বিশেষ প্রতিবেদন || মুসলিম নিপিড়নে মিয়ানমারকে ইসরাইলের সাহায্যের নেপথ্যে
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে মানুষের উপর অন্যায়-জুলম হবে, বিশেষ করে মুসলিমদের উপরে নির্যাতন হবে, আর সেকাজে বর্বর ইহুদিদের কুটকৌশল থাকবেনা- এটা যেন হতেই পারেনা। পৃথিবীতে সংঘটিত দু’টি বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত হবার পিছনে এই ইহুদিরাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী ছিল। অতি সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করতে যে সামরিক কৌশল ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, এর বেশিরভাগই পেয়েছে সন্ত্রাসী ইসরাইলের কাছ থেকে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইহুদীবাদি অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের আঁতাতের খবর পুরানো হলেও, এ সংক্রান্ত নিশ্চিত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য এতদিন পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার তাদের গভীর সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করেছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের তথ্য সম্বলিত প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করেছে তারা। যদিও এর পেছনেও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল, তবে তা আমাদের আজকের লিখার বিষয়বস্তু নয়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের সংবাদপত্র হারেথস ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ইসরাইল এবং বার্মার (মিয়ানমার) মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্কের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার পাতা সম্বলিত নথি রয়েছে।
ওই নথিতে রয়েছে, ইসরাইল সেনাবাহিনী বর্মী সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে, সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত করেছে। এবং সামরিক শক্তিতে বলিয়ান থেকে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম প্রদানে সহায়তা করেছে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে দেশটিতে কর্তৃত্ব বজায় রাখতেও সহায়তা করেছে ইসরাইল।
নথিগুলোতে আরও রয়েছে যে, ইসরাইলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের বিপুল সমর্থনের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বার্মিজ সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া, নথির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো ইসরাইলি প্রতিনিধি কখনও আপত্তি জানায়নি সেই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে।
নথিতে আরেকটি স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে; তা হলো- ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ করেছে, ঠিক একইভাবে বার্মাও ইহুদিদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেড ফাঁড়ির স্টাইলে বিদ্রোহী জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে (আরাকানে) সামরিক কর্মীদের বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। নথিগুলোতে আরও দেখা গেছে যে, বার্মায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের জাতিগত নির্মূল করার প্রচেষ্টাসহ দেশটিতে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্ত্বেও, ইসরাইল বার্মাকে নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
শুধু তাই নয়, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং বার্মিজ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপনে ব্যপক আগ্রহী ছিল ইসরাইলের শাসকগোষ্ঠী। পরবর্তীতেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি ইসরাইলের সমর্থনে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায়নি। তার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা হয়েছিল, সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য ‘শুভকামনা’ জানিয়েছিল মিয়ানমারে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রনেন গিলর।
সন্ত্রাসবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নিপীড়নে করে সফলতা লাভ করায়, পৃথিবীর সকল জালিমরাই এখন মুসলিম নিধনে ইসরাইলকে আদর্শ মনে করে। এবং মুসলিম নির্যাতনে ইসরাইলও এসব জালিমদের সামরিক ও গোয়েন্দা সাহায্য প্রদান করে থাকে এই- নথি এটিরও প্রমান বহন করে।
শুধুমাত্র মিয়ানমারেই নয়, ভারতও কাশ্মীরে মুসলিমদের নিপিড়নে হিন্দুত্ববাদীরা যে ইসরাইলকে অনুসরণ করছে, মাঝে মধ্যে হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরাই তা অকপটে স্বীকার করে থাকে। এবং তারা অকপটে বলে যে, মুসলিম নিধনে আমাদের আদর্শ হলো ইসরাইল।
তবে তুর্কিস্তানে দখলদার চীন কর্তৃক উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের ইসরাইলের সরাসরি হাত থাকার বিষয়টিও এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত নয়। যদিও এটা প্রমাণিত সত্য যে, চীনের প্রযুক্তিগত ও সামরিক উন্নয়নের পেছনে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দানব হয়ে উঠার পেছনে ইহুদিবাদীদের মদদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মিয়ানমার-ইসরাইল সম্পর্ক নিয়ে কিংবা মুসলিম নিধনে মিয়ানমারকে ইসরাইলের সহায়তা করা নিয়ে যে কথন প্রচলিত ছিল, আমরা তার প্রমাণ পেলাম। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মুসলিম হত্যা এবং সন্ত্রাসী বিএসএফ-কে নানান উপকরণগত ও কৌশলগত দিয়ে সহায়তা করার পেছনে ইসরাইলের যে ভূমিকার কথা জানা যায়, সেটাকেও তাহলে ভারতপ্রেমিদের সত্য বলে মেনে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়।
তথ্যসূত্র :
১। মিয়ানমার-ইসরাইল গভীর সম্পর্কের নথি প্রকাশ-
– https://tinyurl.com/mr4y3f7p
২। India house demolitions: Another Israeli-style war crime against Muslims
– https://tinyurl.com/59sbb5b9
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে মানুষের উপর অন্যায়-জুলম হবে, বিশেষ করে মুসলিমদের উপরে নির্যাতন হবে, আর সেকাজে বর্বর ইহুদিদের কুটকৌশল থাকবেনা- এটা যেন হতেই পারেনা। পৃথিবীতে সংঘটিত দু’টি বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত হবার পিছনে এই ইহুদিরাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী ছিল। অতি সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুত করতে যে সামরিক কৌশল ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে, এর বেশিরভাগই পেয়েছে সন্ত্রাসী ইসরাইলের কাছ থেকে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইহুদীবাদি অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের আঁতাতের খবর পুরানো হলেও, এ সংক্রান্ত নিশ্চিত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য এতদিন পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার তাদের গভীর সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করেছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের তথ্য সম্বলিত প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করেছে তারা। যদিও এর পেছনেও বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল, তবে তা আমাদের আজকের লিখার বিষয়বস্তু নয়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের সংবাদপত্র হারেথস ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ইসরাইল এবং বার্মার (মিয়ানমার) মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্কের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার পাতা সম্বলিত নথি রয়েছে।
ওই নথিতে রয়েছে, ইসরাইল সেনাবাহিনী বর্মী সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে, সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত করেছে। এবং সামরিক শক্তিতে বলিয়ান থেকে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম প্রদানে সহায়তা করেছে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে দেশটিতে কর্তৃত্ব বজায় রাখতেও সহায়তা করেছে ইসরাইল।
নথিগুলোতে আরও রয়েছে যে, ইসরাইলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের বিপুল সমর্থনের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বার্মিজ সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া, নথির বক্তব্য অনুযায়ী, কোনো ইসরাইলি প্রতিনিধি কখনও আপত্তি জানায়নি সেই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে।
নথিতে আরেকটি স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে; তা হলো- ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ করেছে, ঠিক একইভাবে বার্মাও ইহুদিদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেড ফাঁড়ির স্টাইলে বিদ্রোহী জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে (আরাকানে) সামরিক কর্মীদের বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। নথিগুলোতে আরও দেখা গেছে যে, বার্মায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের জাতিগত নির্মূল করার প্রচেষ্টাসহ দেশটিতে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্ত্বেও, ইসরাইল বার্মাকে নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
শুধু তাই নয়, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং বার্মিজ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপনে ব্যপক আগ্রহী ছিল ইসরাইলের শাসকগোষ্ঠী। পরবর্তীতেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি ইসরাইলের সমর্থনে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায়নি। তার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা হয়েছিল, সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য ‘শুভকামনা’ জানিয়েছিল মিয়ানমারে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রনেন গিলর।
সন্ত্রাসবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নিপীড়নে করে সফলতা লাভ করায়, পৃথিবীর সকল জালিমরাই এখন মুসলিম নিধনে ইসরাইলকে আদর্শ মনে করে। এবং মুসলিম নির্যাতনে ইসরাইলও এসব জালিমদের সামরিক ও গোয়েন্দা সাহায্য প্রদান করে থাকে এই- নথি এটিরও প্রমান বহন করে।
শুধুমাত্র মিয়ানমারেই নয়, ভারতও কাশ্মীরে মুসলিমদের নিপিড়নে হিন্দুত্ববাদীরা যে ইসরাইলকে অনুসরণ করছে, মাঝে মধ্যে হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরাই তা অকপটে স্বীকার করে থাকে। এবং তারা অকপটে বলে যে, মুসলিম নিধনে আমাদের আদর্শ হলো ইসরাইল।
তবে তুর্কিস্তানে দখলদার চীন কর্তৃক উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের ইসরাইলের সরাসরি হাত থাকার বিষয়টিও এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত নয়। যদিও এটা প্রমাণিত সত্য যে, চীনের প্রযুক্তিগত ও সামরিক উন্নয়নের পেছনে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দানব হয়ে উঠার পেছনে ইহুদিবাদীদের মদদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মিয়ানমার-ইসরাইল সম্পর্ক নিয়ে কিংবা মুসলিম নিধনে মিয়ানমারকে ইসরাইলের সহায়তা করা নিয়ে যে কথন প্রচলিত ছিল, আমরা তার প্রমাণ পেলাম। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মুসলিম হত্যা এবং সন্ত্রাসী বিএসএফ-কে নানান উপকরণগত ও কৌশলগত দিয়ে সহায়তা করার পেছনে ইসরাইলের যে ভূমিকার কথা জানা যায়, সেটাকেও তাহলে ভারতপ্রেমিদের সত্য বলে মেনে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়।
প্রতিবেদক : ইউসুফ আল-হাসান
তথ্যসূত্র :
১। মিয়ানমার-ইসরাইল গভীর সম্পর্কের নথি প্রকাশ-
– https://tinyurl.com/mr4y3f7p
২। India house demolitions: Another Israeli-style war crime against Muslims
– https://tinyurl.com/59sbb5b9
Comment