Announcement

Collapse
No announcement yet.

আরও একটি পবিত্র রমাদানে প্রবেশ করল ইসলামি বিশ্ব : আমেজ কিছুটা হলেও ভিন্ন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আরও একটি পবিত্র রমাদানে প্রবেশ করল ইসলামি বিশ্ব : আমেজ কিছুটা হলেও ভিন্ন

    আরও একটি পবিত্র রমাদানে প্রবেশ করল ইসলামি বিশ্ব :
    আমেজ কিছুটা হলেও ভিন্ন


    প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও ইসলামি বিশ্বে পবিত্র মাহে রমাদানের আনন্দ ছেয়ে গেছে। তবে এবারের রমাদান মুসলিম বিশ্বের কিছু কিছু স্থানে ভিন্নভাবেই পালিত হচ্ছে। শোকের কালো অধ্যায় পেছনে ফেলে এবার কিছু অঞ্চলে প্রশান্তির পরশ বুলিয়েছে শরয়ী শাসনের সুশীতল ছায়া। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আফগানিস্তান, কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া ও মালি।

    এবছর ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তুরস্ক এবং আরব উপদ্বীপের মতো অনেক অঞ্চলে রমাদান মাস ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে।

    যাইহোক, মুসলমানদের নিকট রমাদান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস, যে মাসকে সারা বিশ্বের মুসলমানরা আনন্দের সাথে স্বাগত জানান। এই মাসে মুমিনরা তাদের কৃত ভুল কর্মের জন্য মহান রবের দরবারে অনুশোচনা করেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাওবার মাধ্যমে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলো থেকে আলোর পথে হাঁটার অঙ্গিকার করেন।

    তবে শুরুতে উল্লেখিত ইসলামি বিশ্বের ঐ অঞ্চলসমূহ এবং একটি দেশ ব্যতীত, এই বছরও বিভিন্ন আগ্রাসী বাহিনী দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলে এবং যেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে- সেখানে তিক্ত আনন্দের সাথেই রমাদানকে স্বাগত জানান মুসলিমরা।

    এবারের রমাদানের ব্যতিক্রম দেশটি হল আফগানিস্তান, ইসলামের বিজয় পরবর্তী যার পূর্ণ নাম ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান। এখানে বহু বছর ধরে যুদ্ধ ও দখলদারিত্ব বিরাজ ছিল। এই দেশটিতে প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে সম্ভবত প্রথমবারের মতো যুদ্ধ-মুক্ত রমাদান পালিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো দেশটির জনগণ নিরাপত্তা বোধ করছেন। এবং বিজয়ের আনন্দকে আলিঙ্গন করে রমাদানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

    আফগানিস্তানের প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এমন আরও ২টি দেশ হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। যদিও এই দেশ দু’টিতে এখনো বহুজাতিক ক্রুসেডার জোটগুলোর দখলদারিত্ব অবসানে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলমান আছে, তবে যুদ্ধের পরিধি অনেকাংশেই কমে এসেছে। কারণ দেশ দু’টির বেশিরভাগ অঞ্চলই দখলদারদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাগণ। অধিকাংশ ক্রুডাদার দেশ দু’টি থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তুতি শুরু করেছে, কেউ কেউ সম্পন্ন করেছে।দেশগুলোর বেশিরভাগ অঞ্চলেই বিরাজ করছে শান্তি-শৃঙ্খলা, সেখানে মানুষ আফগান ইমারাতের মতোই শরিয়ার ছায়াতলে আনন্দের সাথে পবিত্র এই রমাদানকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা মহান রবের কাছে দোয়া করি, তিনি যেন এই দেশ দু’টিকেও পূর্ণাঙ্গ শরিয়ার ছায়াতলে নিয়ে আসেন। আমীন।

    তবে ইসলামি বিশ্বের বড় অংশের পরিস্থিতি এখনো ভিন্ন। কিছু দেশ যুদ্ধবিহীন থাকলেও, সেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের অধিকার বলতেই নেই। আবার কিছু দেশে রয়েছে মুসলিমদের নামে মাত্র অধিকার, আসলে পর্দার আড়ালে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিধর্মীদের হাতেই; যেমন নাইজেরিয়া ও বসনিয়া।

    আর বাকি দেশগুলোতে চলছে কুফ্ফারদের আগ্রাসন, কিছু অঞ্চলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও চলছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই রমাদাঙ্কে স্বাগত জানিয়েছেন দেশগুলোতে বসবাসরত মুসলিমরা।

    দখলদারিত্ব কায়েম থাকা দেশের তালিকায় অন্যতম হচ্ছে ফিলিস্তিন। বর্বর ইহুদিদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের দখলে থাকা এই দেশটি প্রতিবারের মতো এবারো উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা নিয়েই রমাদানে প্রবেশ করেছে। অনেক ফিলিস্তিনি সংঘর্ষ এবং হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন, উদ্বেগ রয়েছে যে, গত বছরের মতো এই রমাদানেও এই অঞ্চলের মুসলিমদের উপর নতুন করে হামলা ও আগ্রাসন চালাতে পারে বর্বর ইহুদিরা।

    উপমহাদেশে হিন্দুত্ববাদী ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরও সেই অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে, যেসব মুসলিম অঞ্চলগুলো বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ রমজান থেকে দূরে রয়েছে।

    মুসলিমদের স্মৃতি থেকে সুকৌশলে ভুলিয়ে দেওয়া এমন আরেকটি দেশ হচ্ছে পূর্ব তুর্কিস্তান। সেখানে মুসলিমদের স্বাধীন সত্ত্বা এমনকি ব্যক্তিসত্ত্বা পর্যন্ত বর্বর চীনা হানদের ইছার কাছে জিম্মি হয়ে আছে। যেখানে মুসলিম অধিবাসীদের একটা বড় অংশ বন্দী হয়ে আছে অত্যাচার আর জুলুমের নরক ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’।

    সেখানে মা জানে না তাঁর সন্তান কোথায়, স্বামী জানে না তাঁর স্ত্রী-সন্তান কি হালতে, ভাই জানেনা তাঁর বোন কোথায়, বোন জানেনা তাঁর ভাই বেঁচে আছে কি না। সেখানে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকল্কে জোড় করে নাস্তিকতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে। যখন প্রয়োজন যার ইচ্ছা জীবন কেরে নিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমরা যেন আত্মাহীন এক একটি চলমান মৃতদেহ। মুক্ত রয়েছেন যারা, তারাও টয়লেটে লুকিয়ে সাহরি খাচ্ছেন, আর কুরআনের সম্মান বাঁচাতে পলিথিনে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর উপরে তারা রয়েছে ২৪ ঘণ্টা স্মার্ট সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে; কারো হাতা-চলায় এমনকি মুখভঙ্গিতে সামান্যতম অসঙ্গতি দেখা গেলেই তার ঠিকানা হবে সেই মানব-নরক ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে’।

    এদিকে রাশিয়া এবং ইরান সমর্থিত কুখ্যাত নুসাইরি বাশার আল-আসাদ সরকারের হামলায় সিরিয়ার মুসলিমরা গত ১১ বছর ধরে একই রকম পরিস্থিতিতে পবিত্র রমাদান কাটাচ্ছেন, সাহরি আর ইফতারে ঘাস আর বোমা খেয়ে।

    ইরাক, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা ‘আইএসআইএস’-এর অজুহাতে অনেক শহর ধ্বংস করেছে এবং সুন্নি নাগরিকদের চাপে ফেলেছে, সেখানের মুসলিমরাও আরেকটি তিক্ত অভিজ্ঞতাময় রমাদানে প্রবেশ করেছেন।অপরদিকে মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ান এবং কমিউনিস্ট চীনা-সমর্থিত সরকার দ্বারা শাসিত তুর্কি-মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতেও মুসলিমরা তাদের ঈমান ও ইসলাম নিয়ে সর্বদাই চাপের মধ্যে থাকেন, যেমন চাপে থাকেন বাংলাদেশের মুসলিমরা। দ্বীনের দাবি জালেম শাসকদের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হলেই গুম-খুন-হত্যার স্বীকার হন এই দেশগুলোর মুসলিমরা। শাসক শ্রেণীও আবার প্রায়ই তাদের বিদেশী ‘প্রভুদের’ তুষ্ট করতে নিজ জনগণের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এভাবেই চাপ আর অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেই এই দেশগুলোর মুসলিমরা শুরু করেছেন এবারের রমাদান।

    আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে মুসলমানরাও কট্টরপন্থী বিজিপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী দলগুলোর চাপ ও আক্রমণের মুখে রমজান মাসে প্রবেশ করেছেন। তাদের উপর হিন্দুত্ববাদী কর্তৃক ‘গণহত্যা’র খড়গ ঝুলে আছে, আর সেটা ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে ব্যাপক আকার ধারন করতে পারে বলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মত প্রকাশ করেছেন। আর ঠিক এমন মুহুর্তে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ভারতের গোলাম আওয়ামী প্রশাসনের দ্বারা বন্দী হাজার হাজার আলেম ও আওয়াম কারাগারের প্রকোষ্ঠ থেকে স্বাগত জানাচ্ছেন রমাদানকে।

    রমাদান মাসে যারা যুদ্ধের ছায়ায় কাটাচ্ছেন, তাদের মধ্যে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমরাও রয়েছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমরাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি মাথায় নিয়েই রামাদানকে স্বাগত জানিয়ছেন। তারা কি কখনো তাদের বাপ-দাদার ভিটায় ফিরতে পারবেন, তাদের সন্তানরাও কি তাদের মতো আশ্রয় শিবিরেই জীবন কাটাবে – এমন দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়েই তাদের রমাদান শুরু ও শেষ হয়।মধ্য প্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে সৌদি জোট ও শিয়াপন্থি ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী হুথিদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের কারণে, লক্ষ লক্ষ বেসামরিক নাগরিক অনিশ্চিত এক সময় নিয়েই এই রমাদানে প্রবেশ করেছেন। দেশটিতে যুদ্ধ ছাড়াও, ক্ষুধা এবং মহামারী রোগের কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি কয়েক মিলিয়ন মানুষ। সেখানে মায়ের কোলে ধুঁকে মরছে শিশু, আর পিতার লাশ বহন করে কবরে নিয়ে যাচ্ছে বালেগ সন্তান।

    এভাবেই তারা স্বাগত জানাচ্ছেন রমাদানকে।অপরদিকে রুশ-অধিকৃত ককেশাস অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলমানরাও ভয় আর আতংকের পরিবেশে রমজান মাস কাটাচ্ছেন।তবে উমাহর বুকে সামান্য হলেও আশার সঞ্চার করেছে এই রমাদান। কিছু অঞ্চলে হলেও তো মুসলিমদের সুদিন ফিরে আসছে, কিছু অঞ্চলের মুসলিমরা তো অন্তত বিধর্মীদের আগ্রাসনমুক্ত হয়ে রমাদান কাটাতে পাড়ছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। এই আশাতেই গোটা উম্মাহ হয়তো অপেক্ষা করছে নিজ এলাকায় কোন তলিবানের আগমনের, কিংবা কোন জেএনাইএম’ অথবা কোন আশ-শাবাবের উত্থানের।আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকা এই উম্মাহর ভাগ্যাকাশে এই রমাদানে মহান রবের পক্ষ থেকে উদিত হোক মুক্তি-স্বাধীনতার আকাঙ্খায় রাঙানো রক্তিম সূর্য, এই আহ্বানই যেন বেজে চলেছে ঘুমন্ত উম্মাহর অন্তরে।
    লেখক : ত্বহা আলী আদনান



    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X