Announcement

Collapse
No announcement yet.

পশ্চিমবঙ্গে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলখানায় ৪ মুসলিম খুন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পশ্চিমবঙ্গে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলখানায় ৪ মুসলিম খুন


    পশ্চিমবঙ্গে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলখানায় ৪ মুসলিম খুন


    হিন্দুত্ববাদী ভারতে কারাগারগুলোও মুসলিমদের জন্য সাক্ষাৎ মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন মিথ্যে অভিযোগ তুলে মুসলিমদের জেলে নিয়ে যাচ্ছে, পরে সেখানে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মুসলিমদের খুন করছে। ভারতজুড়ে মুসলিম বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ায় জেলগুলোতে মুসলিমদের খুন করার সংখ্যা চোখে পরার মত।

    মাত্র গত ১০ দিনে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর সেন্ট্রাল কারেকশনাল হোমে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে – আব্দুল রাজ্জাক, জিয়াউল লস্কর, আকবর খান এবং সাইদুল মুন্সি নামে চারজন মুসলিম ব্যক্তি খুন হয়েছেন হিন্দুত্ববাদী পুলিশের হাতে।

    গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এই চারজনকে পশ্চিমবঙ্গ হিন্দুত্ববাদী পুলিশ পৃথক মিথ্যে মামলায় তুলে নিয়েছিল। চারজন নিহত ব্যক্তির পরিবারই তাদের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশী নির্যাতনকে দায়ী করেছেন। তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, যে তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে খুন করেছে হিন্দুত্ববাদী বাহিনী।

    হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন নিজেদের দোষ লুকাতে এখন পর্যন্ত পোস্টমর্টেম রিপোর্টও দিচ্ছে না। পুলিশ এই চারজনের মৃত্যুকে “কাকতালীয়” ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে।

    জনাব জিয়াউল লস্কর :

    ২৫ জুলাইয়ের ঘটনা। জিয়াউল লস্কর যিনি সুবাস পল্লীতে থাকতেন, এবং কাছাকাছি বারুইপুরে অটোরিকশা চালক হিসাবে কাজ করতেন। এদিন তিনি আর কাজ শেষে বাড়ি ফেরেননি। ৩৫ বছরের বয়সী লস্কর বাড়িতে না আসায় তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পরের দিন সকালে তাকে খুঁজতে বের হয়। পরে তারা জানতে পারেন যে, তাকে ডাকাতির ষড়যন্ত্র করার মিথ্যে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। লস্করের পরিবার জানায় যে, গ্রেপ্তারের দিন এবং পরের দিন বারুইপুর থানার ভিতরে তাকে গুরুতরভাবে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। পরদিন তাকে আদালতে তোলা হয়, সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

    জিয়াউল লস্করের বড় বোন সাবেরা বিবি বলেন, “মৃত্যুর তিন-চার দিন আগে সে আমার ফুফুর সঙ্গে দেখা করেছিল। দেখা করার সময় কাঁদছিলেন এবং বলেছিলেন যে তাকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। তার শরীরে ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন ছিল।”

    জিয়াউলের ​​পরিবার বলেছেন, পুলিশ তাকে ১ আগস্ট খুন করেছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ২ আগস্টে তাকে মৃত ঘোষণা করে। আদালতে সাবেরা বিবির প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাডভোকেট তনয় ভট্টাচার্য জানান, লস্করের সাথে গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুই ব্যক্তি – সুরজিৎ হালদার এবং রবিউল হালদার – বলেছে, যে লস্কর অধিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছে।

    জনাব আব্দুর রাজ্জাক :

    ৩৪ বছর বয়সী জনাব আব্দুর রাজ্জাক দুই মেয়ের বাবা। একটি পোল্ট্রি ব্যবসা চালাতেন যার জন্য তিনি প্রায়ই বিহারে যেতেন। আব্দুর রাজজাকের স্ত্রী সুহানা বিবি জানান, “২৪ জুলাই সিভিল ড্রেস পরা চারজন লোক আমার বাড়িতে এসে আব্দুর রাজজাকের খোঁজ নেয়। পরদিন তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। আমি ২৭ জুলাই তার সাথে দেখা করেছি এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ২৯শে জুলাই দুপুর ১টার দিকে একজন পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের জানায় যে আব্দুর রাজজাকের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং আমাদের হাসপাতালে যেতে হবে।”

    পরে আব্দুর রাজ্জাকের চাচা সিরাজুল রাজ্জাক বলেন, “হাসপাতালে পৌছালে দেখি রাজ্জাক মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই। আমি এই আইনের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। আমরা এই খুনের মামলা লড়তে চাই না। এখন কি হবে এই মেয়েদের ও তাদের মায়ের? কে তাদের দেখভাল করবে।”

    জনাব আকবর খান

    অ্যাডভোকেট আসফাক আহমেদের, যিনি জনাব আকবর খানের উকিল, তিনি জানান- একটি সন্দেহভাজন ডাকাতি মামলার আসামি আকবর খান বিচার বিভাগীয় হেফাজতে ২ আগস্ট মারা যান। ঐ আইনজীবী বলেছেন যে, আকবর খানের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল এবং পরিবারকে এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না।

    জনাব সাইদুল মুন্সী

    তার পরিবার জানায়, ৩৩ বছর বয়সী সাইদুল মুন্সিকে ২৫ জুলাই মহেশতলা পুলিশ তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরিবারের দাবি, গ্রেপ্তারের দিনই তাকে প্রচুর লাঞ্ছিত করা হয়। একদিন পর তাকে বারুইপুর জেলে পাঠানো হয়।

    সাইদুলের বড় বোন সালমা বলেন, পুলিশী নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে পরায় “১ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু আমাদের পরিবারকে জানানো হয়নি। আমরা শুধুমাত্র ২ আগস্ট এই বিষয়ে জানতে পেরেছি। পুলিশ যখন একটি নথিতে স্বাক্ষর নিতে আসে, তখন বাড়িতে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। নথিতে কী বলা হয়েছে তা আমরা জানতে পরিনি। তবে পুলিশ আমার ছোট বোনকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। ৩ আগস্ট তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ছাড়া কারাগারে কারা তাকে এমন অবস্থা কে করেছে আমরা জানি না, তবে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্যাতনেই মারা গেছেন। আঘাতের কারণে তার মুখ দেখেও চেনা যাচ্ছিল না।

    ‘মুসলমানদের প্রতি পৈশাচিক আচরণ’

    চারজন সুস্থ মুসলিম ব্যক্তি বারুইপুর জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে একের পর এক মারা গেছেন। এ নিয়ে এখনো কোনো গণতান্ত্রিক দল বা মানবাধিকার সংগঠন এগিয়ে আসেনি, প্রতিবাদটুকু জানায়নি। অথচ, স্থানীয় মুসলিমরা তাদেরকে নিজেদের নেতা মনে করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোন মুসলিমের বিপদাপদে পাশে দাঁড়ায়নি। মুসলিমদের বোঝা উচিৎ, ঐ কথিত সেক্যুলাররা বা ‘পসাম্প্রদায়িকতা’র মুখোশ পড়া হিন্দুরা ভোট পাওয়ার জন্য মুখে যত কথাই বলুক, তারা কখনোই মুসলিমদের কোন উপকারে আসবে না। এই বাস্তবতা মেনে ইসলামি বিশ্লেষকগণ মুসলিমদেরকে প্রকৃত বন্ধু আর সুবিধাভোগী কে – তা চিনে রাখতে বলেছেন। পাশাপাশি অনাগত ভবিষ্যতের বিপদ মকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহব্বানও জানিয়েছেন।



    প্রতিবেদক : মাহমুদ উল্লাহ


    তথ্যসূত্র:
    ——-
    1. Deaths of Four Muslim Men in One Week in the Same Jail Is ‘a Coincidence’, Claim WB Police
    https://tinyurl.com/mr9sakyj
    2. https://tinyurl.com/mryzsj4a
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X