উইঘুর মুসলিমদের আর্তনাদ || পর্ব-১ || মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক গর্ভপাত
‘উইঘুর মুসলিম’- শব্দটি আমাদের প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত। সাধারণত চীনের দখলকৃত পূর্ব-তুর্কিস্তান অঞ্চলের ‘জিনজিয়াং’ প্রদেশের অধিবাসীদের উইঘুর বলা হয়। ‘জিনজিয়াং’ মূলত চীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি নাম। জিনজিয়াং এর আসল নাম হল “পূর্ব তুর্কীস্তান”। সেখানকার অধিবাসীরাও অঞ্চলটিকে সাধারণত পূর্ব তুর্কীস্তান হিসেবেই অভিহিত করে।
পূর্ব তুর্কীস্তান মূলত চীনের একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পূর্ব তুর্কীস্তান দখল করে নেয় এবং এর নামকরণ করে ‘শিনজিয়াং’, চীনা ভাষায় যার অর্থ- নতুন সীমান্ত। বর্তমানে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি উইঘুর মুসলিম সেখানে বসবাস করে। উইঘুররা ছাড়াও কিরগিজ, উজবেক, কাজাক, তাজিক এবং সাম্প্রতিককালে বহিরাগত হান চাইনিজদের একটি বড় অংশও এখানে বসতি স্থাপন করেছে।
পূর্ব তুর্কীস্তানের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের আয়তনের প্রায় চারগুণ। ১৯৪৯ সাল থেকেই চীন সরকার উইঘুরদের প্রতি নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য ও নিপীড়ন শুরু করে। নিজ দেশেই উইঘুরদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে। ২০১৭ সাল থেকে চীন সরকার উইঘুর, কিরগিজ, কাজাক এবং উজবেক মুসলিমদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত গণহত্যা শুরু করে। লক্ষ লক্ষ উইঘুর, কিরগিজ, উজবেক এবং কাজাক মুসলিমকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে “কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে” বন্দী করা শুরু করে।
মিডিয়ার মাধ্যমে উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে সাধারণত আমরা দুই ধরণের খবর জানতে পারি। একটি হলো চীনা সংস্করণ এবং অপরটি হলো আন্তর্জাতিক সংস্করণ। চীনা সংস্করণ অনুযায়ী উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে আমরা জানতে পারি যে- তারা চীনের ‘জিনজিয়াং প্রদেশে’র অধিবাসী, সেখানে ‘উগ্রবাদীতার’ সম্প্রসারণ রোধে চীন সরকার ‘রিএজ্যুকেইশন ক্যাম্প’ বা পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র তৈরী করেছে, যেখানে উইঘুর মুসলিমরা খুব স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে, জিনজিয়াং চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, চীনের সংস্কৃতি উইঘুর মুসলিমরা সাদরে গ্রহণ করছে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এর ঠিক উল্টোটাই আমরা জানতে পাই। উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন সরকার কর্তৃক ভয়াবহ এবং লোমহর্ষক সব নির্যাতনের ঘটনাই সাধারণত আমাদের চোখের সামনে আসে। এর মধ্যে উইঘুর নারীদের ধর্ষণ করা, জোরপূর্বক পরিশ্রম করানো, মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া, মসজিদগুলোকে মদের বারে রূপান্তর করা, মুসলিমদের তাদের সংস্কৃতি পালনে বাধা দেওয়া, নারীদের রাস্তাঘাটে পোশাক কেটে ছোট করে দেওয়া, নারীদের জোরপূর্বক হান চাইনিজ পুরুষদের সাথে বিয়ে দেওয়া (চায় সে নারী বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত), নাচ-গান করতে বাধ্য করা, মদপানে বাধ্য করা, ক্বুর’আন, রোজা ও নামাজ না পড়তে বাধ্য করা, দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করা, নারীদের হিজাব না পড়তে বাধ্য করার মতো এমন হাজারো খবর আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাই।
উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের যত ঘটনা আছে, তা নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো হাজার পৃষ্ঠার বইও যথেষ্ট হবে না। তাই আজ এক অসহায় উইঘুর মুসলিম নারীর কাহিনীই শুধু আপনাদেরকে জানাবো।
রহিমা মুহাম্মাদ নুরি, ৪৪ বছর বয়সী এই উইঘুর নারীর জন্ম পূর্ব তুর্কীস্তানের হোতান শহরে। পূর্ব তুর্কীস্তানের শিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন রহিমা শুধুমাত্র ‘হিজাব’ পরার কারণে সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীতে তিনি একটি ভকেশনাল স্কুলে (বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান) পড়াশোনা করে নার্সিং এর ওপর সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এরপর তাঁর পরিবার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই তিনি তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।
২০১৬ সালের ১৬ই আগস্ট তিনি তুরস্কে চলে যান। বর্তমানে তিনি বিবাহিতা এবং তাঁর আটটি সন্তান রয়েছে। তুরস্কে এখন তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০০ সালের শেষ পর্যন্ত তিনি হোতান শহরের একটি হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে মূলত তাঁর কাজ ছিল প্রসূতি বিভাগে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটানো। প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের মতো নারী গর্ভপাতের জন্য তখন হাসপাতালে যেত। তাদের মধ্যে কিছু নারী স্বেচ্ছায় গর্ভপাত ঘটাতো। কিন্তু তাদের বেশিরভাগকেই চীনের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নির্দেশ মোতাবেক বাধ্য হয়েই গর্ভপাত ঘটাতে হত।
গর্ভপাত ঘটাতে যাওয়া নারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল উইঘুর মুসলিম। চীনের পরিবার পরিকল্পনা অফিস বিশেষ করে উইঘুর মুসলিম নারীদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করতো। এমনকি তাদের গর্ভপাত নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উইঘুর নারীর সাথে একজন করে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকতো, যেন কোন উইঘুর নারী অপারেশন থিয়েটার থেকে পালিয়ে না যায়।
চীন সরকার কর্তৃক “নির্ধারিত সীমার” অতিরিক্ত বাচ্চা নিলে নারীদের একটি মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়। তাই এই মোটা অংকের জরিমানা দেবার ভয়েই অনেক নারী স্বেচ্ছায় তাদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য হতেন।
গর্ভপাত অপারেশনের ব্যপারে রহিমার কোন তাত্ত্বিক জ্ঞানই ছিল না। কিন্তু একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে থাকাকালীন তিনি এত পরিমানে গর্ভপাতের অপারেশন করেন যে, সেখানেই তাঁর অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণতা পায়। পরবর্তীতে সেই ক্লিনিক থেকে তিনি একটি প্রশংসাপত্র হাতে পান এবং এরপর একটি সরকারী হাসপাতালে নিযুক্ত হন।
পূর্ব তুর্কীস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যা চীন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। সেখানকার স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন ঠেকাতে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ তক্মা দিয়েছে। কথিত ‘সন্ত্রাসবাদ’ নির্মূলের অজুহাতে জোরপূর্বক উইঘুর মুসলিমদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করেছে। পূর্ব তুর্কীস্তান থেকে উইঘুর মুসলিমদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে চীন সরকার জোরপূর্বক চীনা সংস্কৃতি তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। উইঘুরদের বংশ বিস্তার রোধে জোরপূর্বক নারীদের গর্ভপাত ঘটাচ্ছে।
আজ পুরো পূর্ব তুর্কীস্তান একটি জেলখানা। উইঘুরদের আজ সেখানে নিঃশ্বাসও নিতে হয় হিসেব করে। তাঁদের প্রতিটি নড়াচড়া হয় পর্যবেক্ষিত। উইঘুরদের দুর্দশার প্রকৃত অবস্থার ব্যাপারে বিশ্ব আজ খুব কমই অবগত। তাই মুসলিম উম্মাহের মাঝে উইঘুরদের গল্প ছড়িয়ে দেওয়া এবং যার যার অবস্থান থেকে উইঘুরদের পাশে দাঁড়ানো একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।
মূলসূত্র
Uyghur Tribunal: Horrific New Testimonies From Concentration Camp Survivors
‘উইঘুর মুসলিম’- শব্দটি আমাদের প্রায় সকলের কাছেই পরিচিত। সাধারণত চীনের দখলকৃত পূর্ব-তুর্কিস্তান অঞ্চলের ‘জিনজিয়াং’ প্রদেশের অধিবাসীদের উইঘুর বলা হয়। ‘জিনজিয়াং’ মূলত চীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি নাম। জিনজিয়াং এর আসল নাম হল “পূর্ব তুর্কীস্তান”। সেখানকার অধিবাসীরাও অঞ্চলটিকে সাধারণত পূর্ব তুর্কীস্তান হিসেবেই অভিহিত করে।
পূর্ব তুর্কীস্তান মূলত চীনের একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল। ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ পূর্ব তুর্কীস্তান দখল করে নেয় এবং এর নামকরণ করে ‘শিনজিয়াং’, চীনা ভাষায় যার অর্থ- নতুন সীমান্ত। বর্তমানে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি উইঘুর মুসলিম সেখানে বসবাস করে। উইঘুররা ছাড়াও কিরগিজ, উজবেক, কাজাক, তাজিক এবং সাম্প্রতিককালে বহিরাগত হান চাইনিজদের একটি বড় অংশও এখানে বসতি স্থাপন করেছে।
পূর্ব তুর্কীস্তানের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের আয়তনের প্রায় চারগুণ। ১৯৪৯ সাল থেকেই চীন সরকার উইঘুরদের প্রতি নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য ও নিপীড়ন শুরু করে। নিজ দেশেই উইঘুরদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে। ২০১৭ সাল থেকে চীন সরকার উইঘুর, কিরগিজ, কাজাক এবং উজবেক মুসলিমদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত গণহত্যা শুরু করে। লক্ষ লক্ষ উইঘুর, কিরগিজ, উজবেক এবং কাজাক মুসলিমকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে “কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে” বন্দী করা শুরু করে।
মিডিয়ার মাধ্যমে উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে সাধারণত আমরা দুই ধরণের খবর জানতে পারি। একটি হলো চীনা সংস্করণ এবং অপরটি হলো আন্তর্জাতিক সংস্করণ। চীনা সংস্করণ অনুযায়ী উইঘুর মুসলিমদের ব্যাপারে আমরা জানতে পারি যে- তারা চীনের ‘জিনজিয়াং প্রদেশে’র অধিবাসী, সেখানে ‘উগ্রবাদীতার’ সম্প্রসারণ রোধে চীন সরকার ‘রিএজ্যুকেইশন ক্যাম্প’ বা পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র তৈরী করেছে, যেখানে উইঘুর মুসলিমরা খুব স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে, জিনজিয়াং চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, চীনের সংস্কৃতি উইঘুর মুসলিমরা সাদরে গ্রহণ করছে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এর ঠিক উল্টোটাই আমরা জানতে পাই। উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীন সরকার কর্তৃক ভয়াবহ এবং লোমহর্ষক সব নির্যাতনের ঘটনাই সাধারণত আমাদের চোখের সামনে আসে। এর মধ্যে উইঘুর নারীদের ধর্ষণ করা, জোরপূর্বক পরিশ্রম করানো, মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া, মসজিদগুলোকে মদের বারে রূপান্তর করা, মুসলিমদের তাদের সংস্কৃতি পালনে বাধা দেওয়া, নারীদের রাস্তাঘাটে পোশাক কেটে ছোট করে দেওয়া, নারীদের জোরপূর্বক হান চাইনিজ পুরুষদের সাথে বিয়ে দেওয়া (চায় সে নারী বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত), নাচ-গান করতে বাধ্য করা, মদপানে বাধ্য করা, ক্বুর’আন, রোজা ও নামাজ না পড়তে বাধ্য করা, দাঁড়ি কাটতে বাধ্য করা, নারীদের হিজাব না পড়তে বাধ্য করার মতো এমন হাজারো খবর আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাই।
উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের যত ঘটনা আছে, তা নিয়ে লিখতে গেলে হয়তো হাজার পৃষ্ঠার বইও যথেষ্ট হবে না। তাই আজ এক অসহায় উইঘুর মুসলিম নারীর কাহিনীই শুধু আপনাদেরকে জানাবো।
রহিমা মুহাম্মাদ নুরি, ৪৪ বছর বয়সী এই উইঘুর নারীর জন্ম পূর্ব তুর্কীস্তানের হোতান শহরে। পূর্ব তুর্কীস্তানের শিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন রহিমা শুধুমাত্র ‘হিজাব’ পরার কারণে সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীতে তিনি একটি ভকেশনাল স্কুলে (বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান) পড়াশোনা করে নার্সিং এর ওপর সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এরপর তাঁর পরিবার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই তিনি তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।
২০১৬ সালের ১৬ই আগস্ট তিনি তুরস্কে চলে যান। বর্তমানে তিনি বিবাহিতা এবং তাঁর আটটি সন্তান রয়েছে। তুরস্কে এখন তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০০ সালের শেষ পর্যন্ত তিনি হোতান শহরের একটি হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে মূলত তাঁর কাজ ছিল প্রসূতি বিভাগে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটানো। প্রতিদিন প্রায় ১০০ জনের মতো নারী গর্ভপাতের জন্য তখন হাসপাতালে যেত। তাদের মধ্যে কিছু নারী স্বেচ্ছায় গর্ভপাত ঘটাতো। কিন্তু তাদের বেশিরভাগকেই চীনের পরিবার পরিকল্পনা অফিসের নির্দেশ মোতাবেক বাধ্য হয়েই গর্ভপাত ঘটাতে হত।
গর্ভপাত ঘটাতে যাওয়া নারীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল উইঘুর মুসলিম। চীনের পরিবার পরিকল্পনা অফিস বিশেষ করে উইঘুর মুসলিম নারীদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করতো। এমনকি তাদের গর্ভপাত নিশ্চিত করতে প্রত্যেক উইঘুর নারীর সাথে একজন করে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কর্মকর্তা নিযুক্ত থাকতো, যেন কোন উইঘুর নারী অপারেশন থিয়েটার থেকে পালিয়ে না যায়।
চীন সরকার কর্তৃক “নির্ধারিত সীমার” অতিরিক্ত বাচ্চা নিলে নারীদের একটি মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়। তাই এই মোটা অংকের জরিমানা দেবার ভয়েই অনেক নারী স্বেচ্ছায় তাদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য হতেন।
গর্ভপাত অপারেশনের ব্যপারে রহিমার কোন তাত্ত্বিক জ্ঞানই ছিল না। কিন্তু একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে থাকাকালীন তিনি এত পরিমানে গর্ভপাতের অপারেশন করেন যে, সেখানেই তাঁর অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণতা পায়। পরবর্তীতে সেই ক্লিনিক থেকে তিনি একটি প্রশংসাপত্র হাতে পান এবং এরপর একটি সরকারী হাসপাতালে নিযুক্ত হন।
পূর্ব তুর্কীস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যা চীন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। সেখানকার স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন ঠেকাতে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ তক্মা দিয়েছে। কথিত ‘সন্ত্রাসবাদ’ নির্মূলের অজুহাতে জোরপূর্বক উইঘুর মুসলিমদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করেছে। পূর্ব তুর্কীস্তান থেকে উইঘুর মুসলিমদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে চীন সরকার জোরপূর্বক চীনা সংস্কৃতি তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। উইঘুরদের বংশ বিস্তার রোধে জোরপূর্বক নারীদের গর্ভপাত ঘটাচ্ছে।
আজ পুরো পূর্ব তুর্কীস্তান একটি জেলখানা। উইঘুরদের আজ সেখানে নিঃশ্বাসও নিতে হয় হিসেব করে। তাঁদের প্রতিটি নড়াচড়া হয় পর্যবেক্ষিত। উইঘুরদের দুর্দশার প্রকৃত অবস্থার ব্যাপারে বিশ্ব আজ খুব কমই অবগত। তাই মুসলিম উম্মাহের মাঝে উইঘুরদের গল্প ছড়িয়ে দেওয়া এবং যার যার অবস্থান থেকে উইঘুরদের পাশে দাঁড়ানো একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলেরই নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।
অনুবাদক ও সংকলক : ওবায়দুল ইসলাম
মূলসূত্র
Uyghur Tribunal: Horrific New Testimonies From Concentration Camp Survivors