Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলাদেশে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, পার্বত্যাঞ্চলে খ্রিস্টবাদ এবং ভারত-অ্যামেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলাদেশে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, পার্বত্যাঞ্চলে খ্রিস্টবাদ এবং ভারত-অ্যামেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব

    বাংলাদেশে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, পার্বত্যাঞ্চলে খ্রিস্টবাদ এবং ভারত-অ্যামেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব



    পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রুন্ট বা কেএনএফ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক ভূমি নিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন ক্ষমতাসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ‘কুকি-চিন’ রাষ্ট্রের দাবীতে সশস্ত্র আন্দোলনে নেমেছে তারা। তারা নিজেদেরকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দাবি করেছে।

    সম্প্রতি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্রবাহিনী যৌথভাবে পার্বত্যাঞ্চলে তাদেরকে দমন করতে নেমেছে। তাগুদি শক্তির অধিনস্ত এই বাহিনীগুলো বলছে যে, কথিত ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী এই কেএনএফ-এর সাথে মিলে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করার চেষ্টা করছে।

    হাসিনা ও দিল্লীর পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের এই দালাল বাহিনীগুলোর এই দাবির ব্যবচ্ছেদ করা জরুরী। কারণ ইতিপূর্বে কথিত বিশ্বমোড়লদের সন্তুষ্ট করে হাসিনার জুলুমের শাসন টিকিয়ে রাখতে তারা বহুবার এমন কথিত ‘জঙ্গি নাটক’ সাজিয়েছে, ঝরিয়েছে অসংখ্য নিরীহ প্রাণ।
    সেই সাথে এই ইস্যু ঘিরে ভারত-অ্যামেরিকা দ্বন্দ্বের যে খবর চাউর হয়েছে, তারও ব্যবচ্ছেদ হওয়া জরুরী। আর স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনায় জড়িয়ে যাবে চীন ও আরাকান প্রসঙ্গ।
    প্রথমে এই কুকু আর্মি বা কেএনএফ সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক।


    বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রােয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলা নিয়ে তাদের কল্পিক ‘কুকি-চীন’ রাষ্ট্র গঠিত। বান্দরবানের বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো, খিয়াং ছয় জাতিগোষ্ঠী মিলে সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করছে তারা।

    এই সংগঠনের সকল সদস্যই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তারা নিজেদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দা মনে করে। একই সাথে অন্যান্য খ্রিস্টান-অখ্রিস্টান মিশ্রিত যে উপজাতিগুলো রয়েছে, যেমন: চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা- এসব জনগোষ্ঠীকে তারা ভারতী ও বার্মিজ জাতিভুক্ত বহিরাগত মনে করে। কেএনএফ সম্প্রতি নিজেদের সংগঠনের নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দাবি করেছে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের এসব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।



    এই সংগঠনের প্রধান নাথান বম একজন ঢাবি গ্রাজুয়েট। ২০১৮ সালে বাংলাদশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিল সে।

    ২০০৮ সালে এই সংগঠনের জন্ম। তাদের স্লোগান হলো ”NO FULL STATE NO REST’ অর্থাৎ পরিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের পূর্বে কোন বিশ্রাম নাই। শুরুতে এ সংগঠনের নাম ছিলো কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশান (কেএনডিও)। ২০১৬ সালে সশস্ত্র সংগঠনে পরিণত হয় এটি, এ সময় এর নামকরণ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার (কেএনভি)। বর্তমানে এ সশস্ত্র সংগঠনটির নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনও)।

    প্রথমদিকে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এবং ভারতের মিজোরাম, মনিপুর এবং মায়ানমারের চিন ও কাচিন রাজ্যের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। কেননা এই অঞ্চলে মূলত একই জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। আরও উল্লেখযোগ্য হল, এই রাজ্যগুলো সবই খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ। কেএনএফ তাই নিজ সদস্যদের মনিপুরে প্রশিক্ষণে পাঠায়। এরপর শতাধিক সদস্যকে মায়ানমারের কারেন ও কাচিন রাজ্যে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য প্রেরণ করে। ২০১৯ সালে গেরিলা ও কমান্ডো প্রশিক্ষণের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে এর সদস্যরা। পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠনটি বর্তমানে বেশ সক্রিয় রয়েছে।
    কেএনএফ-এর একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে সংগৃহীত দৃশ্য
    গত ২১ জুন বিলাইছড়িতে একটি পাহাড়ি গ্রামে ঢোকে এলোপাতাড়ি গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করে। এছাড়াও আরও কয়েকটি বড়সড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় তারা। হত্যাকণ্ডের পর কেএনএফের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লেখা হয়, ‘আজ জুন ২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকার সময় কেএনএফ-এর স্পেশ্যাল কমান্ডো ফোর্স হেড-হান্টার টিম জেএসএস’র সশস্ত্র বাহিনী জেএলএ-এর জাইজাম (সাইজম) বেসমেন্ট ক্যাম্পে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। এতে জেএলএ বাহিনীর ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্হলে নিহত হয়। তবে আহত অবস্থায় ট্রেইনিসহ অন্যরা সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’ পরে অবশ্য এই পোস্ট সরিয়ে ফেলা হয় পেজ থেকে।

    এছাড়া বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায় যারা তাদের আনুগত্য করছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কেএনএফ। জানা যায়, বড়থলি ও আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়ে আসছে কেএনএফ। অন্যথায় ভুক্তভোগী অন্য এলাকার মতো গুলি করে হত্যা এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভীতসন্ত্রস্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। জানা যায়, বিগত কয়েক মাস থেকে কেএনএফের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী লুণ্ঠন করে আসছে।

    বর্তমানে তাদের ৩-৪ হাজার সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের মিজোরামে সক্রিয় রয়েছে। তাদের নিজস্ব পেইজ থেকে জানা যায়, এদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৩ মাস। এর মধ্যে এক মাস ভারতের মিজোরামে তাত্বিক ও শারিরীক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, বাকি দুইমাস মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে বার্মিজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যেম প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এ ধরনের প্রশিক্ষণে সংগঠনের ২০ জন্য সদস্য বার্মিজ সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।
    নেপথ্য মদদদাতারা


    বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেএনএফ নিয়মিত তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ছবি ও ভিডিও আপলোড করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস, ইউপিডিএফ এর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী থাকলেও, কেএনও এর মতো এভাবে সশস্ত্র গ্রোপের ঘোষণা দিতে দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে মনে করছেন যে, বহির্বিশ্বের কোন শক্তিশালী পক্ষ তাদেরকে সহযোগিতা করে আসছে। কেননা, এভাবে একটি সংগঠনের ঘোষণা সহজ বিষয় নয়।

    অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিও, বিদেশী সংবাদ মাধ্যম, জাতিসংঘের আড়ালে থাকা খৃস্টান রাষ্ট্রসমূহের সহায়তায় পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপতৎপরতা বহুদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে। কেএনএফ খ্রিস্টান হওয়ায় পশ্চিমা ও জাতিসংঘ তথাকথিত মানবাধিকারের স্লোগান তুলে পূর্ব তিমুরের মতো স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

    বিদেশি শক্তির ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে ‘আদিবাসী’ বানানোর চেষ্টা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এ প্রচেষ্ঠার সঙ্গে যেমন এদেশে অনেক এনজিও জড়িত, তেমনিভাবে কিছু বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার গ্রুপসহ রাজনৈতিক দলও এসবের পৃষ্ঠপোষকতা করে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে আদিবাসী হিসাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হলে তাদের স্বার্থে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ সহজ হয়ে পড়ে। জানা যায়, জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক চার্টারে ‘আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত যে কোনো দেশে জাতিসংঘ সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে’- এমন ক্লজ আছে।

    ইতোমধ্যে, কেএনএফ তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘কুকি-চিন’ রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ ও অনুপ্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, অন্যথায় তারা সশস্ত্র যুদ্ধে নামবে।

    বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ধর্ম প্রচার করে খ্রিস্টান মিশনারী। এ ক্ষেত্র প্রচুর অর্থের প্রলোভন দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রভাব বিস্তারেও জড়িত এসব মিশনারী প্রতিষ্ঠান। সম্ভাবনা রয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগীতা করে এসব মিশনারী।

    এ এলাকায় একটি পৃথক খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হলে লাভ হবে পশ্চিমা বিশ্বের। তারা এ এলাকার বাজার ও খনিজসম্পদ কব্জা করতে পারবে। এছাড়াও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার ও সামরিক কৌশলগত কারণে এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পশ্চিমারা অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
    ভারত-অ্যামেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব


    পার্বত্য-চট্টগ্রামএর সশস্ত্র সংগঠনগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে- এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এর মধ্যে ভারত অন্যতম; মিয়ানমারও আবংলাদেশকে দুর্বল করে সুবিধা নিতে চায়। চট্টগ্রাম আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হলে লাভবান হবে দেশ দু’টি।

    ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর চায়। কারণ বর্তমান ভারতের সাত রাজ্যকে বানিজ্য করতে পারি দিতে হয় প্রায় ১৩ শ কিলোমিটার পথ। এজন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কয়েকযুগ ধরেই কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে চট্টগ্রাম দিয়ে বানিজ্য করলে মাত্র ১শ ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এ বিশাল ভৌগোলিক সুবিধার জন্য কোন দেশ বার বার চট্টগ্রামকে আলাদা করতে চাই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে বাংলাদেশকে দুর্বল ও দখল করে হিন্দুরাষ্ট্র অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার নীলনকশার ঘোষণা এখন প্রকাশ্যেই দেওয়া হয়।
    পূর্ব-ভারতে যাওয়ার রুট
    তবে এখানেই ভারত-অ্যামেরিকার স্বার্থের সংঘাত। অ্যামেরিকা পার্বত্য-চট্টগ্রাম উত্তর মিয়ানমার ও পূর্ব-ভারতের খ্রিস্টান অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের প্রধান নিয়ামক। ইতিমধ্যেই এই অঞ্চল খ্রিস্টানপ্রধান হয়ে গিয়েছে। একটা গণ্ডগোল বাধিয়ে গণভোট আয়োজন করতে পারলেই দক্ষিণ সুদান বা পূর্ব-তিমুরের আদলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন করা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

    ১৯ শতকের শেষভাগে এবং ২০ শতেকের প্রথমাংশে খ্রিস্টান মিশনারিরা সুদানের দক্ষিনাঞ্চলে প্রবেশ করে। এরপর দেশের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান একটি খ্রিস্টান দেশে পরিণত হয়। আর স্বাধীন খ্রিস্টান দেশ হতে পূর্ব-তিমুরের লেগেছে মাত্র ৭০ বছর। উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতারা তখন এই বিষয়ে উদাসীন থেকেছে; এবং উপযুক্ত সময়ে গদি বা স্বার্থরক্ষার্থে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বাস্তবায়নের চূড়ান্ত স্তরে পরক্ষভাবে সহায়তা করেছে।

    মিজোরামের ইহুদি জনগোষ্ঠীকেও এই পরিকল্পনার অংশ মনে করা হয়, যাদেরকে ইহুদি ধর্মযাজকরা ইসরাইলের হারিয়ে যাওয়া বনু মনেসা গোত্র বলে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে।

    এদিকে চীনও তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের আড়ালে চীনের নীতি হল একটি দেশের বিবাদমান সকল পক্ষকে সাহায্য করে যাওয়া, এবং সেদেশকে দুর্বল করে স্বার্থ হাসিল করা, প্রয়োজনে ভূখণ্ড দখল করা। এভাবেই তারা তিব্বত ও পূর্ব-তুর্কিস্তান দখল করেছে।

    মিয়ানমারকে চীন তাদের উপর নির্ভরশীল বানিয়ে অন্যদিকে সবগুলো বিদ্রোহী দলকে সহায়তা করে গেছে; এই অভিযোগ খোদ মিয়ানমার করেছে যে, চীন সরকার কাচিন, কারেন ও আরাকানি বিদ্রোহীদেরকে (আরাকান আর্মি) সহায়তা করছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। আরাকানেও মার্কিন ও ভারতীয় স্বার্থ ধ্বংস করে নিজ স্বার্থ রক্ষায় চীন আরাকান আর্মিকে শক্তিশালী করেছে বলে কথিত রয়েছে। ফলে সেখানে ভারতের কালাদান প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
    সমস্যা কেবল মুসলিম জনসংখ্যা


    পরাশক্তিগুলো নানান স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে মুখমুখি অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার ত্রিসীমান্তাঞ্চল ঘিরে। তবে সকলের স্বার্থ হাসিলের পথে প্রধান বাধা এই অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠী। শুধু রোহিঙ্গা মুসলিমরা নয়, বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমরাও সমানভাবে পরাশক্তিগুলোর মিশন বাস্তবায়নের পথের কাঁটা। তাই তারা কৌশলে এই অঞ্চলের মুসলিমদেরকে বাগে আনতে বা ধ্বংস করতে তৎপর। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে; মিয়ানমারে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারাও এখন তাতমাদাও ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষের মাঝে পরে প্রান হারাচ্ছে, ঘরবারি ছাড়া হচ্ছে। আসামের মুসলিমদেরকে ভারত ছাড়া করার চূড়ান্ত প্রস্তুতিও সম্পন্ন। আর মুসলিমদের বিতাড়িত করে কিংবা ধরমান্ত্রিত করে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা কিংবা বাংলাদেশ দখলের হুমকি হিন্দুত্ববাদী নেতারা এখন প্রকাশ্যে দিচ্ছে।

    অ্যামেরিকা বহু বছর ধরেই সেন্ট-মার্টিনে তাদের ঘাঁটি গারতে চায়। চীনকে টেক্কা দেওয়ার ইস্যুটি মিডিয়াতে প্রচার করা হলেও, এর মূল উদ্দেশ্য যে ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার ত্রিসীমান্তে তৈরি হতে যাওয়া খ্রিস্টান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান সেটাও এখন বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

    আমরা হয়তো খেয়াল করে থাকবো যে, লাদাখে চীন কিন্তু ভারতের বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে; ভারত তেমন কিছুই বলছে না। আবার বাংলাদেশের চীন তিস্তা প্রকল্প নিয়ে টাল-বাহানা করছে, অনেক মেগা প্রজেক্টে আশানুরূপ বিনিয়োগ করছে না। পশ্চিমাদের পূর্ব-ভারত, পার্বত্য-চট্টগ্রাম ও উত্তর মিয়ানমার নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা এখন ওপেন সিক্রেট; এটা নিয়েও ভারতের তেমন কোন উচ্চ-বাচ্য নেই। কাশ্মীর নিয়ে চীন ও অ্যামেরিকা কিংবা পূর্ব-তুর্কিস্তানে উইঘুর নির্যাতন নিয়ে ভারত ও অ্যামেরিকা ঠুনকো বিবৃতি দেওয়া ছাড়া কিছুই করছে না।

    আশা করি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে এরা সকলেই এক- এটা পাঠক হয়তো কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
    কেন কেএনএফ ইস্যুর সাথে কথিত ‘জঙ্গি’ ইস্যুকে এক করে প্রচার করা হচ্ছে?


    সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং হলুদ মিডিয়া কেন এই কুকি আর্মি বা কেএনএফ ইস্যুর সাথে এই কথিত জঙ্গি ইস্যুকে এক করে প্রচার করছে।

    এই ইস্যুতেও ভারতপন্থী-অ্যামেরিকাপন্থীদের দ্বন্দ্বএর বিষয়টি রয়েছে। এভাবে প্রচার করায় ভারতপন্থীদের বা ভারতের দু’টি সুবিধা রয়েছে। আর অ্যামেরিকাপন্থীদের সুবিধার পাশাপাশি সাময়িক অসুবিধাও রয়েছে।

    ‘ইসলামপন্থী যুবকরা কেএনএফ-এর আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ডাক্তারি সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে’- এই প্রচারনায় ভারতপন্থী ও অ্যামেরিকাপন্থীদের কমন সুবিধা হল এই যে, এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের সত্যিকারের ইসলামপন্থীদেরকে জনগনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। বাংলাদেশের হক্কপন্থী জিহাদি দলগুলো অনেক বছর ধরেই প্রচার-প্রচারণা ও প্রস্তুতি গ্রহণের মধ্যে নিজেদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন কোন বড় লক্ষকে সামনে রেখে – বিভিন্ন ঘটনায় এমনটাই প্রচার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর কথিত আইএস অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পর থেকে ইসলামের হক্ক প্রচার এবং মানবরচিত সিস্টেমের অসারতা মানুষের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনমনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হচ্ছে হক্কপন্থী ইসলামি দলগুলো। এর বিপরিতে তাদেরকে কোনঠাসা করতে কোন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দ্বার করানর প্রয়োজন ছিল, যেটা তৈরি করা হয়েছে বান্দরবনে কেএনএফ-এর সাথে কথিত ‘জঙ্গি’দের সম্পর্ক প্রচার করার মাধ্যমে।

    প্রকৃত ইসলামপন্থীদেরকে বিতর্কিত করার স্বার্থেই মূলত অ্যামেরিকাপন্থীরা এই প্রচারনার বিরুদ্ধে তেমন জোরালো পুদক্ষেপ নেয়নি।

    আবার স্থানীয় প্রোপ্যাগান্ডা হচ্ছে, জেএসএস ও ভারতপন্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যৌথবাহিনীর সাথে কেএনএফ ও ‘জঙ্গি’দের সংঘর্ষে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত ও সমান সংখ্যক গ্রেফতার হয়েছে।
    অন্যদিকে কেএনএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যৌথবাহিনীর সাথে তাদের কোন সংঘর্ষ হয়নি, বরং তাদের উচ্চমহলের নির্দেশে যৌথবাহিনী তাদের ঘাঁটিতে পৌঁছানোর আগেই তারা পিছু হটেছে। উল্টো জেএসএস-এর সশস্ত্র শাখা জেএলএ’র সদস্যরা আম্বুশ করে যৌথ বাহিনীর উপর হামলা করে কেএনএফ-এর উপরে দোষ চাপাচ্ছে।
    উভয় পক্ষের প্রচারণাই খুবই সাঙ্ঘাতিক; জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার ঘটনাকে ‘নাটক’ প্রমানের জন্য স্থানীয় এই দু’টি প্রচারনাই যথেষ্ট।

    এখানে ভারতপন্থীদের আরেকটি সুবিধা হলো, এই প্রচারনার মাধ্যমে তারা পতনোন্মুখ হাসিনা সরকারের পায়ের তলায় কিছুটা মাটি দেওয়ার প্রয়াশ পাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে পশ্চিমা হয়তো হাসিনার ক্ষমতায় থাকা আরও কিছু সময়ের জন্য মেনে নিতে পারে।

    তবে এখানে অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের প্রথম অসুবিধা হচ্ছে যে, এসব প্রচারনার মাধ্যমে তাদেরকে বন্ধুকে শত্রু ভাবতে এবং শত্রুকে বন্ধু ভাবতে অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে।
    মুসলিমদের দ্বিতীয় অসুবিধা হচ্ছে যে, এসব প্রচারণা এদেশের ভূমিকে পরাশক্তিদের গ্রেট গেম বাস্তবায়ন ও হস্তক্ষেপের জন্য উপযুক্ত ও উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।
    আর মুসলিমদের তৃতীয় অসুবিধাটি হচ্ছে, এর দ্বারা সত্য-মিথ্যার একটা ঘোলাটে অবস্থান তৈরি করা হচ্ছে, যাতে করে মুসলিম জনসাধারণের প্রকৃত ইসলামপন্থী পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ কঠিন হয়ে পরে।

    সার্বিক পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে তখন হাসিনা সরকার বা হাসিনা পরবর্তী কথিত গণতান্ত্রিক সেক্যুলার সরকারের সামনে হয়তো সুদান বা ইন্দনেশিয়ার সরকারের মতো ‘দেশ ভাগ হতে দেওয়া’ ব্যতীত আর কোন পথ খোলা থাকবে না।

    অত্র অঞ্চলের মুসলিমদের জন্য তাই এখন ভেবে-চিন্তে পক্ষ গ্রহণ এবং ইসলামের দৃষ্টিতে সার্বিক পরিস্থিত মূল্যায়নের সময় চলে এসেছে। হক্ক কিংবা বাতিল- যেকন একটি পক্ষ গ্রহণ করার সময় হয়তো চলে এসেছে। কে বন্ধু আর কে শত্রু – এই সিদ্ধান্ত খুবই বিচক্ষণতার সাথে গ্রহণ করার সময়ও হয়ে গেছে। আর বিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই।



    লেখক : আব্দুল্লাহ বিন নজর

    কৃতজ্ঞতা স্বীকার : মুহাম্মাদ ইব্রাহীম



    তথ্যসূত্র:

    1. Kuki-Chin National Front (KNF): A Postmortem View
    https://tinyurl.com/8ejkwwm5
    2. Kuki-Chin National Front | Upcoming Threat for Bangladesh | Chittagong Hil…
    https://tinyurl.com/2p9y4nyf
    3. রাজনৈতিক ধরমান্তকরণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম…
    https://tinyurl.com/5ab86cv8
    4. রুমা এবং আলীকদমে স্থায়ী সেনানিবাস গড়ে তোলার সময় এসেছে
    https://tinyurl.com/cc6c482y

    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    এখানে কাফেররা দুইটি কৌশল অবলম্বন করেছে ১) আমেরিকা আমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিয়ে লড়াই বাঁধিয়ে দিয়ে মাঝখান থেকে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে এবং আমরা এই লড়াইয়ের ফলে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি পাত করতে পারছিনা। ২) তাগুত বাহিনী মুজাহিদের ব্যপারে ঘটনাটি প্রবাহ করে জনগণের দৃষ্টি এই কুকি চীন আর্মিদের থেকে স্মরিয়ে নিচ্ছে। তাহলে এতেও তাগুত বাহিনী কুকি চীন আর্মিদের সহযোগিতা করছে । এতে বুঝতে পারলাম যে এই তাগুত বাহিনী আমাদের জন্য কিছুই করবে না । যেমন ফিলিস্তিনে করছে না । তাই আমরা এই সকল ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব এবং এবং সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এদেরকে প্রতিহত করব।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment

    Working...
    X