অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি কাশ্মীরের গুম হওয়া মুসলিমদের স্বজনদের : ন্যায়বিচার আজ প্রহসনের মরীচিকা
হিন্দুত্ববাদী ভারতের দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে গত বত্রিশ বছর ধরে হাজার হাজার কাশ্মীরি মুসলিম যুবক ভারতীয় সেনা ও পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে।
“আন্তর্জাতিক গুম দিবস” উপলক্ষে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের গবেষণা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জম্মু ও কাশ্মীর আজ বিশ্বের সবচাইতে সামরিকায়িত অঞ্চল। গত তিন দশক ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় বাহিনীর খুন, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অন্যান্য ভয়াবহ পাশবিকতার সাক্ষী হয়ে আছে এই কাশ্মীর। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ হাজার নিরীহ বেসামরিক মুসলিম নাগরিক হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর সদস্যদের (সেনা, পুলিশ ও আধাসামরিক) দ্বারা গ্রেপ্তার হবার পর তাদের হেফাজতে থাকাকালীন নিখোঁজ হন।
হিন্দুত্ববাদীদের সামরিক আগ্রাসন জোরদার ও কাশ্মীরে বিচারবহির্ভূত, ভুয়া এবং পুলিশি বা সেনা হেফাজতে থাকাকালীন খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। এটি মূলত হিন্দুত্ববাদী ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি-আরএসএস জোটের মুসলিম ও কাশ্মীর বিরোধী পরিকল্পনারই একটি অংশ। মূলত, কাশ্মীরি মুসলিম যুবকরাই কাশ্মীরে মোতায়েনকৃত ১০ লক্ষেরও বেশি দখলদার সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর মূল লক্ষ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার-স্বজনরা তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে লক্ষ্যবস্তু করে দখলদার বাহিনী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব গুম শুধু মুসলিমদের চুপ-ই করিয়ে দেয় না বরং বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও ভীতিরও সঞ্চার করে। এই অমানবিক, বর্বর এবং অসংবেদনশীল কর্মকাণ্ডগুলি তথাকথিত ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের’ দ্বারাই সংঘটিত হয়, যার মধ্যে দখলদার সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও বিশেষ টাস্ক ফোর্স এবং সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনার অধীনে কাজ করা বিদ্রোহী দমনকারীরাই উল্লেখযোগ্য।
জোরপূর্বক গুমের এই নিষ্ঠুর প্রথা বর্তমানে কাশ্মীরে একটি নতুন শ্রেণীর মানুষের জন্ম দিয়েছে, যাদের বলা হয় অর্ধ-বিধবা এবং অর্ধ-এতিম। এটি এখন কাশ্মীরে ব্যবহৃত একটি সাধারণ বাক্যাংশ। হিন্দুত্ববাদী ভারতের শাসক অশান্ত এলাকা আইন, সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন, জননিরাপত্তা আইন এবং বেআইনী কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের মতো বিভিন্ন সব আইন দখলদার সেনাদের প্রদান করেছে। আর প্রদানকৃত এসকল আইন ব্যবহার করেই তারা মুসলিমদের খুন করা, ভয় দেখানো, গ্রেপ্তার করা, হয়রানি করা, বলপূর্বক চুপ করা, সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া, অবরোধ করা এবং জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই মুসলিমদের সম্পত্তি ভাঙচুর করার মতো বেআইনি সব কাজ করে যাচ্ছে।
নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানান, দখলদার ভারতীয় বাহিনীগুলোই তাঁদের প্রিয়জনদের ঘরবাড়ি এমনকি রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক গুম করেছে।
গোটা কাশ্মীরে যখন হিন্দুত্ববাদী ভারত এমন ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তখন জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের ‘সভ্য’ সদস্যরা কাশ্মীরে দখলদার ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি জনগণের গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীরে যেন একটি অবাধ ও ন্যায্য গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। যদিও তারা জানে যে, তাদের এই মিষ্টি কথার প্রতিবাদ বা কথিত গণভোট কোনটিই দখলদার ভারতের আগ্রাসী আচরণে পরিবর্তন আনবে না; তারা শুধু তাদের দায় সারছে বিবৃতি-প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও উলামাগণ বলছেন, জাতিসংঘের কিংবা বিশ্বের এই আহ্বানের দিকে না তাকিয়ে বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের উচিত হবে নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নেওয়া। কারণ বিগত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের কথিত এই ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব’ মুসলিমদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সামনে একটি ‘মূলো’ ঝুলিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই না। তাই স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে কাশ্মীরি মুসলিমদেরকে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার বাতলে দেওয়া পথই অনুসরণ করতে হবে; ইতিমধ্যে সেখানে যে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ একমাত্র এই পথেই তাঁদের জন্য রয়েছে সম্মান, স্বাধীনতা, গৌরব এবং ঐশ্বর্য।
লেখক : আবু উবায়দা
তথ্যসূত্র :
1. Families of enforced disappearance victims await justice in IIOJK
– https://tinyurl.com/ybcyk2ad
হিন্দুত্ববাদী ভারতের দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে গত বত্রিশ বছর ধরে হাজার হাজার কাশ্মীরি মুসলিম যুবক ভারতীয় সেনা ও পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে।
“আন্তর্জাতিক গুম দিবস” উপলক্ষে কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের গবেষণা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জম্মু ও কাশ্মীর আজ বিশ্বের সবচাইতে সামরিকায়িত অঞ্চল। গত তিন দশক ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় বাহিনীর খুন, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং অন্যান্য ভয়াবহ পাশবিকতার সাক্ষী হয়ে আছে এই কাশ্মীর। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ হাজার নিরীহ বেসামরিক মুসলিম নাগরিক হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর সদস্যদের (সেনা, পুলিশ ও আধাসামরিক) দ্বারা গ্রেপ্তার হবার পর তাদের হেফাজতে থাকাকালীন নিখোঁজ হন।
হিন্দুত্ববাদীদের সামরিক আগ্রাসন জোরদার ও কাশ্মীরে বিচারবহির্ভূত, ভুয়া এবং পুলিশি বা সেনা হেফাজতে থাকাকালীন খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। এটি মূলত হিন্দুত্ববাদী ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি-আরএসএস জোটের মুসলিম ও কাশ্মীর বিরোধী পরিকল্পনারই একটি অংশ। মূলত, কাশ্মীরি মুসলিম যুবকরাই কাশ্মীরে মোতায়েনকৃত ১০ লক্ষেরও বেশি দখলদার সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর মূল লক্ষ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার-স্বজনরা তাঁদের খুঁজে বের করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে লক্ষ্যবস্তু করে দখলদার বাহিনী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব গুম শুধু মুসলিমদের চুপ-ই করিয়ে দেয় না বরং বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও ভীতিরও সঞ্চার করে। এই অমানবিক, বর্বর এবং অসংবেদনশীল কর্মকাণ্ডগুলি তথাকথিত ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের’ দ্বারাই সংঘটিত হয়, যার মধ্যে দখলদার সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও বিশেষ টাস্ক ফোর্স এবং সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনার অধীনে কাজ করা বিদ্রোহী দমনকারীরাই উল্লেখযোগ্য।
জোরপূর্বক গুমের এই নিষ্ঠুর প্রথা বর্তমানে কাশ্মীরে একটি নতুন শ্রেণীর মানুষের জন্ম দিয়েছে, যাদের বলা হয় অর্ধ-বিধবা এবং অর্ধ-এতিম। এটি এখন কাশ্মীরে ব্যবহৃত একটি সাধারণ বাক্যাংশ। হিন্দুত্ববাদী ভারতের শাসক অশান্ত এলাকা আইন, সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন, জননিরাপত্তা আইন এবং বেআইনী কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের মতো বিভিন্ন সব আইন দখলদার সেনাদের প্রদান করেছে। আর প্রদানকৃত এসকল আইন ব্যবহার করেই তারা মুসলিমদের খুন করা, ভয় দেখানো, গ্রেপ্তার করা, হয়রানি করা, বলপূর্বক চুপ করা, সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া, অবরোধ করা এবং জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই মুসলিমদের সম্পত্তি ভাঙচুর করার মতো বেআইনি সব কাজ করে যাচ্ছে।
নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানান, দখলদার ভারতীয় বাহিনীগুলোই তাঁদের প্রিয়জনদের ঘরবাড়ি এমনকি রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক গুম করেছে।
গোটা কাশ্মীরে যখন হিন্দুত্ববাদী ভারত এমন ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তখন জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের ‘সভ্য’ সদস্যরা কাশ্মীরে দখলদার ভারতীয় বাহিনীর হাতে কাশ্মীরি জনগণের গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীরে যেন একটি অবাধ ও ন্যায্য গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। যদিও তারা জানে যে, তাদের এই মিষ্টি কথার প্রতিবাদ বা কথিত গণভোট কোনটিই দখলদার ভারতের আগ্রাসী আচরণে পরিবর্তন আনবে না; তারা শুধু তাদের দায় সারছে বিবৃতি-প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও উলামাগণ বলছেন, জাতিসংঘের কিংবা বিশ্বের এই আহ্বানের দিকে না তাকিয়ে বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের উচিত হবে নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করে নেওয়া। কারণ বিগত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের কথিত এই ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব’ মুসলিমদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সামনে একটি ‘মূলো’ ঝুলিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই না। তাই স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে কাশ্মীরি মুসলিমদেরকে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার বাতলে দেওয়া পথই অনুসরণ করতে হবে; ইতিমধ্যে সেখানে যে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ একমাত্র এই পথেই তাঁদের জন্য রয়েছে সম্মান, স্বাধীনতা, গৌরব এবং ঐশ্বর্য।
লেখক : আবু উবায়দা
তথ্যসূত্র :
1. Families of enforced disappearance victims await justice in IIOJK
– https://tinyurl.com/ybcyk2ad
Comment