কাশ্মীরে ‘ইজরাইলের কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন’ ও ভারত-ইজরাইল মিত্রতা
সম্প্রতি কাশ্মীরে দুটি কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে ইহুদিবাদি ইজরাইল। শ্রীনগর ও জম্মুতে দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিলে কেন্দ্র দুটি স্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের গণমাধ্যমগুলো।
তাদের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মারফত জানা গিয়েছে যে, গত সোমবার কাশ্মীরের ‘শের-ই-কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অব কাশ্মীর’ বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরে যায় ইজরাইলি প্রতিনিধিরা। উক্ত সফরে কাশ্মীরে কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, কৃষি প্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হিন্দুত্ববাদী ভারতের সাথে নিজেদের প্রযুক্তি ভাগাভাগি করার বিষয়ে মতবিনিময় হয় দুই পক্ষের।
এছাড়াও গত শুক্রবার সন্ত্রাসী ইজরাইলের হয়ে প্রতিনিধিত্বকারী ইয়াইর এশেল কাশ্মীরের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে থাকা কৃষি খামারগুলি পরিদর্শন করে। আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয় যে, এই সফরের লক্ষ্য কেন্দ্রের জন্য স্থান বাছাই। এসময় গণমাধ্যমকে এশেল জানায়, “আমরা (ইহুদীরা) কাশ্মীরকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে চাই। কাশ্মীর একটি সম্ভাবনাময় ভূখণ্ড। কাশ্মীরের কৃষকদের সাথে আমাদের প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতে আমরা প্রস্তুত।”
বেশ ভালো কথা। এ পর্যন্ত আমরা সকলেই হয়তো ভাবছি, কাশ্মীরি মুসলিম কৃষকদের জন্য ইজরাইল হয়তো আসলেই ভালো কিছু চায়, তারা চায় কাশ্মীরি মুসলিমরা কৃষি খাতে আরও উন্নতি করুক! এছাড়া মানবতার খাতিরেও ইজরাইল হয়তো কাশ্মীরের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বলে মনে হতে পারে। কিন্ত বিষয়টিকে আরেকটু ভালোভাবে ছাঁকলে হয়তো তা আমাদের সামনে পুরোপুরি পরিষ্কার হবে।
কাশ্মীরে ইহুদীদের কথিত ‘কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন’ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের যুদ্ধেরই একটি অংশ। যে যুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের সবচেয়ে বড় মিত্র হলো ইহুদিবাদি ইজরাইল। কিছু সময়ের জন্য যদি এ কথা ধরেও নেওয়া যায় যে, ইজরাইল কাশ্মীরি মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, কাশ্মীরের কৃষি খাতে উন্নতির জন্য তারা তাদের প্রযুক্তি ভাগ করতে চাচ্ছে, মানবতার খাতিরে তারা এগিয়ে এসেছে, তাহলে এই ‘মানবতা ও সাহায্য’ তারা প্রথম শুরু করতে পারতো ফিলিস্তিনি মুসলিমদের দিয়েই। তারা যদি আসলেই ‘মানবতার সেবক’ হতো তাহলে সেই সেবা শুরু করতে পারতো ফিলিস্তিনিদের দিয়েই।
কিন্তু বিগত ৭৫ বছর ধরে যে চিত্র বিশ্ব দেখে এসেছে, তাতে আর যাই হোক কাশ্মীরি মুসলিমদের ভালোর জন্য ইজরাইল কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ এই ৭৫ বছর ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারত যেমন জোরপূর্বক দখল করে আছে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে, ঠিক তেমনই একই সময় ধরে ইহুদীবাদি ইজরাইল জোরপূর্বক দখল করে আছে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনকে।
ফিলিস্তিনি মুসলিমদের কোণঠাসা করতে বিভিন্ন সময় ইজরাইলিদের বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড এই ৭৫ বছরে বিশ্ব দেখেছে। ইজরাইলিদের এসব সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বাড়ি দখল, জমি দখল, মুসলিম শিশুদের স্কুলে হামলা, চেকপয়েন্টে তল্লাশির নামে হয়রানি এবং তারপর হত্যা হত্যা, মুসলিম যুবকদের বন্দী, নারীদের ধর্ষণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এমনকি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে তারা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ‘জলপাই গাছ নিধন’। এই জলপাই গাছ শুধু ফিলিস্তিনি মুসলিমদের খাদ্য নিরাপত্তা কিংবা তাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎসই নয়, বরং এটি সারা বিশ্বে তাদের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশও। এজন্যেই দখলদার ইজরাইলিরা এই জায়গাতেই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বরাবর আক্রমণ করে। কারণ তারা কখনোই চায় না যে, তাদের শত্রুরা অর্থাৎ মুসলিমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হোক এবং ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক শক্তি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর তাদের দখলদারিত্বে কোন প্রভাব ফেলুক।
ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মতো ঠিক একই ভাগ্য কাশ্মীরি মুসলিমদেরও। ইজরাইলিদের মতো হিন্দুত্ববাদী ভারতও অবৈধভাবে দখল করে আছে কাশ্মীরকে। কথিত শান্তিরক্ষার নামে প্রতিষ্ঠিত ও পশ্চিমাদের দালাল ‘জাতিসংঘ’ নামক সংস্থাটি কাশ্মীরে গণভোটের নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশকে থোড়াই কেয়ার করেছে তারা।
কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা আসলে কখনও লিখে শেষ করার মতো নয়। কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর নিজেদের অবৈধ ও জোরপূর্বক শাসন বজায় রাখতে সন্ত্রাসী ইজরাইলিদের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই তারা। আর যেহেতু এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রেরই ‘শত্রু’ হলো মুসলিমরা, সেহেতু এরা কেউই নিজেদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করতে কখনও পিছপা হয়নি, কিংবা বিশ্বের সামনে নিজেদের দৃঢ় সম্পর্ক প্রকাশ করতে কোন রাখঢাক করেনি।
কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর দমন নিপীড়ন চালাতে বরাবরই হিন্দুত্ববাদী ভারতকে সাহায্য করেছে সন্ত্রাসী ইজরাইল। অস্ত্র, গোয়েন্দা, প্রযুক্তি- সবদিক থেকেই হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য করেছে তারা। তাদের বন্ধুত্বের দৃঢ়তা আরও বৃদ্ধি পায় ইসলামবিদ্বেষী ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দিল্লীর মসনদে বসার পর থেকে। এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী বাহিনীর ওপর হামলার পর, যখন হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে তাদের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলে “আমরা ইহুদী জাতি তোমাদের (হিন্দুত্ববাদীদের) সাথেই আছি।”
সন্ত্রাসী ইজরাইল ১৯৬২, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের যেমন সাহায্য করেছে তেমন হিন্দুত্ববাদীরাও এই ইহুদিদের সাহায্যে কখনও পিছপা হয় নি। সম্প্রতি কাতারে হিন্দুত্ববাদী ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক আটজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছে, যারা প্রত্যেকেই নিযুক্ত ছিলো ইজরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে। অর্থাৎ মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে একে অপরের ‘সহোদর ভাই’ হিসেবে।
সুতরাং ভাই হিসেবে যদি একজন আরেকজনের ঘরে যেতে চায় তো স্বাভাবিকভাবেই সে তার ভাইকে কখনও মানা করবে না। আর যদি সেই ভাইকে ঘরে রাখলে নিজেরই স্বার্থ উদ্ধার হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। ঠিক এই কাজটিই করছে হিন্দুত্ববাদী ভারত ও ইহুদিবাদি ইজরাইল। সন্ত্রাসী ইহুদীদের ‘নিজেদের দখলকৃত ঘরে’ আতিথেয়তা দিচ্ছে তারা। আরও স্পষ্টভাবে বললে কাশ্মীরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেদের স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসী ইহুদীদের ঘাঁটি গড়ার সুযোগ দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা।
স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মীরি মুসলিমরা চাইবে না যে, তাদের ঘরে তাদেরই আরেক শত্রু এসে ঘাঁটি গাড়ুক। তাইতো কাশ্মীরি মুসলিমসহ সারা বিশ্বের মুসলিমদের সামনে কথিত ‘কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের’ গল্প নিয়ে এসেছে এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। যার মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে ঘাঁটি স্থাপনই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, গিলগিট-বালতিস্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য যুদ্ধে জড়িত হতেই মূলত ইহুদিরা এখন থেকেই কাশ্মীরে ঘাঁটি গাড়তে চাইছে।
অতএব, এ কথা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, কাশ্মীরি মুসলিমদের সাহায্যে ইজরাইলিরা এগিয়ে এসেছে। বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের উচিত ইহুদীদের এই নতুন ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান হওয়া এবং সন্ত্রাসী ইহুদীদের যেকোন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুঁটিয়ে রাখা। কৃষিখাতে উন্নতির নামে কাশ্মীরি মুসলিমদের ধ্বংসের ষড়যন্ত্র পাকা করতেই মূলত কাশ্মীরে ‘পা’ রেখেছে সন্ত্রাসী ইহুদীরা। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কাশ্মীরি মুসলিমদের ধ্বংস করার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য করাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য।
লিখেছেন : ওবায়দুল ইসলাম
তথ্যসূত্র :
1. Israel Setting Up Two Agri Centres of Excellence In Kashmir and Jammu
– https://tinyurl.com/2p89rrxz
2. Israel in Kashmir
– https://tinyurl.com/y63c6zd2
3. 9,300 olive trees destroyed by Israel in the West Bank in one year, says ICRC
– https://tinyurl.com/2p23jtd5
সম্প্রতি কাশ্মীরে দুটি কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে ইহুদিবাদি ইজরাইল। শ্রীনগর ও জম্মুতে দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিলে কেন্দ্র দুটি স্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের গণমাধ্যমগুলো।
তাদের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মারফত জানা গিয়েছে যে, গত সোমবার কাশ্মীরের ‘শের-ই-কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি অব কাশ্মীর’ বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরে যায় ইজরাইলি প্রতিনিধিরা। উক্ত সফরে কাশ্মীরে কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, কৃষি প্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হিন্দুত্ববাদী ভারতের সাথে নিজেদের প্রযুক্তি ভাগাভাগি করার বিষয়ে মতবিনিময় হয় দুই পক্ষের।
এছাড়াও গত শুক্রবার সন্ত্রাসী ইজরাইলের হয়ে প্রতিনিধিত্বকারী ইয়াইর এশেল কাশ্মীরের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে থাকা কৃষি খামারগুলি পরিদর্শন করে। আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয় যে, এই সফরের লক্ষ্য কেন্দ্রের জন্য স্থান বাছাই। এসময় গণমাধ্যমকে এশেল জানায়, “আমরা (ইহুদীরা) কাশ্মীরকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে চাই। কাশ্মীর একটি সম্ভাবনাময় ভূখণ্ড। কাশ্মীরের কৃষকদের সাথে আমাদের প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতে আমরা প্রস্তুত।”
বেশ ভালো কথা। এ পর্যন্ত আমরা সকলেই হয়তো ভাবছি, কাশ্মীরি মুসলিম কৃষকদের জন্য ইজরাইল হয়তো আসলেই ভালো কিছু চায়, তারা চায় কাশ্মীরি মুসলিমরা কৃষি খাতে আরও উন্নতি করুক! এছাড়া মানবতার খাতিরেও ইজরাইল হয়তো কাশ্মীরের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে বলে মনে হতে পারে। কিন্ত বিষয়টিকে আরেকটু ভালোভাবে ছাঁকলে হয়তো তা আমাদের সামনে পুরোপুরি পরিষ্কার হবে।
কাশ্মীরে ইহুদীদের কথিত ‘কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন’ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের যুদ্ধেরই একটি অংশ। যে যুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের সবচেয়ে বড় মিত্র হলো ইহুদিবাদি ইজরাইল। কিছু সময়ের জন্য যদি এ কথা ধরেও নেওয়া যায় যে, ইজরাইল কাশ্মীরি মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, কাশ্মীরের কৃষি খাতে উন্নতির জন্য তারা তাদের প্রযুক্তি ভাগ করতে চাচ্ছে, মানবতার খাতিরে তারা এগিয়ে এসেছে, তাহলে এই ‘মানবতা ও সাহায্য’ তারা প্রথম শুরু করতে পারতো ফিলিস্তিনি মুসলিমদের দিয়েই। তারা যদি আসলেই ‘মানবতার সেবক’ হতো তাহলে সেই সেবা শুরু করতে পারতো ফিলিস্তিনিদের দিয়েই।
কিন্তু বিগত ৭৫ বছর ধরে যে চিত্র বিশ্ব দেখে এসেছে, তাতে আর যাই হোক কাশ্মীরি মুসলিমদের ভালোর জন্য ইজরাইল কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ এই ৭৫ বছর ধরে হিন্দুত্ববাদী ভারত যেমন জোরপূর্বক দখল করে আছে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে, ঠিক তেমনই একই সময় ধরে ইহুদীবাদি ইজরাইল জোরপূর্বক দখল করে আছে মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনকে।
ফিলিস্তিনি মুসলিমদের কোণঠাসা করতে বিভিন্ন সময় ইজরাইলিদের বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড এই ৭৫ বছরে বিশ্ব দেখেছে। ইজরাইলিদের এসব সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বাড়ি দখল, জমি দখল, মুসলিম শিশুদের স্কুলে হামলা, চেকপয়েন্টে তল্লাশির নামে হয়রানি এবং তারপর হত্যা হত্যা, মুসলিম যুবকদের বন্দী, নারীদের ধর্ষণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এমনকি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে তারা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ‘জলপাই গাছ নিধন’। এই জলপাই গাছ শুধু ফিলিস্তিনি মুসলিমদের খাদ্য নিরাপত্তা কিংবা তাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎসই নয়, বরং এটি সারা বিশ্বে তাদের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশও। এজন্যেই দখলদার ইজরাইলিরা এই জায়গাতেই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের বরাবর আক্রমণ করে। কারণ তারা কখনোই চায় না যে, তাদের শত্রুরা অর্থাৎ মুসলিমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হোক এবং ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক শক্তি ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর তাদের দখলদারিত্বে কোন প্রভাব ফেলুক।
ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মতো ঠিক একই ভাগ্য কাশ্মীরি মুসলিমদেরও। ইজরাইলিদের মতো হিন্দুত্ববাদী ভারতও অবৈধভাবে দখল করে আছে কাশ্মীরকে। কথিত শান্তিরক্ষার নামে প্রতিষ্ঠিত ও পশ্চিমাদের দালাল ‘জাতিসংঘ’ নামক সংস্থাটি কাশ্মীরে গণভোটের নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশকে থোড়াই কেয়ার করেছে তারা।
কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা আসলে কখনও লিখে শেষ করার মতো নয়। কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর নিজেদের অবৈধ ও জোরপূর্বক শাসন বজায় রাখতে সন্ত্রাসী ইজরাইলিদের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই তারা। আর যেহেতু এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রেরই ‘শত্রু’ হলো মুসলিমরা, সেহেতু এরা কেউই নিজেদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করতে কখনও পিছপা হয়নি, কিংবা বিশ্বের সামনে নিজেদের দৃঢ় সম্পর্ক প্রকাশ করতে কোন রাখঢাক করেনি।
কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর দমন নিপীড়ন চালাতে বরাবরই হিন্দুত্ববাদী ভারতকে সাহায্য করেছে সন্ত্রাসী ইজরাইল। অস্ত্র, গোয়েন্দা, প্রযুক্তি- সবদিক থেকেই হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য করেছে তারা। তাদের বন্ধুত্বের দৃঢ়তা আরও বৃদ্ধি পায় ইসলামবিদ্বেষী ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার দিল্লীর মসনদে বসার পর থেকে। এর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী বাহিনীর ওপর হামলার পর, যখন হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে তাদের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলে “আমরা ইহুদী জাতি তোমাদের (হিন্দুত্ববাদীদের) সাথেই আছি।”
সন্ত্রাসী ইজরাইল ১৯৬২, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের যেমন সাহায্য করেছে তেমন হিন্দুত্ববাদীরাও এই ইহুদিদের সাহায্যে কখনও পিছপা হয় নি। সম্প্রতি কাতারে হিন্দুত্ববাদী ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক আটজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছে, যারা প্রত্যেকেই নিযুক্ত ছিলো ইজরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে। অর্থাৎ মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে একে অপরের ‘সহোদর ভাই’ হিসেবে।
সুতরাং ভাই হিসেবে যদি একজন আরেকজনের ঘরে যেতে চায় তো স্বাভাবিকভাবেই সে তার ভাইকে কখনও মানা করবে না। আর যদি সেই ভাইকে ঘরে রাখলে নিজেরই স্বার্থ উদ্ধার হয় তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। ঠিক এই কাজটিই করছে হিন্দুত্ববাদী ভারত ও ইহুদিবাদি ইজরাইল। সন্ত্রাসী ইহুদীদের ‘নিজেদের দখলকৃত ঘরে’ আতিথেয়তা দিচ্ছে তারা। আরও স্পষ্টভাবে বললে কাশ্মীরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেদের স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসী ইহুদীদের ঘাঁটি গড়ার সুযোগ দিচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা।
স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মীরি মুসলিমরা চাইবে না যে, তাদের ঘরে তাদেরই আরেক শত্রু এসে ঘাঁটি গাড়ুক। তাইতো কাশ্মীরি মুসলিমসহ সারা বিশ্বের মুসলিমদের সামনে কথিত ‘কৃষি উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপনের’ গল্প নিয়ে এসেছে এই দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। যার মাধ্যমে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে ঘাঁটি স্থাপনই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। আবার অনেক বিশ্লেষক বলছেন, গিলগিট-বালতিস্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য যুদ্ধে জড়িত হতেই মূলত ইহুদিরা এখন থেকেই কাশ্মীরে ঘাঁটি গাড়তে চাইছে।
অতএব, এ কথা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, কাশ্মীরি মুসলিমদের সাহায্যে ইজরাইলিরা এগিয়ে এসেছে। বরং কাশ্মীরি মুসলিমদের উচিত ইহুদীদের এই নতুন ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান হওয়া এবং সন্ত্রাসী ইহুদীদের যেকোন কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুঁটিয়ে রাখা। কৃষিখাতে উন্নতির নামে কাশ্মীরি মুসলিমদের ধ্বংসের ষড়যন্ত্র পাকা করতেই মূলত কাশ্মীরে ‘পা’ রেখেছে সন্ত্রাসী ইহুদীরা। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কাশ্মীরি মুসলিমদের ধ্বংস করার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদীদের সাহায্য করাই হবে তাদের মূল লক্ষ্য।
লিখেছেন : ওবায়দুল ইসলাম
তথ্যসূত্র :
1. Israel Setting Up Two Agri Centres of Excellence In Kashmir and Jammu
– https://tinyurl.com/2p89rrxz
2. Israel in Kashmir
– https://tinyurl.com/y63c6zd2
3. 9,300 olive trees destroyed by Israel in the West Bank in one year, says ICRC
– https://tinyurl.com/2p23jtd5
Comment