পূর্ব তুর্কিস্তান, মুসলিম উম্মাহর স্মৃতি থেকে ভুলিয়ে দেওয়া এক জনপদের নাম। দখলদার হান চাইনিজরা সেখানে মুসলিমদের উপরে চালাচ্ছে শতাব্দির ভয়াবহতম গণহত্যা। আগেও তারা এমন করেছে, যুগ যুগ ধরেই ছোট ছোট পরিসরে ক্র্যাকডাউন চালিয়ে এখন তারা পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসিমদের উপর চূড়ান্ত গণহত্যার মিশন বাস্তবায়ন করছে।
পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমদের সাথে ঘটে যাওয়া এমনই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা হল উরুমচি গণহত্যা। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৯ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ দখলদার চীনা সরকার পূর্ব তুর্কিস্তানের উরুমচি শহরে মুসলিমদের উপর এক বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে হাজার হাজার মুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
কয়েক হাজার মুসলিম সেদিন জড়ো হয়েছিল তাদের উপর চীনা দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদটুকুও সহ্য হয়নি দখলদার অপশক্তির। সেদিন তারা নির্বিচারে গুলি চালায় প্রতিবাদি মুসলিমদের উপরে। গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার শান্তিপ্রিয় মুসলিমকে, তাদেরকে জোর পূর্বক প্রেরণ করা হয় বন্দীশিবিরে। জোর করে বাড়িঘর থেকে তুলে নিয়ে নিখোঁজ করে দেওয়া হয় অসংখ্য অগণিত মুসলিমকে।
আগেই অভিযোগ ছিল যে, পূর্বে গ্রেফতারকৃত কয়েক হাজার মুসলিমকে গুম করে দিয়েছে বর্বর চীনা দখলদার কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনারই তদন্ত সাপেক্ষে সত্য জানতে এবং নিখোঁজ মুসলিমদের সঠিক খোঁজ পেতেই ঐ বিক্ষভের আয়জন করা হয়েছিল। আর এই সত্য জানতে চাওয়া এবং নিখোঁজ আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ জানতে চাওয়াই কিনা কাল হয়ে দাঁড়ালো, গুম ও হত্যার শিকার হতে হল আরও কয়েক হাজার মুসলিমকে!
আর এই ঘটনাকে কিনা বিশ্ব মিডিয়া প্রচার করেছিল চীনা হান ও মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা হিসেবে! যেখানে চীনা সেনা, পুলিশ ও সাধারণ হান নাগরিকরা মিলে মুস্লিমদেরকে পাইকারিভাবে হত্যা করেছে, সেখানে দাবি করা হয় যে, পুরো ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নাকি মাত্র ১৬০ জন মানুষ মারা গিয়েছে; আহতের সংখ্যা বলা হয় হাজারের মত! দিনে দুপুরে এ যেন এক জঘন্য মিত্থাচার।
প্রায় ৭০ বছরের বেশি সময় থেকে চীনা হানরা উইঘুরদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। উইঘুরদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। ঐদিন নাস্তিক্যবাদী চীনা সরকার কর্তৃক ইসলাম ও মুসলিমদের উপর বৈষম্যমূলক আচরণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন মুসলিমরা। এতেই চীনা সরকারের বিশাল সেনাবহর চড়াও হয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর।
মুসলিম জনগোষ্ঠীকে চীন ও এর সংস্কৃতির জন্য হুমকি উল্লেখ করে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালায় তারা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের যাঁতাকলে নিরস্ত্র উইঘুর মুসলমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের স্বীকার হয় দেশটিতে। ইসলামি নীতি-আদর্শকে মুছে ফেলেতে চতুর্মুখি আগ্রাসন চালায় তারা।
উইঘুর মুসলিমদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দী শিবির। যেখানে বর্তমানে অন্তত ৩০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দী করে রেখেছে চীন সরকার। সেখানে তাদেরকে জোর করে চাইনিজ মতাদর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে।
গণহত্যার পর থেকে চীনা কর্তৃপক লজ্জাবতী পর্দানশীন মুসলিম নারীদের ফ্যাশন শো এবং সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মতো কাজে অংশ নিতে বাধ্য করেছে। পর্দার বিধানকে নির্মূল করতে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করেছ। চীনা হান পুরুষদের বিয়ে করতে বাধ্য করেছে।
এছাড়াও মুসলিম পুরুষদের বন্দিশিবিরে আটকে রেখে বাড়িতে চীনা হান পুরুষদের সাথে মুসলিম নারীদের ঘুমাতে বাধ্য করা হয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য করা হয়। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আইইউডিএস, ইনজেকশন এবং টেবলেট দিয়ে জোর পূর্বক বন্ধাকরণ করা হয়েছে।
এরপরও চীন সরকারের বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই। চীনা পণ্যে সয়লাভ দুনিয়া, তাই তাদের এসব অপরাধকে ছোট অন্যায় হিসেবে দেখছে বর্তমান ভোগবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যাবস্থা। অসহায় এই মজলুম মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই। তাদের পক্ষে আওয়াজ তলার মত কেউও যেন নেই!
প্রতিবেদক : ইউসুফ আল-হাসান
তথ্যসূত্র :
——–
1. 2009 Urumqi Massacre
– https://tinyurl.com/27rcubnz
2. চীনের শিনচিয়াং প্রদেশ এখনো অশান্ত
– https://tinyurl.com/5245uyv9
Comment