Announcement

Collapse
No announcement yet.

দিল্লীতে মুসলিমদের স্থাপনায় ‘হিন্দুত্ববাদের’ বুলডোজার : জাহাঙ্গীরপুরীর বাতাসে শুধুই অসহায় মুসলিমদের ক্ষোভ-কান্না-হতাশা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • দিল্লীতে মুসলিমদের স্থাপনায় ‘হিন্দুত্ববাদের’ বুলডোজার : জাহাঙ্গীরপুরীর বাতাসে শুধুই অসহায় মুসলিমদের ক্ষোভ-কান্না-হতাশা

    দিল্লীতে মুসলিমদের স্থাপনায় ‘হিন্দুত্ববাদের’ বুলডোজার : জাহাঙ্গীরপুরীর বাতাসে শুধুই অসহায় মুসলিমদের ক্ষোভ-কান্না-হতাশা


    ঘটনার সূত্রপাট গত ১৬ই এপ্রিল শনিবার। সন্ধ্যাযর দিকে ভারতের রাজধানী দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায় হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের উপর সহিংসতা চালায়। হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে একটি হিন্দুত্ববাদী মিছিল ঐ এলাকার একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সহিংসতা শুরু হয়।

    পরে উল্টো সহিংসতার জন্য মুসলিমদেরকে দায়ী করে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। শুধুমাত্র মুসলিমদের ঘরবাড়ি, মসজিদ টার্গেট করা হয়েছে। ভাঙচুরের পর রাজধানী দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকা এখনও উত্তপ্ত। ঐ এলাকায় বুধবার থেকে শুরু হয় "অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ" অভিযানের নামে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম স্থাপনা, বাড়িঘর, দোকানপাট, মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার ধ্বংসলীলা

    সেখানকার পৌর হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ এ অভিযান পরিচালনা করে। যাদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হল ভারতের শাসক হিন্দুত্ববাদী বিজেপি।

    নিরপেক্ষ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে জানান, গোটা বিষয়টি করা হয়েছে বেআইনিভাবে। উচ্ছেদের জন্য দিল্লি বিজেপির সভাপতির চিঠি পাওয়ার পর রাতারাতি মেয়র তৎপর হলেন। তাঁর কাছে ওই চিঠি ছিল যেন নির্দেশ। বেছে বেছে নষ্ট করা হয়েছে গরিবদের সম্পত্তি। লক্ষ্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ, মানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।তারা বলছে, ঐ এলাকায় অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলার জন্যই এই অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু নিরপেক্ষ সুত্র এবং সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, বিশেষভাবে তাদের বাড়িঘরকে লক্ষ্য করেই ভাঙচুরের এই অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির কোন কিছুই ভাঙ্গা হয়নি।কিন্তু দুষ্মন্ত দাভে বলেছেন, "অবৈধ স্থাপনা যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে পুরসভা সৈনিক ফার্ম যাক, গলফ লিংক যাক, যেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িই অবৈধ। কিন্তু তারা সেখানে যাবে না। যাবে গরিবদের উচ্ছেদ করতে।"



    দাভে বলেন, "দিল্লিতে ৭৩১টি অবৈধ কলোনি রয়েছে। সেখানে লাখ লাখ লোকের বাস। পুরসভা কোথাও গেল না। গেল মাত্র একটি এলাকায়। কারণ, তাদের লক্ষ্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়। বেছে বেছে তাদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে।" "পুলিশ ও পুর কর্তৃপক্ষ দেশের সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত নয়। তারা বিশ্বস্ত বিজেপির নেতাদের প্রতি।"




    এর আগে এই অভিযান থামানোর জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করার পরও চলতে থাকে উচ্ছেদ অভিযান।

    বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের জারি করা দ্বিতীয় একটি আদেশে ঐ এলাকায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। তবুও উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় সেখানে ছিল শত শত হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গা পুলিশ। যাদের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান।

    বিজেপির ‘বুলডোজার রাজনীতি’র সূত্রপাত উত্তরপ্রদেশ থেকে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিরোধীদের উপর বুলডোজার চালানোর হুমকি দিয়েছিল যোগী আদিত্যনাথ। নির্বাচনে জয়ের পর তাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘বুলডোজার বাবা’। রামনবমীতে মধ্যপ্রদেশে হিংসার ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে এই ‘যন্ত্রদানব’-এর সাহায্য নিয়েছিল সেই রাজ্যের বিজেপি সরকার।

    দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে যা ঘটেছে, তার সাথে মধ্য প্রদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর অনেক মিল রয়েছে। ঐ প্রদেশেও বিজেপি এখন ক্ষমতায়।

    সেখানকার খারগোন শহরে আরেকটি হিন্দু মিছিল যাওয়ার সময় গোলযোগ তৈরি হয়। ঐ শহরের বাসিন্দা মুসলমানরা বলছেন, ঐ ঘটনার পর তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।

    যাইহোক, গত বুধবার সকাল থেকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরপুরী এলাকার একটা বড় অংশ। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সিপি (ল’ অ্যান্ড অর্ডার) দীপেন্দ্র পাঠকের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী হাজির হয় ঘটনাস্থলে। ছিল আধা-সামরিক বাহিনীর সৈন্যরাও। এনডিএমসি-র মেয়র রাজা ইকবাল সিং সহ পুরো আধিকারিদের উপস্থিতিতে আসে পে লোডার এবং বুলডোজার, মুসলিম বাসিন্দাদের প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।

    জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দারা বলছেন, এক্সক্যাভেটার দিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙ্গা দেখে তারা হতবাক হয়েছেন। কারণ অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাদের কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। এক্সক্যাভেটার ব্যবহার করে যখন ভাঙচুর চলছিল তখন পাশের গলি থেকে নিজেদের সবকিছু চোখের সামনে শেষ হয়ে যাওয়ার বেদনাদয়ক দৃশ্য দেখা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।

    নিরপেক্ষ আইনজীবী দুশ্মন্ত দাভেও এমনটি জানিয়ে বলেছেন, "পুর আইনের ৩৪৩ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, সম্পত্তি ভাঙচুরের আগে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। নোটিশ দিতে হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, তাঁদের বক্তব্য শুনতে হবে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।"

    সাতটি এক্সক্যাভেটার যখন জাহাঙ্গীরপুরী মহল্লার সরু গলির ভেতরে ঢুকে পড়ে তখন শত শত সশস্ত্র পুলিশ সেগুলোকে ঘিরে পাহারা দিতে থাকে।

    এটি দিল্লির একটি মুসলিম প্রধান এলাকা। মূলত বাংলাভাষী মুসলমান ও হিন্দু পরিবারগুলোর বাস জাহাঙ্গীরপুরীতে। বেশ কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে এখানে। মুসলিমদের মসজিদ ভেঙ্গে ফেললেও কিন্তু কোন মন্দির ভাঙ্গা হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঘরবাড়ি ভাঙার ঘটনায় স্থানীয় মুসলিমরা বাসিন্দা বলছেন, তাদের সহায় সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

    বিয়াল্লিশ-বছর বয়সী গুফরান জাহাঙ্গীরপুরীতে তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে হন্যে হয়ে কিছু একটা খুঁজছিলেন। জিজ্ঞাসা করতে ভাঙারি দোকানের এই মালিক জানালেন, তার পুরনো নোটবুকটি তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

    "যাদের আমি টাকা ধার দিয়েছিলাম তাদের সবার নাম টুকে রাখা ছিল ঐ নোটবুকে। দোকানের সব মালামালের সাথে নোটবুকটিকে খুঁজে পাচ্ছিনা।"

    গুফরান আর তার পরিবারের সদস্যরা যখন তাদের জিনিসপত্রের খোঁজ করছিলেন তখন পাশের একটি মসজিদের একটি অংশ এক্সক্যাভেটার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়।
    এই মসজিদের কাছেই শনিবার হিন্দুরা সহিংসতা শুরু করেছিল।


    বুলডোজার দিয়ে যখন মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়, তখন তা দেখছিলেন মসজিদের ছাদে বসা কিছু অসহায় মুসলমান। পবিত্র রমজান মাসে তারা রোজা রেখেছিলেন।

    ঐ মসজিদের পেছনে ৩২ বছর ধরে বসবাস করছিলেন সাবিনা বেগম। তিনি এক ভাগ্নির হাত জড়িয়ে ধরে তিনি নীরবে কাঁদছেন। "আমাদের সবকিছু বদলে গেছে,", "এসব অপকর্ম করে বাইরের লোকজন। আর তার খেসারত দেই আমরা।"

    "এটা একটা নির্লজ্জ ঘটনা," চিৎকার করে বলছিলেন তিনি, "এটা আমার বাবার আমলের দোকান। এর সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে আমার কাছে। অভিযানের আগে তারা কেন আমার কাছে নোটিশ পাঠালো না?"

    দিনের আলোতে মুসলিমদের বাড়িতে হিন্দুত্ববাদী লুটপাট :

    এই ভাংচুরের মাঝেই দিনের আলোতে ঘরে ঘরে চুরি শুরু করে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা। জোর করে মুসলিমদের বাড়িঘরে ঢুকে হিন্দুত্ববাদীরা লুটপাট চালিয়েছে। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে মহিলারা বলছিলেন, "হিন্দুদের বিপদের সময় আমরা তাদের নিজের ঘরেও লুকিয়ে রেখেছি। - অথচ তারা আমাদের এত বড় ক্ষতি কীভাবে করতে পারল?"

    হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের জীবন এমনভাবেই দুর্বিষহ করে তুলেছে; হিন্দুত্ববাদের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলা ব্যতীত যার থেকে মুসলিমদের মুক্তি মিলবে না বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবীদগণ।

    হিন্দুত্ববাদীদের ধ্বংসযজ্ঞের কিছু হৃদয়বিদারক দৃশ্য:
















    লিখেছেন : উসামা মাহমুদ

    তথ্যসূত্র :

    1. 100 Muslims mobilised themselves to defend their neighbourhood against Hindutva extremist mob in #Jahangirpuri, #Delhi. Straight from Israel playbook!India.
    - https://tinyurl.com/462h5uch

    2. ভারত: ধর্মীয় সহিংসতায় ধসে পড়লো ঘরবাড়ি আর মানুষের স্বপ্ন
    - https://tinyurl.com/5v7avdmy

    3. দিল্লির বুকে চলল বুলডোজার, জাহাঙ্গীরপুরী জুড়ে শুধুই ক্ষোভ-কান্না
    - https://tinyurl.com/mtxv327r
    - https://tinyurl.com/2axvtxaa
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    তারাতো সুযোগ পেলেই আমাদের ক্ষতি করে তাই এই সকল গনতান্ত্রিক আইন আদালতের কি প্রয়োজন রয়েছে আর।মূলত ইসলামিক আইন ছাড়া কোন আইন আদালতই আমাদের পূর্ন অধীকার আদায় করে দিতে পারবে না।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment

    Working...
    X