কাশ্মীর সংযুক্তির এক বছরে শক্তিশালী হওয়া থেকে বহু দূরে ভারত
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এই অঞ্চলকে ভারতের সাথে যুক্ত করার জন্য মোদি সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের এক বছর পরেও আঞ্চলিক ভারসাম্য তাদের অনুকূলে যায়নি। বরং উল্টাটা হয়েছে। এই সংযুক্তির কারণে এতদিন যেটা ইন্দো-পাক দ্বিপাক্ষিক একটি ইস্যু ছিল, সেখানে এখন চীন যুক্ত হয়ে এটা কার্যত ত্রিপক্ষীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
ভারত তাদের ‘হিন্দুস্তান’ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাশ্মীরের জনমিতিক চেহারা বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাশ্মীরে ভূমি কেনার অধিকার দিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগই উল্টা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। চীন এখন তাদের ভূমিকা নতুন করে নির্ধারণ করেছে এবং এ অঞ্চলের ব্যাপারে তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের সংযুক্তি থেকে এই ইঙ্গিত মিলেছে, যে কোন সময় তারা চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলকে নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু চীনের আগাম প্রতিজবাব, তাদের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ – এই সবকিছুই ভারতের কর্মকাণ্ডের যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। এই সব কিছু পরিস্থিতিকে ভারতের জন্য অনেক বেশি জটিল করে দিয়েছে, যেটা এক বছর আগেও ছিল না।
পরিস্থিতি যেটা দাঁড়াচ্ছে, তাতে কাশ্মীরের ব্যাপারে যে কোন ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে চীন একটা অনিবার্য পক্ষ হয়ে থাকবে। অন্যভাবে বললে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কাশ্মীরকে যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু হিসেবে দেখা হয়, তাহলে এর পর থেকে সেটা ত্রিপক্ষীয় ইস্যু হয়ে গেছে।
লাদাখে চীন ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যাচ্ছে তারা। ফলে চীনের স্বার্থ এখানে অনেকে বেড়ে গেছে। এর অর্থ হলো, ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখায় বড় ধরনের কোন সঙ্ঘাত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে চীন সেখানে সরাসরি জড়িয়ে যাবে।
একইভাবে, পাকিস্তানও তাদের অবস্থান সংহত করার জন্য বিতর্কিত কাশ্মীর এলাকায় বিনিয়োগের জন্য চীনকে প্রস্তুত করেছে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সঠিকভাবেই বলা হয়েছে যে, এই চীনা বিনিয়োগ আসলে ‘ভারতের উপর একটা আঘাত’।
অতি সাম্প্রতিক ও সম্ভবত সবচেয়ে বড় চীন-পাকিস্তান বিনিয়োগ হয়েছে পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম বাঁধ, দিয়ামের বাসা ড্যাম নির্মাণে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব চায়না পাওয়ার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাণিজ্যিক শাখা ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশান যৌথভাবে এই বাঁধ নির্মাণ করছে।
সিপিইসির অধীনে দিয়ামের বাসা ড্যাম ছাড়াও আরও দুটি প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করেছে ইসলামাবাদ আর বেইজিং। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হবে, যেখান থেকে ১,৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
চীন যখন এ অঞ্চলে প্রভাব বাড়াচ্ছে, তখন বিষয়টা ভারত আর চীনের বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করবে। অন্যভাবে বললে, এমনকি ভারত যদি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের চিন্তাও করে, সে ক্ষেত্রে ভারতের কৌশলবিদদের বিবেচনায় ‘চীন ফ্যাক্টরের’ বিষয়টিকেও নিতে হবে।
সত্যি হলো, লাদাখে চীন-ভারত সঙ্ঘর্ষের পর থেকে হিসেব নিকেশ একেবারে পাল্টে গেছে। হিন্দুত্ববাদী ‘অখণ্ড ভারতের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পুরো অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার যে ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে ভারতের, সেটার বিরুদ্ধে এটাকে চীন-পাকিস্তানের জবাব হিসেবে দেখা যেতে পারে।
লাদাখের সঙ্ঘর্ষ-পরবতী বাস্তবতা থেকে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে যে, এ অঞ্চলে এবং বিশ্বে ভারতের আরও পেশিবহুল ভূমিকার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্ন রয়েছে মোদি সরকারের, সেটা হয়তো পূর্ণ হবে না।
লাদাখে ভারতের অগ্রসর হওয়া এবং চীনকে পিছনে ঠেলে দেয়ার সাফল্যকে যদি এই ধরনের ভূমিকার লিটমাস পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সে পরীক্ষায় ভারত নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কৌশলগত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে ভারত।‘উহান স্পিরিট’কে পুনরুদ্ধার করতে নয়াদিল্লীর আরও বহু সময় লেগে যাবে।
এটা সত্য যে, এই সব কিছু ঘটার একটা বড় কারণ হলো এই অঞ্চলে নিজেদের দুর্বল অবস্থানকে ঢাকার জন্য ভারত বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীন যেখানে বিতর্কিত অঞ্চলের চারপাশে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করেছে, সেখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে, যে ধরনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের মধ্যে রয়েছে। আর এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
অনেকটা গভীর মার্কিন-ভারত কৌশলগত সম্পর্কের অজুহাত হিসেবে ভারতের নীতি নির্ধারকরা এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছে যে, এখানে একটা ‘প্রতিকূল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং ‘দুই ফ্রন্টের যুদ্ধের’ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যেটা তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে ও যেখানে তাদেরকে লড়তে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো: এ ধরনের যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য বা এই ‘প্রতিকূল পরিবেশ’ কার্যকরভাবে দমনের জন্য যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ সম্পদ কি ভারতের আছে?
ভারতের নড়বড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বোঝা যায় পরিবর্তনের জন্য কতটুকু তারা এগুতে পারবে। ঢিলেঢালা হিসেবেও ২০২০ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারতের অর্থনীতি প্রায় ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে – নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর এবারই প্রথম অর্থনৈতিক সঙ্কোচন দুই অঙ্কের কোঠা পার করলো। করোনা আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রাজিলের পর তিন নাম্বারে ভারত। তাই মনে হয়, বছরের বাকি দুই কোয়ার্টারে তাদের অর্থনীতি আরও সঙ্কুচিত হবে।
এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে মোদি সরকার তাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করতে পারবে না – লাদাখে মার খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যেটা তাদের প্রয়োজন। তাছাড়া ‘দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ’ মোকাবেলার জন্য তারা প্রতিরক্ষা খাতেও আরও সম্পদ নিয়ে আসতে পারবে না। সাম্প্রতিক সঙ্ঘর্ষের সময় পিএলএ লাদাখ এলাকায় যে ৪০-৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি ভারত।
ভারত যদিও আশা করছে যে, চীনের বিপরীতে তারা মার্কিন সমর্থন পাবে, কিন্তু লাদাখের ঘটনা আবারও দেখিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে খুব একটা নির্ভরযোগ্য অংশীদার হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছেন। তার পরাজয়টা ক্রমেই একটা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচন পেছানোর সুযোগ খুজছেন।
ট্রাম্পের পর, নতুন মার্কিন প্রশাসন হয়তো চীনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইবে না বা এশিয়াতে চীনকে দমনের জন্য ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্কেও অংশ নিতে চাইবে না, এই সম্ভাবনাও রয়েছে।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এই অঞ্চলকে ভারতের সাথে যুক্ত করার জন্য মোদি সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের এক বছর পরেও আঞ্চলিক ভারসাম্য তাদের অনুকূলে যায়নি। বরং উল্টাটা হয়েছে। এই সংযুক্তির কারণে এতদিন যেটা ইন্দো-পাক দ্বিপাক্ষিক একটি ইস্যু ছিল, সেখানে এখন চীন যুক্ত হয়ে এটা কার্যত ত্রিপক্ষীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
ভারত তাদের ‘হিন্দুস্তান’ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাশ্মীরের জনমিতিক চেহারা বদলে ফেলার চেষ্টা করছে। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাশ্মীরে ভূমি কেনার অধিকার দিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগই উল্টা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। চীন এখন তাদের ভূমিকা নতুন করে নির্ধারণ করেছে এবং এ অঞ্চলের ব্যাপারে তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের সংযুক্তি থেকে এই ইঙ্গিত মিলেছে, যে কোন সময় তারা চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলকে নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু চীনের আগাম প্রতিজবাব, তাদের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ – এই সবকিছুই ভারতের কর্মকাণ্ডের যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। এই সব কিছু পরিস্থিতিকে ভারতের জন্য অনেক বেশি জটিল করে দিয়েছে, যেটা এক বছর আগেও ছিল না।
পরিস্থিতি যেটা দাঁড়াচ্ছে, তাতে কাশ্মীরের ব্যাপারে যে কোন ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে চীন একটা অনিবার্য পক্ষ হয়ে থাকবে। অন্যভাবে বললে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কাশ্মীরকে যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যু হিসেবে দেখা হয়, তাহলে এর পর থেকে সেটা ত্রিপক্ষীয় ইস্যু হয়ে গেছে।
লাদাখে চীন ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে যাচ্ছে তারা। ফলে চীনের স্বার্থ এখানে অনেকে বেড়ে গেছে। এর অর্থ হলো, ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখায় বড় ধরনের কোন সঙ্ঘাত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে চীন সেখানে সরাসরি জড়িয়ে যাবে।
একইভাবে, পাকিস্তানও তাদের অবস্থান সংহত করার জন্য বিতর্কিত কাশ্মীর এলাকায় বিনিয়োগের জন্য চীনকে প্রস্তুত করেছে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সঠিকভাবেই বলা হয়েছে যে, এই চীনা বিনিয়োগ আসলে ‘ভারতের উপর একটা আঘাত’।
অতি সাম্প্রতিক ও সম্ভবত সবচেয়ে বড় চীন-পাকিস্তান বিনিয়োগ হয়েছে পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম বাঁধ, দিয়ামের বাসা ড্যাম নির্মাণে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব চায়না পাওয়ার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাণিজ্যিক শাখা ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশান যৌথভাবে এই বাঁধ নির্মাণ করছে।
সিপিইসির অধীনে দিয়ামের বাসা ড্যাম ছাড়াও আরও দুটি প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করেছে ইসলামাবাদ আর বেইজিং। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হবে, যেখান থেকে ১,৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
চীন যখন এ অঞ্চলে প্রভাব বাড়াচ্ছে, তখন বিষয়টা ভারত আর চীনের বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করবে। অন্যভাবে বললে, এমনকি ভারত যদি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের চিন্তাও করে, সে ক্ষেত্রে ভারতের কৌশলবিদদের বিবেচনায় ‘চীন ফ্যাক্টরের’ বিষয়টিকেও নিতে হবে।
সত্যি হলো, লাদাখে চীন-ভারত সঙ্ঘর্ষের পর থেকে হিসেব নিকেশ একেবারে পাল্টে গেছে। হিন্দুত্ববাদী ‘অখণ্ড ভারতের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পুরো অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার যে ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে ভারতের, সেটার বিরুদ্ধে এটাকে চীন-পাকিস্তানের জবাব হিসেবে দেখা যেতে পারে।
লাদাখের সঙ্ঘর্ষ-পরবতী বাস্তবতা থেকে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে যে, এ অঞ্চলে এবং বিশ্বে ভারতের আরও পেশিবহুল ভূমিকার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বপ্ন রয়েছে মোদি সরকারের, সেটা হয়তো পূর্ণ হবে না।
লাদাখে ভারতের অগ্রসর হওয়া এবং চীনকে পিছনে ঠেলে দেয়ার সাফল্যকে যদি এই ধরনের ভূমিকার লিটমাস পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সে পরীক্ষায় ভারত নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে কৌশলগত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে ভারত।‘উহান স্পিরিট’কে পুনরুদ্ধার করতে নয়াদিল্লীর আরও বহু সময় লেগে যাবে।
এটা সত্য যে, এই সব কিছু ঘটার একটা বড় কারণ হলো এই অঞ্চলে নিজেদের দুর্বল অবস্থানকে ঢাকার জন্য ভারত বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। চীন যেখানে বিতর্কিত অঞ্চলের চারপাশে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করেছে, সেখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা করছে, যে ধরনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের মধ্যে রয়েছে। আর এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
অনেকটা গভীর মার্কিন-ভারত কৌশলগত সম্পর্কের অজুহাত হিসেবে ভারতের নীতি নির্ধারকরা এরই মধ্যে বলতে শুরু করেছে যে, এখানে একটা ‘প্রতিকূল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং ‘দুই ফ্রন্টের যুদ্ধের’ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যেটা তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে ও যেখানে তাদেরকে লড়তে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো: এ ধরনের যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য বা এই ‘প্রতিকূল পরিবেশ’ কার্যকরভাবে দমনের জন্য যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ সম্পদ কি ভারতের আছে?
ভারতের নড়বড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বোঝা যায় পরিবর্তনের জন্য কতটুকু তারা এগুতে পারবে। ঢিলেঢালা হিসেবেও ২০২০ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারতের অর্থনীতি প্রায় ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে – নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর এবারই প্রথম অর্থনৈতিক সঙ্কোচন দুই অঙ্কের কোঠা পার করলো। করোনা আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রাজিলের পর তিন নাম্বারে ভারত। তাই মনে হয়, বছরের বাকি দুই কোয়ার্টারে তাদের অর্থনীতি আরও সঙ্কুচিত হবে।
এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে মোদি সরকার তাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করতে পারবে না – লাদাখে মার খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যেটা তাদের প্রয়োজন। তাছাড়া ‘দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ’ মোকাবেলার জন্য তারা প্রতিরক্ষা খাতেও আরও সম্পদ নিয়ে আসতে পারবে না। সাম্প্রতিক সঙ্ঘর্ষের সময় পিএলএ লাদাখ এলাকায় যে ৪০-৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে, সেটা এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি ভারত।
ভারত যদিও আশা করছে যে, চীনের বিপরীতে তারা মার্কিন সমর্থন পাবে, কিন্তু লাদাখের ঘটনা আবারও দেখিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে খুব একটা নির্ভরযোগ্য অংশীদার হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছেন। তার পরাজয়টা ক্রমেই একটা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচন পেছানোর সুযোগ খুজছেন।
ট্রাম্পের পর, নতুন মার্কিন প্রশাসন হয়তো চীনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে চাইবে না বা এশিয়াতে চীনকে দমনের জন্য ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্কেও অংশ নিতে চাইবে না, এই সম্ভাবনাও রয়েছে।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর
Comment