দিল্লিতে ১৬টি মসজিদে জুমার নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ
গত শুক্রবার ১৮ই মার্চ মুসলমানদের জন্য একটি বরকতময় দিন ছিল। কারণ দিনটি ছিল জুমা,ও শব-ই-বরাত। সাপ্তাহিক জামাতে জুমার নামাজের জন্য স্থানীয়ভাবে পঞ্চশীল এনক্লেভ পুরানী মসজিদ নামে পরিচিত লাল গুম্বাদে আগত মুসলমানদের দিল্লি হিন্দুত্ববাদী পুলিশ অফিসাররা নামাজ পড়তে বাধা দেয়।
৫০০ বছরের পুরনো মসজিদটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এর অধীনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আখ্যায়িত করেছে।
লাল গুম্বাদ মসজিদের ইমাম ৫০ বছর বয়সী নিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমি ১৯৮০ সাল থেকে এখানে বসবাস করছি এবং ২০০০ সাল থেকে এই মসজিদে ইমামতি শুরু করেছি। এরকম কিছু আগে কখনো ঘটেনি। গত চল্লিশ বছরে প্রথমবারের মতো জুমার নামাজ বন্ধ করা হয়েছে,” এ বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ এর জন্য কোনো কারণ জানায়নি।
“আমি ভেবেছিলাম যে হিন্দুদের হোলির কারণেই হয়তো তারা এমনটা করছে। আমি তাদের বলেছি যে, এখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতি পাঁচ বছর বা তার পরে হোলি এবং জুমা একই দিনে পড়ে, তবে এর আগে কখনও জুমা বন্ধ করা হয়নি। তবুও তারা আমার কোন কথাই শোনেনি।”
লাল গুম্বাদ মসজিদ থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে মাদরাসা জিনাতুল কুরআনের ১৩ বছর বয়সী এক ছাত্র বলেন, “আমরা নামাজ পড়তে এসেছি কিন্তু পুলিশ আমাদের মসজিদে ঢুকতে দেয়নি। তারা আমাদের অন্য কোথাও যেতে বলেছে।”
পঞ্চশীল এনক্লেভের বাসিন্দা দানিশ জানিয়েছেন, একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং আরও ৪-৫ জন হিন্দুত্ববাদী পুলিশ কর্মকর্তা মসজিদের গেট ধরে রেখেছে। তারা এসে নামাজীদের (যারা নামাজ পড়ে) বলেছিল যে, তারা নির্দেশ দিয়েছে যে মসজিদে জুমার নামাজ হবে না।
দানিশ আরো জানিয়েছেন “আমি ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নামাজের জন্য আসতাম। সেদিন এখানে নামায না পড়তে বলার পর কোথাও জুমার নামাজ পড়ার জায়গা পেলাম না।”
ইমাম নিয়াজ আহমেদের মতে, পুলিশ তাদের ১৮ মার্চ জুমার নামাজ অন্য জায়গায় পড়তে বলে। তিনি অভিযোগ করেন যে, মসজিদে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার কারণ জানিয়ে পুলিশ তাকে কোন লিখিত আদেশও দেখায়নি। আহমদ সাহেব মৌখিকভাবে কারণ জানতে চাইলেও পুলিশ কোন উত্তর দেয়নি।
এদিকে, হাউজ খাস এলাকার মসজিদ যা নিলি মসজিদ নামে পরিচিত, সেখানেও ১৮ মার্চ জুমার নামাজ পড়ার জন্য পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
নিলি মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ খালিদ বলেছেন, এটি নজিরবিহীন ঘটনা। “আমি পুলিশ অফিসারকে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করি। সে আমাকে বলে যে ১৬টি মসজিদ রয়েছে যেখানে জুমার নামাজের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমি তখন তার কাছে তালিকা এবং আদেশের অনুলিপি চেয়েছিলাম। কিন্তু সে তা দিতে অস্বীকার করে।
মোহাম্মদ খালিদ মনে করেন, হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন গুরগাঁওতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করছে। এজন্যই তারা শুক্রবারের জুমা নামাযে বাধা দিচ্ছে। তিনি জানান, নিলি মসজিদ থেকে প্রায় ৯০০ মিটার দূরে মোহাম্মদী মসজিদের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা নাশুদ্দিন মাহমুদ তুঘলকের শাসনামলে মাল্লু খান কর্তৃক নির্মিত চার মিনার মসজিদ সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়। উভয় মসজিদেই এখন হিন্দুত্ববাদীরা নামাজ নিষিদ্ধ করেছে।
এই এলাকার বসবাসরত যে সকল মুসলমান মসজিদে নামাজ পড়েন, তারা সেখানে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে খুবই অসন্তুষ্ট। আর সামনে আরো বড় কিছু হওয়ার আতঙ্কে আছেন তারা।
এআইএমআইএম দিল্লি রাজ্যের সভাপতি কালিমুল হাফিজ বলেছেন, “মুসলমানদের জুমার জামাতে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া কেবল আমাদের মৌলিক অধিকারের উপর আক্রমণ নয় বরং স্পষ্ট নিপীড়ন।” তিনি আরো বলেছেন, “দিল্লির ১৬টি মসজিদে জুমার নামাজ বন্ধ করার নির্দেশ কে দিয়েছে, তার জবাব দিল্লি পুলিশকে দিতে হবে। এটা কি অমিত শাহ নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল।”
হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের ধর্মীয় বিধি বিধান পালনে এখন প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করছে। কিছুদিন আগেই গুরগাওয়ে জুমার নামাযে হিন্দুরা বাধা দিয়েছিল। পরে এটা নিয়ে আদালতে গেলে হিন্দুত্ববাদী আলালত হিন্দুদের পক্ষেই রায় দেয়। এমনিভাবে হিজাব ইস্যুকে আলালতের মাধ্যমে নিষেধাধাজ্ঞা জারি করিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। অন্যায়ভাবে একেরপর এক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে দেখলেও, মুসলিমদের যেন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ তারা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতা আর নিজেদের মাঝে মতনৈক্য করেই দুর্বল হয়ে গেছে। তাই বিচক্ষণ আলেমগণ দুনিয়ার মোহ ছেড়ে মুসলিমদেরকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা শক্তি অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র:
———
1. Muslims allege Delhi Police stopped Friday prayer in 16 mosques
গত শুক্রবার ১৮ই মার্চ মুসলমানদের জন্য একটি বরকতময় দিন ছিল। কারণ দিনটি ছিল জুমা,ও শব-ই-বরাত। সাপ্তাহিক জামাতে জুমার নামাজের জন্য স্থানীয়ভাবে পঞ্চশীল এনক্লেভ পুরানী মসজিদ নামে পরিচিত লাল গুম্বাদে আগত মুসলমানদের দিল্লি হিন্দুত্ববাদী পুলিশ অফিসাররা নামাজ পড়তে বাধা দেয়।
৫০০ বছরের পুরনো মসজিদটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এর অধীনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আখ্যায়িত করেছে।
লাল গুম্বাদ মসজিদের ইমাম ৫০ বছর বয়সী নিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমি ১৯৮০ সাল থেকে এখানে বসবাস করছি এবং ২০০০ সাল থেকে এই মসজিদে ইমামতি শুরু করেছি। এরকম কিছু আগে কখনো ঘটেনি। গত চল্লিশ বছরে প্রথমবারের মতো জুমার নামাজ বন্ধ করা হয়েছে,” এ বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ এর জন্য কোনো কারণ জানায়নি।
“আমি ভেবেছিলাম যে হিন্দুদের হোলির কারণেই হয়তো তারা এমনটা করছে। আমি তাদের বলেছি যে, এখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতি পাঁচ বছর বা তার পরে হোলি এবং জুমা একই দিনে পড়ে, তবে এর আগে কখনও জুমা বন্ধ করা হয়নি। তবুও তারা আমার কোন কথাই শোনেনি।”
লাল গুম্বাদ মসজিদ থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে মাদরাসা জিনাতুল কুরআনের ১৩ বছর বয়সী এক ছাত্র বলেন, “আমরা নামাজ পড়তে এসেছি কিন্তু পুলিশ আমাদের মসজিদে ঢুকতে দেয়নি। তারা আমাদের অন্য কোথাও যেতে বলেছে।”
পঞ্চশীল এনক্লেভের বাসিন্দা দানিশ জানিয়েছেন, একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং আরও ৪-৫ জন হিন্দুত্ববাদী পুলিশ কর্মকর্তা মসজিদের গেট ধরে রেখেছে। তারা এসে নামাজীদের (যারা নামাজ পড়ে) বলেছিল যে, তারা নির্দেশ দিয়েছে যে মসজিদে জুমার নামাজ হবে না।
দানিশ আরো জানিয়েছেন “আমি ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নামাজের জন্য আসতাম। সেদিন এখানে নামায না পড়তে বলার পর কোথাও জুমার নামাজ পড়ার জায়গা পেলাম না।”
ইমাম নিয়াজ আহমেদের মতে, পুলিশ তাদের ১৮ মার্চ জুমার নামাজ অন্য জায়গায় পড়তে বলে। তিনি অভিযোগ করেন যে, মসজিদে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার কারণ জানিয়ে পুলিশ তাকে কোন লিখিত আদেশও দেখায়নি। আহমদ সাহেব মৌখিকভাবে কারণ জানতে চাইলেও পুলিশ কোন উত্তর দেয়নি।
এদিকে, হাউজ খাস এলাকার মসজিদ যা নিলি মসজিদ নামে পরিচিত, সেখানেও ১৮ মার্চ জুমার নামাজ পড়ার জন্য পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
নিলি মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ খালিদ বলেছেন, এটি নজিরবিহীন ঘটনা। “আমি পুলিশ অফিসারকে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করি। সে আমাকে বলে যে ১৬টি মসজিদ রয়েছে যেখানে জুমার নামাজের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমি তখন তার কাছে তালিকা এবং আদেশের অনুলিপি চেয়েছিলাম। কিন্তু সে তা দিতে অস্বীকার করে।
মোহাম্মদ খালিদ মনে করেন, হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন গুরগাঁওতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করছে। এজন্যই তারা শুক্রবারের জুমা নামাযে বাধা দিচ্ছে। তিনি জানান, নিলি মসজিদ থেকে প্রায় ৯০০ মিটার দূরে মোহাম্মদী মসজিদের অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা নাশুদ্দিন মাহমুদ তুঘলকের শাসনামলে মাল্লু খান কর্তৃক নির্মিত চার মিনার মসজিদ সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়। উভয় মসজিদেই এখন হিন্দুত্ববাদীরা নামাজ নিষিদ্ধ করেছে।
এই এলাকার বসবাসরত যে সকল মুসলমান মসজিদে নামাজ পড়েন, তারা সেখানে জুমার নামাজের অনুমতি না দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে খুবই অসন্তুষ্ট। আর সামনে আরো বড় কিছু হওয়ার আতঙ্কে আছেন তারা।
এআইএমআইএম দিল্লি রাজ্যের সভাপতি কালিমুল হাফিজ বলেছেন, “মুসলমানদের জুমার জামাতে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া কেবল আমাদের মৌলিক অধিকারের উপর আক্রমণ নয় বরং স্পষ্ট নিপীড়ন।” তিনি আরো বলেছেন, “দিল্লির ১৬টি মসজিদে জুমার নামাজ বন্ধ করার নির্দেশ কে দিয়েছে, তার জবাব দিল্লি পুলিশকে দিতে হবে। এটা কি অমিত শাহ নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল।”
হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের ধর্মীয় বিধি বিধান পালনে এখন প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করছে। কিছুদিন আগেই গুরগাওয়ে জুমার নামাযে হিন্দুরা বাধা দিয়েছিল। পরে এটা নিয়ে আদালতে গেলে হিন্দুত্ববাদী আলালত হিন্দুদের পক্ষেই রায় দেয়। এমনিভাবে হিজাব ইস্যুকে আলালতের মাধ্যমে নিষেধাধাজ্ঞা জারি করিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। অন্যায়ভাবে একেরপর এক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে দেখলেও, মুসলিমদের যেন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ তারা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতা আর নিজেদের মাঝে মতনৈক্য করেই দুর্বল হয়ে গেছে। তাই বিচক্ষণ আলেমগণ দুনিয়ার মোহ ছেড়ে মুসলিমদেরকে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা শক্তি অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র:
———
1. Muslims allege Delhi Police stopped Friday prayer in 16 mosques
Comment