কাশ্মীর জিহাদের কিংবদন্তি নেতা : শহীদ কমাণ্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি (রহ.) [প্রথম পর্ব]
কাশ্মীর! প্রাকৃতিক সুন্দর্য, পাহাড়ি ঝর্ণাধারা, প্রবাহিত স্বাদুপানি ও খাবারের প্রাচুর্য, নিকটবর্তী পর্বত ঘেঁষে ফলফলাদির বাগান আর জাফরান, সবমিলিয়ে এই ভূমি ছিল মহান রবের নিয়ামতে পরিপূর্ণ এক মুসলিম ভূমি। ঐতিহাসিক ও কবিগণ কাশ্মীর সম্পর্কে বলেন, ‘কাশ্মীর হচ্ছে দুনিয়ার জান্নাত বা ভূস্বর্গ’। এই ভূস্বর্গ কাশ্মীরসহ পুরো উপমহাদেশে প্রায় ৬শত বছর বুদ্ধিমত্তা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়নাতার সাথে রাজত্ব করেছেন মুসলিমরা। মুসলমানদের অগ্রাভিযানের সময় অনেক মুসলিম বীরের পদধূলিতেও ধন্য হয়েছে এই মাটি।
তবে আজ এই উপমহাদেশের চিত্র দেখে মনে হয় না যে, এই ভূমি কোন একসময় মুসলিমরা শাসন করেছেন। উপমহাদেশে মুসলিমরা হারিয়েছেন তাদের ছয়শত বছরের রাজত্বের শানশৌকত, গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সেইসাথে ভূস্বর্গ কাশ্মীরও হারিয়েছে তার স্বাধীনতা ও প্রকৃত সৌন্দর্য। হিন্দুত্ববাদের পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে কাশ্মীরসহ পুরো উপমহাদেশের মুসলিমরা।
তবে এই পরাধীনতার শিকল ভাঙতে সময়ে সময়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক বীর মুজাহিদ, যাঁরা তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমনই একজন বীর ও উপমহাদেশের জিহাদী আন্দোলনের কিংবদন্তি ছিলেন শহীদ কমাণ্ডার মাওলানা ইলিয়াস কাশ্মীরি (রহ.)। যিনি বর্তমান পৃথিবীর দুই সুপার পাওয়ার দাবীদার রুশ ও আমেরিকা এবং উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান- এদের সবার বিরুদ্ধেই জিহাদ করেছিলেন। তাঁর মেধা আর রণকৌশল ছিলো বিস্মিত করার মতো। তিনি ছিলেন কাশ্মীর জিহাদি আন্দোলনের সফল একজন গেরিলা যোদ্ধা।
কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী মুজাহিদদের কাছে তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নপুরুষ। অপরদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মুশরিক সৈন্যদের কাছে তিনি ছিলেন এক আতংকের নাম। যাকে ভারতীয় মিডিয়াগুলো ওসামা বিন লাদেন বলেও ডাকতো।
তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি বৈশ্বিক ইসলামিক প্রতিরোধ বাহিনী জামাআত কায়দাতুল জিহাদের শুরা কমিটির সর্বপ্রথম অনারব সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।
জন্ম:
কাশ্মীর জিহাদের এই কিংবদন্তি ও স্বাধীনতাকামী মুজাহিদ কমান্ডার, মাওলানা ইলিয়াস কাশ্মীরির (রহ.) জীবনের ওপর খুব কমই লেখা হয়েছে। তবে তাঁর জন্ম সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি ১৯৬৪ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সামহানী উপত্যকার বিম্বুর (আদি মিরপুর) এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক তাঁর শারীরিক বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, পরিপক্ব বয়সে তিনি “আনুমানিক ছয় ফুট লম্বা” ছিলেন।
শিক্ষা জীবন:
কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি (রহ.) ছিলেন খুবই মেধাবী, সত্যবাদী এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী একজন যুবক, তিনি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত আল্লামা ইকবাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘গণযোগাযোগ ’- বিভাগে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি করাচির জামিয়া উলূম-উল-ইসলামিয়াতেও অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়। কিছু মিডিয়া সূত্র এই প্রচারণা চালায় যে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপে (SSG) কাজ করেছেন। তবে সাংবাদিক সৈয়দ সেলিম শাহজাদের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এটি অস্বীকার করেছেন।
জিহাদের ধুলোমলিন পথে যাত্রা:
১৯৭৯ সাল। ২৪ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের প্রতিবেশি মুসলিম ভূমি আফগানিস্তানে প্রবেশ করে আগ্রাসন চালায় দখলদার সোভিয়েত সৈন্যরা। রুশদের পালিত দেশীয় গোলাম সরকার আর সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুরো আফগানিস্তান দখল করে নেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। শুরু হয় মুসলিমদের উপর গণহত্যা, রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে মুসলিম ভূমি আফগানিস্তান।
সোভিয়ত ইউনিয়ন কর্তৃক মুসলিমদের উপর চালানো এসব জুলুম আর অন্যায় দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি মুসলিম উম্মাহর ব্যাথায় ব্যাথিত ইলিয়াস কাশ্মীরি। ফলে জ্ঞান পিপাসার্ত ইলিয়াস কাশ্মীরি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টানতে বাধ্য হন। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া দখলদার রুশ বিরোধী আফগান জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। নিজ হাতে তুলে নেন অস্ত্র। ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সম্মুখ লড়াইয়ে। অসীম সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে তিনি রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন। মুজাজিদদের সাহায্য করতে ছুটতে থেকেন যুদ্ধের এক ময়দান থেকে আরেক ময়দানে।
ইলিয়াস কাশ্মীরি ছিলেন সামরিক বিষয়ক একজন শিক্ষক এবং একজন গেরিলা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে তিনি মিরানশাহতে আফগান মুজাহিদদের মাইন বিষয়ক ও সামরিক প্রশিক্ষণও দিতেন। দখলদার রুশ বিরোধী এই যুদ্ধের সময় তিনি খুবই বীরত্বের পরিচয় দেন।
মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার এই যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর একটি চোখ ও একটি আঙুল হারান। এরপরও আল্লাহর রাস্তার এই অকুতোভয় মুজাহিদের দৃঢ়তা ও সঙ্কল্পতায় কখনই কমতি হয়নি। তিনি সবসময় ছুটে চলেছেন গৌরবময় শাহাদাতের সন্ধানে, যতদিন না আফগানে আগ্রাসী রুশ বাহিনীর দখলদারীত্বের অবসান ঘটে এবং মুজাহিদগণ মহান রবের সাহায্যে তৎকালীন সুপার পাওয়ার রুশদের মাথার খুলির উপর বিজয় নিশান উড়ান।
খোরাসান থেকে কাশ্মীর:
অবশেষে মহান রবের সাহায্যে আরব-অনারব মুজাহিদদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও দৃঢ় মনোবলের ফলে পরাজয় বরণ করে কথিত সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আফগানিস্তানে দখলদার রাশিয়ার পরাজয়ের পর মুজাহিদগণ ছড়িয়ে পড়তে থাকেন চেচেন, দাগিস্তান ও বসনিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে, যেখানে স্বাধীনতার সংগ্রম চলছে আগে থেকেই । শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরিও (রহ.) এর বিপরীত ছিলেন না। তিনি এবং তাঁর মত আরও শত মুজাহিদ মুসলিম ভূমি কাশ্মীর পুনরুদ্ধার এবং এই ভূমির মুসলিমদেরকে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মুশরিকদের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাশ্মীর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
পাকিস্তান সরকার নিজ স্বার্থ রাক্ষায় তখনও কিছু কিছু স্বাধীনতাকামীদের ভারতের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে সহায়তা করত। কিন্তু যেসব স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা শুধুমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টি ও উম্মাহর মুক্তির জন্য পরাধীন কাশ্মীরকে আজাদ করতে চাইতেন- তাদেরকে সহায়তা করাতো দূরের বিষয়, বরং তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে রাখতো পাকিস্তান। যেসকল স্বাধীনতাকামী পাকিস্তানের গোলামী করতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাঁদেরকে হয় বন্দী করতো নয়তো ভারতের কাছে তাঁদের তথ্য প্রকাশ করে দিত পাকিস্তান। এভাবেই পাকিস্তান প্রশাসন কাশ্মীর ইস্যুকে তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতো, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের এই গাদ্দারি কাশ্মীরের স্বধীনতা সংগ্রামকে ধীর থেকে আরও ধীরগতি করে দেয়।
শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরি ছিলেন ময়দান থেকে ফেরা একজন চৌকস গেরিলা যোদ্ধা ও অভিজ্ঞ কমান্ডার। তিনি সত্যিই কাশ্মীরিদের মুক্তি চাইতেন। এই কারণে পাকিস্তানি নিরাপত্তা সংস্থা তাঁর স্বাধীনভাবে কাজ করাটা উপযুক্ত মনে করেনি। তাঁকে বলা হলো- তিনি যেন কাশ্মীরিদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকেন এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের অধীনে কাজ করেন। তিনি পাকিস্তানের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। পাকিস্তানের হুমকির প্রতি কর্ণপাত না করেই পাকিস্তানের হুকুমের গোলামী ছেড়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি পাকিস্তানের সহায়তা ছাড়াই শরিক হলেন কাশ্মীরের রণাঙ্গনে।
চলবে ইনশা আল্লাহ্…
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
কাশ্মীর! প্রাকৃতিক সুন্দর্য, পাহাড়ি ঝর্ণাধারা, প্রবাহিত স্বাদুপানি ও খাবারের প্রাচুর্য, নিকটবর্তী পর্বত ঘেঁষে ফলফলাদির বাগান আর জাফরান, সবমিলিয়ে এই ভূমি ছিল মহান রবের নিয়ামতে পরিপূর্ণ এক মুসলিম ভূমি। ঐতিহাসিক ও কবিগণ কাশ্মীর সম্পর্কে বলেন, ‘কাশ্মীর হচ্ছে দুনিয়ার জান্নাত বা ভূস্বর্গ’। এই ভূস্বর্গ কাশ্মীরসহ পুরো উপমহাদেশে প্রায় ৬শত বছর বুদ্ধিমত্তা, সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়নাতার সাথে রাজত্ব করেছেন মুসলিমরা। মুসলমানদের অগ্রাভিযানের সময় অনেক মুসলিম বীরের পদধূলিতেও ধন্য হয়েছে এই মাটি।
তবে আজ এই উপমহাদেশের চিত্র দেখে মনে হয় না যে, এই ভূমি কোন একসময় মুসলিমরা শাসন করেছেন। উপমহাদেশে মুসলিমরা হারিয়েছেন তাদের ছয়শত বছরের রাজত্বের শানশৌকত, গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সেইসাথে ভূস্বর্গ কাশ্মীরও হারিয়েছে তার স্বাধীনতা ও প্রকৃত সৌন্দর্য। হিন্দুত্ববাদের পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে কাশ্মীরসহ পুরো উপমহাদেশের মুসলিমরা।
তবে এই পরাধীনতার শিকল ভাঙতে সময়ে সময়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক বীর মুজাহিদ, যাঁরা তাদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমনই একজন বীর ও উপমহাদেশের জিহাদী আন্দোলনের কিংবদন্তি ছিলেন শহীদ কমাণ্ডার মাওলানা ইলিয়াস কাশ্মীরি (রহ.)। যিনি বর্তমান পৃথিবীর দুই সুপার পাওয়ার দাবীদার রুশ ও আমেরিকা এবং উপমহাদেশের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান- এদের সবার বিরুদ্ধেই জিহাদ করেছিলেন। তাঁর মেধা আর রণকৌশল ছিলো বিস্মিত করার মতো। তিনি ছিলেন কাশ্মীর জিহাদি আন্দোলনের সফল একজন গেরিলা যোদ্ধা।
কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী মুজাহিদদের কাছে তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নপুরুষ। অপরদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মুশরিক সৈন্যদের কাছে তিনি ছিলেন এক আতংকের নাম। যাকে ভারতীয় মিডিয়াগুলো ওসামা বিন লাদেন বলেও ডাকতো।
তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি বৈশ্বিক ইসলামিক প্রতিরোধ বাহিনী জামাআত কায়দাতুল জিহাদের শুরা কমিটির সর্বপ্রথম অনারব সদস্য হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।
জন্ম:
কাশ্মীর জিহাদের এই কিংবদন্তি ও স্বাধীনতাকামী মুজাহিদ কমান্ডার, মাওলানা ইলিয়াস কাশ্মীরির (রহ.) জীবনের ওপর খুব কমই লেখা হয়েছে। তবে তাঁর জন্ম সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি ১৯৬৪ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সামহানী উপত্যকার বিম্বুর (আদি মিরপুর) এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক তাঁর শারীরিক বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, পরিপক্ব বয়সে তিনি “আনুমানিক ছয় ফুট লম্বা” ছিলেন।
শিক্ষা জীবন:
কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি (রহ.) ছিলেন খুবই মেধাবী, সত্যবাদী এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী একজন যুবক, তিনি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত আল্লামা ইকবাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘গণযোগাযোগ ’- বিভাগে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি করাচির জামিয়া উলূম-উল-ইসলামিয়াতেও অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়। কিছু মিডিয়া সূত্র এই প্রচারণা চালায় যে, তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপে (SSG) কাজ করেছেন। তবে সাংবাদিক সৈয়দ সেলিম শাহজাদের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এটি অস্বীকার করেছেন।
জিহাদের ধুলোমলিন পথে যাত্রা:
১৯৭৯ সাল। ২৪ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের প্রতিবেশি মুসলিম ভূমি আফগানিস্তানে প্রবেশ করে আগ্রাসন চালায় দখলদার সোভিয়েত সৈন্যরা। রুশদের পালিত দেশীয় গোলাম সরকার আর সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুরো আফগানিস্তান দখল করে নেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। শুরু হয় মুসলিমদের উপর গণহত্যা, রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে মুসলিম ভূমি আফগানিস্তান।
সোভিয়ত ইউনিয়ন কর্তৃক মুসলিমদের উপর চালানো এসব জুলুম আর অন্যায় দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি মুসলিম উম্মাহর ব্যাথায় ব্যাথিত ইলিয়াস কাশ্মীরি। ফলে জ্ঞান পিপাসার্ত ইলিয়াস কাশ্মীরি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টানতে বাধ্য হন। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া দখলদার রুশ বিরোধী আফগান জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। নিজ হাতে তুলে নেন অস্ত্র। ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সম্মুখ লড়াইয়ে। অসীম সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে তিনি রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন। মুজাজিদদের সাহায্য করতে ছুটতে থেকেন যুদ্ধের এক ময়দান থেকে আরেক ময়দানে।
ইলিয়াস কাশ্মীরি ছিলেন সামরিক বিষয়ক একজন শিক্ষক এবং একজন গেরিলা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে তিনি মিরানশাহতে আফগান মুজাহিদদের মাইন বিষয়ক ও সামরিক প্রশিক্ষণও দিতেন। দখলদার রুশ বিরোধী এই যুদ্ধের সময় তিনি খুবই বীরত্বের পরিচয় দেন।
মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার এই যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর একটি চোখ ও একটি আঙুল হারান। এরপরও আল্লাহর রাস্তার এই অকুতোভয় মুজাহিদের দৃঢ়তা ও সঙ্কল্পতায় কখনই কমতি হয়নি। তিনি সবসময় ছুটে চলেছেন গৌরবময় শাহাদাতের সন্ধানে, যতদিন না আফগানে আগ্রাসী রুশ বাহিনীর দখলদারীত্বের অবসান ঘটে এবং মুজাহিদগণ মহান রবের সাহায্যে তৎকালীন সুপার পাওয়ার রুশদের মাথার খুলির উপর বিজয় নিশান উড়ান।
খোরাসান থেকে কাশ্মীর:
অবশেষে মহান রবের সাহায্যে আরব-অনারব মুজাহিদদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও দৃঢ় মনোবলের ফলে পরাজয় বরণ করে কথিত সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। আফগানিস্তানে দখলদার রাশিয়ার পরাজয়ের পর মুজাহিদগণ ছড়িয়ে পড়তে থাকেন চেচেন, দাগিস্তান ও বসনিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে, যেখানে স্বাধীনতার সংগ্রম চলছে আগে থেকেই । শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরিও (রহ.) এর বিপরীত ছিলেন না। তিনি এবং তাঁর মত আরও শত মুজাহিদ মুসলিম ভূমি কাশ্মীর পুনরুদ্ধার এবং এই ভূমির মুসলিমদেরকে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মুশরিকদের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাশ্মীর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
পাকিস্তান সরকার নিজ স্বার্থ রাক্ষায় তখনও কিছু কিছু স্বাধীনতাকামীদের ভারতের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে সহায়তা করত। কিন্তু যেসব স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা শুধুমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টি ও উম্মাহর মুক্তির জন্য পরাধীন কাশ্মীরকে আজাদ করতে চাইতেন- তাদেরকে সহায়তা করাতো দূরের বিষয়, বরং তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে রাখতো পাকিস্তান। যেসকল স্বাধীনতাকামী পাকিস্তানের গোলামী করতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাঁদেরকে হয় বন্দী করতো নয়তো ভারতের কাছে তাঁদের তথ্য প্রকাশ করে দিত পাকিস্তান। এভাবেই পাকিস্তান প্রশাসন কাশ্মীর ইস্যুকে তার নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করতো, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানের এই গাদ্দারি কাশ্মীরের স্বধীনতা সংগ্রামকে ধীর থেকে আরও ধীরগতি করে দেয়।
শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরি ছিলেন ময়দান থেকে ফেরা একজন চৌকস গেরিলা যোদ্ধা ও অভিজ্ঞ কমান্ডার। তিনি সত্যিই কাশ্মীরিদের মুক্তি চাইতেন। এই কারণে পাকিস্তানি নিরাপত্তা সংস্থা তাঁর স্বাধীনভাবে কাজ করাটা উপযুক্ত মনে করেনি। তাঁকে বলা হলো- তিনি যেন কাশ্মীরিদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকেন এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের অধীনে কাজ করেন। তিনি পাকিস্তানের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন। পাকিস্তানের হুমকির প্রতি কর্ণপাত না করেই পাকিস্তানের হুকুমের গোলামী ছেড়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি পাকিস্তানের সহায়তা ছাড়াই শরিক হলেন কাশ্মীরের রণাঙ্গনে।
চলবে ইনশা আল্লাহ্…
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
Comment