন্টেইনার দেখতে পাবেন।
আপনাদের সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি আরও।
যখন আমরা মসজিদ আল খলিলে প্রবেশ করি, সেখানে ইব্রাহিম আলাইহিওয়াসাল্লাম কে কবরস্থ করা হয়ছে।
আমি একটু বাড়িয়ে বলছিনা। ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে পারেন মসজিদ আল খলিল এক সময় মুসলিমদের অধিকারে ছিল। ১৯৯৪ সালে মুসলিমরা ফজর নামাজ পড়ছিল। এক ইহুদি ডাক্তার সেখানে গিয়ে সেজদারত মুসলিমদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ৩০ জনকে হত্যা ও ১৫০ জনকে আহত করে।
এরপর কী হয়েছে জানেন? আমি বলছি। ইসরাইল মসজিদটি বন্ধ করে দিয়ে তদন্ত শুরু করে। জানেন সেই তদন্ত শেষে তারা কী করেছিল? তারা মসজিদের অর্ধেক দখল করে ইহুদি উপাসনালয় বানায়। আর সেই অমানুষ (মুসলিমদের হত্যাকারী ইহুদি ডাক্তার) তাকে কি বলল জানিনা। তার কবরটি মন্দিরে পরিণত হয়। কট্টর ইহুদিরা সেখানে গিয়ে তার কবরের কাছে প্রার্থনা করে। তাকে হিরো মনে করে।
ওয়াল্লাহি, আপনি ফিলিস্তিনে গিয়ে বুঝতে পারবেন যে টিভিতে যা দেখেন তা সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর কসম সেখানে অত্যাচার একজন মুসলিমের চোখ দিয়ে আপনি দেখতে পাবেন। তাদের চোখ দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, তারা অন্য মুসলিম ভাইদের আশা করে আছে।
আমারও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখানে। যেগুলো আপনাদের শেয়ার করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইহুদিরা চায়, আপনি ফিলিস্তিনকে ভুলে যান। তারা আপনাকে চায় না, আপনার টাকা চায় না, ট্যুরিজম চায় না, কিছুই চায় না। তারা শুধু চায়- আপনি এবং ফিলিস্তিন যেন ধ্বংস হয়ে যায়।
যখন সে জায়গার নাম মুসলিমদের হৃদয় থেকে মুছে যাবে, তখন তারা সার্থক।
কখনো কী নিজেকে প্রশ্ন করেছেন? কেন আমরা ফিলিস্তিন সম্পর্কে এত কম জানি?
আল কুদুস মসজিদের ইমামের একটি অনুরোধ আপনাদের কাছে পেশ করে বক্তব্য শেষ করছি। তিনি আমাকে বলেন, দয়া করে ফিরে যান। আর মুসলিম যুবকদের বলুন, তারা যেন এখানে আসে। তাহলে তারা বুঝতে পারবে এখনে যা ঘটছে তা পুরোপুরি বাস্তব।
ইংরেজি খুৎবা থেকে অনূদিত – শাইখ মুহাম্মাদ হুবলস, অস্ট্রেলিয়ান দাঈ
অনুবাদক : ইউসুফ আল-হাসান
গতবছর আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে পবিত্র হজ্জ পালন করার তৌফিক দিয়েছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। হজ্জ শেষে আমরা জর্ডান গিয়েছিলাম। ফিলিস্তিন যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা জর্ডান যাই।
সেখান থেকে বাসে করে আমরা সামনে যেতে শুরু করি। আপনি সিমান্তের কাছাকাছি গেলেই ইসরাইলের পতাকা দেখতে পাবেন, অনেক উঁচুতে উড়ছে।
এটা দেখেই আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাবে। যখন আপনি সেই জায়গায় প্রবেশ করবেন তখন, এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পাবেন। কিছুটা ভয়, কিছুটা ক্ষোভ, এবং কিছুটা হতাশা।
বর্ডার অতিক্রম করার সময়, যেহেতু আমি অস্ট্রেলিয়ান, আমার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট লাগবে। ওয়াল্লাহি, যখন আপনি প্রথমবারের মতো ইসরাইলিদের দেখবেন হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে, মনে হবে শরীরে যেন বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
তাদের কাছে গেলে তারা আপনাকে স্বাগত জানাবে না। নিজেকে একজন নির্বাসিত ব্যক্তি ভাবতে আপনাকে বাধ্য করবে। বর্ডারে পৌঁছালে তারা আপনাকে বাস থেকে নামিয়ে দিবে এবং ভেতরে গিয়ে এক জায়গায় আপনাকে বসে থাকতে হবে ১ঘন্টা, ২ঘন্টা, ৩ঘন্টা, ৪ঘন্টা, ৫ঘন্টা, ৬ঘন্টা, ৭ঘন্টা,…. এমনকি ৯ ঘন্টা। এত সময় পরেও আপনাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না। আপনি ফিলিস্তিনের বেড়াতে যাওয়া অস্ট্রলিয়ান নাগরিক। অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা আপনাকে বসিয়ে রাখা হব।
সেখানে থাকার সময় আপনি দেখবেন একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক বয়স্ক লোক, যাকে আমরা চাচা বা হাজী সাহেব বলে সম্বোধন করি। ৭০-৭৫ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মানুষ। ১৮-১৯ বছরের ইসরাইলি নারী বৃদ্ধ লোকটির সাথে কথা বলছে। এমনভাবে অর্ডার দিচ্ছে, যেন মনে হয় বৃদ্ধ লোকটি কোন জন্তু জানোয়ার, মানুষই নয়। তার কোন মূল্যই নেই। সেই নারী কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে বৃদ্ধ ফিলিস্তিনি লোকটিকে অর্ডার দিচ্ছে। তখন আপনি কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন। আর সেখানে বসে দাঁতে দাঁত চেপে আপনাকে এগুলো সহ্য করতে হবে।
এই লোকটি ফিলিস্তানের অধিবাসী। এই ফিলিস্তিনি বৃদ্ধটির সেখানে সম্মান পাওয়ার কথা। সেখানে ১৮ বছরের এক মেয়ে তাকে অর্ডার দিচ্ছে।
যাহোক, সেখানে বসে থাকার পর অবশেষে আপনাকে ডাকা হবে। এরপর একজন তরুনী আসবে সেখানে নারীদের উপস্থিতি কাকতালীয় বিষয় নয়। সেই তরুণী সেনা আপনাকে ডাকলে তাকে অনুসরণ করে অন্য রুমে গিয়ে বসে থাকতে হবে। সে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কে? কেন ফিলিস্তিনে এসেছ? দুঃখিত তারা এটিকে ইসরাইল বলে। তোমার এখানে কী কাজ? হজ্জ শেষে বাড়ি না গিয়ে এখানে এলে কেন? প্রশ্ন করতেই থাকবে আধাঘন্টা। প্রশ্ন করে চলে যাবে। ২-৩ ঘণ্টা বসে থাকার পর ফিরে এসে আবার একই প্রশ্ন করবে।
এরপর আপনাকে আরেক জায়গায় পাঠাবে। আরো ১২ ঘন্টা বসে থাকার পর অন্য একজন এসে আপনাকে একই প্রশ্ন করবে। এভাবে চলতেই থাকবে। একসময় ফিলিস্তিনে প্রবেশ করার আর ইচ্ছা থাকবেনা। তখন তারা আপনাকে ফিলিস্তিনি প্রবেশের অনুমতি দিবে।
আপনি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করলেই ইসরাইলের শোষণ টের পাবেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মাইলের পর মাইল কংক্রিটের দেয়াল দেখতে পাবেন। এই উঁচু উঁচু দেয়ালগুলো ফিলিস্তিনিদের আলাদা করেছে। শহরের ভেতরে দেয়ালগুলো এমনভাবে গ্রাফিটি অঙ্কন করা যাতে আপনার সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়। এরপর যখন আপনি মসজিদে আকসার প্রবেশ করতে যাবেন, দেখবেন ইসরাইলি সেনারা এর চারদিক ঘিরে রেখেছে। তাদের কাছে আপনার পাসপোর্ট আইডি সব দেখাতে হবে। ইসরাইলি সেনার হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রয়েছেন। তাকে বলতে হবে কেন আমি আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করতে চাই। যাহোক, এসবকিছুর পর আপনি মসজিদে প্রবেশ করবেন।
ভেতরে গিয়ে মনে হবে মসজিদের দেয়ালগুলো যেন কাঁদছে। সেখানে কোনো যুবক নেই, কারণ সেখানে তাদের প্রবেশাধিকার নেই। সেখানে আপনি গ্লাসের তৈরি একটি স্ট্যান্ড দেখতে পাবেন। যার ওপর বোমা, গোলাবারুদ ইত্যাদি রাখা আছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে এই মসজিদে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এগুলোর গায়ে লিখা ‘Made in USA’ (আমেরিকার তৈরি)।
যাইহোক, এশার নামাজ শেষে হয়তো ভাববেন যে, আরও কিছু সময় আল্লাহর ইবাদত করি। কিন্তু এটি অসম্ভব। কারণ তারা মসজিদে তালা লাগিয়ে দেবে রাত ০৯:৩০ এর মধ্যেই। সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ইসরাইলিরা সবশেষে মসজিদ পরিদর্শন করবে। তারা কী মসজিদকে সম্মান করে খালি পায়ে প্রবেশ করবে। না, মোটেই নয়। আর সবকিছু আপনার চোখের সামনে ঘটলেও আপনি কিছুই বলতে পারবেন না।
ফিলিস্তিনিদের কাউকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন মুসলিমরা কোথায়? এখানে এত কম সংখ্যক মুসলিম কেন? সে বলবে, মসজিদের দরজা পর্যন্ত আসতে হলে আমাকে পাঁচবার আইডি ও পাসপোর্ট দেখাতে হয়। একজন স্থানীয় লোককে প্রতিবার মসজিদে প্রবেশের পূর্বে আইডি ও পাসপোর্ট পাঁচবার করে প্রদর্শন করতে হয়। আর যদি সে পাসপোর্ট আনতে ভুলে যায়। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আর তার ক্ষতি হতে পারে।
মনে করুন, অস্ট্রেলিয়াতে একটি শহর থেকে অস্ট্রেলিয়ার অন্য একটি এলাকায় ৭ কিলোমিটার যেতে আপনাকে দুইবার থামতে হয়। স্থানীয়দের কথা বলছি। নিজের দেশে ৭ কিলোমিটার যেতে দুইবার গাড়ি থেকে নেমে দুইবার আইডি কার্ড দেখাতে হয়। গাড়ি থেকে নামতে হয় এরপর গাড়িটি সার্চ করা হয়। প্রতিনিয়ত চলতে থাকে আর কাউকে যদি দিনে দুই থেকে চার বার সেই পথে চলতে হয় তখন! অথচ প্রতিবারই একই লোক সার্চ করছে, কিছুক্ষন পূর্বে তাদের দেখা হয়েছে; এরপর লোকটিকে তার স্ত্রী সন্তানসহ গাড়ি থেকে নামতে হচ্ছে, এবং তাদেরকে সার্চ করা হচ্ছে- তখন কেমন লাগবে? মারাত্মক বাজে ব্যাপার!
তো আমরা হাইওয়ে দিয়ে চলতে চলতে ফিলিস্তিনের পবিত্রভূমি দেখছিলাম। হঠাৎ এমন অদ্ভুত জিনিস দেখলাম, যেগুলো সেই পরিবেশে একদমই থাকার কথা নয়। দেখলাম মাঝে মাঝে জমিতে কন্টেইনার পড়ে আছে।
জানেন সেগুলো কেন রয়েছে?
ফিলিস্তিনির জমিতে কোন এক ইসরাইলি কন্টেইনার রেখে দিয়েছে। সে আর কিছু করে না। শুধু বসে থাকে, কয়েক মাস বা বছর খানিক পর একসময় আপনি এটি দেখে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। যখন ফিলিস্তিনিরা আর কোনো প্রশ্ন করবেনা তখনই ইসরাইলিরস সেখানে বাড়ি নির্মাণ করে। সে জমির মালিক হয়ে গেল। সর্বত্র এই ছোট ছোট কন্টেইনার দেখতে পাবেন।
আপনাদের সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি আরও।
যখন আমরা মসজিদ আল খলিলে প্রবেশ করি, সেখানে ইব্রাহিম আলাইহিওয়াসাল্লাম কে কবরস্থ করা হয়ছে।
আমি একটু বাড়িয়ে বলছিনা। ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে পারেন মসজিদ আল খলিল এক সময় মুসলিমদের অধিকারে ছিল। ১৯৯৪ সালে মুসলিমরা ফজর নামাজ পড়ছিল। এক ইহুদি ডাক্তার সেখানে গিয়ে সেজদারত মুসলিমদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ৩০ জনকে হত্যা ও ১৫০ জনকে আহত করে।
এরপর কী হয়েছে জানেন? আমি বলছি। ইসরাইল মসজিদটি বন্ধ করে দিয়ে তদন্ত শুরু করে। জানেন সেই তদন্ত শেষে তারা কী করেছিল? তারা মসজিদের অর্ধেক দখল করে ইহুদি উপাসনালয় বানায়। আর সেই অমানুষ (মুসলিমদের হত্যাকারী ইহুদি ডাক্তার) তাকে কি বলল জানিনা। তার কবরটি মন্দিরে পরিণত হয়। কট্টর ইহুদিরা সেখানে গিয়ে তার কবরের কাছে প্রার্থনা করে। তাকে হিরো মনে করে।
ওয়াল্লাহি, আপনি ফিলিস্তিনে গিয়ে বুঝতে পারবেন যে টিভিতে যা দেখেন তা সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহর কসম সেখানে অত্যাচার একজন মুসলিমের চোখ দিয়ে আপনি দেখতে পাবেন। তাদের চোখ দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, তারা অন্য মুসলিম ভাইদের আশা করে আছে।
আমারও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখানে। যেগুলো আপনাদের শেয়ার করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো ইহুদিরা চায়, আপনি ফিলিস্তিনকে ভুলে যান। তারা আপনাকে চায় না, আপনার টাকা চায় না, ট্যুরিজম চায় না, কিছুই চায় না। তারা শুধু চায়- আপনি এবং ফিলিস্তিন যেন ধ্বংস হয়ে যায়।
যখন সে জায়গার নাম মুসলিমদের হৃদয় থেকে মুছে যাবে, তখন তারা সার্থক।
কখনো কী নিজেকে প্রশ্ন করেছেন? কেন আমরা ফিলিস্তিন সম্পর্কে এত কম জানি?
আল কুদুস মসজিদের ইমামের একটি অনুরোধ আপনাদের কাছে পেশ করে বক্তব্য শেষ করছি। তিনি আমাকে বলেন, দয়া করে ফিরে যান। আর মুসলিম যুবকদের বলুন, তারা যেন এখানে আসে। তাহলে তারা বুঝতে পারবে এখনে যা ঘটছে তা পুরোপুরি বাস্তব।
ইংরেজি খুৎবা থেকে অনূদিত – শাইখ মুহাম্মাদ হুবলস, অস্ট্রেলিয়ান দাঈ
অনুবাদক : ইউসুফ আল-হাসান
Comment