নতুন কারিকুলামে পাঠ্যপুস্তক : ইসলামি বিষয়বস্তু তুলে দিয়ে স্থান পেয়েছে ‘হিন্দুত্ববাদ’
বর্তমানে যে শিক্ষাক্রম প্রাইমারিতে আছে, সেখানে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে 'খলিফা হযরত আবু বকর' শিরোনামে একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে, চতুর্থ শ্রেণিতে 'হযরত ওমর' শিরোনামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী আর পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বিদায় হজ নামে নবীজির জীবনী।
এছাড়া পঞ্চম শ্রেণিতে ‘বই’ নামে একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- যেটা ধর্মীয়গ্রন্থ কোরআন বিরোধী কবিতা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামে একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে; এই গল্পে মুসলিম শিক্ষার্থীকে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ, এখানে সেখান হচ্ছে 'হিন্দুত্ববাদ'।
সপ্তম শ্রেণিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটা গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালী পুজা ও পাঠা বলীর কাহিনী। এগুলো কীসের আলামত, তা জাতিকে অনুধাবন করতে হবে।
নতুন শিক্ষানীতি দশম শ্রেণি পযর্ন্ত ইসলাম ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে, ঐচ্ছিকও রাখা হয়নি, যা আগে আবশ্যিক ছিল। আমাদের কোমলমতি শিশুদের ইসলামবিদ্বেষী বানানোর আয়োজন চূড়ান্ত করেছে হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় দালালরা।
পাঠ্যবইয়ের এসকল হিন্দুয়ানী পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে সালমান অনিক নামক একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, "মহানবী(সঃ) এবং চার খলিফার মত চরিত্র এই দুনিয়ায় আর কাদের আছে? তাদের মহানুভবতা, উদারতা, শাসনব্যবস্থা, সহনশীলতা, মানবিকতা, সৃজনশীলতা আধুনিকতা - এগুলো উন্নত বিশ্ব গবেষণা করে, আর আমরা হতভাগ্যরা এগুলো পরিবর্তন করি। এই জন্যেইতো নতুন প্রজন্মের এই অবস্থা। অস্থিরতা আর মূল্যবোধের অবক্ষয়। আসুন এখনো সময় আছে পূর্বের পাঠ্যে ফিরে যায়। এর ভিতর আমাদের কল্যাণ নিহিত।’’
এই বিষয়গুলো সরাসরি প্রমাণ করে দেয় যে, দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জোর চেষ্টা চলছে। যাতে নতুন প্রজন্মের নৈতিক এবং এবং আত্মিকভাবে দুর্বল করে দিয়ে দেশের জনগণকে শোষণ করা যায়। ইসলামিক মূল্যবোধের শিক্ষিত একটি জাতিকে কোনোভাবে দমন করা সম্ভব নয়। তাই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, সময় থাকতে বাংলাদেশের মুসলিমদের এখনই সোচ্চার হওয়া উচিত। ভারতের মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা দেখে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, কিভাবে ধীরে ধীরে তাদেরকে কথিত অসাম্প্রদায়িকতা আর প্রগতিশীলতার ধোঁকায় ফেলে ধীরে ধীরে শক্তিহীন করে এখন গণহত্যার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
আগামী প্রজন্মকে তাই হিন্দুত্ববাদের সর্বগ্রাসী হুমকিথেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে যে, কিভাবে তারা ধীরে ধীরে এদেশকে অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০/১৫ বছর পর এক হিন্দুত্ববাদী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। পাঠ্যবই থেকে ইসলামী মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট সকল গল্প-কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
একটি মুসলিমপ্রধান দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কাদের হাতে- সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে যেকোন সচেতন মুসলিম আঁতকে উঠতে বাধ্য। যেমনঃ
- প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শ্যামল কান্তি ঘোষ।
- পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব বজ্র গোপাল ভৌমিক।
- কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস।
- সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার রায়।
- সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাশ।
- ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়।
- চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. পীযুষ কান্তি দন্ত।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী।
- বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান নারায়ন চন্দ্র পাল।
- ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব অজিত কুমার ঘোষ।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব পতিত পাবন দেবনাথ।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকার।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ।
- শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্রী বনমালী ভৌমিক।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাস।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার।
এরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি ইসলামকে মুছে ফেলার চেষ্টা নিয়ে সুকৌশলে এগিয়েছে। এখন বলতে গেলে হিন্দুত্ববাদীরাই পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইসলাম সম্পর্কিত যেকোন বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে হিন্দুয়ানী শিক্ষা সংবলিত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করছে; আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে বপন করছে হিন্দুত্ববাদের বীজ।
ইতোমধ্যে তারা পাঠ্যপুস্তক বাংলা বই থেকে যে বিষয়গুল বাদ দিয়েছে, সেগুলো হল:-
১. ক্লাস-২: ‘সবাই মিলে করি কাজ’ - শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
২. ক্লাস-৩: ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৩. ক্লাস-৪: খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৪. ক্লাস-৫ : ‘বিদায় হজ্জ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৫. ক্লাস-৫: আরও বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যা বাদশাহ আলমগীর মহত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে। এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিলো।
৬. ক্লাস-৫: শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবন চরিত। এ প্রবন্ধটিতে শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ ছিলো।
৭. ক্লাস-৬: ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরুষ্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষনীয় ঘটনা।
৮. ক্লাস-৬: মুসলিম দেশ ভ্রমণ কাহিনী- ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’।
৯. ক্লাস-৬: মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি।
১০. ক্লাস-৭: বাদ দেয়া হয়েছে মরু ভাষ্কর নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
১১. ক্লাস-৮: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি।
১২. ক্লাস ৯-১০: সর্ব প্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি।
১৩. ক্লাস ৯-১০: এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’ এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।
১৪. ক্লাস ৯-১০: বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা বঙ্গবানী কবিতাটি।
১৫. ক্লাস ৯-১০: গোলাম মোস্তাফার লেখা জীবন বিনিময় কবিতাটি। কবিতাটিতে মোঘল বাদশাহ বাবর ও তারপুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা।
১৬. ক্লাস ৯-১০: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতা।
অর্থাৎ সরাসরি কোরআন হাদিস উল্লেখ করে কোন ধর্মীয় শিক্ষা এই শিক্ষানীতিতে তো স্থান পায়নি, বরং কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধের মাধ্যমে ন্যূনতম যতটুকু ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছিল তাও এই শিক্ষানীতিতে পরিহার করা হয়েছে। একইসাথে যুক্ত করা হয়েছে ইসলামবিদ্বেষী লেখকদের বিভিন্ন গল্প ও কবিতা। সাথে যুক্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন পদ্য ও গদ্য।
৯০% মুসলমানের দেশে এটি কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এটি এদেশের মুসলিমদের ঈমান ও আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই বলছেন, এখনই সময় সবাই মিলে ধর্মহীন এই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতিকে উপরে ফেলার, ইসলাম ও মুসলিম মূল্যবোধ রক্ষা করার, এবং হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় দালালদের চিনে রাখার- যারা হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
১. পাঠ্যবইয়ে ইসলামি বিষয়বস্তু তুলে দিয়ে ‘হিন্দুত্ববাদ’
- http://tinyurl.com/mu83s4vb
বর্তমানে যে শিক্ষাক্রম প্রাইমারিতে আছে, সেখানে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণিতে 'খলিফা হযরত আবু বকর' শিরোনামে একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে, চতুর্থ শ্রেণিতে 'হযরত ওমর' শিরোনামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী আর পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বিদায় হজ নামে নবীজির জীবনী।
এছাড়া পঞ্চম শ্রেণিতে ‘বই’ নামে একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- যেটা ধর্মীয়গ্রন্থ কোরআন বিরোধী কবিতা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামে একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে; এই গল্পে মুসলিম শিক্ষার্থীকে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ, এখানে সেখান হচ্ছে 'হিন্দুত্ববাদ'।
সপ্তম শ্রেণিতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটা গল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালী পুজা ও পাঠা বলীর কাহিনী। এগুলো কীসের আলামত, তা জাতিকে অনুধাবন করতে হবে।
নতুন শিক্ষানীতি দশম শ্রেণি পযর্ন্ত ইসলাম ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে, ঐচ্ছিকও রাখা হয়নি, যা আগে আবশ্যিক ছিল। আমাদের কোমলমতি শিশুদের ইসলামবিদ্বেষী বানানোর আয়োজন চূড়ান্ত করেছে হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় দালালরা।
পাঠ্যবইয়ের এসকল হিন্দুয়ানী পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে সালমান অনিক নামক একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, "মহানবী(সঃ) এবং চার খলিফার মত চরিত্র এই দুনিয়ায় আর কাদের আছে? তাদের মহানুভবতা, উদারতা, শাসনব্যবস্থা, সহনশীলতা, মানবিকতা, সৃজনশীলতা আধুনিকতা - এগুলো উন্নত বিশ্ব গবেষণা করে, আর আমরা হতভাগ্যরা এগুলো পরিবর্তন করি। এই জন্যেইতো নতুন প্রজন্মের এই অবস্থা। অস্থিরতা আর মূল্যবোধের অবক্ষয়। আসুন এখনো সময় আছে পূর্বের পাঠ্যে ফিরে যায়। এর ভিতর আমাদের কল্যাণ নিহিত।’’
এই বিষয়গুলো সরাসরি প্রমাণ করে দেয় যে, দেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জোর চেষ্টা চলছে। যাতে নতুন প্রজন্মের নৈতিক এবং এবং আত্মিকভাবে দুর্বল করে দিয়ে দেশের জনগণকে শোষণ করা যায়। ইসলামিক মূল্যবোধের শিক্ষিত একটি জাতিকে কোনোভাবে দমন করা সম্ভব নয়। তাই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, সময় থাকতে বাংলাদেশের মুসলিমদের এখনই সোচ্চার হওয়া উচিত। ভারতের মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা দেখে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, কিভাবে ধীরে ধীরে তাদেরকে কথিত অসাম্প্রদায়িকতা আর প্রগতিশীলতার ধোঁকায় ফেলে ধীরে ধীরে শক্তিহীন করে এখন গণহত্যার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
আগামী প্রজন্মকে তাই হিন্দুত্ববাদের সর্বগ্রাসী হুমকিথেকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে আগে বুঝতে হবে যে, কিভাবে তারা ধীরে ধীরে এদেশকে অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০/১৫ বছর পর এক হিন্দুত্ববাদী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। পাঠ্যবই থেকে ইসলামী মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট সকল গল্প-কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
একটি মুসলিমপ্রধান দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কাদের হাতে- সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে যেকোন সচেতন মুসলিম আঁতকে উঠতে বাধ্য। যেমনঃ
- প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শ্যামল কান্তি ঘোষ।
- পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব বজ্র গোপাল ভৌমিক।
- কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস।
- সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার রায়।
- সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাশ।
- ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়।
- চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. পীযুষ কান্তি দন্ত।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী।
- বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান নারায়ন চন্দ্র পাল।
- ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব অজিত কুমার ঘোষ।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব পতিত পাবন দেবনাথ।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকার।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ।
- শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্রী বনমালী ভৌমিক।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাস।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার।
এরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পুরোপুরি ইসলামকে মুছে ফেলার চেষ্টা নিয়ে সুকৌশলে এগিয়েছে। এখন বলতে গেলে হিন্দুত্ববাদীরাই পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইসলাম সম্পর্কিত যেকোন বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে এর পরিবর্তে হিন্দুয়ানী শিক্ষা সংবলিত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করছে; আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে বপন করছে হিন্দুত্ববাদের বীজ।
ইতোমধ্যে তারা পাঠ্যপুস্তক বাংলা বই থেকে যে বিষয়গুল বাদ দিয়েছে, সেগুলো হল:-
১. ক্লাস-২: ‘সবাই মিলে করি কাজ’ - শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
২. ক্লাস-৩: ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৩. ক্লাস-৪: খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৪. ক্লাস-৫ : ‘বিদায় হজ্জ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
৫. ক্লাস-৫: আরও বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যা বাদশাহ আলমগীর মহত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে। এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিলো।
৬. ক্লাস-৫: শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবন চরিত। এ প্রবন্ধটিতে শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ ছিলো।
৭. ক্লাস-৬: ড. মুহম্মদ শহীদু্ল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরুষ্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষনীয় ঘটনা।
৮. ক্লাস-৬: মুসলিম দেশ ভ্রমণ কাহিনী- ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’।
৯. ক্লাস-৬: মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি।
১০. ক্লাস-৭: বাদ দেয়া হয়েছে মরু ভাষ্কর নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত।
১১. ক্লাস-৮: বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি।
১২. ক্লাস ৯-১০: সর্ব প্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি।
১৩. ক্লাস ৯-১০: এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’ এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি।
১৪. ক্লাস ৯-১০: বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা বঙ্গবানী কবিতাটি।
১৫. ক্লাস ৯-১০: গোলাম মোস্তাফার লেখা জীবন বিনিময় কবিতাটি। কবিতাটিতে মোঘল বাদশাহ বাবর ও তারপুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা।
১৬. ক্লাস ৯-১০: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতা।
অর্থাৎ সরাসরি কোরআন হাদিস উল্লেখ করে কোন ধর্মীয় শিক্ষা এই শিক্ষানীতিতে তো স্থান পায়নি, বরং কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধের মাধ্যমে ন্যূনতম যতটুকু ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা ছিল তাও এই শিক্ষানীতিতে পরিহার করা হয়েছে। একইসাথে যুক্ত করা হয়েছে ইসলামবিদ্বেষী লেখকদের বিভিন্ন গল্প ও কবিতা। সাথে যুক্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন পদ্য ও গদ্য।
৯০% মুসলমানের দেশে এটি কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এটি এদেশের মুসলিমদের ঈমান ও আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই বলছেন, এখনই সময় সবাই মিলে ধর্মহীন এই হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতিকে উপরে ফেলার, ইসলাম ও মুসলিম মূল্যবোধ রক্ষা করার, এবং হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় দালালদের চিনে রাখার- যারা হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
১. পাঠ্যবইয়ে ইসলামি বিষয়বস্তু তুলে দিয়ে ‘হিন্দুত্ববাদ’
- http://tinyurl.com/mu83s4vb
Comment