কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদীদের পেলেট গুলির শিকার ৮০% মুসলিম দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে
বিগত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে শ্রীনগরে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের পেলেট বন্দুকের ছোবলের কারণে যারা চোখে আঘাত পেয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে পরিচালিত ৭৭৭ টি চোখের অপারেশনের উপর একটি পর্যালোচনা গবেষণাপত্র অনুসারে, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০% এর দৃষ্টি শুধু “আঙ্গুল গণনা” করতে পারা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
সম্প্রতি প্রকাশিত পর্যালোচনাটি কাশ্মীরী নিরীহ বেসামরিক মুসলিমদের উপর পেলেট বন্দুক বা ছড়রা গুলি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, উচ্চ চিকিৎসা সেবার কারণে আঘাতগুলি সমাজ এবং রোগীদের উপর “উল্লেখযোগ্যভাবে শারীরিক, মানসিক এবং আর্থ-সামাজিক বোঝা” চাপিয়েছে। .
‘দ্য ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অফথালমোলজি’-এ প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রের অন্যতম প্রধান লেখক হলেন মুম্বাই-ভিত্তিক রেটিনা সার্জন ডাঃ এস নটরাজন। তিনি ২০১৬ সালে পাঁচবার শ্রীনগরে গিয়েছিলেন গুলি দ্বারা আহতদের অপারেশন করার জন্য, পাশাপাশি নয়াদিল্লি এবং চেন্নাইয়ের একজন করে ডাক্তারও গিয়েছিলেন।
হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা তুচ্ছ কারণে বিক্ষোভকারী মুসলিমদের উপর এ ভয়ংকর এই পেলেট গানের ছড়রা গুলি বর্ষণ করে। আর পেলেটের ছড়রা গুলির যন্ত্রণা এতটাই তীব্র হয় যার ফলে অনেকে সেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
মধ্যরাতে ২৮ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ আশরাফ ওয়ানি কাশ্মীরের একটি হাসপাতালে ট্রাঙ্কুইলাইজার নিচ্ছিলেন। তার চোখ দুটি ছিল পেলেটের আঘাতে জর্জরিত। চিকিৎসারত অবস্থাতেই তার ফোনটি বেজে ওঠে। অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন, তারা তিন বন্ধু আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, বিষয়টি তাকে জানাতে ফোন করেছেন।
তিনজনের সবাই তাদের নিজ নিজ পরিবার থেকে পালিয়ে এসে গভীর রাতে ঝিলাম নদীর একটি সেতুর কাছে জড়ো হয়েছেন। তিন বন্ধু নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে তাদের জীবন অবসান ঘটাতে চাচ্ছেন। তবে তারা মনে করলেন, মৃত্যুর আগে তাদের বন্ধু আশরাফকে বিদায় জানানো দরকার। ফোনে একজন ভাঙা গলায় বললেন, তারা যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছেন না। সবাই তাদের ছেড়ে চলে গেছে।
আশরাফের সাথে যে তিন বন্ধু কথা বলছিল, তারা ২০১৬ সালের বিক্ষোভে পেলেটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারা আংশিকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং প্রতিবন্ধী হয়ে নিজেদেরকে পরিবারের বোঝা মনে করতেন। আশরাফ নিজেও ছিলেন পেলেটের শিকার। তার বাম চোখে অস্ত্রোপচার হচ্ছিল। তার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আর বাম চোখে সামান্য দেখতে পেতেন। এর ফলে ২৮ বছর বয়স্ক এই তরুণের মনে আশাবাদের সৃষ্টি হয় যে একদিন তিনি হয়তো ভালোভাবে দেখতে সক্ষম হবেন।
আশরাফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ওই রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ফোনটি পেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ফোনটি না কাটতে। আমি চেয়েছিলাম তাদের সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখতে, তাদের পুরো কাহিনী বর্ণনা করতে। ওই পর্যায়ে মৃত্যু নিয়ে নসিহত করা বা সুন্দর জীবনের কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না। আমি স্রেফ তাদের কান্না শুনছিলাম, নিজেকে বলছিলাম যে তাদের স্বজন ও বন্ধুরা পর্যন্ত তাদেরকে ছেড়ে গেছে।
আশরাফ টেলিফোনে কথা বলা অব্যাহত রাখলেন। ততক্ষণে ফজরের আজান শুরু হয়ে গেছে। ওই সময়ই আশরাফ তার বন্ধুদের বললেন, কাশ্মীরে পেলেটের শিকার লোকদের জন্য কিছু একটা করা উচিত। এমন একটি প্লাটফর্ম করা উচিত যেখানে তারা তাদের কথা বলতে পারবেন, একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বরে পরিণত হবে এটি।
তিনি তার উত্তেজিত বন্ধুদের বললেন যে তিনি কখনো তাদেরকে তাদের পরিবারের বোঝা মনে করতে দেবেন না। তিনি বললেন, “আমরা কোনো না কোনো উপায় বের করবই। স্রেফ আত্মহত্যা করো না।” তার কথায় তাদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা উধায় হয়ে গেল।
আশরাফ সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানিয়েছিলেন, এভাবেই পেলেট ভিক্টিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠিত হয়। আমরা প্রায়ই মিলিত হই, আমাদের সমস্যাবলী ও অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করি।
এই সমিতি পেলেট গানের শিকার লোকদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তারা ১,৩৩৫ জনকে সহায়তা করেছেন। পেলেটের শিকার লোকদের দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চালাতে হয়। কিন্তু গরিব হওয়ায় তাদের অনেকের পক্ষেই তা চালানো সম্ভব হয় না।
পেলেটের শিকার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হচ্ছেন ৭৫ বছর বয়স্ক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার এক লোক। আর সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছে ১৮ মাসের শিশু হিবা নিসার। আশরাফ বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কি একই অস্ত্রের শিকার ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ও ১৮ মাসের শিশু পাওয়া যাবে? অন্য সব দেশে তো পেলেট ব্যবহার করা হয় পশুদের বিরুদ্ধে।
আর্টসে গ্রাজুয়েট আশরাফ বলেন, কাশ্মীরে পেলেট গানের শিকারদের মধ্যে ৬৫ ভাগই ছাত্র। আর ১০ ভাগের বেশি শিশু।
জনাব আশরাফ আরও বলেন, পেলেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। আমরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি, তারা কেন অচিহ্নিত বিক্ষোভকারীদের প্রতি এটি ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উচ্চতর আদালতে যাওয়ার মতো অর্থও আমাদের নেই।
আশরাফের দেহেই পেলেটের ৬৫০টির বেশি আঘাত রয়েছে। পেলেটে অন্ধ হওয়ার মাত্র দুই মাস আগে তার বুকে বুলেট বিঁধেছিল। বুরহান ওয়ানির সমর্থনে বিক্ষোভ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়লে অনেকে হতাহত হয়। আশরাফের বুকে গুলি লাগে। এক সপ্তাহ তিনি অজ্ঞান ছিলেন। আর হাসপাতালে ছিলেন এক মাসের বেশি সময়।
হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে আরেক দুর্যোগে পড়েন তিনি। এবার আহত হন পেলেটে। আবার ছু্টে যান হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, তার বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, ডান চোখ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আশরাফ বলেন, পেলেটের যন্ত্রণা একইসাথে মানসিক ও শারীরিক। পেলেটের শিকাররা মারাত্মক মানসিক সঙ্কটে থাকেন। তাদের সবসময় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের তদারকিতে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আমার দেহের ভেতরে এখনো ৬৫০টির বেশি পেলেট আছে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বাড়লে পেলেটগুলোও গরম হয়ে ওঠে। তখন মনে হয়, আমি বুঝি দোজখের আগুনে জ্বলছি। তখন মৃত্যু কামনা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
আশরাফ সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, তার সমিতির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি সরকার যে আচরণ করছে, সে সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা। তারা পেলেট গান কাশ্মীরে পুরোপুরি বন্ধ করার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছে।
আশরাফ বলেন, আমরা প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সাহায্য কামনা করি আমাদের চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য। আমরা লোকজনকে বলি, পেলেট আমাদের কী ক্ষতি করেছে। আমরা চাই না কাশ্মীরীদের আরেকটি প্রজন্ম এই যন্ত্রণা ভোগ করুক।
তথ্যসূত্র :
1. 80% of 777 Jammu and Kashmir pellet victims have partial vision loss: Study ( Times of India )
– https://tinyurl.com/yje2x9ry
2. কাশ্মীর: ‘বিকলাঙ্গ, অন্ধ, হত্যা করতে পেলেট বন্দুক ব্যবহার করছে ভারতীয় বাহিনী’
– https://tinyurl.com/2muvf69v
3. কাশ্মীরে ভারতীয় পুলিশের পেলেট গানের গুলি
– https://tinyurl.com/4n757ebu
4. কাশ্মীরে নিজেদের পরিচর্যায় সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে পেলেটের শিকার জনগণ
– https://tinyurl.com/4nznkec6
বিগত ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে শ্রীনগরে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের পেলেট বন্দুকের ছোবলের কারণে যারা চোখে আঘাত পেয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে পরিচালিত ৭৭৭ টি চোখের অপারেশনের উপর একটি পর্যালোচনা গবেষণাপত্র অনুসারে, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০% এর দৃষ্টি শুধু “আঙ্গুল গণনা” করতে পারা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
সম্প্রতি প্রকাশিত পর্যালোচনাটি কাশ্মীরী নিরীহ বেসামরিক মুসলিমদের উপর পেলেট বন্দুক বা ছড়রা গুলি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে। এতে বলা হয়েছে, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, উচ্চ চিকিৎসা সেবার কারণে আঘাতগুলি সমাজ এবং রোগীদের উপর “উল্লেখযোগ্যভাবে শারীরিক, মানসিক এবং আর্থ-সামাজিক বোঝা” চাপিয়েছে। .
‘দ্য ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অফথালমোলজি’-এ প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রের অন্যতম প্রধান লেখক হলেন মুম্বাই-ভিত্তিক রেটিনা সার্জন ডাঃ এস নটরাজন। তিনি ২০১৬ সালে পাঁচবার শ্রীনগরে গিয়েছিলেন গুলি দ্বারা আহতদের অপারেশন করার জন্য, পাশাপাশি নয়াদিল্লি এবং চেন্নাইয়ের একজন করে ডাক্তারও গিয়েছিলেন।
হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা তুচ্ছ কারণে বিক্ষোভকারী মুসলিমদের উপর এ ভয়ংকর এই পেলেট গানের ছড়রা গুলি বর্ষণ করে। আর পেলেটের ছড়রা গুলির যন্ত্রণা এতটাই তীব্র হয় যার ফলে অনেকে সেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
মধ্যরাতে ২৮ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ আশরাফ ওয়ানি কাশ্মীরের একটি হাসপাতালে ট্রাঙ্কুইলাইজার নিচ্ছিলেন। তার চোখ দুটি ছিল পেলেটের আঘাতে জর্জরিত। চিকিৎসারত অবস্থাতেই তার ফোনটি বেজে ওঠে। অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন, তারা তিন বন্ধু আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, বিষয়টি তাকে জানাতে ফোন করেছেন।
তিনজনের সবাই তাদের নিজ নিজ পরিবার থেকে পালিয়ে এসে গভীর রাতে ঝিলাম নদীর একটি সেতুর কাছে জড়ো হয়েছেন। তিন বন্ধু নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে তাদের জীবন অবসান ঘটাতে চাচ্ছেন। তবে তারা মনে করলেন, মৃত্যুর আগে তাদের বন্ধু আশরাফকে বিদায় জানানো দরকার। ফোনে একজন ভাঙা গলায় বললেন, তারা যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছেন না। সবাই তাদের ছেড়ে চলে গেছে।
আশরাফের সাথে যে তিন বন্ধু কথা বলছিল, তারা ২০১৬ সালের বিক্ষোভে পেলেটে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারা আংশিকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং প্রতিবন্ধী হয়ে নিজেদেরকে পরিবারের বোঝা মনে করতেন। আশরাফ নিজেও ছিলেন পেলেটের শিকার। তার বাম চোখে অস্ত্রোপচার হচ্ছিল। তার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আর বাম চোখে সামান্য দেখতে পেতেন। এর ফলে ২৮ বছর বয়স্ক এই তরুণের মনে আশাবাদের সৃষ্টি হয় যে একদিন তিনি হয়তো ভালোভাবে দেখতে সক্ষম হবেন।
আশরাফ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ওই রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ফোনটি পেয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ফোনটি না কাটতে। আমি চেয়েছিলাম তাদের সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখতে, তাদের পুরো কাহিনী বর্ণনা করতে। ওই পর্যায়ে মৃত্যু নিয়ে নসিহত করা বা সুন্দর জীবনের কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না। আমি স্রেফ তাদের কান্না শুনছিলাম, নিজেকে বলছিলাম যে তাদের স্বজন ও বন্ধুরা পর্যন্ত তাদেরকে ছেড়ে গেছে।
আশরাফ টেলিফোনে কথা বলা অব্যাহত রাখলেন। ততক্ষণে ফজরের আজান শুরু হয়ে গেছে। ওই সময়ই আশরাফ তার বন্ধুদের বললেন, কাশ্মীরে পেলেটের শিকার লোকদের জন্য কিছু একটা করা উচিত। এমন একটি প্লাটফর্ম করা উচিত যেখানে তারা তাদের কথা বলতে পারবেন, একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বরে পরিণত হবে এটি।
তিনি তার উত্তেজিত বন্ধুদের বললেন যে তিনি কখনো তাদেরকে তাদের পরিবারের বোঝা মনে করতে দেবেন না। তিনি বললেন, “আমরা কোনো না কোনো উপায় বের করবই। স্রেফ আত্মহত্যা করো না।” তার কথায় তাদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা উধায় হয়ে গেল।
আশরাফ সাউথ এশিয়ান মনিটরকে জানিয়েছিলেন, এভাবেই পেলেট ভিক্টিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠিত হয়। আমরা প্রায়ই মিলিত হই, আমাদের সমস্যাবলী ও অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করি।
এই সমিতি পেলেট গানের শিকার লোকদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। তারা ১,৩৩৫ জনকে সহায়তা করেছেন। পেলেটের শিকার লোকদের দীর্ঘ দিন চিকিৎসা চালাতে হয়। কিন্তু গরিব হওয়ায় তাদের অনেকের পক্ষেই তা চালানো সম্ভব হয় না।
পেলেটের শিকার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হচ্ছেন ৭৫ বছর বয়স্ক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার এক লোক। আর সর্বকনিষ্ঠ হচ্ছে ১৮ মাসের শিশু হিবা নিসার। আশরাফ বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কি একই অস্ত্রের শিকার ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ও ১৮ মাসের শিশু পাওয়া যাবে? অন্য সব দেশে তো পেলেট ব্যবহার করা হয় পশুদের বিরুদ্ধে।
আর্টসে গ্রাজুয়েট আশরাফ বলেন, কাশ্মীরে পেলেট গানের শিকারদের মধ্যে ৬৫ ভাগই ছাত্র। আর ১০ ভাগের বেশি শিশু।
জনাব আশরাফ আরও বলেন, পেলেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। আমরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছি, তারা কেন অচিহ্নিত বিক্ষোভকারীদের প্রতি এটি ব্যবহার করছে। কিন্তু আমাদের আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উচ্চতর আদালতে যাওয়ার মতো অর্থও আমাদের নেই।
আশরাফের দেহেই পেলেটের ৬৫০টির বেশি আঘাত রয়েছে। পেলেটে অন্ধ হওয়ার মাত্র দুই মাস আগে তার বুকে বুলেট বিঁধেছিল। বুরহান ওয়ানির সমর্থনে বিক্ষোভ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছুড়লে অনেকে হতাহত হয়। আশরাফের বুকে গুলি লাগে। এক সপ্তাহ তিনি অজ্ঞান ছিলেন। আর হাসপাতালে ছিলেন এক মাসের বেশি সময়।
হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে আরেক দুর্যোগে পড়েন তিনি। এবার আহত হন পেলেটে। আবার ছু্টে যান হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানান, তার বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, ডান চোখ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আশরাফ বলেন, পেলেটের যন্ত্রণা একইসাথে মানসিক ও শারীরিক। পেলেটের শিকাররা মারাত্মক মানসিক সঙ্কটে থাকেন। তাদের সবসময় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের তদারকিতে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আমার দেহের ভেতরে এখনো ৬৫০টির বেশি পেলেট আছে। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বাড়লে পেলেটগুলোও গরম হয়ে ওঠে। তখন মনে হয়, আমি বুঝি দোজখের আগুনে জ্বলছি। তখন মৃত্যু কামনা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
আশরাফ সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, তার সমিতির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি সরকার যে আচরণ করছে, সে সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা। তারা পেলেট গান কাশ্মীরে পুরোপুরি বন্ধ করার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছে।
আশরাফ বলেন, আমরা প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সাহায্য কামনা করি আমাদের চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য। আমরা লোকজনকে বলি, পেলেট আমাদের কী ক্ষতি করেছে। আমরা চাই না কাশ্মীরীদের আরেকটি প্রজন্ম এই যন্ত্রণা ভোগ করুক।
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র :
1. 80% of 777 Jammu and Kashmir pellet victims have partial vision loss: Study ( Times of India )
– https://tinyurl.com/yje2x9ry
2. কাশ্মীর: ‘বিকলাঙ্গ, অন্ধ, হত্যা করতে পেলেট বন্দুক ব্যবহার করছে ভারতীয় বাহিনী’
– https://tinyurl.com/2muvf69v
3. কাশ্মীরে ভারতীয় পুলিশের পেলেট গানের গুলি
– https://tinyurl.com/4n757ebu
4. কাশ্মীরে নিজেদের পরিচর্যায় সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে পেলেটের শিকার জনগণ
– https://tinyurl.com/4nznkec6