Announcement

Collapse
No announcement yet.

ভারত ও ইসরাইলের অস্ত্র বাণিজ্য : সম্পর্কের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এবং উপমহাদেশের বর্তমান বাস্তবতা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ভারত ও ইসরাইলের অস্ত্র বাণিজ্য : সম্পর্কের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এবং উপমহাদেশের বর্তমান বাস্তবতা

    ভারত ও ইসরাইলের অস্ত্র বাণিজ্য : সম্পর্কের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এবং উপমহাদেশের বর্তমান বাস্তবতা


    কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত মাসেই ভারতের রাজধানী সফর করেছে ইজরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। গ্যান্টজ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে “প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারিত এবং গভীরতর” করার লক্ষ্যে তার এই সফর।

    প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তা তার এই সফরে সাথে ছিল, পাশাপাশি ইসরায়েলের অস্ত্র শিল্পের প্রতিনিধিরাও ছিল।১৯৯২ সালে সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে, ভারত ইসরায়েলের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অস্ত্র ক্রয়কারী হয়ে উঠেছে।

    সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইসরায়েলি সরকার সামরিক হার্ডওয়্যারের বৃহত্তম এবং সম্ভবত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রাহক হিসাবে ভারতীয় অস্ত্র বাজারের উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। অস্ত্র পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত ইসরাইলের তৈরি অস্ত্রের বৃহত্তম ক্রেতা, প্রতি বছর ইসরাইল থেকে অস্ত্র কিনতে ভারত ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করে।

    ২০১৭ সাল থেকে ভারত একটি কৌশলগত অংশীদার এবং ইসরায়েলি অস্ত্রের সহ-প্রযোজক হয়ে উঠেছে। গত পাঁচ বছর ধরে, উভয় দেশ যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং বিনিময় সফরের আয়োজন করেছে।কিন্তু সব সময় এমনটি ছিল না।
    কৌশলগত কারণে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের প্রকাশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। গত ৩০ বছরে ভারতের অস্ত্র বাণিজ্য এবং ইসরায়েলের সাথে তার সম্পর্ক ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে, যেন এই সম্পর্কোন্নয়নের আসল ধর্মীয় উদ্দেশ্য ও তাদের ইসলাম-বিদ্বেষের অভিন্ন স্বার্থকে জনদৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখা যায়।

    ভারত-ইসরাইল সম্পর্কের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

    যদিও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সামরিক চুক্তিগুলি কেবল প্রসারিত হয়েছিল, তবে ১৯৯২ সালের আগে থেকেই গোপন সম্পর্ক ছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত ও জায়নবাদী ইসরাইলের মধ্যে। ইসরায়েল ১৯৬২ সালে চীনের বিরুদ্ধে এবং পরে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

    ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতীয় সামরিক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি প্রযুক্তি দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছিল।১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে দুই দেশের সামরিক নেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি মিথস্ক্রিয়া হয়। পরে ভারত ১৯৯৫ সালে তেল আবিবকে একটি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে বরাদ্দ করতে সম্মত হয়েছিল।

    ১৯৯৯ সালেও ইসরায়েল পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে ভারতকে জরুরি সহায়তা প্রদান করে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ ছিল, যা ইসরায়েলকে ভারতের একটি নির্ভরযোগ্য সামরিক অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।এখানে উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারত তার হিন্দুত্ববাদী আসল চেহারা লুকিয়ে রাখতে সচেষ্ট ছিল, কিছু উদ্দেশ্য পূরণ ও লক্ষ্য অর্জনের আগে তারা সেই চেহারা পৃথিবীবাসির সামনে আনতে চায়নি।

    সেক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একদল লোককে ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পড়িয়ে ভারতের মসনদে বসিয়ে রাখা হয়, আড়ালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা শক্তি সঞ্চার করতে থাকে এবং ভারত ও প্রতিবেশী অঞ্চলগুলতে মুসলিম নিধন চালাতে থাকে। তবে এই সময়ে তারা তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশকে টেকসই প্রমাণের জন্য ফিলিস্তিনিদের মৌখিক সমর্থন প্রদান এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার নাটক করে এসেছে।

    শীতল যুদ্ধের পরে সম্পর্ক গলে যায়

    মূলত স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ভারত তার অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছে। রাশিয়া তার বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসাবে রয়ে গেলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যও মূল সরবরাহকারী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গেই ভারতের এই সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতির পরিচয় দিয়েছে।

    স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপ্রি) মতে, ২০২১ সালে ভারতের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ৭৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারত ও সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র আমদানিকারক ছিল। উভয় দেশই বিশ্ব অস্ত্র বাণিজ্যের ১১ শতাংশ করে ধারন করে।এদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈরিতার অর্থ হল, দুই দেশের মধ্যে কার্যত অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

    ২০২১ সালে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশই করেছে ভারত ও চীন দেশ দু’টি। এবছর এপ্রিলে সিপ্রি জানায় “কোভিড-১৯ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি ২০১৫ সাল থেকে বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার অবসান ঘটায়নি।

    ইসরায়েলি অস্ত্রের গন্তব্য স্থল হিসেবে ভারত

    ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ইসরায়েলি অস্ত্র রপ্তানির ১৫ শতাংশ ভারতে পদার্পণ করে। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এটি ২৭ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভারত নজরদারি সরঞ্জাম, ড্রোন এবং সারফেস-টু-এয়ার-মিসাইলের মতো অস্ত্রের মধ্যে ক্রয়ের পরিসীমা প্রসারিত করেছিল।

    ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ভারত ইসরায়েলি অস্ত্রের জন্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েল থেকে সমস্ত অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৪২.১ শতাংশ ভারতে এসেছে। আজেরবাইজন (১৩.৯ শতাংশ) এবং ভিয়েতনাম (৮.৫ শতাংশ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৬.২ শতাংশ) সহ অন্যান্য প্রধান গ্রাহকও তৈরি করেছে ইসরাইল। সিপ্রির মতে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইসরায়েল থেকে ভারতে অস্ত্র সরবরাহ ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

    এদিকে, ২০১২-১৬ থেকে ২০১৭-২০২১ সালের মধ্যে ইসরাইলি অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। অস্ত্রের উপর তাদের নিজস্ব ব্যয়ও ৩.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
    কিন্তু ভারত ইসরাইলের এই সামরিক সম্পর্ক সামরিক হার্ডওয়্যারের বাইরে চলে যায়, আর এমনটাই হওয়ার ছিল। ২০১৯ সালে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত করার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিক অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের প্রসঙ্গে ভারতকে এই অঞ্চলে “ইসরায়েলি মডেল” প্রতিলিপি করার পরামর্শ দিয়েছিল।

    সুতরাং, ভারতের কাশ্মীরের স্বায়ত্তসাশন বাতিল এবং অবৈধভাবে কাশ্মীর দখল যে সম্পূর্ণ অ্যামেরিকান-ইসরাইলি প্রেসক্রিপশনে হয়েছে, সেটাও এখন স্পষ্ট।২০২০ সালে ভারত ও ইসরাইল সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। “বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকি মোকাবেলায় ভারতের সাথে সহযোগিতা আরও গভীর করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ,” ইসরাইলের জাতীয় সাইবার ডিরেক্টরেটের (আইএনসিডি) মহাপরিচালক ইগাল উন্না সে সময় এই কথা বলেছিল।


    দ্য হিন্দুর মতে, ‘২০১৭ সালের জুলাই মাসে মোদির ইসরাইল সফরের সময় সাইবার নিরাপত্তাকে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই বছরের শুরুর দিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, ২০১৭ সালে মোদির সফরের সময় ভারত পেগাসাস সফ্টওয়্যারটি সংগ্রহ করেছিল- যা অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং বিরোধী নেতা সহ প্রায় ৩০০ জন ভারতীয়ের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।


    ভারত ইসরাইলের কাছ থেকে কোন অস্ত্র কিনবে?

    ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারত ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রথম দুটি সুপার ডিভোরা এমকে ২ ফাস্ট প্যাট্রোল বোট কিনেছিল। শীঘ্রই নয়াদিল্লী ইসরাইলি অনুসন্ধানকারী এবং হেরন মানববিহীন বায়বীয় যানবাহন (ইউএভি) এবং সশস্ত্র ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং সেন্সর এবং ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সিস্টেম বা ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিশেষ বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত ট্যাভর আক্রমণ অস্ত্র সহ বিশেষ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি শুরু করে।

    ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারত যুদ্ধ বিমানের রাডার সরঞ্জাম, সশস্ত্র ইউএভি, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সহ ইসরায়েলের কাছ থেকে অন্যান্য হার্ডওয়্যার পেয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে ১০৮টি ইসরায়েলি অনুসন্ধানকারী ড্রোন এবং ৬৮টি নিরস্ত্র হেরন ১এস রয়েছে বলে জানা গেছে। এটিতে বেশ কয়েকটি হার্পি ড্রোনও রয়েছে – যা আত্মঘাতী হামলা ড্রোন হিসাবেও পরিচিত।

    ইসরায়েল ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে তার দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি সামরিক নিয়ন্ত্রণে বাস করে এবং তাদের নাগরিক অধিকার স্থগিত করেছে ইসরাইল। “ইসরাইল একটি বর্ণবাদী এবং বসতি স্থাপনকারী-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র, রাজ্য ও কর্পোরেশনগুলির কাছ থেকে প্রাপ্ত সমর্থনের কারণে দায়মুক্তির সাথে তার অবৈধ কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে” – এই কথাগুলো পিপলস ডিসপ্যাচ এবং নিউজক্লিকের সহযোগিতায় বিডিএস ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

    ২০২০ সালের শুরুর দিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মোদির সরকার ১৬,৪৭৯ টি নেগেভ লাইট মেশিনগান অর্ডার করেছিল, যা কিছু ভারতীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের উপর তার সাম্প্রতিক “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” ভারত ইসরায়েলি নির্মিত “স্পাইস ২০০০” বোমা ব্যবহার করেছিল।গত বছর, চীনের সাথে অচলাবস্থার সময় ভারত ইসরায়েল এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) থেকে চারটি হেরন-টিপি মিডিয়াম অ্যালটিটিউড লং এন্ডুরেন্স ইউএভি ইজারা নেয় এবং শেষ পর্যন্ত কিনে নেয়।

    ভারত-ইসরাইলের অস্ত্র সহ-উৎপাদন

    গত এক দশক ধরে, ভারত তার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং মোদীর “মেক ইন ইন্ডিয়া” পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অস্ত্র উৎপাদনে আত্মনির্ভরতার উপর উল্লেখযোগ্য জোর দিয়েছে। “দেশীয় অস্ত্র শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য, ২০২১ সালের ভারতীয় সামরিক বাজেটে মূলধন ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদিত অস্ত্র অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।”

    আর এই অভিযানের অংশ হিসাবে, ভারত ইসরায়েলের সাথে সহ-উৎপাদনে অস্ত্র তৈরিতে কাজ করেছে।২০১৭ সালে, ইসরাইল অস্ত্র শিল্প এবং ভারতীয় নির্মাণ সংস্থা পুঞ্জ লয়েড মালানপুরে প্রথম বেসরকারী ছোট অস্ত্র কারখানা তৈরি করে, যার নাম পুঞ্জ লয়েড রক্ষ সিস্টেমস বা পিএলআর সিস্টেমস।

    আদানি গ্রুপ এবং এসকে গ্রুপের সাথে যৌথ উদ্যোগে পিএলআর সিস্টেমস অনুসারে কারখানাটি তাভোর অ্যাসল্ট রাইফেল, এক্স ৯৫ অ্যাসল্ট রাইফেল, গালিল স্নাইপার রাইফেল, নেগেভ লাইট মেশিনগান এবং ভারতীয় বিশেষ বাহিনী সহ ভারতীয় সামরিক বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত উজি সাব মেশিনগান তৈরি করে।

    পরে ২০১৭ সালে কল্যাণী রাফায়েল অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড (কেআরএএস), ভারতের কল্যাণী স্ট্র্যাটেজিক সিস্টেমস লিমিটেড এবং ইসরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড সিস্টেমের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য স্পাইক অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল তৈরি শুরু করে। এটিই প্রথম বেসরকারী সংস্থা যারা ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছিল।

    ২০১৯ সালে এই কেআরএএস ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বারাক-৮ তৈরি করার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছিল।অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পিনি ইয়ুংম্যান এক বিবৃতিতে বলে, “আমরা রাফায়েলে আমাদের ভূমিকা নিয়ে গর্বিত।

    শুধু কেআরএএস-এ নয়, মেক ইন ইন্ডিয়ায় আমাদের অংশগ্রহণ এবং ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রাণবন্ত প্রতিভার সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্কের জন্যও।”২০২১ সালের শেষের দিকে সামরিক বাহিনী স্কাইস্ট্রিকার ড্রোনের অর্ডার দেয়। এটি এখন দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরুতে ইসরাইলের এলবিট সিস্টেমস এবং ভারতের আদানির মালিকানাধীন আলফা ডিজাইন টেকনোলজিসের মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগে উতৎপাদিত হবে।

    সিএসআইএস-এর ইউএস-ইন্ডিয়া পলিসি স্টাডিজের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং ওয়াধওয়ানি চেয়ার রিচার্ড রোসো সিএনবিসিকে বলেন, “কল সেন্টার এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টের মতো বড় মাপের জিনিসগুলিতে ভারত ভাল, তবে ইসরাইল কাজ করছে প্যাকেজ সফ্টওয়্যার নিয়ে। ভারতের ব্যাক-অফিস বায়োটেক গবেষণা চলছে; তবে ইসরাইলের প্রকৃতপক্ষে এমন পণ্য রয়েছে, যা ভারতের চেয়ে বেশি পরিমানে বিশ্ব বাজার দখল করে আছে।

    ” সুতরাং, এই ইসরায়েলি সংস্থাগুলি একটি বৃহত্তর উৎপাদন বেস খুঁজছিল। এবং এই ক্ষেত্রে এজন্য তারা ভারত যেতে প্রস্তুত হয়েছে।কথিত আছে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারত যেসকল নজরদারি সরঞ্জাম বা অন্যান্য কৌশলগত অস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলোর যোগানদাতাও ইহুদিবাদি ইসরাইল। আর কথিত বন্ধুরাষ্ট্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিশ্বে সর্বোচ্চ প্রাণহানী হওয়ার পেছনেও ইসরাইলি পলিসির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়- যা এখন ওপেন সিক্রেট। এমনকি এই খবরও চাওর হয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তজুড়ে ভারত ইসরাইল নির্মিত মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করে রেখেছে আমাদের ‘বন্ধু’ ভারত।


    উপমহাদেশে ভারত-ইসরাইল যৌথ প্রভাব-বলয় ও ইসরাইলি স্বার্থ

    আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের নব-উত্থানে শঙ্কিত পশ্চিমা-জায়নবাদী জোট। পশ্চিম আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা বৃহত্তর শাম ও আরব উপদ্বীপেও কথিত ‘সন্ত্রাস নির্মূল’এর নামে তাদের ইসলাম নির্মূলের অভিযান চূড়ান্ত ব্যর্থতা বরণের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। পরিস্থিতি যখন তাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন তারা তাদের ইসলাম নির্মূল মিশনে রাশিয়া-ইরান জোট এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করেছে।

    রাশিয়া আফ্রিকা ও বৃহত্তর শামে উপস্থিতি জোরদার করেছে, সেই সাথে সেখানে রয়েছে ইরান ও তুর্কিয়ে; চীন ধীরে ধীরে তার জায়গা তৈরি করছে।উপমহাদেশে মুসলিম নিধন ও হিন্দুত্ববাদী অখণ্ড ভারত কায়েমের মিশন জোরেশোরে শুরু হয়েছে; কাশ্মীর পরিণত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক সামরিকায়িত অঞ্চলে।

    আসামে ‘বাংলাদেশি (মুসলিম) খেদাও’ স্লোগান তুলে চূড়ান্ত প্রস্তুত হচ্ছে মুসলিম গণহত্যার মঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে যার সরাসরি প্রভাব পড়া শুধুই সময়ের ব্যাপার। মিয়ানমারে প্রক্সিযুদ্ধ শুরুর পায়তারা করছে পরাশক্তিগুলো, যা ধীরে ধীরে পূর্ব-ভারত ও বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পরতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।

    এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল সংলগ্ন মিয়ানমারের চিন রাজ্য এবং ভারতের মিজোরাম রাজ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৮৬%; নাগাল্যান্ড মনিপুর ও মেঘালয়ে খ্রিস্টান জনসংখ্যা যথাক্রমে ৮৮%, ৪২% ও ৭৫%। বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা একই হারে বেড়েছে।

    বাংলাদেশ তাই একদিক থেকে খ্রিস্টবাদের এবং অপর দিক থেকে হিন্দুত্ববাদের হুমকির মধ্যে রয়েছে, এটাও এখন ওপেন সিক্রেট। সম্প্রতি কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের খ্রিস্টান দলটির পার্বত্য অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা এই বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে; খ্রিস্টানায়িত পূর্ব-ভারতেও এই দলটি যথেষ্ট সক্রিয়।

    উপমহাদেশে ইহুদিদের আদি নিবাস থাকার গুঞ্জন ও প্রমাণ রয়েছে। ভারতের সাথে ইসলাম-বিদ্বেষের যৌথ স্বার্থ ছাড়াও ইসরাইলের স্বার্থ রয়েছে এখানেও। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন মিজোরামের খ্রিস্টানায়িত জনগন এখন নিজদেরকে বনি-ইসরাইলের হারিয়ে যাওয়া বনি-মনেসা গোত্রের বলে দাবি করছে; ইসরাইলি প্রধান রাব্বাই এসে এই দাবির সত্যতাও যাচাই করেছে অনেক আগেই। মিজোরাম থেকে এখন অধিক পরিমানে ইসরাইলে মাইগ্রেশন হচ্ছে।

    কথিত আছে যে, মিজরামের খ্রিস্টান চার্জগুলো এখন ধীরে ধীরে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগে রূপান্তরিত হচ্ছে।ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই প্রশ্ন রেখেছেন, দুনিয়াজুড়ে খ্রিস্টান-মুসলিম দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর জায়নবাদী ইসরাইল কি উপমহাদেশের এই ঘোলাটে পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে এখানেও নিজেদের ‘স্বার্থ উদ্ধারে’ তৎপর হবে না?

    উপমহাদেশের ইসরাইল খ্যাত ভারতকে মুসলিম নিধনে সাহায্য করার পাশাপাশি তারা কি এখানে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে না? আর এই লক্ষেই কি তারা ভারতকে সহায়তা বা বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধির কাজ করছে না? উত্তরগুলো ‘হ্যাঁ’ হলে আমাদের আবার ভেবে দেখা উচিত, গোটা উপমহাদেশের মুসলিমদের সামনে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলিমদের সামনে কি ভীষণ চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।

    বাংলা ও উপমহাদেশের আকাশে আজ দুর্যোগের কাল মেঘ ঘনীভূত হয়েছে; নিকশ কাল আঁধারে ছেয়ে গেছে অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের ভবিষ্যৎ। ধেয়ে আসছে একের পর এক প্রলয়ঙ্কারি ঝড়। কিন্তু এই ঝড় এড়িয়ে সকল বিপদ মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে হবে আমাদেরকেই, সমাধান খুঁজতে হবে কুরআন ও সুন্নাহতে।

    প্রলয়ঙ্কারি এই ত্রিমুখী ফিতনা মোকাবিলায় আমাদের জন্য আর বিকল্প কোন পথ খোলা আছে কি? দাঁতে দাঁত কামড়ে নববী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উম্মাহর হাল ধরা ব্যতীত আর কোন উপায় আছে কি? প্রস্তুতি যখন দুর্বল, আলেমরা যখন বন্দী, বিপদ যখন আসন্ন, শত্রু যখন প্রস্তুত- তখন ইসলামপ্রেমী যুবকদের এগিয়ে আসা ছাড়া বাঁচার কোন রাস্তা আছে কি?
    এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি…


    লিখেছেন : আব্দুল্লাহ বিন নজর


    তথ্যসূত্র :
    ----

    1. India and Israel: The arms trade in charts and numbers
    https://tinyurl.com/2tzm8zcf
    2. India Reportedly Ready to Clear $3 Billion in Arms Deal With Israel
    https://tinyurl.com/yffbv8yz
    3. India’s Modi Goes to Jerusalem: A Rundown of India’s Hefty Arms Deals With Israel
    https://tinyurl.com/2tdkz3sh
    4. Israel has long exported arms to India. Now it’s selling spyware too
    https://tinyurl.com/y5yjfst9
    5. Israel likely to become India’s largest arms supplier
    https://tinyurl.com/f28dmdf3
    6. পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রাজনৈতিক ধর্মান্তরকরণ: বাংলাদেশের কি উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার আছে?
    https://tinyurl.com/w7n33rws
    7. A Lost Tribe of Israel Returns from India
    https://tinyurl.com/47cxcete













    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    বাহ! কুরআনের বাণীর কত চমৎকার সামঞ্জস্যতা দেখতে পাচ্ছি পৃথিবীর বাস্তবতায়। আল্লাহ তায়ালা তো ঠিকই বলেছেন, "তোমরা মুমিনদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণের ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে সবচে কঠোর পাবে ইহুদী এবং মুশরিকদের।"
    শত্রু অভিমুখী যুদ্ধা।

    Comment


    • #3
      👉বাঁচতে চাই ইসলাম নিয়ে👈 👉মরতে চাই ইসলাম নিয়ে👈
      ⚔️ইনশাআল্লাহ⚔️

      Comment


      • #4
        ইজরাইল যেহেতু একটি সুদক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জাতি তাই আমাদেরো আরো দক্ষ এবং জ্ঞানী হতে হবে সর্ববিষয়ে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং আমাদের পদক্ষেপ গুলো শতভাগ সঠিক হতে হবে তাহলে তারা আমাদের সাথে কৌশল খাটিয়ে পেরে উঠবে না । তখন আমাদের ও তাদের মাঝে অবশিষ্ট থাকবে শক্তির লড়াই।
        পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

        Comment

        Working...
        X