ভারতের হরিয়ানায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদী পুলিশের হয়রানি ও নৃশংসতা
ভারত জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা মামলায় মুসলিমরা পেরেশান। তাদের যখন যা ইচ্ছে মুসলিমদের সাথে তাই করছে।
তারই ধারাবাহিকতায়, গত ২৬ জুলাই ভোর রাতে, ১০টি পুলিশ জিপ এবং ৬টি পুলিশ বাস হরিয়ানার নুহ জেলার ১০টি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘেরাও করে। ৬০০ এরও বেশি পুলিশ ক্যাম্পে ঢুকে এবং প্রতিটি সেক্টরে যায়। ঘুমন্ত মুসলিমদের দরজায় গিয়ে বলতে থাকে “দরওয়াজা খোলো, ওয়ার্না দরওয়াজা তোড় দুঙ্গা (দরজা খোল নইলে ভেঙ্গে ফেলব)।”
চান্দেনী-১ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সফিকা জানিয়েছেন, প্রতিটি মুসলিম পরিবারকে প্রায় ১০-১৫জন পুলিশ হয়রানি করেছে।
সফিকা এবং তার ভাই হাসান, যারা উভয়েই রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের উপর নৃশংসতার বিষয়ে সোচ্চার, তারা জানিয়েছে, নাঙ্গেলির ওয়ার্ড-০৭ ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যায়। সেখানেও হিন্দুত্ববাদী পুলিশ সহিংসতার ঘটনা ঘটায়।
সেখানে ৬০ বছর বয়সী নুরবাহার নামে এক বৃদ্ধা মহিলা বলেছে, পুলিশ তাকে, তার ছেলে, তার পুত্রবধূ এবং তার পুত্রবধূর বোনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। কারণ ১৭ বছর বয়সী সাবাকুন নাহার, ব্যাঙ্গালোরের শহরতলির একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং সে তীব্র যক্ষ্মা রোগী, চিকিৎসা পাওয়ার আশায় নাঙ্গেলিতে তার বোনের সাথে থাকতে এসেছিলেন।
হিন্দুত্ববাদীরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের এলাকা ছেড়ে যেতে দেয় না। অন্য রাজ্যে যাওয়া তো দূরের কথা। তাই পুলিশ এই অসুস্থ মেয়েটিকে তাদের লাঠি দিয়ে মারধর করে। এবং সাবাকুনকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অন্যান্য বাসিন্দাদেরও মারধর করে।
নুরবাহার বলেছেন “তারা আমাকে ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যায় এবং লাঠি দিয়ে মারতে থাকে।” একথা বলে সে ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের কারণে কাঁদতে থাকে।
নাঙ্গেলি ক্যাম্পের বাসিন্দা ইসলাম বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের নিজেদের কোনো বাড়ি নেই। আমাদের পায়ের নীচের মাটি আমাদের জমি এবং মাথার উপরে আকাশ আমাদের ছাদ। আমরা অশিক্ষিত মানুষ। আমরা স্ক্র্যাপ সংগ্রহ, দৈনিক মজুরি নির্মাণ কাজ, এবং গৃহস্থালির মতো কিছু কাজ করি। এবং যখন আমরা ভাল বেতনের কাজ খুঁজতে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখনই হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন আমাদের বাধা দেয়।
জনাব ইসলাম বলেছেন, “আসার পরেই আমাদের একটি নথি পূরণ করতে হয়েছিল যাতে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কতক্ষণ থাকবেন? আপনি কখন ফিরবেন?’ এবং আমরা ফর্মগুলিতে যা পূরণ করেছি, তার চেয়ে এক ঘন্টাও বেশি সময় কোন জায়গায় থাকতে পারিনি। আমরা এখন দেশ ছেড়েছি, কিন্তু সেই অন্ধকার আইন নিয়ম-কানুন আমাদের ছাড়েনি। মনে হচ্ছে আমরা এখনো মিয়ানমারেই আছি। আমাদের উপর অত্যাচার করা, হয়রানি করা এখন প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।
নাঙ্গেলির ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ বশির বলেছেন “সম্ভবত, এই হিন্দুত্ববাদীরা আমাদের বাঁচতে দিতে চায় না।”
নুরবাহারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা মহিলাদের দলটির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এতগুলো পুলিশের সাথে কোন মহিলা পুলিশ আসেনি। পুলিশ সদস্যরা এই সমস্ত মহিলাদেরকে ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছিল। তারা এমনভাবে ঘরে ঢুকে পড়ে যেন এটা একটা জঘন্য কোন অপরাধী ধরার অভিযান ছিল। এবং আমরা আমাদের ঘরে কোন সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে রেখেছিলাম। তারা আমাদের সাথে পাষণ্ডের মত আচরণ করে।”
রমজান আলি বলেন, “ভোর ৪.৩০ বাজলে পুলিশ যখন আসে তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। কি ঘটছে তা বুঝতে আমার কয়েক মিনিট সময় লেগেছে। হঠাৎ তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে এবং আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।”
শুধু পুলিশের এই হয়রানি নয়, স্থানীয় হিন্দু গ্রামবাসীরাও মুসলিমদের বিরক্ত করেছে। বশির বলেন, “গ্রামবাসীরা আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে, পুলিশ অসময়ে আমাদের বাড়িতে অভিযান শুরু করে। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী থানায় ফোন করে আমাদের হয়রানি করে। পুলিশ এসে আমাদের লাইন ধরিয়ে দাঁড় করায় এবং অপরাধীদের মতো আমাদের তুলে নেয়। এসবই স্থানীয়দের আমাদের প্রতি সন্দেহের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।”
জনাব ইসলাম আরো ইসলাম বলেন, “পুলিশ আমাদের সাথে সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে। আমরা প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য তাদের অনুমতি নিতে হয়। ভারত এত বড় দেশ। তারা কি আমাদের উদ্বাস্তুদের এখানে থাকতে দিতে পারে না? আমরা আমাদের জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছি। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়েও আমরা প্রতিদিন হিন্দুত্ববাদীদের লাঠিসোঁটার মুখোমুখি হই।”
হাসান এবং সফিকা রোহিঙ্গাদের অন্ধকার অনিশ্চিত জীবন সম্পর্কে বলেছেন যে, মায়ানমার থেকে আসার পর থেকে তাদের নিজেদের বলার মতো কোনো দেশ নেই, পরবর্তী বেলায় খাবারের কোনো গ্যারান্টি নেই, তাদের সন্তানদের জন্য কোনো স্কুল নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই, বিদেশী ভূমিতে স্থানীয়দের এবং পুলিশের দয়ায় বসবাস করায় তাদের ভাগ্যে সিলমোহর হয়ে গেছে।
২০১২ সাল থেকে, যখন তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নিরাপদে থাকবে এই আশায় দিল্লি থেকে মেওয়াতে চলে এসেছিল, তখন এই উদ্বাস্তুদের খানপুর গ্রাম থেকে রাওয়াসান, আর সালাহেরি থেকে সাম্প্রতিক অবস্থান পর্যন্ত বেশ কয়েকবার তাদের বাড়ি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছে। যা তারা দুই স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতি মাসে ৬০,০০০ টাকা ভাড়া নিয়েছিলেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ড্রাইভে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের নাম এবং অন্যান্য বিবরণ পুলিশের কাছে থাকা বায়োমেট্রিক বিবরণের তালিকার সাথে মেলানো হয়। ২৬ জুলাই পুলিশ মুসলিমদের ৩০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে।
“তারা [পুলিশ সদস্যরা] বলেছিল, ‘আপনি বার্মা ওয়ালা (মিয়ানমারের মানুষ)। আপনি কিছু কিনতে পারবেন না, আপনার কোন ঠিকানা প্রমাণ নেই। বাহনটি কিভাবে পেলেন? আপনি লাইসেন্স কোথায় পেলেন?
চান্দেনী-৩ ক্যাম্পের মোহাম্মদ রফিক বলেছেন, “পুলিশ দুবার সব ঝোপড়িতে (ঝুপড়ি) ঢুকেছে, কিছু ঝোপড়ি তিনবার। তারা আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র বের করে নিয়েছিল এবং এমনকি বাক্সে রাখা কাপড়ের মধ্যেও চেক করেছিল। এমনকি তারা আমাদের ল্যাট্রিন এবং বাথরুমেও ঢুকে পড়ে।”
শরণার্থী মুসলিরা বলেছেন, “আমরা যে মুহুর্তে ভারতে এসেছি, আমাদের মনে ছিল যে, যখনই পরিস্থিতির উন্নতি হবে তখনই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।” ভারতের অর্থের প্রতি আমাদের কোনো লোভ নেই। এর নাগরিকত্বের প্রতি আমাদের কোনো লোভ নেই। আমরা শুধু শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা আমাদের বাচ্চাদের শেখাতে চাই। আমাদের দেশে, আমাদের বেশিরভাগ মানুষ নিরক্ষর, কারণ সরকার আমাদের পড়াশুনার কোনো সুযোগ দেয় না। তাই আমরা চাই আমাদের দিকে না তাকিয়ে আমাদের শিশুদের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেক। যারা এখানে শিক্ষা লাভ করে। অন্যথায় আমরা ফিরে গেলে আমাদের মতো তাদের জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে।”
ভারতে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিরাপত্তা সংস্থার কঠোর নজরদারি, নির্বিচারে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ এবং সমন বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে। তারা জানান যে প্রধানত মুসলিম হওয়ায় তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন, হিন্দুত্ববাদী শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর সাথে যুক্ত হিন্দু উগ্র গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জেনোফোবিয়া এবং ঘৃণামূলক প্রচারণার সাথে মিশেছে।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার এবং তাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় তাদের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়ার পরিবর্তে, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ তাদের লক্ষ্যবস্তু করছে এবং তাদের আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
এক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী ভারত মানবাধিকার কিংবা কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না। আইন লঙ্ঘনের কারণে জাতিসঙ্ঘ বা অন্য কোন সংস্থা ভারতকে চাপও দিচ্ছে না। কোন মিডিয়া এ নিয়ে হৈচৈ করছে না। কারণ এখানে ভিকটিম হচ্ছেন মুসলিমরা
তথ্যসূত্র :
1. Verification Drive or Raid? Rohingya in Haryana Accuse Cops of Harassment and Brutality
– https://tinyurl.com/337vkxa5
– https://tinyurl.com/4m8vb525
ভারত জুড়ে হিন্দুত্ববাদীদের হামলা মামলায় মুসলিমরা পেরেশান। তাদের যখন যা ইচ্ছে মুসলিমদের সাথে তাই করছে।
তারই ধারাবাহিকতায়, গত ২৬ জুলাই ভোর রাতে, ১০টি পুলিশ জিপ এবং ৬টি পুলিশ বাস হরিয়ানার নুহ জেলার ১০টি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘেরাও করে। ৬০০ এরও বেশি পুলিশ ক্যাম্পে ঢুকে এবং প্রতিটি সেক্টরে যায়। ঘুমন্ত মুসলিমদের দরজায় গিয়ে বলতে থাকে “দরওয়াজা খোলো, ওয়ার্না দরওয়াজা তোড় দুঙ্গা (দরজা খোল নইলে ভেঙ্গে ফেলব)।”
চান্দেনী-১ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সফিকা জানিয়েছেন, প্রতিটি মুসলিম পরিবারকে প্রায় ১০-১৫জন পুলিশ হয়রানি করেছে।
সফিকা এবং তার ভাই হাসান, যারা উভয়েই রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের উপর নৃশংসতার বিষয়ে সোচ্চার, তারা জানিয়েছে, নাঙ্গেলির ওয়ার্ড-০৭ ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যায়। সেখানেও হিন্দুত্ববাদী পুলিশ সহিংসতার ঘটনা ঘটায়।
সেখানে ৬০ বছর বয়সী নুরবাহার নামে এক বৃদ্ধা মহিলা বলেছে, পুলিশ তাকে, তার ছেলে, তার পুত্রবধূ এবং তার পুত্রবধূর বোনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। কারণ ১৭ বছর বয়সী সাবাকুন নাহার, ব্যাঙ্গালোরের শহরতলির একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং সে তীব্র যক্ষ্মা রোগী, চিকিৎসা পাওয়ার আশায় নাঙ্গেলিতে তার বোনের সাথে থাকতে এসেছিলেন।
হিন্দুত্ববাদীরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের এলাকা ছেড়ে যেতে দেয় না। অন্য রাজ্যে যাওয়া তো দূরের কথা। তাই পুলিশ এই অসুস্থ মেয়েটিকে তাদের লাঠি দিয়ে মারধর করে। এবং সাবাকুনকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অন্যান্য বাসিন্দাদেরও মারধর করে।
নুরবাহার বলেছেন “তারা আমাকে ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যায় এবং লাঠি দিয়ে মারতে থাকে।” একথা বলে সে ক্ষোভ ও অসহায়ত্বের কারণে কাঁদতে থাকে।
নাঙ্গেলি ক্যাম্পের বাসিন্দা ইসলাম বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের নিজেদের কোনো বাড়ি নেই। আমাদের পায়ের নীচের মাটি আমাদের জমি এবং মাথার উপরে আকাশ আমাদের ছাদ। আমরা অশিক্ষিত মানুষ। আমরা স্ক্র্যাপ সংগ্রহ, দৈনিক মজুরি নির্মাণ কাজ, এবং গৃহস্থালির মতো কিছু কাজ করি। এবং যখন আমরা ভাল বেতনের কাজ খুঁজতে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখনই হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন আমাদের বাধা দেয়।
জনাব ইসলাম বলেছেন, “আসার পরেই আমাদের একটি নথি পূরণ করতে হয়েছিল যাতে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কতক্ষণ থাকবেন? আপনি কখন ফিরবেন?’ এবং আমরা ফর্মগুলিতে যা পূরণ করেছি, তার চেয়ে এক ঘন্টাও বেশি সময় কোন জায়গায় থাকতে পারিনি। আমরা এখন দেশ ছেড়েছি, কিন্তু সেই অন্ধকার আইন নিয়ম-কানুন আমাদের ছাড়েনি। মনে হচ্ছে আমরা এখনো মিয়ানমারেই আছি। আমাদের উপর অত্যাচার করা, হয়রানি করা এখন প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে।
নাঙ্গেলির ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ বশির বলেছেন “সম্ভবত, এই হিন্দুত্ববাদীরা আমাদের বাঁচতে দিতে চায় না।”
নুরবাহারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা মহিলাদের দলটির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এতগুলো পুলিশের সাথে কোন মহিলা পুলিশ আসেনি। পুলিশ সদস্যরা এই সমস্ত মহিলাদেরকে ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছিল। তারা এমনভাবে ঘরে ঢুকে পড়ে যেন এটা একটা জঘন্য কোন অপরাধী ধরার অভিযান ছিল। এবং আমরা আমাদের ঘরে কোন সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে রেখেছিলাম। তারা আমাদের সাথে পাষণ্ডের মত আচরণ করে।”
রমজান আলি বলেন, “ভোর ৪.৩০ বাজলে পুলিশ যখন আসে তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। কি ঘটছে তা বুঝতে আমার কয়েক মিনিট সময় লেগেছে। হঠাৎ তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে এবং আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।”
শুধু পুলিশের এই হয়রানি নয়, স্থানীয় হিন্দু গ্রামবাসীরাও মুসলিমদের বিরক্ত করেছে। বশির বলেন, “গ্রামবাসীরা আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে, পুলিশ অসময়ে আমাদের বাড়িতে অভিযান শুরু করে। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী থানায় ফোন করে আমাদের হয়রানি করে। পুলিশ এসে আমাদের লাইন ধরিয়ে দাঁড় করায় এবং অপরাধীদের মতো আমাদের তুলে নেয়। এসবই স্থানীয়দের আমাদের প্রতি সন্দেহের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।”
জনাব ইসলাম আরো ইসলাম বলেন, “পুলিশ আমাদের সাথে সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে। আমরা প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য তাদের অনুমতি নিতে হয়। ভারত এত বড় দেশ। তারা কি আমাদের উদ্বাস্তুদের এখানে থাকতে দিতে পারে না? আমরা আমাদের জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছি। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়েও আমরা প্রতিদিন হিন্দুত্ববাদীদের লাঠিসোঁটার মুখোমুখি হই।”
হাসান এবং সফিকা রোহিঙ্গাদের অন্ধকার অনিশ্চিত জীবন সম্পর্কে বলেছেন যে, মায়ানমার থেকে আসার পর থেকে তাদের নিজেদের বলার মতো কোনো দেশ নেই, পরবর্তী বেলায় খাবারের কোনো গ্যারান্টি নেই, তাদের সন্তানদের জন্য কোনো স্কুল নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই, বিদেশী ভূমিতে স্থানীয়দের এবং পুলিশের দয়ায় বসবাস করায় তাদের ভাগ্যে সিলমোহর হয়ে গেছে।
২০১২ সাল থেকে, যখন তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নিরাপদে থাকবে এই আশায় দিল্লি থেকে মেওয়াতে চলে এসেছিল, তখন এই উদ্বাস্তুদের খানপুর গ্রাম থেকে রাওয়াসান, আর সালাহেরি থেকে সাম্প্রতিক অবস্থান পর্যন্ত বেশ কয়েকবার তাদের বাড়ি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছে। যা তারা দুই স্থানীয় ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতি মাসে ৬০,০০০ টাকা ভাড়া নিয়েছিলেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ড্রাইভে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের নাম এবং অন্যান্য বিবরণ পুলিশের কাছে থাকা বায়োমেট্রিক বিবরণের তালিকার সাথে মেলানো হয়। ২৬ জুলাই পুলিশ মুসলিমদের ৩০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে।
“তারা [পুলিশ সদস্যরা] বলেছিল, ‘আপনি বার্মা ওয়ালা (মিয়ানমারের মানুষ)। আপনি কিছু কিনতে পারবেন না, আপনার কোন ঠিকানা প্রমাণ নেই। বাহনটি কিভাবে পেলেন? আপনি লাইসেন্স কোথায় পেলেন?
চান্দেনী-৩ ক্যাম্পের মোহাম্মদ রফিক বলেছেন, “পুলিশ দুবার সব ঝোপড়িতে (ঝুপড়ি) ঢুকেছে, কিছু ঝোপড়ি তিনবার। তারা আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র বের করে নিয়েছিল এবং এমনকি বাক্সে রাখা কাপড়ের মধ্যেও চেক করেছিল। এমনকি তারা আমাদের ল্যাট্রিন এবং বাথরুমেও ঢুকে পড়ে।”
শরণার্থী মুসলিরা বলেছেন, “আমরা যে মুহুর্তে ভারতে এসেছি, আমাদের মনে ছিল যে, যখনই পরিস্থিতির উন্নতি হবে তখনই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাব।” ভারতের অর্থের প্রতি আমাদের কোনো লোভ নেই। এর নাগরিকত্বের প্রতি আমাদের কোনো লোভ নেই। আমরা শুধু শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা আমাদের বাচ্চাদের শেখাতে চাই। আমাদের দেশে, আমাদের বেশিরভাগ মানুষ নিরক্ষর, কারণ সরকার আমাদের পড়াশুনার কোনো সুযোগ দেয় না। তাই আমরা চাই আমাদের দিকে না তাকিয়ে আমাদের শিশুদের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেক। যারা এখানে শিক্ষা লাভ করে। অন্যথায় আমরা ফিরে গেলে আমাদের মতো তাদের জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে।”
ভারতে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিরাপত্তা সংস্থার কঠোর নজরদারি, নির্বিচারে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ এবং সমন বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে। তারা জানান যে প্রধানত মুসলিম হওয়ায় তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন, হিন্দুত্ববাদী শাসক ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং এর সাথে যুক্ত হিন্দু উগ্র গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জেনোফোবিয়া এবং ঘৃণামূলক প্রচারণার সাথে মিশেছে।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার এবং তাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় তাদের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়ার পরিবর্তে, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ তাদের লক্ষ্যবস্তু করছে এবং তাদের আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
এক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী ভারত মানবাধিকার কিংবা কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না। আইন লঙ্ঘনের কারণে জাতিসঙ্ঘ বা অন্য কোন সংস্থা ভারতকে চাপও দিচ্ছে না। কোন মিডিয়া এ নিয়ে হৈচৈ করছে না। কারণ এখানে ভিকটিম হচ্ছেন মুসলিমরা
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
1. Verification Drive or Raid? Rohingya in Haryana Accuse Cops of Harassment and Brutality
– https://tinyurl.com/337vkxa5
– https://tinyurl.com/4m8vb525