হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের প্রেরনায় ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ : গ্রাম থেকে মুসলিমদের সরিয়ে দেওয়ার হুমকি!
ভারতে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলাম বিদ্বেষী জিঘাংসা ও অস্থিরতা দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুভিটি মুক্তির পর থেকে, দেশের মুসলমানদের উপর সহিংসতার উসকানি দেওয়ার বেশকিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদীরা বানোয়াট তথ্যচিত্র দিয়ে মুসলিম গণহত্যার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রতক্ষ মদদে ইতিহাস বিকৃত করে বানানো হয়েছে কাশ্মীর ফাইলস নামে সিনেমাটি। এই প্রোপাগান্ডামূলক মুভি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদেরকে গ্রাম ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে।
জালালপুর হল রুরকির ভগবানপুর অঞ্চলের একটি গ্রাম। ১৬ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তীর ‘শোভা যাত্রা’ বা মিছিলের পরে এখানেও সহিংসতা চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। গ্রামের গলিগুলো সরু। যে কোন সময় মুসলিমদের এরাকায় হামলা চালানো সুবিধার্থে হিন্দুত্ববাদীরা ‘হিন্দু’ এলাকাকে ‘মুসলিম’ এলাকা থেকে আলাদা করে দিয়েছে। এজন্য তারা জাফরান পতাকা টানিয়ে বাড়ি চিহ্নিত করেছে। জালালপুরে প্রায় সমান সংখ্যক হিন্দু এবং মুসলমান রয়েছে।
হামলার পর মুসলিমদের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হিন্দুত্ববাদী উগ্র নেতারা মুসলিমদেরকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিবে বলেছে তারা। এবং একটি ধর্ম সংসদের নামে মুসলিম গণহত্যার আয়োজন করার হুমকি দেওয়ার পরে বেশ কিছু মুসলিম বাসিন্দা হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডব থেকে জান বাচাঁতে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
গত কয়েদিনে বিভিন্ন মুসলিম এলাকার বুলডোজার চালিয়ে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। তবুও হিন্দুত্ববাদীদের জিঘাংসা কমেনি।
হিন্দুত্ববাদী নেতারা তাদের দাবি অনুযায়ী “মুসলিমদের কারাগারে না রাখলে” ২০ শে এপ্রিল থেকে ব্যাপক হামলা চালাবে। তাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মুসলিম বাসিন্দারা।
‘কাশ্মীর ফাইলস’ এবং পূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র
সন্ত্রাসী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এক সদস্য সাইনি বলেছে, দ্য কাশ্মীর ফাইলস মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে তাদের উত্সাহিত করেছে। “তারা (মুসলিমরা) জিহাদি, আমাদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এটা দেখে দুঃখ হয় যে তারা এখানে খায়, কিন্তু তারা জাতিকে ছিন্ন করার কথা বলে।”
“সিনেমাটি আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে, এটি আমার চোখে জল এনেছে।”
অপর এক উগ্র হিন্দু আরো বলেছে, “ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করতে হিন্দুদের জেগে উঠতে সাহায্য করবে।”
একটি হিন্দু রাষ্ট্র কেমন হবে তার অবস্থা সম্পর্কে সাইনি বলেছে, “যখন আমরা সারা দেশে জাফরান পতাকা নাড়ব, প্রতিটি বাড়িতে হনুমান চালিসা বাজবে এবং যোগী আদিত্যনাথ আমাদের নেতা হবে, তখনই হবে আমাদের হিন্দু রাষ্ট্র।”
ঠিক কি ঘটেছিল ১৬ এপ্রিল?
১৬ এপ্রিল রাতে, ভগবানপুর অঞ্চলের তিনটি পার্শ্ববর্তী গ্রাম- দাদা পট্টি, দাদা হাসানপুর এবং দাদা জালালপুরের বাসিন্দারা হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা রাতের ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু যুবকদের একটি ভিড় লাঠি, তলোয়ার হাতে নিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং মুসলিম বিদ্বেষী স্লোগান দিতে দিতে একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যায়।
মুসলিম বাসিন্দারা বলেছেন, “তারা আমাদের বাড়িতে পাথর ছুঁড়েছে, আমাদের নিজেদের রক্ষার জন্য নিজেদেরকে তালাবদ্ধ করতে হয়েছিল। তারা সবকিছু ভেঙ্গে ফেলেছে।”
মুসলিম মহিলা রাজিয়া বলেছেন, “তারা আমাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। আমি তাদের আমার বাড়ির দরজায় লাঠি মারতে শুনতে পাচ্ছিলাম। তখন আমি নিজেকে এবং আমার সন্তানদের রক্ষা করার জন্য ছাদে উঠেছিলাম। আমরা আমাদের প্রতিবেশীর বারান্দায় উঠেছিলাম এবং এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম।
রাজিয়া আরো বলেছেন, ঘরে রাখা ৫০ হাজার টাকা, কিছু রূপাসহ লুট হয়েছে।
আরেক মুসলিম বাসিন্দা ফরমানের বাড়ির বাইরে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ই-রিক্সা, একটি মোটরসাইকেল এবং একটি গাড়ির অবশিষ্টাংশ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন মিছিলে থাকা হিন্দুরা এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
“তারা আমাদের গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমরা কিছুই করিনি, আমরা আমাদের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছিলাম। এবং বাড়ির পিছনে একটি ছোট জায়গায় লুকিয়ে ছিলাম। ধরা পড়লে আমরাদেরকেও খুন করত,” বলেন ফরমান।
তার বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ও বাড়ির অন্যান্য অংশও ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা চুরি হয়েছে।
ফরমান জানান, নতুন সহিংসতার ভয়ে তিনি মাঠে রাত কাটাচ্ছেন।
হিন্দুত্ববাদী সোনু সাইনি বলেছে, “তারা এখন শুধু গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে, শীঘ্রই এমন একটি দিন আসবে, যখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাবে। আমাদের এখন সহিংসতা অবলম্বন করতে হবে, কেবল আলোচনায় কিছু হবে না। জেগে উঠেছে এদেশের হিন্দু যুবসমাজ। আমরা এখন তাদের হত্যা করব।”
সোনুর পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়। সে প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে বলেছে, “তাদের রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া উচিত, তাদের ভোটার আইডি কেড়ে নেওয়া উচিত। আমরা আপনাদের সামনেই এটা বলছি, খোলাখুলি।”
উল্লেখ্য, সোনু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন সক্রিয় সদস্য।
মুলত ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সিনেমাহলের ভিতরে এবং বাইরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এছাড়াও ‘দ্যা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি ভারতজুড়ে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মুসলমানদের বাড়ি-ঘরেও হামলা চালানো বাড়িয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুরা। হিন্দুত্ববাদীদের ‘দ্যা কাশ্মীর ফাইলস’ মুসলিম গণহত্যায় হিন্দুদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অপরদিকে মুসলিমরা নিজেরা শতধা বিভক্ত হয়ে নিজেদের শক্তি হ্রাস করেছে। কিছুদিন আগে এক নামধারি মাওলানাকে হিন্দুদের দেব-দেবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর কথা বলতেও শোনা গেছে। আর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের মুসলিমদেরকেও তখন ইসলামবিদ্বেষী শাসকদের আনুগত্য করার সবক দিচ্ছে একশ্রেণীর নামধারি আলেম।
কেউ কেউ আবার বলছে যে, কাশ্মীর সমস্যা আর ভারতজুড়ে মুসলিম গণহত্যার আহ্বান- এগুলো সবই নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়! অথচ ভারতে মুসলিমদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে বাংলাদেশেও আগ্রাসন চালানোর পায়তারা করছে, কথিত হিন্দু নির্যাতনের ‘মিথ’ তৈরি করে যে সৈন্য পাঠিয়ে বাংলাদেশ দখল করার নীলনকশা চূড়ান্ত করছে, এসব ব্যাপারে মনে হয় এরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।
ইসলামি বিশ্লেষকগণ তাই মত দিয়েছেন, ভারতীয় মুসলিমদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসীদের মোকাবেলা করা।
প্রতিবেদক : মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র :
1. Inspired by ‘Kashmir Files’, Hindutva Workers Threaten to Remove Muslims From Roorkee Village
– https://tinyurl.com/mrx6zpem
– https://youtu.be/7PPv-u4T-vc
2. Hindutva thugs in the Indian town of Raoti purposely placed loudspeakers on their temples so they can play their chants loudly whenever the adhan is made from the mosque for salah.
– https://tinyurl.com/ydrkp85r
3. The Hindutva group, Yuva Vahini’s district president in Uttar Pradesh, Ayush Tyagi, delivered this Islamophobic hate speech calling for violence against Muslims and mosques to be destroyed across India.
– https://tinyurl.com/yr7as5jn
4. Genocidal slogans raised at Kashmir Files screening
– https://tinyurl.com/2p8m6es8
ভারতে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলাম বিদ্বেষী জিঘাংসা ও অস্থিরতা দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ মুভিটি মুক্তির পর থেকে, দেশের মুসলমানদের উপর সহিংসতার উসকানি দেওয়ার বেশকিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদীরা বানোয়াট তথ্যচিত্র দিয়ে মুসলিম গণহত্যার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রতক্ষ মদদে ইতিহাস বিকৃত করে বানানো হয়েছে কাশ্মীর ফাইলস নামে সিনেমাটি। এই প্রোপাগান্ডামূলক মুভি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদেরকে গ্রাম ছাড়া করার ঘোষণা দিয়েছে।
জালালপুর হল রুরকির ভগবানপুর অঞ্চলের একটি গ্রাম। ১৬ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তীর ‘শোভা যাত্রা’ বা মিছিলের পরে এখানেও সহিংসতা চালিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। গ্রামের গলিগুলো সরু। যে কোন সময় মুসলিমদের এরাকায় হামলা চালানো সুবিধার্থে হিন্দুত্ববাদীরা ‘হিন্দু’ এলাকাকে ‘মুসলিম’ এলাকা থেকে আলাদা করে দিয়েছে। এজন্য তারা জাফরান পতাকা টানিয়ে বাড়ি চিহ্নিত করেছে। জালালপুরে প্রায় সমান সংখ্যক হিন্দু এবং মুসলমান রয়েছে।
হামলার পর মুসলিমদের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হিন্দুত্ববাদী উগ্র নেতারা মুসলিমদেরকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিবে বলেছে তারা। এবং একটি ধর্ম সংসদের নামে মুসলিম গণহত্যার আয়োজন করার হুমকি দেওয়ার পরে বেশ কিছু মুসলিম বাসিন্দা হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডব থেকে জান বাচাঁতে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
গত কয়েদিনে বিভিন্ন মুসলিম এলাকার বুলডোজার চালিয়ে মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন। তবুও হিন্দুত্ববাদীদের জিঘাংসা কমেনি।
হিন্দুত্ববাদী নেতারা তাদের দাবি অনুযায়ী “মুসলিমদের কারাগারে না রাখলে” ২০ শে এপ্রিল থেকে ব্যাপক হামলা চালাবে। তাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মুসলিম বাসিন্দারা।
‘কাশ্মীর ফাইলস’ এবং পূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র
সন্ত্রাসী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এক সদস্য সাইনি বলেছে, দ্য কাশ্মীর ফাইলস মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে তাদের উত্সাহিত করেছে। “তারা (মুসলিমরা) জিহাদি, আমাদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এটা দেখে দুঃখ হয় যে তারা এখানে খায়, কিন্তু তারা জাতিকে ছিন্ন করার কথা বলে।”
“সিনেমাটি আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে, এটি আমার চোখে জল এনেছে।”
অপর এক উগ্র হিন্দু আরো বলেছে, “ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করতে হিন্দুদের জেগে উঠতে সাহায্য করবে।”
একটি হিন্দু রাষ্ট্র কেমন হবে তার অবস্থা সম্পর্কে সাইনি বলেছে, “যখন আমরা সারা দেশে জাফরান পতাকা নাড়ব, প্রতিটি বাড়িতে হনুমান চালিসা বাজবে এবং যোগী আদিত্যনাথ আমাদের নেতা হবে, তখনই হবে আমাদের হিন্দু রাষ্ট্র।”
ঠিক কি ঘটেছিল ১৬ এপ্রিল?
১৬ এপ্রিল রাতে, ভগবানপুর অঞ্চলের তিনটি পার্শ্ববর্তী গ্রাম- দাদা পট্টি, দাদা হাসানপুর এবং দাদা জালালপুরের বাসিন্দারা হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা রাতের ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু যুবকদের একটি ভিড় লাঠি, তলোয়ার হাতে নিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং মুসলিম বিদ্বেষী স্লোগান দিতে দিতে একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যায়।
মুসলিম বাসিন্দারা বলেছেন, “তারা আমাদের বাড়িতে পাথর ছুঁড়েছে, আমাদের নিজেদের রক্ষার জন্য নিজেদেরকে তালাবদ্ধ করতে হয়েছিল। তারা সবকিছু ভেঙ্গে ফেলেছে।”
মুসলিম মহিলা রাজিয়া বলেছেন, “তারা আমাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। আমি তাদের আমার বাড়ির দরজায় লাঠি মারতে শুনতে পাচ্ছিলাম। তখন আমি নিজেকে এবং আমার সন্তানদের রক্ষা করার জন্য ছাদে উঠেছিলাম। আমরা আমাদের প্রতিবেশীর বারান্দায় উঠেছিলাম এবং এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম।
রাজিয়া আরো বলেছেন, ঘরে রাখা ৫০ হাজার টাকা, কিছু রূপাসহ লুট হয়েছে।
আরেক মুসলিম বাসিন্দা ফরমানের বাড়ির বাইরে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ই-রিক্সা, একটি মোটরসাইকেল এবং একটি গাড়ির অবশিষ্টাংশ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন মিছিলে থাকা হিন্দুরা এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
“তারা আমাদের গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমরা কিছুই করিনি, আমরা আমাদের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছিলাম। এবং বাড়ির পিছনে একটি ছোট জায়গায় লুকিয়ে ছিলাম। ধরা পড়লে আমরাদেরকেও খুন করত,” বলেন ফরমান।
তার বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ও বাড়ির অন্যান্য অংশও ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা চুরি হয়েছে।
ফরমান জানান, নতুন সহিংসতার ভয়ে তিনি মাঠে রাত কাটাচ্ছেন।
হিন্দুত্ববাদী সোনু সাইনি বলেছে, “তারা এখন শুধু গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে, শীঘ্রই এমন একটি দিন আসবে, যখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাবে। আমাদের এখন সহিংসতা অবলম্বন করতে হবে, কেবল আলোচনায় কিছু হবে না। জেগে উঠেছে এদেশের হিন্দু যুবসমাজ। আমরা এখন তাদের হত্যা করব।”
সোনুর পরিকল্পনা এখানেই শেষ নয়। সে প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে বলেছে, “তাদের রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া উচিত, তাদের ভোটার আইডি কেড়ে নেওয়া উচিত। আমরা আপনাদের সামনেই এটা বলছি, খোলাখুলি।”
উল্লেখ্য, সোনু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন সক্রিয় সদস্য।
মুলত ‘দা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সিনেমাহলের ভিতরে এবং বাইরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এছাড়াও ‘দ্যা কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি ভারতজুড়ে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মুসলমানদের বাড়ি-ঘরেও হামলা চালানো বাড়িয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুরা। হিন্দুত্ববাদীদের ‘দ্যা কাশ্মীর ফাইলস’ মুসলিম গণহত্যায় হিন্দুদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অপরদিকে মুসলিমরা নিজেরা শতধা বিভক্ত হয়ে নিজেদের শক্তি হ্রাস করেছে। কিছুদিন আগে এক নামধারি মাওলানাকে হিন্দুদের দেব-দেবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর কথা বলতেও শোনা গেছে। আর পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের মুসলিমদেরকেও তখন ইসলামবিদ্বেষী শাসকদের আনুগত্য করার সবক দিচ্ছে একশ্রেণীর নামধারি আলেম।
কেউ কেউ আবার বলছে যে, কাশ্মীর সমস্যা আর ভারতজুড়ে মুসলিম গণহত্যার আহ্বান- এগুলো সবই নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়! অথচ ভারতে মুসলিমদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে বাংলাদেশেও আগ্রাসন চালানোর পায়তারা করছে, কথিত হিন্দু নির্যাতনের ‘মিথ’ তৈরি করে যে সৈন্য পাঠিয়ে বাংলাদেশ দখল করার নীলনকশা চূড়ান্ত করছে, এসব ব্যাপারে মনে হয় এরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।
ইসলামি বিশ্লেষকগণ তাই মত দিয়েছেন, ভারতীয় মুসলিমদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসীদের মোকাবেলা করা।
প্রতিবেদক : মাহমুদ উল্লাহ্
তথ্যসূত্র :
1. Inspired by ‘Kashmir Files’, Hindutva Workers Threaten to Remove Muslims From Roorkee Village
– https://tinyurl.com/mrx6zpem
– https://youtu.be/7PPv-u4T-vc
2. Hindutva thugs in the Indian town of Raoti purposely placed loudspeakers on their temples so they can play their chants loudly whenever the adhan is made from the mosque for salah.
– https://tinyurl.com/ydrkp85r
3. The Hindutva group, Yuva Vahini’s district president in Uttar Pradesh, Ayush Tyagi, delivered this Islamophobic hate speech calling for violence against Muslims and mosques to be destroyed across India.
– https://tinyurl.com/yr7as5jn
4. Genocidal slogans raised at Kashmir Files screening
– https://tinyurl.com/2p8m6es8