কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৪।। সাফাকাদাল হত্যাকাণ্ড
১৯৯২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সকাল সকাল জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের তারাবল এলাকায় শুরু হয় দখলদার হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর অভিযান। দুপুরের দিকে অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই নাওয়াকাদাল এলাকা থেকে দখলদার বাহিনীর গুলির আওয়াজ শুনতে পান সেখানকার বাসিন্দারা।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই সাফাকাদাল এলাকায় “হামদর্দ” পত্রিকার লেখক গুলাম নবি মহাজনের বাড়ি। মহাজন ও তাঁর একমাত্র ছেলে আইজাজ হুসাইন সেসময় অবস্থান করছিলেন নিজেদের বাড়িতেই।
দুপুরে আবার ক্র্যাকডাউনের সময় দখলদার বাহিনীর ৮ জন সেনা মহাজনের বাড়িতে এসে ডাকতে থাকে মহাজনকে। এদিকে দুপুরের ক্র্যাকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় মহাজন তাঁর ছেলে আইজাজকে ঘরে ডাকতে থাকে। আইজাজ তখন বাড়ির ছাদে কিছু ইলেকট্রিক্যাল কাজ করছিলেন। বাবার ডাক শুনে আইজাজ নিচে নেমে আসতেই দখলদার এক সেনা তাঁর চুল ধরে টেনে তাঁকে বাড়ির সামনে নিয়ে আসে।
এরপর অন্য আরেকজন দখলদার সেনা আইজাজকে স্বাধীনতাকামী বললে আইজাজ তা অস্বীকার করে। তখন সেই দখলদার সেনা আইজাজকে রাস্তার একপাশে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়। আইজাজ দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই তাঁর বাম চোখ, বাম পা ও বুকে গুলি তিনটি গুলি করে সেই সেনা।
মহাজন গুলির শব্দ শুনে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এসেই দেখতে পান সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য; যে দৃশ্য কোন বাবাই তার জীবদ্দশায় দেখতে চাইবে না। তাঁর ছেলেকে গুলি করেছে দখলদার সেনারা। তিনি চিৎকার করে বলে উঠেন, “আমার ছেলে মারা গেছে!”
ঠিক তখনই, পেছন থেকে মহাজনের পিঠে গুলি করে দখলদার বাহিনীর অন্য এক সেনা।
ঘটনাস্থলে মহাজনের স্ত্রী আসলে তাঁকে বাঁধা দিতে এক দখলদার সেনা গুলি চালায় আইজাজের মৃতদেহের চারপাশে। এরপর এক সেনা মহাজনের নিথর দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় উঠোনের বাইরে। বেশ কয়েকজন সেনা এরপর আইজাজের মাকে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। আইজাজের মা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেন। দখলদার বাহিনীর এক অফিসার তখন তাকে ভয় দেখিয়ে বলে, “ওরা কোথায় আছে বল, নাহলে তোকে আমরা মেরে ফেলব।”
আইজাজের মা মৃতদেহগুলো ঢেকে রাখতে পারবেন কিনা তা জানতে চাইলে দখলদার সেনারা তাঁকে বাড়ির বাইরে বের না হবার হুমকি দেয়। তারপর আইজাজ ও মহাজনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানেই ফেলে রাখা হয় তাদের লাশ। মুসলিমের লাশের প্রতি কতোই না অসম্মান, কতোই না জিঘাংসা, কতোই না বিকৃত আচরণ।
পরদিন সংবাদপত্রে সরকারি বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয় যে- “নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে ‘দুইজন জঙ্গি’ নিহত হয়েছে।”
[এশিয়া ওয়াচ ও পিএইচআরকে দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া বিবৃতির অবলম্বনে]
অনুবাদক ও সংকলক : আবু উবায়দা
আগের পর্বগুলো পড়ুন :
১। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা ।। পর্ব-১।। চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/24/59437/
২। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-২।। ধর্ষণ যাদের সংস্কৃতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/25/59476/
৩। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা || পর্ব-৩ || নাসরুল্লাহপুরার হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/09/28/59560/
১৯৯২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সকাল সকাল জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের তারাবল এলাকায় শুরু হয় দখলদার হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর অভিযান। দুপুরের দিকে অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই নাওয়াকাদাল এলাকা থেকে দখলদার বাহিনীর গুলির আওয়াজ শুনতে পান সেখানকার বাসিন্দারা।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই সাফাকাদাল এলাকায় “হামদর্দ” পত্রিকার লেখক গুলাম নবি মহাজনের বাড়ি। মহাজন ও তাঁর একমাত্র ছেলে আইজাজ হুসাইন সেসময় অবস্থান করছিলেন নিজেদের বাড়িতেই।
দুপুরে আবার ক্র্যাকডাউনের সময় দখলদার বাহিনীর ৮ জন সেনা মহাজনের বাড়িতে এসে ডাকতে থাকে মহাজনকে। এদিকে দুপুরের ক্র্যাকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় মহাজন তাঁর ছেলে আইজাজকে ঘরে ডাকতে থাকে। আইজাজ তখন বাড়ির ছাদে কিছু ইলেকট্রিক্যাল কাজ করছিলেন। বাবার ডাক শুনে আইজাজ নিচে নেমে আসতেই দখলদার এক সেনা তাঁর চুল ধরে টেনে তাঁকে বাড়ির সামনে নিয়ে আসে।
এরপর অন্য আরেকজন দখলদার সেনা আইজাজকে স্বাধীনতাকামী বললে আইজাজ তা অস্বীকার করে। তখন সেই দখলদার সেনা আইজাজকে রাস্তার একপাশে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়। আইজাজ দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই তাঁর বাম চোখ, বাম পা ও বুকে গুলি তিনটি গুলি করে সেই সেনা।
মহাজন গুলির শব্দ শুনে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এসেই দেখতে পান সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য; যে দৃশ্য কোন বাবাই তার জীবদ্দশায় দেখতে চাইবে না। তাঁর ছেলেকে গুলি করেছে দখলদার সেনারা। তিনি চিৎকার করে বলে উঠেন, “আমার ছেলে মারা গেছে!”
ঠিক তখনই, পেছন থেকে মহাজনের পিঠে গুলি করে দখলদার বাহিনীর অন্য এক সেনা।
ঘটনাস্থলে মহাজনের স্ত্রী আসলে তাঁকে বাঁধা দিতে এক দখলদার সেনা গুলি চালায় আইজাজের মৃতদেহের চারপাশে। এরপর এক সেনা মহাজনের নিথর দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় উঠোনের বাইরে। বেশ কয়েকজন সেনা এরপর আইজাজের মাকে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। আইজাজের মা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেন। দখলদার বাহিনীর এক অফিসার তখন তাকে ভয় দেখিয়ে বলে, “ওরা কোথায় আছে বল, নাহলে তোকে আমরা মেরে ফেলব।”
আইজাজের মা মৃতদেহগুলো ঢেকে রাখতে পারবেন কিনা তা জানতে চাইলে দখলদার সেনারা তাঁকে বাড়ির বাইরে বের না হবার হুমকি দেয়। তারপর আইজাজ ও মহাজনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানেই ফেলে রাখা হয় তাদের লাশ। মুসলিমের লাশের প্রতি কতোই না অসম্মান, কতোই না জিঘাংসা, কতোই না বিকৃত আচরণ।
পরদিন সংবাদপত্রে সরকারি বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয় যে- “নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে ‘দুইজন জঙ্গি’ নিহত হয়েছে।”
[এশিয়া ওয়াচ ও পিএইচআরকে দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া বিবৃতির অবলম্বনে]
অনুবাদক ও সংকলক : আবু উবায়দা
আগের পর্বগুলো পড়ুন :
১। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা ।। পর্ব-১।। চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/24/59437/
২। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-২।। ধর্ষণ যাদের সংস্কৃতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/25/59476/
৩। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা || পর্ব-৩ || নাসরুল্লাহপুরার হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/09/28/59560/